
ঐকমত্য কমিশনের প্রতিবেদনে বিএনপির মতামত উপেক্ষা করা হয়েছে অভিযোগ করে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, “নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ হলে সেই দায়ভার প্রধান উপদেষ্টাকেই নিতে হবে।”
বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত ‘বিচার-সংস্কার-নির্বাচন, অন্তর্বর্তী আমলে বাংলাদেশ’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। বইটি লিখেছেন সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক এহসান মাহমুদ, প্রকাশ করেছে আদর্শ প্রকাশনী।
মির্জা ফখরুল বলেন, “ঐকমত্য কমিশন জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রতারণা করেছে। বিএনপি যে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছিল, তা প্রতিবেদনে নেই— পুরোপুরি উপেক্ষা করা হয়েছে। এটা কোনো ঐকমত্য নয়, এটা প্রতারণা।”
তিনি প্রশ্ন তোলেন, “তাহলে ঐকমত্য কমিশন করা হয়েছিল কেন? জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এটা এক ধরনের প্রতারণা ছাড়া কিছু নয়।”
প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে ফখরুল বলেন, “সত্যিকার অর্থে যেটুকু সংস্কার দরকার, সেই সংস্কার সম্পন্ন করে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিন। জনগণ সেই নির্বাচনের ফল মেনে নেবে। কিন্তু প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ হলে তার দায়ভার আপনাকেই বহন করতে হবে।”
অনুষ্ঠানে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, ‘চর্চা ডটকম’-এর সম্পাদক সোহরাব হাসান, সাংবাদিক শাহনাজ মুন্নীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও বুদ্ধিজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, “গতকাল ঐকমত্য কমিশন তাদের প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দিয়েছে। অবাক হয়ে দেখেছি— আমরা যেসব বিষয়ে একমত ছিলাম না, সেগুলোতে আমাদের দেওয়া ‘নোট অব ডিসেন্ট’ বাদ দেওয়া হয়েছে। এটা ঐকমত্য নয়, প্রতারণা। অবিলম্বে এসব সংশোধন করতে হবে, নইলে এটি ঐক্যের বিপরীতে যাবে।”
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, একটা সত্যিকার গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমেই দেশের সংকটগুলোর সমাধান সম্ভব। সেই নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের যে পার্লামেন্ট গঠিত হবে, সেই পার্লামেন্টই সংবিধানের মধ্য দিয়ে সংস্কারের বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করবে। আমরা সে কারণে ৫ আগস্টের পরই নির্বাচনের কথা বলেছিলাম। তখন অনেকে বলেছিলেন, বিএনপি ক্ষমতা চায় বলেই তাড়াহুড়ো করছে। আজ প্রমাণ হচ্ছে, নির্বাচন যত দেরি হচ্ছে, ততই সেই শক্তিগুলো শক্তিশালী হচ্ছে। যারা বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়। তিনি আরও বলেন, আজ সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রবলভাবে পক্ষ-বিপক্ষ তৈরি করে প্রতিপক্ষকে আঘাত করার প্রবণতা চলছে। অথচ এই সময়টা আমাদের ঐক্যের সময়। ন্যূনতম বিষয়গুলোতে ঐকমত্যে পৌঁছে একটা জাতীয় পথনির্দেশ তৈরি করার সময় এটা। কিন্তু সেই জায়গায় বিভাজন তৈরি করা হচ্ছে।
বিএনপি সংস্কার চায় না- এমন প্রচারণাকে মিথ্যা আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, বিএনপির জন্মই হয়েছে সংস্কারের মধ্য দিয়ে। মুক্তিযুদ্ধের পর একদলীয় শাসনের পরিবর্তন ঘটিয়ে ’৭৫-পরবর্তী বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিল বিএনপি। অথচ কনসাসলি একটা প্রোপাগান্ডা চালানো হয়েছে যে বিএনপি সংস্কারবিরোধী। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা জাতি হিসেবে ঠিক কোথায় যেতে চাই- সেটা সঠিকভাবে উপলব্ধি করতে পারছি কি না, সেটা এখন বড় প্রশ্ন। এত বড় একটা অভ্যুত্থান, এত ত্যাগ, এত প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত পরিবর্তন- আমরা কি সেটা জাতির কল্যাণে কাজে লাগাতে পারছি? দুর্ভাগ্যজনকভাবে দেখছি, যতই দিন যাচ্ছে আমরা ততই বিভক্ত হয়ে পড়ছি। বিভক্তির এ প্রক্রিয়া কারা করছে, কেন করছে- এটা আমাদের বুঝতে হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



