চোখ খুলতেই শুধু জল। অথৈ, কাদামাখা জল। ঘরের দরজার চৌকাঠ ডিঙিয়ে ঢুকে পড়েছে ঘরের ভেতর। দেওয়ালে টাঙানো ছবির ফ্রেম ভেসে বেড়াচ্ছে। রান্নাঘরের চালা উড়ে গেছে কোথায়। বাবা-মা দুই ভাইকে নিয়ে ঘরের চালের খুঁটিটা আঁকড়ে ধরে আছে ছোট্ট রিনা। সাইক্লোন আম্পানের রাত। গোটা সুন্দরবন উপকূলের লাখো রিনার সেই অসহায় চিৎকার আজও কানে বাজে। বিপর্যয় কখন, কীভাবে, কতটা নির্মমতায় আঘাত হানবে, তা কেউ জানে না। কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগের পরের মুহূর্তগুলোতে কী করণীয়, তা জানা থাকলে অসহায়ত্বের গহ্বরে হারিয়ে যাওয়া থামানো যায়। প্রিয়জনের জীবন বাঁচানো যায়। নিজেকে সামলে তোলার পথ খুঁজে পাওয়া যায়। এই লেখাটি আপনার জন্য সেই জরুরি গাইড – প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পর প্রস্তুতি নিয়ে একটি প্রাণবন্ত, ব্যবহারিক, এবং জীবনরক্ষাকারী দিকনির্দেশনা।
Table of Contents
প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পর প্রস্তুতি: তাৎক্ষণিক করণীয় (প্রথম ৭২ ঘণ্টা)
প্রলয়ের পরের প্রথম কয়েক ঘণ্টা এবং দিনগুলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, সবচেয়ে সংকটপূর্ণ। এই সময়ে সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ সরাসরি প্রাণহানি কমাতে বা বাড়াতে পারে। আপনার জরুরি গাইড শুরু হোক এই ধাপগুলো থেকে:
- নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন (আপনার ও আশেপাশের লোকজনের):
- স্থান ত্যাগের সিদ্ধান্ত: বন্যা প্রবাহে বা ভবন ধসের আশঙ্কায় আটকে পড়লে, অবিলম্বে নিরাপদ উচ্চভূমি বা খোলা স্থানে যান। অপেক্ষা করবেন না। জলোচ্ছ্বাস (সার্জ) বা আকস্মিক বন্যার স্রোত অকল্পনীয় শক্তিশালী। ২০২২ সালের সিলেট-সুনামগঞ্জের ভয়াবহ বন্যার সময় অনেকেই দেরি করে সরে যাওয়ায় বিপদে পড়েছিলেন। বাড়িঘর ত্যাগের সময় গ্যাস, বিদ্যুৎ, প্রধান সুইচ বন্ধ করে যান।
- ক্ষতিগ্রস্ত ভবনে প্রবেশে সতর্কতা: দুর্যোগের পরপরই ক্ষতিগ্রস্ত ভবনে প্রবেশ করা মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। দেওয়াল, ছাদ, সিঁড়ি ভেঙে পড়ার আশঙ্কা থাকে। ঢাকার রানা প্লাজা ধসের পরের দিনগুলোর কথা মনে আছে? বিশেষজ্ঞদের অনুমতি ছাড়া প্রবেশ করবেন না।
- বিদ্যুৎ লাইনের ব্যাপারে সতর্কতা: ভেসে যাওয়া বা পড়ে থাকা বিদ্যুতের তার স্পর্শ করবেন না। মনে রাখবেন, পানিও বিদ্যুৎ পরিবাহী। বন্যাপরবর্তী বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যুর ঘটনা দুঃখজনকভাবে সাধারণ।
- জীবজন্তুর হাত থেকে সতর্ক থাকুন: বন্যা বা সাইক্লোনের পর বিষধর সাপ (গোখরা, ক্রেইট), বিচ্ছু এবং অন্যান্য বিপজ্জনক প্রাণী উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিতে পারে বা পানিতে ভেসে আসতে পারে। সাপের কামড় থেকে বাঁচতে জুতা-স্যান্ডেল পরুন এবং কোথাও হাত দেবার আগে দেখে নিন। খালি পায়ে হাঁটা একেবারেই উচিত নয়। পোকামাকড়ের কামড় থেকে সুরক্ষার জন্য সম্ভব হলে ফুল হাতা জামা-প্যান্ট পরুন।
- আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা দান:
- প্রথমে নিজে সুরক্ষিত হোন: আহতকে সাহায্য করার আগে নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন (যেমন: বিদ্যুতের তার, ধসে পড়ার আশঙ্কা, রাসায়নিক পদার্থ ইত্যাদি থেকে দূরে থাকুন)।
- জরুরি চিকিৎসা: রক্তপাত বন্ধ করুন (পরিষ্কার কাপড় বা গজ চেপে ধরে), শ্বাস-প্রশ্বাস ও হৃদস্পন্দন চেক করুন, হাড় ভাঙা বা স্থানচ্যুত হলে নড়াচড়া না করানো, পোড়া জায়গায় পরিষ্কার ঠান্ডা পানি ঢালুন (কিছুক্ষণ ধরে)। মাথায় আঘাত পেলে জ্ঞান হারানো বা বমি হওয়া জরুরি চিকিৎসার লক্ষণ।
- জরুরি সাহায্য ডাকুন: যত দ্রুত সম্ভব স্থানীয় কর্তৃপক্ষ (ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ), স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন (রেড ক্রিসেন্ট/ক্রস), বা হাসপাতালে যোগাযোগ করুন। বাংলাদেশে ৯৯৯ নম্বরে কল করে জরুরি সেবা চাওয়া যায়। আহতের অবস্থা স্পষ্টভাবে বলুন। বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির (বিডিআরসিএস) দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ইউনিট প্রায়ই দুর্যোগস্থলে প্রথম প্রতিক্রিয়াশীল দল পাঠায়। তাদের ওয়েবসাইটে স্থানীয় শাখার যোগাযোগ পেতে পারেন: https://www.bdrcs.org/।
- জরুরি যোগাযোগ স্থাপন ও তথ্য সংগ্রহ:
- পরিবারের সদস্যদের খোঁজ নিন: নিরাপদ আশ্রয়ে পৌঁছেই পরিবারের অন্য সদস্যদের খোঁজ নিন। সম্ভব হলে পাড়া-প্রতিবেশীদের সাথে যোগাযোগ করুন। অনেক সময় স্থানীয় মসজিদ/মন্দির/মাঠ জরুরি যোগাযোগ কেন্দ্র বা আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে।
- রেডিও শুনুন: মোবাইল নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন হলে ট্রানজিস্টর রেডিওই প্রধান ভরসা। বাংলাদেশ বেতার (বিবিসি), স্থানীয় রেডিও স্টেশনগুলো (যেমন বন্যাকালীন সময়ে রেডিও মেঘনা, রেডিও পদ্মা) দুর্যোগকালীন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য, আশ্রয়কেন্দ্রের ঠিকানা, ত্রাণ বিতরণের খবর প্রচার করে। সাইক্লোন প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) স্বেচ্ছাসেবীরাও মাইকিং করে খবর পৌঁছে দেয়।
- অফিসিয়াল সূত্রের উপর ভরসা রাখুন: সামাজিক মাধ্যমের গুজব এড়িয়ে চলুন। সরকারি দপ্তর (জেলা প্রশাসক কার্যালয়, উপজেলা নির্বাহী অফিসার কার্যালয়), বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর (http://live3.bmd.gov.bd/), এবং বিশ্বস্ত সংবাদমাধ্যমের (বিবিসি বাংলা, ডয়েচে ভেলে বাংলা, প্রথম আলো অনলাইন) ওয়েবসাইট/ফেসবুক পেজ থেকে তথ্য নিন।
- পরিষ্কার পানির উৎস খুঁজুন ও পানি বিশুদ্ধকরণ:
- দূষিত পানি পান থেকে বিরত থাকুন: বন্যা বা সাইক্লোনের পরপরই টিউবওয়েলের পানি পর্যন্ত দূষিত হতে পারে। নদী, পুকুর, ডোবা বা ভাসমান পানি কখনই পান করবেন না। ডায়রিয়া, কলেরা, টাইফয়েড, হেপাটাইটিস-এ এর মতো পানিবাহিত রোগ ছড়ানোর প্রধান কারণ এটাই।
- পানি ফুটিয়ে পান করুন: বিশুদ্ধ পানি পাওয়ার সর্বোত্তম উপায়। পানি কমপক্ষে ১ মিনিট ভালোভাবে ফোটাতে হবে (সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতায় থাকলে আরও কিছুক্ষণ বেশি)। ফোটানোর পর ঠান্ডা করে সংরক্ষণ করুন।
- জরুরি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট (হ্যালোজেন ট্যাব): দুর্যোগ প্রস্তুতি কিটে এগুলো রাখা উচিত। নির্দেশিকা অনুযায়ী ব্যবহার করুন (সাধারণত একটি ট্যাবলেট ২০-৩০ লিটার পানিতে দিতে হয়, ৩০ মিনিট অপেক্ষা করতে হয়)। স্বাদ কিছুটা লাগতে পারে।
- ফিল্টার ব্যবহার: যদি বাজারে পাওয়া যায় এবং ব্যবহারে অভ্যস্ত হন, তবে পোর্টেবল ওয়াটার ফিল্টার (যেমন সিরামিক বা লাইফস্ট্র স্ট্র ফিল্টার) ব্যবহার করতে পারেন।
- ক্লোরিন দ্রবণ: পরিষ্কার পানিতে (যদি টারবিড না হয়) হাউসহোল্ড ব্লিচ (৫% সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইট) ব্যবহার করা যেতে পারে। ১ লিটার পানিতে ২ ফোঁটা (প্রায় ০.১ মিলি) ব্লিচ মিশিয়ে ৩০ মিনিট রেখে দিলে পানি পানযোগ্য হয়। গন্ধ থাকতে পারে। খেয়াল রাখুন, ব্লিচে কোনো অতিরিক্ত সুগন্ধি বা ক্লিনিং এজেন্ট থাকা চলবে না।
স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও পরিচ্ছন্নতা: রোগ প্রতিরোধের প্রথম ধাপ
দুর্যোগ-পরবর্তী পরিবেশ রোগ জীবাণুর বিস্তারের জন্য আদর্শ। স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাই মহামারি প্রতিরোধের মূল চাবিকাঠি।
- হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন:
- সাবান-পানি: খাওয়ার আগে, খাবার তৈরি করার আগে, শৌচাগার ব্যবহারের পর, শিশুর ডায়াপার পরিবর্তনের পর, এবং ময়লা-আবর্জনা ধরার পর সাবান ও নিরাপদ পানি দিয়ে অন্তত ২০ সেকেন্ড ভালো করে হাত ধুতে হবে। সাবান না থাকলে ছাই ব্যবহার করা যেতে পারে।
- হ্যান্ড স্যানিটাইজার: সাবান-পানি না পাওয়া গেলে অ্যালকোহল-ভিত্তিক (৬০%+) হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন। তবে দৃশ্যত ময়লা হাতে স্যানিটাইজার কার্যকর নয়।
- খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন:
- দূষিত খাবার এড়িয়ে চলুন: বন্যার পানিতে ভিজে যাওয়া, প্যাকেট ছিঁড়ে যাওয়া, বা দীর্ঘক্ষণ রেখে দেওয়া খাবার (বিশেষ করে মাছ, মাংস, দুধ, ডিম, রান্না করা খাবার) খাবেন না। পচে গন্ধ বা রং বদলে গেছে এমন খাবার ফেলে দিন। “দেখতে ভালো” মানেই নিরাপদ নয়।
- ভালো করে রান্না করুন: যে খাবারই খান না কেন, ভালো করে সিদ্ধ বা রান্না করুন (অন্তত ৭০° সে. তাপমাত্রায়) যাতে জীবাণু নষ্ট হয়।
- পরিষ্কার পাত্রে সংরক্ষণ: রান্না করা খাবার ঢেকে রাখুন এবং যত দ্রুত সম্ভব খেয়ে ফেলুন। গরম আবহাওয়ায় খাবার দ্রুত নষ্ট হয়।
- কাঁচা শাকসবজি ও ফলমূল: বন্যার পানি বা সম্ভাব্য দূষিত পানি দিয়ে ধোয়া ফল/সবজি না খাওয়াই ভালো। যদি খেতেই হয়, বিশুদ্ধ পানি দিয়ে ধুয়ে তারপর খোসা ছাড়িয়ে নিন।
- মলমূত্র ত্যাগের ব্যবস্থা:
- নিরাপদ শৌচাগার: ল্যাট্রিন বা টয়লেট ব্যবহার করুন। ক্ষতিগ্রস্ত হলে, বাড়ি থেকে অন্তত ৩০ মিটার দূরে, পানি উৎস থেকে দূরে গর্ত খুঁড়ে অস্থায়ী শৌচাগার তৈরি করুন। ব্যবহারের পর মাটি চাপা দিন। খোলা জায়গায় মলত্যাগ একেবারেই নিষিদ্ধ। এটা কলেরা, ডায়রিয়ার প্রধান কারণ।
- শিশুদের মল: শিশুদের মলও নিরাপদে ফেলুন (ল্যাট্রিনে বা গর্তে চাপা দিয়ে) এবং পরে ভালো করে হাত ধুয়ে নিন।
- মশা ও অন্যান্য পোকামাকড় থেকে সুরক্ষা:
- মশারি ব্যবহার: ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, চিকুনগুনিয়া মশাবাহিত রোগ। রাতে অবশ্যই লং লাস্টিং ইনসেক্টিসাইড ট্রিটেড মশারি (LLIN) ব্যবহার করুন। দিনের বেলায়ও ঘুমালে মশারি টাঙান।
- মশা তাড়ানোর ক্রিম/স্প্রে (ডিইইট সমৃদ্ধ): শরীরের খোলা অংশে মশা তাড়ানোর ক্রিম বা স্প্রে ব্যবহার করুন।
- জমে থাকা পানি সরান: আশেপাশের ডাবা, টায়ার, পাত্র, ফুলদানি ইত্যাদিতে জমে থাকা পানি ফেলে দিন বা উল্টে রাখুন। এগুলো মশার প্রজননক্ষেত্র।
- প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র ও ফার্স্ট এইড:
- নিজস্ব ওষুধের ব্যাগ: যাদের নিয়মিত ওষুধ (ডায়াবেটিস, প্রেশার, হাঁপানি, থাইরয়েড, জন্মনিয়ন্ত্রণ) খেতে হয়, তারা অন্তত এক সপ্তাহের ওষুধ একটি ওয়াটারপ্রুফ প্যাকেটে বা পলিথিনে মুড়ে সবসময় সাথে রাখার চেষ্টা করুন।**
- ফার্স্ট এইড কিট: ব্যান্ডেজ, গজ, অ্যান্টিসেপ্টিক ক্রিম/লোশন (স্যাভলন, ডেটটল), প্যারাসিটামল, অ্যান্টিহিস্টামিন (এলার্জির জন্য), ওরাল স্যালাইন, স্টেরিলাইজড সেলাই কিট, কাঁচি, টুইজার, থার্মোমিটার ইত্যাদি রাখুন। টিটেনাসের টিকা আপ টু ডেট আছে কিনা নিশ্চিত হোন।
- জরুরি স্বাস্থ্যসেবা: জ্বর, পানিশূন্যতা, ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট, মারাত্মক আঘাতের ক্ষেত্রে নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ক্লিনিক বা সরকারি হাসপাতালে যোগাযোগ করুন। অনেক জায়গায় মোবাইল মেডিকেল টিম কাজ করে।
মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন: অদৃশ্য ক্ষতের মলম
প্রাকৃতিক দুর্যোগ শুধু ঘরবাড়ি, ফসলই ধ্বংস করে না, ভেঙে দেয় মানসিক ভারসাম্য। ভয়, আতঙ্ক, শোক, অসহায়ত্ব, অনিদ্রা, দুঃস্বপ্ন – এই অনুভূতিগুলো স্বাভাবিক। কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী হলে পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার (PTSD), ডিপ্রেশনে রূপ নিতে পারে।
- নিজের অনুভূতিকে স্বীকৃতি দিন: নিজেকে বলবেন না, “কান্না করা দুর্বলতা”। আপনি যে পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গেছেন, তাতে ভয় পাওয়া, কষ্ট পাওয়া, হতাশ হওয়া খুবই স্বাভাবিক।
- কথা বলুন: বিশ্বস্ত কারো সাথে – পরিবারের সদস্য, বন্ধু, প্রতিবেশী – আপনার ভয়, দুঃখের কথা শেয়ার করুন। শুধু শুনে দেওয়াও অনেক বড় সমর্থন। একসাথে থাকার চেষ্টা করুন।
- রুটিন তৈরি করুন: দুর্যোগের পর জীবন এলোমেলো হয়ে যায়। দৈনন্দিন ছোট ছোট রুটিন (যেমন সকালে উঠে মুখ ধোয়া, নির্দিষ্ট সময়ে খাওয়া, একসাথে বসা) কিছুটা নিয়ন্ত্রণের অনুভূতি ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে।
- শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকুন: হাঁটা, হালকা ব্যায়াম, বাড়ি পরিষ্কার করা (যদি নিরাপদ হয়) – এগুলো স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে।
- শিশুদের প্রতি বিশেষ মনোযোগ: শিশুরা তাদের ভয়, কষ্ট খেলার মধ্য দিয়ে, আঁকার মধ্য দিয়ে, অথবা আচরণগত পরিবর্তনের (চেপে ধরা, ভিজে ফেলা, অতিরিক্ত রাগ, ভয়) মধ্য দিয়ে প্রকাশ করে। তাদের সাথে বেশি সময় কাটান, তাদের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনুন, আশ্বস্ত করুন যে তারা এখন নিরাপদ। খেলাধুলায় উৎসাহিত করুন।
- পেশাদার সাহায্য নিন: যদি অনুভূতিগুলো খুব তীব্র হয়, দৈনন্দিন কাজে বাধা সৃষ্টি করে, বা কয়েক সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হয়, মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বা কাউন্সেলরের সাহায্য নিন। সরকারি হাসপাতাল, বিশ্ববিদ্যালয় কাউন্সেলিং সেন্টার, বা জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ঢাকা (০২-৯১৩৭৩১৪) যোগাযোগ করতে পারেন। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর কাউন্সেলিং সেবাও পাওয়া যেতে পারে। লজ্জার কিছু নেই।
আশ্রয়, খাদ্য ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম: মৌলিক চাহিদা পূরণ
ঘর হারানোর বেদনা অপূরণীয়। কিন্তু সাময়িক আশ্রয় ও পেটের ক্ষুধা মেটানো জরুরি বেঁচে থাকার জন্য।
- আশ্রয়কেন্দ্র বা নিরাপদ স্থান খোঁজা:
- সরকারি আশ্রয়কেন্দ্র: দুর্যোগের পূর্বাভাস পাওয়ার পরেই উপজেলা/জেলা প্রশাসন স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, সরকারি ভবনগুলোকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করে। স্থানীয় প্রশাসন বা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে আশ্রয়কেন্দ্রের ঠিকানা জেনে নিন। সিপিপি স্বেচ্ছাসেবীরা মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যেতে সাহায্য করে।
- উঁচু ও মজবুত স্থান: আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে না পারলে নিকটাত্মীয় বা প্রতিবেশীর উঁচু ও মজবুত বাড়িতে আশ্রয় নিন।
- টেন্ট বা শেড: ত্রাণ সংস্থাগুলো প্রায়ই অস্থায়ী টেন্ট বা শেডের ব্যবস্থা করে। নিজেদের সামর্থ্য থাকলে টারপলিন বা বাঁশ দিয়ে অস্থায়ী ছাউনি তৈরি করা যেতে পারে।
- ত্রাণ সহায়তা প্রাপ্তি:
- স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সাথে রেজিস্ট্রেশন: আশ্রয়কেন্দ্রে বা স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ/পৌরসভায় নিজের নাম, পরিবারের সদস্য সংখ্যা, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ রেজিস্ট্রেশন করান। এটাই ত্রাণ বিতরণের ভিত্তি। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র (জাতীয় পরিচয়পত্র) সাথে রাখুন।
- ত্রাণ বিতরণ পয়েন্ট: স্থানীয় প্রশাসন ত্রাণ বিতরণের সময় ও স্থান ঘোষণা করে। লাইনে শৃঙ্খলা বজায় রাখুন। মহিলা, শিশু, বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অগ্রাধিকার দিন। স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর মাধ্যমেও ত্রাণ পাওয়া যায়।
- নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী সাহায্য করুন: যারা অপেক্ষাকৃত কম ক্ষতিগ্রস্ত, তারা ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজনের সাহায্যে এগিয়ে আসুন – খাবার, পানি, ওষুধ, পরনের কাপড় দিয়ে।
- জরুরি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সংগ্রহ ও সংরক্ষণ:
- খাদ্য: চাল, ডাল, তেল, চিনি, লবণ, বিস্কুট, শুকনো খাবার (চিড়া, মুড়ি, খই), শুকনো মরিচ-পেঁয়াজ-রসুন – এমন শুকনো ও দীর্ঘস্থায়ী খাবার প্রাধান্য দিন। শিশু থাকলে শিশুখাদ্য, গুঁড়োদুধ জরুরি।
- পানি: বিশুদ্ধ পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করুন। পরিষ্কার পাত্রে রাখুন।
- জরুরি কিট রিফিল: ফার্স্ট এইড সামগ্রী, জরুরি ওষুধ, টর্চলাইট (অতিরিক্ত ব্যাটারিসহ), মোমবাতি, দেশলাই, বহনযোগ্য রেডিও, শক্ত প্লাস্টিকের পানির বোতল, টুথব্রাশ-পেস্ট, সাবান, স্যানিটারি ন্যাপকিন, অতিরিক্ত কাপড় (বিশেষ করে অন্তর্বাস), গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্রের ফটোকপি (পলিথিনে মুড়ে) – এই জিনিসগুলো একটি ব্যাগে বা বাক্সে প্রস্তুত রাখুন বা দ্রুত সংগ্রহ করুন।
- টারপলিন/প্লাস্টিক শিট: বৃষ্টি ও রোদ থেকে রক্ষা পেতে, বা অস্থায়ী ছাউনি তৈরিতে অপরিহার্য।
- কুকিং স্টোভ ও জ্বালানি: গ্যাস সিলিন্ডার বা চুলা না থাকলে কেরোসিন স্টোভ বা ইমারজেন্সি কুকিং সেট (যেমন হেক্সামিন ট্যাবলেট বা স্পিরিট স্টোভ) এবং পর্যাপ্ত নিরাপদ জ্বালানির ব্যবস্থা করুন।
দলিলপত্র ও আর্থিক সুরক্ষা: ভবিষ্যতের ভিত্তি পুনরুদ্ধার
পানিতে ভেসে গেছে জন্মনিবন্ধন, জমির দলিল, একাডেমিক সার্টিফিকেট, ব্যাংক বই, বীমা পলিসি – এই আতঙ্কও কম নয়। কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যায়:
- ক্ষতিগ্রস্ত দলিলপত্রের ফটোকপি/স্ক্যান: দুর্যোগের আগেই সব গুরুত্বপূর্ণ দলিলপত্রের ফটোকপি বা স্ক্যান করে মোবাইল ফোন, ইমেইল বা ক্লাউড স্টোরেজে (গুগল ড্রাইভ, ড্রপবক্স) সংরক্ষণ করুন। হার্ড কপি একটি ওয়াটারপ্রুফ প্লাস্টিকের ফাইলে রেখে উঁচু ও নিরাপদ স্থানে রাখুন।
- পুনর্ব্যবহারযোগ্য দলিল: কিছু দলিল (যেমন জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্ম নিবন্ধন, ট্রেড লাইসেন্স) পানিতে নষ্ট হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের (এনআইডিডব্লিউ, স্থানীয় পৌরসভা/ইউনিয়ন পরিষদ) কাছে আবেদন করে পুনরায় সংগ্রহ করা যায়। ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার প্রমাণ (যেমন স্থানীয় প্রশাসন থেকে ক্ষয়ক্ষতির সনদ) জমা দিতে হতে পারে।
- ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ: ব্যাংক একাউন্ট নম্বর মনে না থাকলে বা পাসবুক নষ্ট হলে, ব্যাংকের শাখায় যোগাযোগ করুন। জাতীয় পরিচয়পত্রের মাধ্যমে একাউন্ট খুঁজে বের করা সম্ভব। ক্রেডিট/ডেবিট কার্ড হারিয়ে গেলে তাৎক্ষণিক ব্লক করুন।
- বীমা ক্লেইম: সম্পত্তি বা ফসলে বীমা করা থাকলে, দ্রুত সম্ভব ক্ষয়ক্ষতির ছবি/ভিডিও তুলুন এবং বীমা কোম্পানিকে জানান। তাদের নির্দেশিত পদ্ধতিতে ক্লেইম ফাইল করুন। ক্ষয়ক্ষতির তালিকা তৈরি করে স্থানীয় চেয়ারম্যান/প্রশাসনের কাছ থেকে প্রত্যয়ন নিন।
সরকারি ও বেসরকারি সহায়তা প্রাপ্তিতে করণীয়
বিপর্যয় মোকাবিলায় সরকারি ও বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) নানাবিধ সহায়তা প্রদান করে থাকে। সহায়তা পেতে যা করবেন:
- স্থানীয় প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ: আপনার ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, মেম্বার, উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও), জেলা প্রশাসক (ডিসি) কার্যালয়ে যোগাযোগ করুন। ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ জানান। ত্রাণ, নগদ সহায়তা, পুনর্বাসন সুবিধা ইত্যাদির জন্য রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করুন। বাংলাদেশ সরকারের আপদকালীন সহায়তা তহবিল থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের নগদ সহায়তা দেওয়া হয়।
- বেসরকারি সংস্থা (এনজিও): ব্র্যাক, আশা, প্রশিকা, কারিতাস, সেভ দ্য চিলড্রেন, ওয়াটারএইড, অক্সফামের মতো বড় এনজিওগুলো এবং অসংখ্য স্থানীয় সংগঠন ত্রাণ, চিকিৎসা সেবা, বিশুদ্ধ পানি, স্যানিটেশন সুবিধা, মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা, জীবিকায়ন কর্মসূচি নেয়। তাদের স্থানীয় কার্যালয় বা মাঠকর্মীদের সাথে যোগাযোগ করুন।
- আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা: জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা (ইউনিসেফ, ডব্লিউএফপি, ইউএনডিপি), আন্তর্জাতিক রেড ক্রস/রেড ক্রিসেন্ট ফেডারেশনও বাংলাদেশে দুর্যোগকালীন সহায়তা দিয়ে থাকে। এরা সাধারণত সরকার বা স্থানীয় এনজিওর মাধ্যমে কাজ করে।
- সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি: ভিজিডি, ভিজিএফ, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, বয়স্ক ভাতা ইত্যাদি প্রকল্পের সুবিধাভোগী হলে, আপনার অবস্থান পরিবর্তন বা কার্ড নষ্ট হলে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার (ইউডিসি) বা উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে যোগাযোগ করুন। দুর্যোগের কারণে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে নতুন সুবিধাভুক্তি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন।
- কৃষি পুনর্বাসন: ফসল ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা উপজেলা কৃষি অফিসে যোগাযোগ করুন। বিনামূল্যে বীজ, সার, কীটনাশক, কৃষি উপকরণ, প্রণোদনা বা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা হতে পারে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (DAE) এবং বার্ড (BRAC University) এর মতো প্রতিষ্ঠান কৃষি পুনর্বাসনে কাজ করে।
- সচেতনতা ও অধিকার: আপনার কী কী সহায়তা পাওয়ার অধিকার আছে, তা জানার চেষ্টা করুন। কোন সহায়তা দেওয়া হবে, কখন, কোথায় – এই তথ্য স্থানীয় প্রশাসন থেকে নিশ্চিত হোন। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর (ডিএমএম) এর ওয়েবসাইট (http://dmm.gov.bd/) এবং হেল্পলাইন (১০৯০) থেকে তথ্য পাওয়া যেতে পারে।
প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পর প্রস্তুতি মানে শুধু তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া নয়; বরং ধ্বংসস্তূপ থেকে উঠে দাঁড়ানোর, জীবন ও জীবিকা পুনর্গঠনের সেই কঠিন কিন্তু অপরিহার্য যাত্রায় আপনার পাথেয় হওয়ার কথা ভেবেই তৈরি করা হয়েছে এই জরুরি গাইড। এখানে দেওয়া প্রতিটি পরামর্শ কোনো না কোনো বাস্তব অভিজ্ঞতা, ক্ষতি, এবং শিক্ষা থেকে উঠে এসেছে। মনে রাখবেন, আপনি একা নন। গোটা জাতি, সরকারি-বেসরকারি সংস্থা, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আপনার পাশে আছে। আপনার সচেতনতা, প্রস্তুতি, এবং সাহসই পারে ভয়াবহতা কাটিয়ে নতুন করে শুরু করার পথ দেখাতে। আজই আপনার পরিবারকে নিয়ে বসুন, দুর্যোগ-পরবর্তী করণীয় নিয়ে আলোচনা করুন, একটি প্রাথমিক জরুরি কিট তৈরি করুন, এবং গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্রের ব্যাকআপ নিন। আপনার এই প্রস্তুতিই আগামী দিনে আপনার এবং আপনার প্রিয়জনের জীবন বাঁচাতে পারে।
জেনে রাখুন
- প্রশ্ন: বন্যার পর পানিবাহিত রোগ (যেমন ডায়রিয়া, কলেরা) প্রতিরোধের সবচেয়ে কার্যকর উপায় কী?
- উত্তর: বিশুদ্ধ পানি পান করা ও ব্যবহার করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। পানি ফুটিয়ে বা বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট/ব্লিচ দিয়ে শোধন করে নিন। সাবান-পানি দিয়ে বারবার হাত ধোয়ার অভ্যাস করুন (বিশেষ করে খাওয়ার আগে ও টয়লেট ব্যবহারের পর)। খোলা/দূষিত খাবার, কাঁচা শাকসবজি এড়িয়ে চলুন। ওরাল স্যালাইন তৈরি ও ব্যবহার পদ্ধতি শিখে রাখুন। ডায়রিয়া শুরু হলে দ্রুত নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যান।
- প্রশ্ন: দুর্যোগের সময় আমার শিশুকে কীভাবে নিরাপদ ও মানসিকভাবে সুরক্ষিত রাখব?
- উত্তর: শিশুকে সর্বদা আপনার কাছাকাছি রাখুন। তাদের ভয় ও প্রশ্নের উত্তর সহজ ভাষায় দিন, আশ্বস্ত করুন যে আপনি আছেন। তাদের রুটিন (খাওয়া, ঘুম) বজায় রাখার চেষ্টা করুন। খেলাধুলা, গান, ছবি আঁকায় উৎসাহিত করুন – এগুলো তাদের ভয় প্রকাশে সাহায্য করে। তাদেরকে সাহায্যের ছোট কাজ দিন (যেমন খেলনা গুছানো), এতে দায়িত্ববোধ বাড়ে। অস্বাভাবিক আচরণ (বেশি চেপে ধরা, রাগ, ভয়) দেখলে ধৈর্য ধরে মনোযোগ দিন। প্রয়োজনে পেশাদার সাহায্য নিন।
- প্রশ্ন: আমার গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র (জমির দলিল, এনআইডি, জন্মনিবন্ধন) পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে। এখন কী করব?
- উত্তর: প্রথমে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ বা পৌরসভা থেকে ক্ষয়ক্ষতির একটি প্রত্যয়নপত্র (সার্টিফিকেট) সংগ্রহ করুন। এরপর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করুন:
- জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি): নির্বাচন কমিশনের নির্ধারিত সেবা কেন্দ্রে বা ওয়েবসাইটে (services.nidw.gov.bd) আবেদন করুন। ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার প্রমাণ জমা দিতে হবে।
- জন্ম নিবন্ধন: স্থানীয় পৌরসভা/ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে আবেদন করুন।
- জমির দলিল: সংশ্লিষ্ট তহসিল অফিস বা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়ে যোগাযোগ করুন। সিকিউরিটি কপি বা রেজিস্ট্রি অফিসের রেকর্ড থেকে পুনরুদ্ধার সম্ভব হতে পারে।
- শিক্ষাগত সনদ: সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ড বা প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করে ডুপ্লিকেট সনদ সংগ্রহ করুন।
- উত্তর: প্রথমে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ বা পৌরসভা থেকে ক্ষয়ক্ষতির একটি প্রত্যয়নপত্র (সার্টিফিকেট) সংগ্রহ করুন। এরপর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করুন:
- প্রশ্ন: দুর্যোগের পর ত্রাণ সহায়তা পাওয়ার জন্য কোথায় রেজিস্ট্রেশন করব? এবং ন্যায্যতার নিশ্চয়তা কীভাবে পাব?
- উত্তর: সাধারণত স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়, পৌরসভা অফিস বা আশ্রয়কেন্দ্রে ত্রাণ প্রাপ্তির জন্য রেজিস্ট্রেশন করা হয়। আপনার নাম, পরিবারের সদস্য সংখ্যা, ক্ষতির বিবরণ সঠিকভাবে দিতে হবে। জাতীয় পরিচয়পত্র বা অন্যান্য পরিচয়পত্র দেখাতে হতে পারে। ন্যায্যতার জন্য:
- ত্রাণ বিতরণের সময়-স্থান আগে থেকে ঘোষণা করা হয় কিনা খেয়াল করুন।
- স্থানীয় প্রশাসন (ইউএনও অফিস, ইউপি চেয়ারম্যান) বা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তত্ত্বাবধানে বিতরণ হলে ভালো।
- তালিকা প্রকাশ করা হয় কিনা দেখুন (কখনও কখনও ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে টাঙানো হয়)।
- অসাধুতা বা হয়রানির শিকার হলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) বা জেলা প্রশাসক (ডিসি) অফিসে অভিযোগ করুন। হেল্পলাইন ৩৩৩ বা ৯৯৯ এও কল করতে পারেন।
- উত্তর: সাধারণত স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়, পৌরসভা অফিস বা আশ্রয়কেন্দ্রে ত্রাণ প্রাপ্তির জন্য রেজিস্ট্রেশন করা হয়। আপনার নাম, পরিবারের সদস্য সংখ্যা, ক্ষতির বিবরণ সঠিকভাবে দিতে হবে। জাতীয় পরিচয়পত্র বা অন্যান্য পরিচয়পত্র দেখাতে হতে পারে। ন্যায্যতার জন্য:
- প্রশ্ন: দুর্যোগ-পরবর্তী মানসিক চাপ (স্ট্রেস, দুঃস্বপ্ন, ভয়) কখন পেশাদার সাহায্য নেওয়া উচিত?
- উত্তর: দুর্যোগের পর কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত ভয়, দুঃখ, অনিদ্রা স্বাভাবিক। তবে নিচের লক্ষণগুলো কয়েক সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হলে বা দৈনন্দিন জীবনযাপনে মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটালে অবশ্যই মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বা কাউন্সেলরের সাহায্য নিন:
- দীর্ঘ সময় ধরে তীব্র দুঃখ বা ভয়।
- ঘুমের মারাত্মক সমস্যা (ঘুম না আসা, ঘন ঘন দুঃস্বপ্ন)।
- সব সময় দুর্যোগের ঘটনা মনে পড়া (ফ্ল্যাশব্যাক) বা সে সম্পর্কে কথা বলতে/চিন্তা করতে অস্বস্তি।
- মানুষজন বা জায়গা এড়িয়ে চলা যা দুর্যোগের কথা মনে করিয়ে দেয়।
- রাগ, খিটখিটে মেজাজ, সহিংস আচরণ।
- কোনো কিছুতেই আনন্দ না পাওয়া, হতাশা, আত্মহত্যার চিন্তা।
- স্মৃতি বা মনোযোগের সমস্যা।
- শারীরিক সমস্যা (ব্যথা, বমি ভাব) যা অন্য কোনো কারণ ছাড়াই দেখা দিচ্ছে।
- উত্তর: দুর্যোগের পর কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত ভয়, দুঃখ, অনিদ্রা স্বাভাবিক। তবে নিচের লক্ষণগুলো কয়েক সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হলে বা দৈনন্দিন জীবনযাপনে মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটালে অবশ্যই মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বা কাউন্সেলরের সাহায্য নিন:
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।