জুমবাংলা ডেস্ক : ভুয়া দম্পতি খোকন আকন্দ ও বিলকিস। স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে সাভারে লিভ টুগেদার করেন তারা। বিলকিস বিভিন্ন ব্যক্তিকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে বাসায় নিয়ে আসেন। খোকন গোপন ভিডিও ধারণ করেন। পরে তা ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে আদায় করেন টাকা। এ পর্যন্ত শতাধিক লোক তাদের প্রতারণার শিকার। এদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি টাকা।
৪ বছর ধরে সক্রিয় থাকলেও এর আগে কখনো ধরা পড়েননি তারা। সর্বশেষ একজন ইন্স্যুরেন্স কর্মকর্তাকে ব্ল্যাকমেইল করে ধরা খেয়েছেন। বর্তমানে তারা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হেফাজতে ২ দিনের রিমান্ডে আছেন।
তারা ডিবিকে জানিয়েছেন, তাদের মূল টার্গেট ছিল আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ব্যক্তি। এই চক্রে আরও কয়েকজন জড়িত। তাদের ধরতে অভিযান চলছে। ডিবি সূত্র জানায়, কবির হোসেন (ছদ্মনাম) চাকরি করেন একটি ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে। ফেসবুকে পরিচয় হয় বিলকিসের সঙ্গে। এরপর মোবাইল নম্বর আদান-প্রদান ও প্রেমের সম্পর্ক। একপর্যায়ে বিলকিসের সাভারের বাসায় যান কবির। সেখানে অন্তরঙ্গ মুহূর্ত কাটানোর একপর্যায়ে ডিবি পরিচয়ে কয়েকজন হাজির হন। এরপর তাদের দুজনকেই নগ্ন করে ভিডিও ধারণ করে দাবি করেন মোটা অঙ্কের টাকা। টাকা দিতে ব্যর্থ হলে কবিরের পরিবারের কাছে ভিডিও পাঠানোর হুমকি দেন। বাধ্য হয়ে কবির ১ লাখ টাকায় মুক্তি পান। এরপরও প্রায়ই ফোন করে টাকা চেয়ে বসে চক্রের সদস্যরা।
ডিবি-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগের অর্গানাইজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিমের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মো. নাজমুল হক বলেন, ২০১৮ সাল থেকে খোকন ও বিলকিস এই প্রতারণা করে আসছে। বুধবার সাভার থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। পরে রাজধানীর দারুস সালাম থানায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তাদের গ্রেফতারের খবরে অনেক ভুক্তভোগী ডিবি কার্যালয়ে ভিড় করছেন।
সূত্র জানায়, দুভাবে তারা মানুষকে ব্ল্যাকমেইল করতেন। প্রথমত, তারা বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিতেন। ঋণের কিস্তি আদায়কারী ব্যক্তির সঙ্গে নানা কৌশলে বিলকিস শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করতেন। পাশের রুম থেকে গোপন ভিডিও ধারণ করতেন খোকন। এরপর ওই ভিডিও দেখিয়ে টাকা দাবি করতেন। টাকা না দিলে অফিসের বসের কাছে পাঠিয়ে চাকরি খাওয়া ও পরিবারের কাছে পাঠানোর হুমকি দিতেন। কিছু ক্ষেত্রে ঋণের কিস্তির টাকা ভুক্তভোগী নিজেই পরিশোধের চুক্তিতে মুক্তি পেতেন। মাঝে মধ্যে অন্তরঙ্গ থাকা অবস্থায় খোকন তার সহযোগীদের নিয়ে ডিবি পুলিশ বা সাংবাদিক পরিচয়ে সেখানে হাজির হয়ে ভুক্তভোগীকে ব্ল্যাকমেইল করতেন।
দ্বিতীয় কৌশল হিসাবে খোকন বিভিন্ন বিত্তশালী ব্যক্তির নাম্বার সংগ্রহ করতেন। এরপর বিলকিস সেই নম্বারে কল দিয়ে আস্তে আস্তে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তুলতেন। পরে পরিকল্পনা অনুযায়ী টাকা আদায় করতেন। ভিকটিমদের সঙ্গে এটিএম কার্ড থাকলে সেগুলোর পিন নম্বর নিয়ে অ্যাকাউন্ট থেকে তুলে নেওয়া হতো সব টাকা। এরপর চোখ বেঁধে নির্জন স্থানে ফেলে রেখে যেত তাদের।
গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে ৩টি মোবাইল ফোন, ১টি স্বাক্ষর করা চেকের পাতা, ৩টি ১০০ টাকা মূল্যের নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প এবং জব্দ করা মোবাইলে ভুক্তভোগীদের সঙ্গে আপত্তিকর মুহূর্তের ভিডিও ও স্থিরচিত্র পাওয়া যায়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে খোকন ও বিলকিস ডিবিকে জানান, যেসব ব্যক্তি বিলকিসের প্রেমের ফাঁদে পা না দিতেন তাদের চাকরি বা ব্যবসার লোভ দেখানো হতো। রাজি হলে রেস্টুরেন্ট অথবা বাইরে কোথাও দেখা করার কথা বলত। পরে ভিকটিমকে কৌশলে অপহরণ করে একই কায়দায় ব্ল্যাকমেইল করতেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।