জুমবাংলা ডেস্ক: চলমান এসএসসি পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস করার নামে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে দুটি সংঘবদ্ধ চক্রের একাধিক সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। প্রশ্নফাঁসের কথা বলে কৌশলে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে একটি চক্র। তাদের পক্ষে প্রশ্নফাঁস সম্ভব না হলেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গ্রুপে প্রলোভন দিয়ে টাকা হাতিয়ে নেয়।
প্রশ্নফাঁস এই চক্রের কাছ থেকে সাহায্য নেওয়ার জন্য পরীক্ষার্থী বা তাদের অভিভাবকদের প্রাথমিকভাবে ৫০০ থেকে ৫ হাজার টাকা দিয়ে সদস্য হতে হতো। এরপর প্রতিটি প্রশ্নের জন্য ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা হাতিয়ে নিতো তারা।
রাজধানীর উত্তরা, গাজীপুরের পুবাইল ও নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ এলাকায় অভিযান চালিয়ে তথাকথিত প্রশ্নফাঁসের দুই চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
গ্রেফতাররা হলেন—কালিমুল্লাহ, আল-রাফি ওরফে টুটুল ও আব্দুল্লাহ আল মারুফ ওরফে তপু।
এ সময় তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ৩টি স্মার্টফোন, ২টি বাটন ফোন, নগদ ১২ হাজার টাকা ও ৬টি সিম।
ডিবি জানায়, চক্রের সদস্যরা প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছিল। তাদের পক্ষে প্রশ্নপত্র ফাঁস করা অসম্ভব ছিল। কিছু ছাত্র ও অভিভাবক পড়াশোনাতে মনোযোগ না দিয়ে ইন্টারনেটভিত্তিক বিভিন্ন মাধ্যমে প্রশ্নপত্র কেনার জন্য ব্রাউজ করতে থাকে। গ্রেফতার প্রতারকরা মূলত এসব অমনোযোগী শিক্ষার্থীদের টার্গেট করে প্রশ্নপত্র ফাঁস করার নানা আকর্ষণীয় প্যাকেজের অফার দিতো ইন্টারনেটের মাধ্যমগুলোতে।
রোববার (১৪ নভেম্বর) বিকেলে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ডিবির অতিরক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার।
তিনি বলেন, প্রতিটি পাবলিক পরীক্ষার সময় কিছু অসাধু চক্র টাকা হাতিয়ে নেওয়ার জন্য পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করার চেষ্টা করে। এতে ব্যর্থ হলে প্রশ্নফাঁস করার নামে প্রতারণার জন্য বিভিন্ন প্যাকেজ নিয়ে ফেসবুক, মেসেঞ্জার ও অন্যান্য ইন্টারনেটভিত্তিক মাধ্যমগুলোতে প্রচারণা চালায়।
গ্রেফতাররা মূলত বিভিন্নভাবে ভুয়া মেসেঞ্জার, ফেসবুক একাউন্ট খুলে মেসেঞ্জারে শতভাগ নিশ্চয়তা সহকারে বিভিন্ন বোর্ডের সব বিষয়ের প্রশ্নফাঁস করার বিজ্ঞাপন দিতো। এই চক্রের কাছ থেকে সাহায্য নেওয়ার জন্য পরীক্ষার্থী বা তাদের অভিভাবকদের প্রাথমিকভাবে ৫০০ থেকে ৫ হাজার টাকা দিয়ে সদস্য হতে হতো। এরপর প্রতিটি প্রশ্নের জন্য ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা হাতিয়ে নিতো।
চক্রটি বিভিন্ন পরীক্ষার্থী ও পরীক্ষার্থীদের অভিভাবকদের এই বলে আশ্বস্ত করত যে, ঢাকা থেকে বিভিন্ন জেলা ও জেলা থেকে পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রশ্ন বহনকালে দায়িত্বশীলদের একজন কৌশলে একাধিক প্রশ্ন সরিয়ে রেখে ছবি তুলে পাঠিয়ে দেবেন। সেই ছবি তারা বিভিন্ন জনকে মেসেঞ্জার, টেলিগ্রাফে ও জিমেইলে সেন্ড করে দেবেন। এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে তারা নগদ, বিকাশ, রকেটের মাধ্যমে পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
গ্রেফতারদের পরিচালিত প্রশ্নপত্র ফাঁসের মেসেঞ্জার, ফেসবুক পাবলিক গ্রুপগুলো হলো—কোশ্চেন ব্যাংক, এসএসসি কোশ্চেন ২০২১, এইচএসসি কোশ্চেন ২০২১, কোশ্চেন লিক, PSC, JSC, SSC, HSC-All Exam Helping Zone এবং SSC 2021 All Board ইত্যাদি। প্রতারক চক্রের বিভিন্ন পেজ ও গ্রুপের ফলোয়ারের সংখ্যা প্রায় ৪ হাজার ৭০০ জন।
অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, পাবজি খেলায় পটু গ্রেফতার আল রাফি ওরফে টুটুল সাইবার সংক্রান্ত বিভিন্ন অপরাধ বিষয়ে যথেষ্ট জ্ঞান রাখেন। টুটুল ভুয়া প্রশ্নপত্র ফাঁসের জন্য আলমগীর হোসেন নামে একটি ফেক আইডি খোলেন। আইডিটি খোলার জন্য তিনি একটি টেম্পোরারি মেইল আইডি নির্দিষ্ট ওয়েবসাইট থেকে সংগ্রহ করেন। এই ভুয়া অ্যাকাউন্ট ও টেম্পোরারি মেইলটি দুই থেকে তিনদিন সক্রিয় থাকার পরে অটোমেটিক্যালি ডিঅ্যাক্টিভেটেড হয়ে যায়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।