নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম: চলতি মাসের শুরুর দিকে টানা প্রায় পাঁচদিন পানির নিচে ডুবে থাকার পর আবারও প্রবল বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে বন্দর নগরী চট্টগ্রাম। নগররের নিম্নাঞ্চলসহ বিস্তীর্ণ এলাকা পানিতে তলিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে নগরীর অলিগলিতেও। পানিবন্দি সড়কে নেমে দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে নগরবাসীকে।
পানিবন্দি হয়ে পড়ায় চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিলো টানা ৫ ঘণ্টা। এছাড়া এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা অনেকে তাদের প্রথম পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি। এ নিয়ে ব্যাপক দুঃশ্চিন্তায় রয়েছেন অভিভাবকসহ পরীক্ষার্থীরা। নগরের প্রায় ২৯টি কেন্দ্রে ১ ঘণ্টা পর পরীক্ষা শুরু হলেও কোনো কোনো কেন্দ্রে তাতেও অনুপস্থিত ছিলো অনেক পরীক্ষার্থী।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তিন সপ্তাহ আগের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বন্দরনগরীতে। এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি এলাকা পানিতে প্লাবিত হয়েছে।
শনিবার (২৬ আগস্ট) রাতভর চট্টগ্রাম নগরী ও আশপাশের এলাকায় টানা প্রবলভাবে বৃষ্টি হয়, যা রবিবার ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত ছিল।
টানা বর্ষণে নগরীর ষোলশহর এলাকায় পাহাড়ধসে সাত মাস বয়সী শিশুকন্যাসহ এক বাবা নিহত হয়েছেন। সকাল সাড়ে সাতটায় আই ডব্লিউ কলোনিতে এ ঘটনা ঘটে।
পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস জানায়, শনিবার রাত ১২টা থেকে রোববার সকাল ৯টা পর্যন্ত ৯ ঘণ্টায় ৭৬ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
সহকারী আবহাওয়াবিদ উজ্জ্বল কান্তি পাল জানান, মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকায় চট্টগ্রামসহ আশপাশের এলাকায় বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এ ধরনের মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাত আরও দুই-তিন দিন অব্যাহত থাকতে পারে।
রাতভর বৃষ্টিতে নগরীর চান্দগাঁও, চকবাজার, বহদ্দারহাট, বাদুরতলা, বাকলিয়া, শুলকবহর, মুরাদপুর, ফুলতলা, বাড়ইপাড়া, তিনপোলের মাথা, রিয়াজুদ্দিন বাজার, কাপাসগোলা, হালিশহর, সিডিএ আবাসিক এলাকাসহ আরও বিভিন্ন এলাকা পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকায় সড়কে এবং অলিগলি কোথাও কোথাও হাঁটু থেকে কোমর পানিতে তলিয়ে গেছে।
পানিবন্দি পরিস্থিতিতে রবিবার (২৭ আগস্ট) থেকে শুরু হওয়া এইচএসসি পরীক্ষা চট্টগ্রাম নগরীর ২৭ কেন্দ্র ও হাটহাজারী উপজেলার দুই কেন্দ্রে একঘণ্টা পিছিয়ে শুরু করতে হয়েছে।
চকবাজার কাপাসগোলা কেন্দ্রের পরীক্ষার্থী নাজমা শাহিন বলেন, ‘চকবাজারে হাঁটুর ওপর পানি ছিল সকালে। আমরা বহদ্দারহাটের বাসা থেকে সিএনজি ট্যাক্সিতে এসেছি। কিন্তু পানির কারণে গাড়ি আটকে যায়। এরপর পানিতে হেঁটে আমাদের কেন্দ্রে আসতে অনেক সময় লেগে গেছে। ভাগ্যিস পরীক্ষা একঘণ্টা পেছানো হয়েছে। না হলে চরম ক্ষতি হতো আমার। খুবই কষ্ট হয়েছে।’
এদিকে আগস্টের প্রথম সপ্তাহেও চট্টগ্রামে টানা বর্ষণে নগরীর বিভিন্ন এলাকা পানিবন্দি হয়ে পড়েছিল। ড্রেনের পানি সড়কে উঠে আসায় এবং নিচু এলাকার বাসাবাড়ি-দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পানিবন্দি হয়ে পড়ায় লোকজনকে ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছিল।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা আবুল হাশেম বলেন, ‘আগস্টের প্রথম সপ্তাহে বৃষ্টিতে যে পরিস্থিতি ছিল, এবারও একই পরিস্থিতি হয়েছে। নিচ এলাকাগুলো প্লাবিত হয়েছে। ড্রেনে-নালায় যেখানে পানি আটকে আছে, আমরা চেষ্টা করছি সেখানে যেন দ্রুত পানি নিষ্কাশন করা যায়। তবে রাতভর ভারি বৃষ্টি হয়েছে। ভোরে জোয়ার ছিল। এজন্য পানি বিভিন্ন এলাকায় ঢুকে গেছে।’
টানা বর্ষণে চট্টগ্রাম-হাটহাজারী-রাঙ্গামাটি মহাসড়কের নন্দীরহাট ও বড়দিঘীর পাড় এলাকায় সড়ক ডুবে গেছে। মহাসড়কের নন্দীরহাট অংশের এশিয়ান পেপার মিলের সামনে থেকে জগন্নাথ মন্দিরের সামনে পর্যন্ত সড়ক পানিবন্দি হয়ে আছে। সেখানে যানবাহন আটকে চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি সড়কে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। সকাল ৭টা থেকে ১২টা পযর্ন্ত প্রায় ৫ ঘণ্টা মহাসড়ক বন্ধ ছিলো। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে সাধারণ মানুষ ও যাত্রীদের। এর মধ্যে অনেক চাকুরিজীবীও ছিলেন বলে জানা গেছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।