নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর: গ্রামের পুকুরঘাট, ধানক্ষেত, নদীর কলতান কিংবা বর্ষার প্রথম ফোঁটার সৌন্দর্য এসবই হারিয়ে যাচ্ছে ডিজিটাল দুনিয়ার কোলাহলে। কিন্তু এই হারিয়ে যাওয়া গল্পগুলো ধরে রাখছেন গাজীপুরের কালীগঞ্জের রফিক সরকার। তাঁর হাতে ক্যামেরা, মনে ভালোবাসা দেশ, প্রকৃতি আর মানুষের প্রতি। আর সেই ভালোবাসার স্বীকৃতি এসেছে ‘দৃষ্টিনন্দন কালীগঞ্জ’ আয়োজিত ভিডিওগ্রাফি প্রতিযোগিতায় সেরা হয়ে।
‘ও আমার দেশের মাটি’ শিরোনামের ভিডিও কনটেস্টে রফিক সরকার তুলে ধরেছেন এমন এক গল্প, যেখানে প্রকৃতি, মানুষ আর আবেগ এক অদৃশ্য সুতোয় বাঁধা। ভিডিওটিতে ফুটে উঠেছে কালীগঞ্জের গ্রামীণ জীবনের সরলতা, প্রকৃতির অপরূপ রূপ আর মানুষের অন্তর্নিহিত ভালোবাসা। সেই গল্প যেন শুধু চোখে দেখা নয়, হৃদয়ে অনুভবের।
রফিক সরকার পেশায় একজন সাংবাদিক। কিন্তু পেশার গণ্ডি ছাড়িয়ে তাঁর কাছে ক্যামেরা হলো এক মানবিক অস্ত্র, যার মাধ্যমে তিনি সংরক্ষণ করতে চান নিজ মাটি আর সংস্কৃতির প্রতিটি স্পর্শ। পুরস্কারপ্রাপ্তির পর অনুভূতি জানাতে গিয়ে রফিক বলেন, ‘‘আমি চাই মানুষ এই ভিডিও দেখে যেন নিজেদের শেকড়ের কথা মনে রাখে। এই প্রকৃতি, এই মানুষগুলোই তো আমাদের সত্যিকারের পরিচয়।’’
কালীগঞ্জের তরুণদের মধ্যে সৃজনশীলতার বার্তা ছড়িয়ে দিতে ফেসবুকভিত্তিক সংগঠন ‘দৃষ্টিনন্দন কালীগঞ্জ’ দীর্ঘদিন ধরেই কাজ করছে। ছবি, ভিডিও আর প্রকৃতি-সংস্কৃতির গল্পের মধ্য দিয়ে তারা জাগিয়ে তুলছে নতুন প্রজন্মের দায়বদ্ধতা। রফিক সরকারের মতো আরও অনেক তরুণ-তরুণী এই আয়োজনের মাধ্যমে তুলে ধরছেন তাদের প্রতিভা। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানটিও ছিল ব্যতিক্রম। নদীর পাড়ে, প্রকৃতির কোলে এক উৎসবমুখর পরিবেশে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন আয়োজকরা।
এই প্রতিযোগিতার আরেক আলোচিত মুখ সুমন প্রধান। তরুণ বয়সেই তার ভিডিওতে উঠে এসেছে সমাজ আর প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা ও সচেতনতার বার্তা। ফটোগ্রাফি বিভাগেও দৃষ্টিনন্দন কালীগঞ্জ পেয়েছে তামিম রোহান, তপু রায়হান, ইলিয়াস আহমেদ তন্ময়, স্পেরো সুমাইয়া, ইউনুস আলী, সুমন হোসেন সৈকত, রানা আফরিনদের মতো সৃষ্টিশীল মুখ, যাঁদের ছবিতে জীবন্ত হয়ে উঠেছে কালীগঞ্জের প্রকৃতি আর মানুষের গল্প।
আয়োজক সংগঠনের প্রধান নুরুল ইসলাম বলেন, ‘‘আমরা চাই তরুণ সমাজ নিজেদের শেকড়কে জানুক, ভালোবাসুক এবং সমাজের জন্য কিছু করুক।’’
রফিক সরকারের মতো প্রতিভাবান মানুষদের হাত ধরে ‘দৃষ্টিনন্দন কালীগঞ্জ’ এখন শুধু একটি অনলাইন গ্রুপ নয়, বরং হয়ে উঠছে একটি সামাজিক আন্দোলন যেখানে প্রকৃতি, সংস্কৃতি, মানবিকতা আর সচেতনতার গল্প একসঙ্গে বোনা হচ্ছে।
স্থানীয় মানুষদের প্রত্যাশা, এই ধারা যেন দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়ে তরুণেরা ফিরে পায় শেকড়ের টান, আর রফিক সরকারের মতো মানুষেরা হয়ে ওঠেন অনুপ্রেরণার নাম।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।