সম্প্রতি পরমাণুর কোয়ান্টাম পর্যায়ে আলো এবং পদার্থ কীভাবে একে অন্যের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়ায় জড়ায়, তা অনুসন্ধান করে নতুন তত্ত্ব আবিষ্কার করেছেন একদল পদার্থবিজ্ঞানী। শুধু তাই না, এ থেকে ফোটনের নিখুঁত আকৃতিও ব্যাখ্যা করেছেন তাঁরা প্রথমবারের মতো। গত ১৪ নভেম্বর ফিজিক্যাল রিভিউ জার্নালে এ সংক্রান্ত গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছেন যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব বার্মিংহামের পদার্থবিজ্ঞানীরা।
মহাবিশ্বে আলো একই সঙ্গে কণা এবং তরঙ্গ হিসেবে থাকে। আলোর এ ধর্মকে বলা হয় কণা-তরঙ্গ দ্বিত্বতা। আলোর তরঙ্গ ধর্মের মতো কণাধর্ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায় না। আলোর কণা ফোটনের কোনো ভর নেই। ফলে মহাবিশ্বের সর্বোচ্চ গতিতে সে ছুটতে পারে। ভর না থাকলেও ভরবেগ আছে এ কণার। তাই আলোর কণার শক্তি কাজে লাগিয়ে সোলার প্যানেলে বিদ্যুৎ উৎপাদন কিংবা মহাকাশযানে সৌরপাল লাগিয়ে চলাচল ইত্যাদি করা হলেও, ফোটন দেখতে ঠিক কেমন এবং ফোটনের প্রকৃতি ঠিক কেমন, তা এতোদিন অজানা ছিল।
আমরা কখনো সরাসরি আলোকে দেখতে পাই না। আলো বস্তুতে প্রতিফলিত হয়ে আমাদের চোখে এসে পড়লে তখন আমরা কেবল ওই বস্তুকে দেখতে পাই। কারণ, আলো নিজেই ওই বস্তুর গঠন সম্পর্কিত তথ্য বহন করে নিয়ে আসে। সেক্ষেত্রে ফোটনকে মানব চোখ দিয়ে দেখার চেষ্টা করাই সম্ভব না। তাহলে বিজ্ঞানীরা কীভাবে ফোটনের আকৃতি জানলো?
পদার্থের অণু বা পরমাণু থেকে আলোর কণা কীভাবে নির্গত হয় এবং পরিবেশের প্রভাবে কীভাবে কণাগুলো আকৃতি নির্ধারিত হয় সে বিষয়টি বিস্তারিত উঠে আসে ওই গবেষণাপত্রে। এ মিথস্ক্রিয়া আলো কীভাবে চলাচল করে তা নিয়ে অসংখ্য সম্ভাবনা উন্মোচন করেছে। ফলে আগে থেকেই আলো চলাচলের উপায় নিশ্চিতভাবে বলা খুব কঠিন হয়ে গিয়েছে।
বিগত কয়েক বছর ধরেই কোয়ান্টাম পদার্থবিজ্ঞানীরা এরকম গাণিতিক মডেল তৈরির চেষ্টা করছেন। কিন্তু সফলতা পাননি। অবশেষে বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেদের হাতে ধরা দিয়েছে সমাধান। এর মাধ্যমে তারা বিভিন্ন সম্ভাবনাকে একত্রিত করে গাণিতিক মডেল দাঁড় করিয়েছেন। তাঁদের এই সমাধানের মাধ্যমে ফোটন কীভাবে পরিবেশের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়ায় জড়ায় তা ব্যাখ্যা করা যাচ্ছে। শুধু তাই না, ফোটনের শক্তি কীভাবে ছড়িয়ে পড়ে সে ব্যাখ্যাও দিয়েছেন তাঁরা।
মডেলটি ব্যবহার করে প্রথমবারের মতো ফোটনের ছবি তৈরি করেছেন অধ্যাপক বেঞ্জামিন ইউয়েন এবং তাঁর সহকর্মীরা। তবে কাজটি সহজ ছিল না। তার ভাষায়, ‘আমাদের গাণিতিক মডেলটি আপাতদৃষ্টিতে সমাধান অযোগ্য সমস্যাটিকে সমাধানযোগ্য সমস্যায় পরিণত করেছে। আর এই মডেলের ফলাফল হিসেবে, আমরা একটি ফোটনের এই চিত্রটি তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি, যা পদার্থবিজ্ঞানে আগে দেখা যায়নি।’
আবিষ্কারটি নানা দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। তথ্যপ্রযুক্তিতে নিরাপদ যোগাযোগ ব্যবস্থা, রোগ নির্ণয় কিংবা আণবিক পর্যায়ে রাসায়নিক বিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণের মতো নানা ক্ষেত্রে এ আবিষ্কার সুফল পাওয়া যাবে। ফোটন পদার্থের সঙ্গে ঠিক কীভাবে মিথস্ক্রিয়ায় জড়ায় তা জানার মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা কোয়ান্টাম কম্পিউটার বা এধরনের সুক্ষ্ম যন্ত্রের জন্য নতুন যন্ত্রাংশ তৈরি কিংবা সক্ষমতা সম্পন্ন সৌরপ্যানেল তৈরি করা সম্ভব হবে বলে আশা করছেন বিজ্ঞানীরা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।