লাইফস্টাইল ডেস্ক : সুস্থ থাকতে শরীরচর্চা আর স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি প্রতিরাতে পর্যাপ্ত ঘুমের প্রয়োজন আছে।
অনিয়মিত ঘুমের কারণে শরীর ছাড়াও মানসিক সমস্যাতেও প্রভাব ফেলে। প্রশ্ন জাগতে পারে, গভীর ঘুম বলতে কী বোঝায়?
এই ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের ঘুম-বিষয়ক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ‘স্লিপলেস ইন নোলা’র পরামর্শক ও চিকিৎসক নিলং ভিয়াস বলেন, “গভীর ঘুম সম্পর্কে বুঝতে হলে প্রথমে ঘুম চক্র এবং এর স্তর সম্পর্কে জানতে হবে।”
যুক্তরাষ্ট্রের ‘স্লিপ ফাউন্ডেশন’য়ের এই সদস্য ব্যাখ্যা করেন, “ঘুম চক্রের দুটি স্তর রয়েছে- আরইএম (র্যাপিড আই মুভমেন্ট) অর্থাৎ ঘুমন্ত অবস্থায় ঘন ঘন চোখ নড়া এবং এনআরইএম (নন-র্যাপিড আই মুভমেন্ট) মানে ঘুমের মধ্যে ঘন ঘন চোখ না নড়া।”
এনআরইএম স্তর আবার তিন স্তরে বিভক্ত। এন ওয়ান (হালকা ঘুম) এন টু (মধ্যম ঘুম) এবং এন থ্রি(গভীর ঘুম)
ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ডা. ভিয়াস আরও ব্যাখ্যা করেন, “সারারাতে মানুষের শরীর ঘুম চক্রের প্রতি ৯০ মিনিটের মধ্যে চার থেকে পাঁচটি স্তরে ওঠানামা করে।”
এন ওয়ান হালকা ঘুম, এন টু আরেকটু গভীর ঘুম যেখানে স্মরণশক্তির সমন্বয় হয় এবং এন থ্রি হল এনআরইএম’য়ের গভীর স্তর।
যে কারণে গভীর ঘুম গুরুত্বপূর্ণ
“ঘুমের প্রতিটি স্তর সার্বিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। আর গভীর ঘুম আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটা শক্তি ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় প্রভাব ফেলে, কোষের ক্ষয় পূরণ হয়, দেহের বেড়ে ওঠার হরমোন নিঃসরণে সহায়তা করে”- ব্যাখ্যা করেন ডা. ভিয়াস।
তাই ঘুমের মধ্যে গভীর ঘুম না হলে জেগে ওঠার পর ক্লান্ত লাগতে পারে। যে কারণে সারাদিনের প্রচণ্ড খাটুনি বা কাজের শেষে নতুনভাবে তরতাজা অনুভব করতে গভীর ঘুমের প্রয়োজন।
তবে একদিনের জন্যই নয়, গভীর ঘুম পুরো জীবনকালে ইতিবাচক প্রভাব রাখে। অর্থাৎ ভালো ঘুমের অভ্যাস থাকলে দীর্ঘ জীবন পাওয়া সম্ভব হয়।
মার্কিন মনোবিজ্ঞানি ও ‘দি স্লিপ ডক্টর’ হিসেবে খ্যাত ড. মাইকেল ব্রুস একই প্রতিবেদনে বলেন, “গভীর ঘুমের সময় মস্তিষ্কের ‘বর্জ্য অপসারণ ব্যবস্থা’র কার্যক্রমের মাধ্যমে নির্দিষ্ট কিছু প্রোটিন দূর করে, যা না করলে ‘আলৎঝাইমার’স রোগের সম্ভাবনা বাড়ে ও জ্ঞানীয় শক্তি কমে।”
আরইএম নাকি গভীর ঘুম উপকারী?
আরইএম- ঘুম চক্রের আলাদা স্তর হলেও, এটাকে চতুর্থ ও চূড়ান্ত স্তর হিসেবে ধরা হয়। ঘুমের মধ্যে ঘন ঘন চোখ নাড়লে স্বপ্ন দেখছে বলে ধরে নেওয়া হয়। আর অনেকেই এটাকে গভীর ঘুম হিসেবে ভুল করেন।
ডা. ভিয়াস বলেন, “আসলে আরইএম ঘুমকে কম বিশ্রাম হিসেবে দেখা হয়। তারমানে এই নয়, এই ঘুমের কোনো মূল্য নেই।”
যদিও আরইএম এবং গভীর ঘুম- দুটি সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়। আর দুটোরই ভিন্ন ভিন্ন কারণে প্রয়োজন আছে।
ড. ব্রুস বলেন, “আরইএম ঘুমের পর্যায়ে ক্ষণিকের স্মরণ শক্তি থেকে তথ্য দীর্ঘ স্মরণ শক্তিতে স্থানান্তরিত হয়, আর আবেগের প্রক্রিয়াজতকরণ ঘটে। অন্যদিকে গভীর ঘুমের পুরো প্রভাব পড়ে শরীরের ওপর। পাশপাশি দীর্ঘ স্মরণ শক্তি তৈরিতে সাহায্য করে।”
প্রতি রাতে যে পরিমাণ গভীর ঘুম প্রয়োজন
বয়স, লিঙ্গ, শারীরিক অবস্থা, ফিটনেসের মাত্রা এবং পরিবেশের ওপর ঘুমের পরিমাণ নির্ভর করে।
ড. ব্রুস বলেন, “সাধারণ নির্দেশনা অনুসারে, আমরা সাত থেকে নয় ঘণ্টা ভালো ঘুমের পরামর্শ দেই। তবে বৃহৎ আকারে সেটা পরিবর্তিত হতে পারে।”
অভিনব সিং, ‘ফেলো মেম্বার অফ দি আমেরিকান অ্যাকাডেমি অফ স্লিপ মেডিসিন (এফএএএসএম)’ এবং ‘ইন্ডিয়ানা স্লিপ সেন্টার’য়ের চিকিৎসক পরিচালক বলেন, “সাধারণভাবে সাত থেকে আট ঘণ্টা ঘুম যথেষ্ট।”
‘স্লিপ ফাউন্ডেশন’য়ের মেডিকেল রিভিউ বিশেষজ্ঞ ডা. সিং আরও বলেন, “যে কোনো বয়সে যদি স্তর হিসেবে চিন্তা করা হয় তবে সার্বিক ঘুমের ২০ থেকে ২৫ শতাংশ হওয়া উচিত গভীর ঘুম আর ২০ থেকে ২৫ শতাংশ হওয়া উচিত ‘আরইএম’।
পর্যাপ্ত গভীর ঘুম না হলে যা হয়
“গভীর ঘুম না হলে অফিসিয়ালি ধরে নেওয়া হয় পর্যাপ্ত ঘুম হচ্ছে না”, বলেন ড. ব্রুস।
“আর অপর্যাপ্ত ঘুম দেহে প্রতিটি অঙ্গে প্রভাব ফেলে এবং প্রতিটা রোগের অবস্থা শুরু হয়। যাই করুন না কোনো, রাতে ভালোমতো ঘুমাতে হবেই।”
অপর্যাপ্ত ঘুমের কারণে দেখা দেবে- সময়ের সাথে ধীরে চলার প্রবণতা, টেস্টোস্টেরনের অপর্যাপ্ততা, স্মরণশক্তির ক্ষয়, মনোযোগের অভাব, সিদ্ধান্ত নিতে না পারা ইত্যাদি। পাশাপাশি বিষণ্নতা ও মানসিক সমস্যায় ভোগার সম্ভাবনাও বাড়ায়।
এছাড়া শারীরিক ক্ষতিতো আছেই। ওজন বাড়তে পারে পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে।
গভীর ঘুম কখন হয়
একটি পূর্ণ ঘুম চক্রের সময় হল গড়ে ৯০ মিনিট। এর মধ্যে ঘুমের চারটি স্তর (এন ওয়ান, এন টু, গভীর ঘুম এবং আরইএম স্লিপ) বিদ্যমান। সারারাত ধরে প্রতিটা স্তরের সময়ের পরিমাণ পরিবর্তন হয়।
‘দি স্লিপ ফাউন্ডেশন’য়ের তথ্যানুসারে, সাধারণভাবে সর্বোচ্চ গভীর ঘুম হয় রাতের প্রথমভাগে। তারপরের ঘুম চক্রে কম সময় খরচ হতে থাকে- এন ওয়ান, এন টু্ এবং এন থ্রি স্তরে। আর বেশি সময় যায় আরইএম ঘুমে।
গভীর ঘুম থেকে জেগে উঠলে যা হয়
যেহেতু এন থ্রি স্তরটা হল গভীর ঘুমের, তাই এই সময় জেগে ওঠাটাও কষ্টকর।
ডা. ব্রুস বলেন, “এই স্তর থেকে জেগে ওঠা যেহেতু কঠিন, সে কারণে কেউ যদি গভীর ঘুম থেকে উঠে যায় তবে মাতাল বোধ হবে। একে বলে ‘স্লিপ ইনার্শা’ বা ঘুমের জড়তা।”
এই অবস্থায় থাকা কোনো মানুষকে জোর করে ওঠানোর পর আবারও সে ঘুমিয়ে পড়তে পারে। এর মানে হল তার আরও বিশ্রামের প্রয়োজন।
যদি প্রতি সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর মনে হয়- আরেকটু যদি ঘুমাতে পারতাম- তাহলে ধরে নিতে হবে রাতে হয়ত ভালো গভীর ঘুম হয়নি। এক্ষেত্রে ঘুমের রুটিনের দিকে লক্ষ্য দেওয়ার পাশাপাশি খাদ্যাভ্যাস ও ভালো ঘুম হওয়ার অভ্যাসগুলো রপ্ত করতে হবে।
আর যদি ঘুমের অভাব লেগেই থাকে তবে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।