যুক্তরাজ্যে ভুয়া নথিপত্রের মাধ্যমে অভিবাসনপ্রাপ্তি এখন রীতিমতো একটি অভিনব প্রতারণার পন্থা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাকিস্তানের কাশ্মীরে অবস্থিত একটি প্রতিষ্ঠান ‘মিরপুর ভিসা কনসালট্যান্ট’ এই প্রতারণার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফ-এর অনুসন্ধানে দেখা যায়, এই প্রতিষ্ঠানটি বিপুল অর্থের বিনিময়ে অভিবাসীদের জন্য জাল চাকরির চিঠি, ব্যাংক স্টেটমেন্ট, সিভি ও ডিগ্রিসহ ভিসার প্রয়োজনীয় সব ধরনের ভুয়া কাগজপত্র প্রস্তুত করছে এবং এসব নথি যাচাই না করেই ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র দপ্তর ভিসা অনুমোদন করছে।
প্রতারণার মাধ্যমে ভিসা পেতে প্রতিজনের কাছ থেকে ৩২ হাজার থেকে ৫০ হাজার পাউন্ড পর্যন্ত অর্থ নেওয়া হচ্ছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। কিছু নথিতে ভাষাগত ভুল এবং অসংগতি থাকলেও সেগুলো পাস করছে বিনা বাধায়। এক ব্যক্তির ভুয়া রেফারেন্সপত্রে লেখা ছিল, “আমরা তাকে যেকোনো পদের জন্য সুপারিশ করছি।” অথচ ওই হাসপাতাল ‘রিয়াজ ইন্টারন্যাশনাল’ ২০১৪ সালেই বন্ধ হয়ে গেছে। কর্তৃপক্ষ স্পষ্ট জানিয়েছে, চিঠিটি ভুয়া।
অনুসন্ধান বলছে, এই প্রতারণা চক্রের মূল হোতা সাইয়েদ কামরান হায়দার। তিনি নিজেকে ‘মিরপুর ভিসা কনসালট্যান্ট’-এর প্রধান নির্বাহী দাবি করেন এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইউরোপে যাওয়ার নানা পদ্ধতি নিয়ে নিয়মিত ভিডিও প্রকাশ করেন। নিজের এক সাক্ষাৎকারে হায়দার বলেন, “আমি সব করে দেব- ব্যাংক স্টেটমেন্ট বানাবো, কেউ জিজ্ঞাসাও করবে না কেন এটি মিরপুর থেকে এসেছে।”
টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, একজন আবেদনকারীর জন্য বানানো সিভিতে লেখা ছিল, তিনি একজন নার্স এবং রোগীর ‘গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ’ রেকর্ড করার দায়িত্বে ছিলেন। এই রকম অসংগতিপূর্ণ কনটেন্ট সত্ত্বেও- এসব ভুয়া সনদের ভিত্তিতে অনেকেই স্কিলড ওয়ার্কার ভিসা পাচ্ছেন এবং যুক্তরাজ্যে পা রাখার পরই রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করছেন। ব্রিটেনের আইনে, কাজের ভিসায় আসা অভিবাসীরা আশ্রয় চাইলে কাজ চালিয়ে যেতে পারেন- এই ফাঁকটাই কাজে লাগাচ্ছে প্রতারকরা।
২০২৩ সালে পাকিস্তান থেকে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন জমা পড়েছে ১০ হাজার ৫৪২টি, যা আগের বছরের তুলনায় ৮০ শতাংশ বেশি।
হায়দার আরও দাবি করেন, আইইএলটিএস ছাড়া শুধু নার্সিং ডিপ্লোমা করেও যুক্তরাজ্যে স্টুডেন্ট ভিসা পাওয়া সম্ভব এবং পরে সেটি কাজের ভিসায় রূপান্তর করা যায়। যদিও বাস্তবে এটি অত্যন্ত জটিল ও অনিশ্চিত একটি প্রক্রিয়া।
প্রতারণার ধরন এখানেই থেমে নেই। একাধিক ব্যক্তি একইসঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্য দেশেও রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করে রাখেন, যাতে যুক্তরাজ্যে অবস্থানের সময় দীর্ঘায়িত হয়। ব্রিটেনের আইন অনুযায়ী এ ধরনের আবেদনের জন্য পারিবারিক বা বৈধ সম্পর্কের প্রমাণ থাকা আবশ্যক কিন্তু সেগুলোও ভুয়া তথ্য দিয়ে জোগাড় করা হচ্ছে।
https://inews.zoombangla.com/%e0%a6%86%e0%a6%a8%e0%a7%8d%e0%a6%a4%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%9c%e0%a6%be%e0%a6%a4%e0%a6%bf%e0%a6%95-%e0%a6%ad%e0%a6%bf%e0%a6%b8%e0%a6%be-%e0%a6%b8%e0%a6%82%e0%a6%95%e0%a6%9f%e0%a7%87-%e0%a6%ac/
এই পরিস্থিতি ব্রিটিশ সরকার ও বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারকে চাপে ফেলেছে। তার নেতৃত্বে ‘ব্রিটেনে একজন এলে, একজন যাবে’ নীতি কার্যকর হলেও এর ফলাফল এখনও অস্পষ্ট। অভিবাসন প্রবণতা ও দুর্বল সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ এখন যুক্তরাজ্যের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য বড় একটি উদ্বেগের জায়গা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।