জুমবাংলা ডেস্ক : আর্থিক নিরাপত্তা কিংবা ভবিষ্যতের চিন্তা—দু’টি বিষয়ই মানুষকে সঞ্চয়ের দিকে ধাবিত করে। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ যারা প্রতিদিনের খরচ মেটানোর পর কিছুটা সঞ্চয়ের চিন্তা করেন, তাদের জন্য একটি লাভজনক ও ঝুঁকিহীন মাধ্যম হতে পারে প্রাইজবন্ড। আজ ৩০ এপ্রিল বুধবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে ১০০ টাকা মূল্যমানের প্রাইজবন্ডের ১১৯তম ড্র। এই ড্র-এ প্রথম পুরস্কার বিজয়ী পাবেন ৬ লাখ টাকা।
Table of Contents
প্রাইজবন্ড: সঞ্চয়ের স্মার্ট মাধ্যম
প্রাইজবন্ড একটি নির্ভরযোগ্য ও সরকারি উদ্যোগ যা বাংলাদেশ সরকার পরিচালনা করে। এটি একটি বন্ড যার মাধ্যমে সরকার জনসাধারণের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে এবং নির্দিষ্ট সময় অন্তর ড্র-এর মাধ্যমে পুরস্কার ঘোষণা করে। এই প্রক্রিয়ায় কোনো সুদ দেওয়া হয় না, বরং নির্দিষ্ট সংখ্যক বন্ড প্রতি ড্র-এ পুরস্কৃত হয়।
প্রাইজবন্ডে বিনিয়োগ করতে কোনো উচ্চমূল্য লাগেনা—শুধুমাত্র ১০০ টাকার বিনিময়ে একটি বন্ড কেনা যায়। এই কারণে সমাজের যেকোনো শ্রেণির মানুষ, বিশেষ করে মধ্যবিত্তরা, সহজেই এতে অংশগ্রহণ করতে পারেন।
বাংলাদেশে বর্তমানে ১০০ টাকা মূল্যমানের প্রাইজবন্ড চালু রয়েছে। এই বন্ড যেকোনো ব্যাংক অথবা বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত শাখা থেকে কেনা যায় এবং যেকোনো সময় ফেরত দেওয়া যায়। এই লেনদেন প্রক্রিয়া সহজ ও স্বচ্ছ হওয়ায় মানুষের মধ্যে প্রাইজবন্ডের জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে।
প্রাইজবন্ডের মাধ্যমে পুরস্কার পাওয়া শুধুমাত্র ভাগ্যের উপর নির্ভর করে। তবে নিয়মিত ড্র-এর মাধ্যমে কেউ না কেউ পুরস্কার জিতে নিচ্ছেন, যার ফলে এটি সঞ্চয় এবং বিনিয়োগের একটি চমৎকার বিকল্প হয়ে উঠেছে।
একটি প্রাইজবন্ড যদি প্রথম পুরস্কার জিতে, তাহলে সেই ব্যক্তি পাবেন ৬ লাখ টাকা। দ্বিতীয় পুরস্কার বিজয়ী পান ৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা, তৃতীয় পুরস্কার ১ লাখ টাকা, চতুর্থ পুরস্কার ৫০ হাজার টাকা এবং পঞ্চম পুরস্কার ১০ হাজার টাকা। প্রতি সিরিজের নির্দিষ্ট নম্বর এককভাবে এই পুরস্কারের জন্য বিবেচিত হয়। ফলে একই নম্বর থাকলে কিন্তু আলাদা সিরিজ হলে প্রত্যেকে সেই পুরস্কার পেতে পারেন।
বাংলাদেশে সাধারণত প্রতি বছর চারবার প্রাইজবন্ডের ড্র অনুষ্ঠিত হয়—৩১ জানুয়ারি, ৩০ এপ্রিল, ৩১ জুলাই ও ৩১ অক্টোবর। যদি নির্ধারিত দিনটি সরকারি ছুটির দিনে পড়ে, তাহলে পরবর্তী কার্যদিবসে ড্র অনুষ্ঠিত হয়। আজকের ১১৯তম ড্র সেই ধারাবাহিকতার অংশ।
প্রাইজবন্ডের ড্র প্রক্রিয়া ও কর কর্তনের নীতিমালা
প্রাইজবন্ডের ড্র একটি নির্দিষ্ট সময়সূচি অনুসারে অনুষ্ঠিত হয় এবং এটি সম্পূর্ণ স্বচ্ছ ও জনসম্মুখে হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক বা অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিত্বে একটি কমিটি এই ড্র পরিচালনা করে। গণমাধ্যমের উপস্থিতিতে ও লটারির ন্যায় স্বচ্ছভাবে বিজয়ীদের নাম নির্ধারণ করা হয়।
ড্র-এর আওতায় আসা বন্ড নির্ধারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হলো—ড্র-এর নির্ধারিত তারিখ থেকে ৬০ দিন আগে যেসব বন্ড বিক্রি হয়েছে, শুধু সেগুলোই ওই ড্র-এর জন্য বিবেচিত হবে। অর্থাৎ, ড্র-এর আগের ৬০ দিনের মধ্যে যেসব বন্ড বিক্রি হয়েছে সেগুলো অন্তর্ভুক্ত হবে না।
২০২৩ সালের আয়কর আইনের ১১৮ ধারার আওতায় প্রাইজবন্ড পুরস্কারের অর্থে ২০% হারে উৎসে কর কাটা হয়। উদাহরণস্বরূপ, যদি কেউ প্রথম পুরস্কার ৬ লাখ টাকা জিতে থাকেন, তাহলে তার হাতে পাবেন ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা। কর কর্তনের পরিমাণ জেনে বিনিয়োগকারীরা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
ড্র-এর সময়সূচি ও সরকারি ছুটির প্রভাব
ড্র-এর নির্ধারিত তারিখগুলো পূর্ব-নির্ধারিত হলেও কখনো কখনো তা সরকারি ছুটির কারণে পরিবর্তন হয়। যেমন, যদি ৩০ এপ্রিল কোনো সরকারি ছুটি পড়ে, তাহলে ড্র হবে ১ মে বা পরবর্তী কার্যদিবসে। এই নির্ধারিত নিয়মাবলী অনুসরণ করে প্রতিটি ড্র পরিচালিত হয়।
ড্র-এর ফলাফল বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয় এবং পত্রপত্রিকায়ও তা ছাপা হয়। যেসব বন্ড নম্বর বিজয়ী হয়, তাদের নম্বর ও সিরিজ প্রকাশ করা হয়। তাই যারা প্রাইজবন্ড কিনেছেন, তারা সহজেই দেখে নিতে পারেন তারা বিজয়ী হয়েছেন কিনা।
প্রাইজবন্ড কেনার সহজ পদ্ধতি
প্রাইজবন্ড কেনার পদ্ধতি অত্যন্ত সহজ। এটি বাংলাদেশের প্রায় সব ব্যাংকে পাওয়া যায়, বিশেষ করে সোনালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন শাখায়।
প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী আপনি একাধিক প্রাইজবন্ড কিনতে পারেন এবং তা সংরক্ষণ করতে পারেন নিজস্ব সুরক্ষিত স্থানে। অনেকেই এগুলো ফাইল করে রাখেন অথবা বিশেষ কভার বা খামে সংরক্ষণ করেন যাতে নম্বর মুছে না যায় বা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
প্রাইজবন্ড সংরক্ষণের গুরুত্ব
প্রাইজবন্ডে পুরস্কার পাওয়ার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে—নম্বর ও সিরিজ ঠিকঠাক রাখা। কোনোভাবে যদি বন্ড হারিয়ে যায় বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে পুরস্কার পাওয়া কঠিন হতে পারে। এজন্যই প্রতিটি বন্ড ভালোভাবে সংরক্ষণ করা জরুরি।
প্রাইজবন্ড বনাম সঞ্চয়পত্র
অনেকে প্রশ্ন করেন, প্রাইজবন্ড ভালো নাকি সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করা ভালো? সঞ্চয়পত্র একটি সুদভিত্তিক বিনিয়োগ, যেখানে নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে মূল অর্থের সঙ্গে সুদ পাওয়া যায়। অপরদিকে, প্রাইজবন্ডে কোনো সুদ নেই, তবে পুরস্কার পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। যারা ঝুঁকিমুক্ত বিনিয়োগ চান এবং কিছুটা ভাগ্যের উপর নির্ভর করতে রাজি, তাদের জন্য প্রাইজবন্ড একটি ভালো বিকল্প।
এছাড়া, প্রাইজবন্ড এক ধরনের লটারি হলেও এটি সম্পূর্ণ বৈধ ও সরকারি অনুমোদিত। এটি কোনো ধরনের জুয়ার সাথে সম্পর্কিত নয় বরং সরকার কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত একটি সঞ্চয় মাধ্যম। Wikipedia অনুসারে, বিভিন্ন দেশেও এ ধরনের বন্ড ব্যবহৃত হয় জনগণের সঞ্চয় উৎসাহিত করতে।
প্রাইজবন্ড সম্পর্কে সচেতনতা ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
সচেতনতার অভাবে অনেকেই প্রাইজবন্ডে বিনিয়োগ করলেও ড্র-এর ফলাফল চেক করেন না। ফলে বিজয়ী হলেও পুরস্কার গ্রহণের সুযোগ হারিয়ে ফেলেন। তাই বন্ড নম্বর এবং ড্র তারিখগুলো নিয়ে যথাযথ নজর রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশ সরকার যদি প্রাইজবন্ড ব্যবস্থার আরও ডিজিটালাইজেশন করে, তাহলে বন্ড কেনা, সংরক্ষণ, এবং পুরস্কার যাচাই আরও সহজ হয়ে উঠবে। যেমন, একটি কেন্দ্রীয় অ্যাপ বা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সবকিছু পরিচালনা করা গেলে এটি আরও জনপ্রিয় হবে।
প্রাইজবন্ড বিজয়ীদের কর পরিশোধ ও অর্থ উত্তোলনের প্রক্রিয়া
যারা পুরস্কার পান, তাদেরকে নির্দিষ্ট ফরম পূরণ করে বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদন করতে হয়। আবেদনপত্রের সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্র, প্রাইজবন্ডের মূল কপি এবং সংশ্লিষ্ট ফরম জমা দিতে হয়। যাচাই-বাছাই শেষে কর কর্তনের পর পুরস্কারের অর্থ প্রদান করা হয়।
আজকের ১১৯তম ড্র আবারও প্রমাণ করে, প্রাইজবন্ড এখন শুধু মধ্যবিত্ত নয়, সকল শ্রেণির মানুষের একটি নির্ভরযোগ্য সঞ্চয় ও বিনিয়োগের মাধ্যম হয়ে উঠেছে।
❓ প্রাইজবন্ড সংক্রান্ত সাধারণ প্রশ্নাবলী (FAQs)
১. প্রাইজবন্ড কোথায় পাওয়া যায়? প্রাইজবন্ড বাংলাদেশের সব সরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত শাখা থেকে সংগ্রহ করা যায়।
২. প্রাইজবন্ডের ড্র কবে হয়? প্রতি বছর ৩১ জানুয়ারি, ৩০ এপ্রিল, ৩১ জুলাই এবং ৩১ অক্টোবর ড্র অনুষ্ঠিত হয়।
৩. প্রাইজবন্ডের পুরস্কার পাওয়ার পরে কর দিতে হয় কি? হ্যাঁ, ২০২৩ সালের আয়কর আইনের আওতায় ২০% হারে উৎসে কর কাটা হয়।
৪. একাধিক প্রাইজবন্ডে একই নম্বর থাকলে কি সবাই পুরস্কার পাবেন? হ্যাঁ, যদি একই নম্বর ভিন্ন সিরিজে থাকে তাহলে প্রত্যেকে সেই পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য।
৫. হারিয়ে যাওয়া প্রাইজবন্ড দিয়ে কি পুরস্কার তোলা যায়? না, মূল প্রাইজবন্ড না থাকলে পুরস্কার তোলা সম্ভব নয়। তাই ভালোভাবে সংরক্ষণ করা জরুরি।
৬. প্রাইজবন্ড কেনার পর কতদিনের মধ্যে তা ড্র-এর আওতাভুক্ত হয়? ড্র-এর ৬০ দিন আগেই যে বন্ডগুলো কেনা হয়েছে, সেগুলোই সেই ড্র-এর আওতায় পড়ে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।