সেন্ট মার্টিন যেন এক অপূর্ব স্বর্গরাজ্য। প্রবালদ্বীপ। প্রতিবছর সেখানে ঘুরতে যান হাজারো সমুদ্রপ্রেমী। তবে এই স্বর্গরাজ্যের অনেকটাই রয়ে যায় তাঁদের চোখের আড়ালে। সমুদ্রবিজ্ঞানীরা সেই আড়ালের জগৎটির রহস্যও জানতে চান। সমুদ্রের গভীরে চোখ রাখেন তাঁরা। নীল জলরাশির আড়ালের জগৎটিতে যাদের বাস, সেই প্রাণীদের জানার ইচ্ছাতে বিজ্ঞানীরা কাজ করে যান।
বাংলাদেশের দক্ষিণে অবস্থিত বিশাল বঙ্গোপসাগর। এর প্রায় ১ লাখ ২১ হাজার ১১০ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত বাংলাদেশের সামুদ্রিক জলসীমা। এই সুবিস্তৃত জলসীমা নানা প্রজাতির উপকূলীয় ও সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্যে ভরপুর। এ সমুদ্রসীমায় দেশের একেবারে দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত প্রবালদ্বীপ সেন্ট মার্টিন। সেখান থেকে দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তের সুন্দরবন পর্যন্ত বিস্তৃত উপকূলীয় অঞ্চল। এই অঞ্চলজুড়ে উপকূলীয় রেখার দৈর্ঘ্য প্রায় ৭১০ কিলোমিটার। বাংলাদেশের এই বিশাল উপকূলীয় রেখা বরাবর মূলত তিন ধরনের উপকূলীয় ও সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্র বা প্রতিবেশ দেখা যায়। এগুলো হলো—
১. চট্টগ্রাম-কক্সবাজার উপকূলীয় অঞ্চল বরাবর পূর্ব উপকূলীয় অঞ্চল। এটি ফেনী নদী থেকে শুরু হয়ে টেকনাফ পর্যন্ত বিস্তৃত।
২. মধ্য উপকূলীয় অঞ্চল। এটি তেঁতুলিয়া নদী থেকে শুরু করে ফেনী নদী পর্যন্ত বিস্তৃত। এখানে রয়েছে মেঘনার নদীমুখের বিশাল মোহনা।
৩. ভারত ও বাংলাদেশের সীমানায় অবস্থিত হাঁড়িয়াভাঙ্গা নদী থেকে শুরু করে তেঁতুলিয়া নদী পর্যন্ত বিস্তৃত পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চল। এখানে মূলত রয়েছে সুন্দরবনের বিশাল ম্যানগ্রোভ জলাভূমি। এতে রয়েছে জালের মতো বিস্তৃত আধা লোনাপানির ছোট-বড় অসংখ্য নালা, খাল ও নদীর উপস্থিতি।
বাংলাদেশের উপকূলীয় ও সামুদ্রিক অঞ্চল মূলত উষ্ণ গ্রীষ্মমণ্ডলীয় জলবায়ু ও উচ্চ বৃষ্টিপাতসমৃদ্ধ। ভূমি থেকে প্রচুর পুষ্টি সাগরে নিয়ে আসে। ফলে এটি বিশ্বের অন্যতম উচ্চ উত্পাদনশীল ও জীববৈচিত্র্যসমৃদ্ধ বাস্তুতন্ত্র। এ সামুদ্রিক জলসীমায় এখন পর্যন্ত ৭৫০টির বেশি প্রজাতির মাছ; প্রায় ৬০ প্রজাতির সামুদ্রিক কাঁকড়া; ৭ প্রজাতির কচ্ছপ; ৩০টির বেশি চিংড়ি প্রজাতি; ৩ প্রজাতির স্টারফিশ বা তারা মাছ; ৩০০টির বেশি প্রজাতির সামুদ্রিক মলাস্ক, যেমন শামুক, ঝিনুক, সি-স্লাগ, স্কুইড ও অক্টোপাস; ৯৮ প্রজাতির প্রবাল; ৯ প্রজাতির ডলফিন; ৩ প্রজাতির তিমি এবং ১৫৬ প্রজাতির সামুদ্রিক শৈবাল পাওয়া গেছে। বিশেষভাবে কিছু অঞ্চলের কথা বলতে হয়। বাংলাদেশের সমুদ্রসীমাভুক্ত এ অঞ্চলগুলো সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্যে বিশেষভাবে সমৃদ্ধ। যেমন প্রবালদ্বীপ সেন্ট মার্টিন, সুন্দরবন, সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড ইত্যাদি। এ লেখায় আমরা মূলত সেন্ট মার্টিন নিয়ে আলোচনা করব। তবে অন্য দুটি অঞ্চল নিয়েও থাকবে সংক্ষিপ্ত আলোচনা।
বাংলাদেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্ট মার্টিন আইল্যান্ড। এটি সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের এক অনন্য আধার। দেশি-বিদেশি পর্যটকদের বিশেষভাবে আকর্ষণ করে, তা বলা বাহুল্য। তবে এর অনেকটাই সমুদ্রের ওপরে বা দ্বীপপৃষ্ঠে দেখা যায় না। অবশ্য যেটুকু দেখা যায়, তার আকর্ষণ এড়ানোই কঠিন! সেন্ট মার্টিন দ্বীপে এখন পর্যন্ত ৯৮ প্রজাতির প্রবাল, ৩০৩ প্রজাতির প্রবাল প্রতিবেশে বসবাসকারী মাছ, ১৮৭ প্রজাতির মলাস্ক, ১৩৩ প্রজাতির সামুদ্রিক শৈবাল, ২ প্রজাতির সামুদ্রিক ঘাস, ৪ প্রজাতির সামুদ্রিক কাছিম, ৫ প্রজাতির সামুদ্রিক সাপ এবং ৯ প্রজাতির সামুদ্রিক স্তন্যপায়ীর সন্ধান পাওয়া গেছে।
এ দ্বীপের সামুদ্রিক পরিবেশ মনোরম। পানির তলদেশে রয়েছে রংবেরঙের বিভিন্ন প্রজাতির প্রবাল এবং প্রবাল প্রতিবেশে নানা রকম বিচিত্র প্রজাতির প্রাচুর্য। সামুদ্রিক জীববিজ্ঞানী, প্রকৃতিপ্রেমী, স্কুবা ডাইভার বা ডুবুরিদের জন্য এটি তাই বিশেষভাবে আকর্ষণীয়। তবে দেশে স্কুবা ডাইভিংয়ের সুবিধা তেমন নেই। তাই সমুদ্রতলের এত সব জীববৈচিত্র্য সেন্ট মার্টিন ভ্রমণকারী প্রায় সব পর্যটকের অদেখাই রয়ে যায়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।