জুমবাংলা ডেস্ক : ফেসবুকে বিভিন্ন ব্যক্তি বিশেষ করে প্রবাসীদের টার্গেট করত মো. মিজানুর রহমান। টার্গেটকৃত ব্যক্তিদের নাম, ছবি ব্যবহার করে তাদের ফেইক ফেসবুক আইডি খুলত। কখনো কখনো তাদের অ্যাকাউন্ট হ্যাক করত মিজানুর। এরপর টার্গেটকৃত প্রবাসীর অ্যাকাউন্ট থেকে তার পরিচিতদের মেসেজ দিত। জানানো হতো তিনি পরিবার নিয়ে দেশে আসছেন, অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটের টিকিটের জন্য একটি এজেন্সিকে বলেছেন। কিন্তু টাকা না দেওয়ার কারণে তারা টিকিট কনফার্ম করছে না। বিমানের টিকিট কনফার্ম করতে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা প্রয়োজন। পরিচিতরা ওই ব্যক্তির এই মেসেজ বিশ্বাস করে বিকাশ নম্বরে টাকা পাঠাত। এভাবে মিজানুর এবং তার চক্র অনেকের কাছ থেকে ৩০/৪০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ১৬ আগস্ট রংপুর থেকে মিজানুরকে গ্রেফতারের পর এসব তথ্য জানতে পারে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম দক্ষিণ বিভাগ।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অ্যাডভোকেট হাবিবুর রহমানের বন্ধু ইউছুফ খান অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী। গত ২৮ এপিল বন্ধুর পরিচয়ধারী ফেসবুক আইডি ণড়ঁংঁভ কযধহ থেকে হাবিবুরকে মেসেজ দেওয়া হয়। জানানো হয় যে, তিনি অস্ট্রেলিয়া থেকে দেশে ফিরছেন। চিটাগাং থেকে ঢাকায় আসার বিমান টিকিট কনফার্ম করার জন্য ট্রাভেল এজেন্সির একটি নম্বর দেয়। বলে ওই নম্বরে ১৮ হাজার ৮০০ টাকা পাঠাতে। হাবিবুর ওই বিকাশ নম্বরে টাকা পাঠান। পরদিন ২৯ এপ্রিল বন্ধুর পরিচয়ধারী ণড়ঁংঁভ কযধহ আইডির সব মেসেজ ডিলিট দেখতে পান। হাবিবুরের সন্দেহ হলে তার বন্ধুর মেইন আইডিতে বন্ধুর লোকেশন জানতে চাইলে তিনি অস্ট্রেলিয়াতে অবস্থান করছেন বলে জানান। তখন হাবিবুর বুঝতে পারেন, অজ্ঞাত ব্যক্তি তার বন্ধুর নাম ও ছবি ব্যবহার করে তার সঙ্গে প্রতারণা করছেন। পরে তিনি এ ঘটনায় ডিএমপির রমনা থানায় একটি মামলা করেন। ওই মামলার তদন্তে মিজানুরে বিষয়ে তথ্য পায় ডিবি।
মিজানুরকে গ্রেফতারের পর তার কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত দুটি মোবাইল ফোন এবং তিনটি সিম জব্দ করা হয়। তার গ্রামের বাড়ি রংপুরের কোতোয়ালি থানার ধাপলাল কুঠিতে। ডিবি বলছে, মিজানুর আগে মোবাইল অপারেটর রবির সিম বিক্রির কাজ করত। সেই কাজ চলে গেলে সে তার ভাইয়ের সঙ্গে ভাঙারির দোকান চালাত। এরই মধ্যে সে বিমানের টিকিট প্রতারণা করে অর্থ আয়ের কৌশল তার বন্ধু স্থানীয় অন্য দু-একজনের কাছ থেকে আয়ত্ত করে। এই কাজে অল্প সময়ে অধিক লাভ দেখে সে এই কাজ অব্যাহত রাখে এবং অভিনব কৌশল অবলম্বন করে মানুষকে প্রতারিত করতে থাকে। প্রতারক মূলত স্বল্প সময়ে বেশি টাকা রোজগার করার জন্য এই পথ বেছে নেয়। আবদুল আহাদ নামে চাঁদপুরের আরেক ভুক্তভোগী জানান, তিনি ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত। তার চাচা আমেরিকা প্রবাসী। হঠাৎ তার মোবাইল ফোনে চাচার ফেসবুক অ্যাকাউন্টের ম্যাসেঞ্জার থেকে একটি মেসেজ আসে। এতে তিনি উল্লেখ করেন, তারা পরিবারের চারজন দেশে আসছেন। ইমার্জেন্সি তার চারটি টিকিট দরকার। চারটি টিকিট কনফার্ম করেছি কিন্তু পেমেন্ট করতে পারিনি। তুমি যদি পেমেন্টটা দিয়ে দাও তবে আমার উপকার হয়। চাচা টাকা চেয়েছে আমি তো অবাক। দ্রুত তাদের বিকাশ নম্বরে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দেই। পরে চাচার সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি তিনি আমেরিকায় আছেন। বুঝতে পারেন তিনি প্রতারণার শিকার হয়েছেন। হাবিবুর রহমান ও আবদুল আহাদের মতো কুমিল্লার দেলোয়ার হোসেনও একইভাবে প্রতারণার শিকার হয়েছেন। তার বন্ধু আমেরিকা প্রবাসীর কথা বলে টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন প্রতারক চক্র।
ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম দক্ষিণ বিভাগ সহকারী কমিশনার (এসি) শিপ্রা রানী দাস বলেন, লন্ডন, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়াসহ প্রবাসে থাকা ব্যক্তিদের ফেসবুক আইডি থেকে নাম, পরিচয় ও ছবি সংগ্রহ করে তাদের নামে ভুয়া ফেসবুক আইডি খুলে দেশে থাকা আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে বিমানের টিকিট কাটার নাম করে টাকা হাতিয়ে নিত মিজানুর। এই চক্রের সদস্য চারজন। চক্রের মূল হোতা মিজানুর। আসাদ নামে একজন মিজানুরকে সার্বিক সহযোগিতা করত। তাকেসহ চক্রের অন্য সদস্যদের ধরতে অভিযান চলছে। গত ছয় মাসে চক্রটি প্রতারণার মাধ্যমে ৩০/৪০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ডিবির কর্মকর্তা শিপ্রা আরও বলেন, পরিচিতদের কাছ থেকে অর্থ প্রয়োজন মর্মে কোনো বার্তা আসলে তা যাচাই করা; যাচাই না করে টাকা প্রদান থেকে বিরত থাকা; ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টের (ওটিপি) কারও সঙ্গে শেয়ার না করা; ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড কারও সঙ্গে শেয়ার না করা এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করার সময় সতর্কতা অবলম্বন করার পরামর্শ দেন ডিবির এই কর্মকর্তা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।