জুমবাংলা ডেস্ক: গাজীপুরের শ্রীপুর রেলস্টেশনের প্লাটফর্মের দক্ষিণ পাশের উম্মুক্ত জায়গা গরুর দুধের চায়ের জন্য প্রসিদ্ধ হয়ে উঠেছে। স্থানীয়রা গরুর দুধের চা বলতে একনামে “চা মহল”কেই চেনেন। এখানে তেরোটি দোকানে প্রতিদিন প্রায় আট থেকে নয় হাজার কাপ গরুর দুধের চা, ১৫০ গ্লাস দুধের স্বর (স্থানীয় ভাষায় মালাই) বিক্রি হয়। প্রতিকাপ চা ১০ টাকা দরে এবং প্রতি গ্লাস মালাই ৮০ টাকা দরে বিক্রি হয়। ঢাকা ট্রিবিউন-এর প্রতিবেদক রায়হানুল ইসলাম আকন্দ-এর প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বিস্তারিত।
দুধের চা ও দুধের স্বর (মালাই) কেন্দ্রিক এই “চা মহলে” প্রতিদিন প্রায় লক্ষাধিক টাকার চা বিক্রি হয় বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। তারা জানান, ব্যক্তিগত আড্ডা, অনানুষ্ঠানিক রাজনৈতিক সংলাপ, ব্যক্তিগত বা কখনো পারিবারিক বিরোধের নিষ্পত্তিও হয় এই চা মহলে।
এই জায়গাটিতে প্রতি শনিবার ও মঙ্গলবার ধানের হাট বসতো। অন্যান্য দিন বিক্রি হতো মৌসুমী ফল। তবে সেগুলো এখন রেললাইন ঘেঁষে অল্প জায়গার মধ্যে বেচা-কেনা হয়।
শ্রীপুর পৌরসভার লোহাগাছ গ্রামের সরাফত আলী বলেন, গরুর দুধের চায়ের কারণেই শ্রীপুরের রেলগেইট “চা মহল” হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। বড় পাতিলে সারাদিন দুধ গরম করার পর বিকেলের চায়ের স্বাদটা ভিন্নমাত্রা পায়। সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চলে চা চক্র।
শ্রীপুরের আনসার রোড এলাকার মেঘনা ডেনিম কারখানার সহকারী ব্যবস্থাপক (মানব সম্পদ) রায়হান আকন্দ সুজন বলেন, এখানের চায়ের দোকানের পরিবেশ খুবই পরিচ্ছন্ন। তাই, অফিসে কাজ করে দিন শেষে এখান দিয়ে বাসায় যাওয়ার পথে প্রতিদিনই চা খেয়ে যাওয়া হয়। মাঝেমধ্যে বন্ধুদের নিয়েও চা মহলে আড্ডায় বসে পড়ি।
জাহাঙ্গীর আলম আট বছরের বেশি সময় ধরে “চা মহলে” চা বিক্রি করেন। প্রথম দিকে দুধ ছাড়া প্রতি কাপ চা তিন টাকা করে বিক্রি করতেন। ওই সময় কৌটা বা পাস্তুরিত তরল দুধ দিয়ে দুধ ব্যবহৃত হতো। প্রতি কাপ চায়ের মূল্য রাখতেন পাঁচ টাকা। তার ব্যবসা শুরুর কিছু দিনের মধ্যেই গরুর দুধের সহজলভ্যতা দেখা দেয়। গরুর দুধ দিয়ে চা বিক্রি শুরু করেন। তার মতো অনেকেই গরুর দুধের চা বিক্রি শুরু করেন। বছর তিনেক আগে থেকে প্রতি কাপ দুধ চা ১০ টাকায় বিক্রি শুরু করেন। প্রতিদিন দুধের স্বর (স্থানীয় ভাষায় মালাই) বিক্রি করেন কমপক্ষে ৮ গ্লাস। তার স্টল রেলগেট থেকে সামান্য ভেতরের দিকে। তিনি প্রতিদিন প্রায় ২৫ লিটার দুধের চা বিক্রি করেন।
পারভেজ ও এনামুল নামে দুই ভাই একটি চা স্টল পরিচালনা করেন। এনামুল জানান, বড় পাতিলে প্রতিদিন সকাল থেকে ৩৫ লিটার দুধ গরম করে চা বিক্রি করেন। এর মধ্যে কমপক্ষে ১৮ গ্লাস দুধের স্বর বা মালাই বিক্রি করা হয়। প্রতিদিন গড়ে পাঁচশো থেকে আটশো কাপ চা বিক্রি করেন তিনি।
অপর চা স্টলের মালিক সেলিম মিয়া। তিনি জানান, প্রতিদিন তার ২৮ কেজি দুধ লাগে। আগে ৫০ টাকা কেজি দুধ কিনতে পারতেন। এখন দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় ৬০ টাকা লিটার দুধ কিনতে হয়।
মুক্তমঞ্চে কোনো সভা সামাবেশের আয়োজন হলে একদিন আগেই সব চা স্টলের মালিকেরা তাদের শামিয়ানা সরিয়ে নিয়ে যান। বড় কর্মসূচি হলে দুদিন আগেই সরিয়ে নেন। ওই দিনগুলোতে চা বিক্রির জায়গা না থাকায় চা স্টল সাজানো হয় না। চা পানের জন্য ময়মনসিংহ, জামালপুর, ঢাকাসহ বিভিন্ন গন্তব্যে যাতায়াতকারী ট্রেন যাত্রীদের একটি অংশের কাছেও শ্রীপুরের “চা মহলে”র গরুর দুধের চা’য়ের বেশ কদর রয়েছে।
“চা মহলে” নিয়মিত চা পান করেন শ্রীপুর মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলী সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক সেলিম মোল্লা। তিনি জানান, শ্রীপুর বাজারে গরুর দুধের চা বিক্রির একটি ঐতিহ্য আগে থেকেই ছিল। গোপাল সোম, শচীন্দ্র পাল, ঊষা মাস্টারের মিষ্টির দোকানসহ কয়েকটি হোটেলে গরুর দুধের চা বিক্রি হতো। রেলগেট এলাকায় গত ১৫ বছর আগে থেকে একত্রে বেশ কয়েকটি চায়ের দোকানে গরুর দুধের চা বিক্রি হচ্ছে।
“চা মহল” ঘুরে দেখা গেছে, রেলস্টেশনের খোলা ময়দানে ১৩টি চা স্টল রয়েছে। দুই পাশে দুটি সারিবদ্ধ শামিয়ানার নিচে চা স্টলের পাশাপাশি মুখরোচক খাবারের তিনটি, ফলের ৬টি ও পিঠার একটি অস্থায়ী দোকান রয়েছে। চা স্টল ও দোকানগুলোর সামিয়ানা বাঁশের খুঁটিতে টিনের চাল দিয়ে নির্মাণ করা। ছোট ছোট বেঞ্চে বসে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজন চা পানে ব্যস্ত রয়েছেন।
যাত্রা শুরুর মাত্র ১১ দিনের মাথায় বন্ধ হয়ে গেল ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেন
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।