আন্তর্জাতিক ডেস্ক : চোখে ঘুম দিয়ে যেতে ঘুমপাড়ানি মাসি পিসিকে কখনই আসতে হয়নি। ঘুমের বড়িও খেতে হয়নি। আসলে ঘুম তাঁর বড্ড প্রিয়। ঘুম যে তাঁর বন্ধু। তাই তো “ঘুমের দেশের রানি” হয়ে নিন্দুকদের ঘুম উড়িয়ে দিলেন ঘুমকাতুরে ত্রিপর্ণা চক্রবর্তী। তাঁর এই দুর্নামই তাঁকে স্বীকৃতি এনে দিয়েছে। প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে জিতে নিয়েছেন পাঁচ লাখ টাকা।
একটি ম্যাট্রেস সংস্থার তরফে এই ঘুমের প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছিল। এই প্রতিযোগিতায় যোগদান কী ভাবে? MBA করতে ঢুকেই এই প্রতিযোগিতার কথা জানতে পেরেছিলেন তিনি। বলেন, “যখন আবেদন করেছিলাম তখন বুঝতে পারিনি এটা প্রতিযোগিতা। ইন্টার্নশিপের মত ছিল বিষয়টা। পরে গিয়ে দেখি ঘুমানোর জন্য পয়সাও দেওয়া হবে।” কী ভাবে পুরো প্রক্রিয়াটা চলেছে? আয়োজক সংস্থা জানিয়েছে, একাধিক রাউন্ড ছিল। ইন্টারভিউ হয়েছে। সেখানে ঘুমকে কে কতটা গুরুত্ব দিয়ে দেখছে সেই বিষয়টা দেখা হয়েছে। সাড়ে পাঁচ লাখ আবেদনপত্র জমা পড়েছিল। সেখান থেকে ১৫ জনকে বেছে নেওয়া হয়। তাঁদের ১০০ দিন ৯ ঘণ্টা করে ঘুমোতে বলা হয়েছিল। দেওয়া হয়েছিল একটি ম্যাট্রেস ও স্লিপ ট্র্যাকার। সেখান থেকে ফাইনালের জন্য চারজনকে বেছে নেওয়া হয়। আর সেই চারজনের মধ্যেই জায়গা করে নিয়েছিলেন ত্রিপর্ণা।
তবে এই প্রতিযোগিতার জন্য জোর করে ত্রিপর্ণাকে ঘুমোতে হয়নি। এই ঘুমের জন্যই একসময় চক্রবর্তী বাড়ির সকালটা শুরু হতো চিৎকার চেঁচামেচি দিয়ে। বেঁধে যেত তুলকালাম। ঘুমের জন্য মায়ের বকা তো খেতেই হত ত্রিপর্ণাকে। এমনকী, স্কুল কলেজেও ঘুমাতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। ঘুম নিয়ে তাঁর অনেক মজার ঘটনাও রয়েছে। শ্রীপর্ণা বলেন, “একবার অঙ্ক পরীক্ষা দিতে গিয়ে হলেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। ঘুম ভাঙে ৪০ মিনিট পরে। স্যাট পরীক্ষা দিতে গিয়েও ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। পরীক্ষক ডেকে চা খাইয়েছিলেন।” এই ঘুমের জন্যই ছোটবেলায় প্রতিদিন স্কুলের বাস মিস করাটা অভ্যাসে পরিণত হয়ে গিয়েছিল ত্রিপর্ণার। অগত্যা বাইকে মেয়েকে নিয়ে বাস ধরাতে ছুট দিতে হত বাবাকে। যেখানে সেখানে গভীর ঘুমে ডুবে যেতে পারার অভ্যেসটা তাঁর ছিল ছোটবেলা থেকেই। খুব ছোট্টবেলায় ঘুমের মধ্যে বিছানা থেকে পড়ে মশারিতে ঝুললেও টের পাননি। বাবা মা ডাকতে তার ঘুম ভেঙেছিল। আর একবার তো কলকাতা থেকে দিল্লি পৌঁছে গিয়েছিলেন এক ঘুমে!
তবে যেখানে সেখানে ঘুমিয়ে পড়াটা যে ভালো বিষয় নয় সেটা এই প্রতিযোগিতায় যোগ দিয়ে বুঝেছেন ত্রিপর্ণা। প্রথম ১০০টা দিন যে তাঁর সমস্যা হয়নি এমনটা নয়। কারণ রাতে অফিস থাকত বলে তাঁকে ঘুমোতে হত দিনের বেলায়। অন্য প্রতিযোগীরা যেখানে ঘুমোত রাতেই। আর কথায় আছে দিনে যতই কেউ ঘুমাক রাতের ঘুম রাতের ঘুমই। তাই সেটা ম্যানেজ করাটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ ছিল বলে জানিয়েছেন তৃপর্ণ। বলেন,” ঘরে যখন তখন যে কেউ ঢুকে পড়ত। পুজো হত। কাজের লোক আসত। সমস্যা তো হত ই। প্রথম প্রথম ঘুম আসত না। ভালো স্কোর হত না। পরে পেরেছি।”
কিন্তু, ঘুমানোটা যে একটা চাকরির মতো সেটা এই প্রতিযোগিতা থেকে বুঝতে পেরেছেন তিনি। বলেন,” ঘুম যাতে ভালো হয় সেটা নিশ্চিত করাও আমাদের দায়িত্ব”। এই সচেতনতাটা সবার মধ্যে কিছুটা হলেও ছড়াতে পেরেছেন তিনি। ত্রিপর্ণার কথায়, “আমি গর্বিত। কারণ মুম্বইয়ের বাসিন্দারা যখন বলে তাঁরা রাতে ঘুমোন না, চেন্নাইয়ের বাসিন্দারা বলেন তাঁরা নাকি একমাত্র মৃত্যুতেই ঘুমোন তখন বাঙালির ঘুম নিয়ে দুর্নাম রয়েছে। কিন্তু, এই ঘুম দিয়েই আজ বাংলাকে গর্বিত করতে পেরেছি।”
তবে প্রাপ্তির ভাঁড়ার এখানেই শেষ হয়নি। কারণ যে মা এক সময় বলত বেলা পর্যন্ত শুয়ে থাকলে ভাগ্যও শুয়ে থাকবে তিনিও এখন বলছেন “ঘুমো”। কারণ সেই ঘুমটাই তো তাঁর ভাগ্য বদলে দিয়েছে। আর যে পড়শিরা একসময় ফিসফাস করতেন, তাঁরাও এখন চাইছেন একটু শান্তিতে ঘুমোতে! সূত্র : এই সময়
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।