নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর: ‘প্রতিদিন একজন একজন করে মরার খবর পাইতাছি। মনটা খুবই খারাপ।’ কথাগুলো বলছিলেন পোশাক শ্রমিক আমেনা বেগম। তিনি তেলিরচালা এলাকার একটি কলোনিতে বসবাস করেন। ১৩ মার্চ তেলিরচালা কলোনিতে গ্যাস সিলিন্ডার লিকেজ থেকে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। ওই ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৩জনের মৃত্যু হয়েছে। অনেক পরিবার বাসা তালাবদ্ধ রেখে মৃত স্বজনকে নিয়ে গ্রামে ফিরে গেছেন। কলোনিতে তৈরি হয়েছে শোকাবহ পরিবেশ।
স্থানীয়রা জানান, গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার তেলিরচালা এলাকায় গত বুধবার ইফতারের অগে গ্যাস সিলিন্ডার লিকেজ থেকে সৃষ্ঠ আগুনে দগ্ধ ৩৬ জন দগ্ধ হয়েছেন। এখন পর্যন্ত ১৩ জন মারা গেছেন। আহত ১৩ জন শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বাকি দশজন বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
ঘটনার একদিন পর থেকে প্রতিদিন এক জন বা দুজনের মৃত্যুর খবর আসছে। এত আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে পুরো কলোনিতে।
তেলিরচালা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সারি সারি টিনের ঘর। প্রতিটি ঘরেই একটি করে পরিবারের বসবাস। ১০ ফুট বাই ১০ ফুট ঘরেই গ্যাসের সিলন্ডার দিয়ে চলে রান্নার কাজ। প্রতিটি ঘরেই যেন তারা একটি বোমা নিয়ে বসবাস করছেন। সেখানে টিনের ৬০০ ঘর রয়েছে। এসব ঘরে প্রায় দুই হাজার মানুষের বসবাস। একটি গলিতে বসে ৫-৬ জন বসে আগুনে দগ্ধদের নিয়ে কথা বলছিলেন আর আফসোস করছিলেন।
কোনাবাড়ি এম এম গার্মেন্টেসের শ্রমিক আমির হোসেন বলেন, পাশের বাসায় গ্যাসের শব্দ শুনে আমার মেয়েটা দেখতে গিয়েছিল। তখন হঠাৎ আগুন ধরে যায় আর আমার মেয়েটার পা পুড়ে যায়। পোড়া পা নিয়ে মেয়েটা অনেক কষ্ট করছে।
গৃহিণী ইসমত আরা বলেন, আমাদের সামনে ঘরে তিন মাস আগে পরিবারসহ ভাড়া থাকতে শুরু করেন সজল মিয়া। আগুনে তার ছেলে তাওহিদ ও মেয়ে তায়েবার মৃত্যু হয়েছে। মৃত ছেলে মেয়েকে নিয়ে তারা গ্রামে ফিরে গেছে। সেদিনের পর থেকে তাদের ঘরে তালা ঝুলছে।
নিহত ১৩ জন হলেন-সিরাজঞ্জের শাহাজাপুর উপজেলার আলামপুর গ্রামের হোসেন মোল্লার ছেলে সোলায়মান মোল্লা (৪৫), তিনি মৌচাক, তেলিরচালা ভাংগারির ব্যবসা করতেন। রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আলামপুর গ্রামের মমতাজ রাজ্জাকের ছেলে আরিফ হোসেন (৪০)। তিনি মৌচাক এলাকায় স্থানীয় একটি কারখানার চাকরি করতেন। বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার মানদহ গ্রামের আফসার উদ্দিনের ছেলে মনসুর আলী (৩৫), তিনি ওই এলাকায় রাজমিস্ত্রীর কাজ করতেন। ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার বড়ইহাটি গ্রামের সজল মিয়ার মেয়ে তায়েবা (৫) ও ছেলে তাওহিদ (৭)।
সিরাজগঞ্জর জসমোদপির উপজেলার বেনুটিয়া গ্রামের আব্দুল রাজ্জাকের মেয়ে নার্গিস আক্তর। তিনি স্থানীয় একটি গার্মেন্টস চাকুরি করতেন। সিরাজগঞ্জের শাহাজাতপুর বেড়াকোলা গ্রামের সাবেদ আলী খার ছেলে মাইদুল ইসলাম (২৫), সে ওই এলাকায় একটি ঝুটের গোডাউনের শ্রমিক ছিলেন। একই উপজেলার ব্যারাকোলা গ্রামের আইনাল মিয়ার ছেলে জহিরুল কুটি (৩২)। তিনি পেশায় একজন মধু বিক্রেতা ছিলেন। একই উপজেলার তারুটিয়া গ্রামের শাহ আলমের ছেলে রাব্বি (১৩)। ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার সদর এলাকার শফিকুল ইসলামের ছেলে সোলাইমান (৯)। টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার ইদুলপুর গ্রামের মোহাম্মদ আলীর ছেলে মোতালেব হোসেন (৪০)। কুষ্টিয়ার খোকসা ইয়াসিন আরাফাত (২১) ও লালমনিরহাটের হাতিবান্ধা মশিউর আলী (২২)।
কালিয়াকৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাউছার আহাম্মেদ বলেন, নিহত ব্যক্তিদের পরিবারকে জেলা প্রশাসক থেকে ২০ হাজার করে টাকা হয়েছে । অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।