বৃষ্টিস্নাত ঢাকার কোনো জানালার ধারে বসে আপনি হয়তো সারারাত জেগে আছেন। ফোনের স্ক্রিনে কোনো নতুন নোটিফিকেশন নেই, শেষ বার্তাটি এখনো “সীড” ছাড়াই পড়ে আছে। গলায় আটকে থাকা সেই অস্বস্তিকর গ্লোবাসের অনুভূতি, বুকের ভেতরটা যেন শূন্যতার ভারী পাথর চেপে ধরে আছে। প্রেমে ব্যর্থ হওয়া – এই দুই শব্দের আঘাত কতটা গভীর, কতটা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে, তা শুধু সেই-ই বোঝে যার হৃদয়ে এর খাঁজ কাটা পড়েছে। এটি শুধু আবেগের ব্যর্থতা নয়; শরীরবৃত্তীয় স্তরে ব্যথার অনুভূতি তৈরি করে, মস্তিষ্কের রসায়নে ভূমিকম্প তোলে, সামাজিক পরিচয়ের ভিত নড়বড়ে করে দেয়। কিন্তু এই ব্যর্থতা চূড়ান্ত নয়, এই বেদনা স্থায়ী নয়। হৃদয়ভঙ্গের এই গহ্বর থেকে উঠে দাঁড়ানোর শিল্প আয়ত্ত করাই আজকের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। প্রেমে ব্যর্থ হলে করণীয় কী, কীভাবে এই দুর্বিপাককে জীবনের পুনর্গঠনের সুযোগে পরিণত করবেন – তারই একটি বিস্তৃত, বিজ্ঞানসম্মত ও মানবিক রোডম্যাপ।
Table of Contents
প্রেমে ব্যর্থ হওয়ার শারীরবৃত্তীয় ও মানসিক প্রতিক্রিয়া: কেন এত কষ্ট হয়?
প্রেমে ব্যর্থ হলে প্রথম যে প্রশ্নটা মনের ভেতর ঘুরপাক খায়: “কেন এত কষ্ট লাগে? এতো কি স্বাভাবিক?” উত্তরটা হ্যাঁ। একেবারেই স্বাভাবিক, এবং এর পেছনে জটিল স্নায়ুবৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা রয়েছে।
- মস্তিষ্কের রিওয়ার্ড সিস্টেমে ধাক্কা: গবেষণা বলছে, প্রেমের সময় মস্তিষ্কের ডোপামিন, অক্সিটোসিন, সেরোটোনিনের মতো ‘ফিল-গুড’ নিউরোট্রান্সমিটারগুলোর নিঃসরণ বেড়ে যায়। ব্রেকআপের পর এই রাসায়নিক প্রবাহ হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়, যা মাদক ছাড়ার লক্ষণের মতোই উত্তেজনা, বিষণ্নতা ও শারীরিক ব্যথার সৃষ্টি করে। স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির এক গবেষণায় অংশগ্রহণকারীরা ব্রেকআপের পর মস্তিষ্ক স্ক্যান করালে দেখা গেছে, শারীরিক ব্যথার সময় যে ব্রেইন এরিয়া সক্রিয় হয় (অ্যান্টেরিয়র ইনসুলা ও অ্যান্টেরিয়র সিংগুলেট কর্টেক্স), ভালোবাসার মানুষকে হারানোর চিন্তায়ও ঠিক সেই একই অংশগুলো জ্বলজ্বল করছে।
- অ্যাটাচমেন্ট থিওরি ও ‘প্রাথমিক আঘাত’: মনোবিজ্ঞানী জন বোলবির অ্যাটাচমেন্ট থিওরি অনুযায়ী, প্রাপ্তবয়স্ক প্রেমিক সম্পর্ক শৈশবে মা-বাবার সঙ্গে গড়ে ওঠা বন্ধনের প্রতিফলন। ব্রেকআপ মানে সেই নিরাপদ আশ্রয়ের গভীর আস্থার বন্ধন ছিন্ন হওয়া, যা আমাদের অস্তিত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ – প্রাগৈতিহাসিককালে দল থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া মানেই মৃত্যুঝুঁকি ছিল। তাই হৃদয়ভঙ্গের পর মস্তিষ্ক তাৎক্ষণিকভাবে ‘ফাইট, ফ্লাইট, ফ্রিজ’ মোডে চলে যায়।
- সামাজিক পরিচয় ও আত্মমর্যাদার সংকট: “আমি এখন কে?” – ব্রেকআপের পর এই প্রশ্নটা ভীষণ তাড়া করে। ড. রাজীব, যিনি ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কাউন্সেলর হিসেবে কাজ করেন, তার মতে, “বিশেষ করে দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্ক ভাঙলে, আমাদের আত্মপরিচয়ের বড় অংশ জুড়ে থাকে সেই সম্পর্ক বা পার্টনার। সেটি হারালে আমরা নিজেদের অসম্পূর্ণ, অযোগ্য মনে করি। ঢাকার তরুণ-তরুণীদের মধ্যে এই ‘আইডেন্টিটি লস’ খুব কমন।”
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বাড়তি চ্যালেঞ্জ:
- সামাজিক চাপ ও কুসংস্কার: “এত বয়সে ব্রেকআপ? পরে কে বিয়ে করবে?” – এমন মন্তব্য হৃদয়ভঙ্গের ব্যথাকে বিষিয়ে তোলে।
- সীমিত কাউন্সেলিং সুবিধা: পেশাদার মানসিক স্বাস্থ্য সেবার অভাব এবং এ বিষয়ে সামাজিক ট্যাবু।
- ডিজিটাল টর্চার: সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রাক্তন পার্টনারের আপডেট দেখে বারবার আঘাত পাওয়া।
এই পর্যায়ে করণীয় (Practical Steps):
- আপনার ব্যথাকে বৈধতা দিন: “ভালোবাসা গেছে, কান্না আসে না” – এমন গানের লাইনের ফাঁদে পড়বেন না। কান্না করুন, রাগ করুন, হতাশ হোন – এগুলো সবই প্রাকৃতিক প্রতিক্রিয়া। নিজেকে জাজ করবেন না।
- নো-কন্ট্যাক্ট রুল স্ট্যান্ডার্ড করুন: কমপক্ষে ৩০-৬০ দিনের জন্য ফোন নম্বর ডিলিট করুন, সোশ্যাল মিডিয়ায় আনফলো/ব্লক করুন। ড. রাজীব জোর দিচ্ছেন, “এই ‘ডিটক্স’ ছাড়া নিরাময় প্রক্রিয়া শুরুই হয় না। প্রতিটি বার্তা বা স্ট্যাটাস দেখাই নতুন করে ক্ষতকে খোঁচা দেওয়ার সামিল।”
- শারীরিক যত্ন নিন নিষ্ঠার সঙ্গে:
- ঘুম: মেলাটোনিন লেভেল বিগড়ে যায়। নির্দিষ্ট সময়ে শোয়া-ওঠা, শোবার আগে স্ক্রিন বন্ধ রাখা জরুরি।
- খাদ্য: কমপ্লেক্স কার্বস (ওটস, ব্রাউন রাইস), ওমেগা-৩ (ইলিশ, সামুদ্রিক মাছ), প্রোটিন ও ভিটামিন-বি সমৃদ্ধ খাবার মেজাজ স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে। চিনি ও প্রসেসড ফুড এড়িয়ে চলুন।
- ব্যায়াম: দৈনিক ৩০ মিনিট হাঁটা বা যোগব্যায়াম কর্টিসল (স্ট্রেস হরমোন) কমায়, এন্ডোরফিন বাড়ায়। গুলশান লেক বা রমনা পার্কে সকালের হাঁটা হতে পারে ভালো থেরাপি।
- জার্নালিং শুরু করুন: মনের কথাগুলো কাগজে বা ডিজিটাল ডায়েরিতে লিখে ফেলুন। এটি ইমোশনাল কার্থার্সিস বা আবেগের শুদ্ধি ঘটায়, প্যাটার্ন চিনতে সাহায্য করে।
আত্ম-আবিষ্কার থেকে আত্ম-রূপান্তর: ব্যর্থতাকে পাথর সিঁড়িতে পরিণত করার কৌশল
প্রথম ধাক্কা সামলে নেওয়ার পর আসে দীর্ঘমেয়াদি পুনর্গঠনের কাজ। এই ধাপে প্রেমে ব্যর্থ হলে করণীয় শুধু ব্যথা কমানো নয়, বরং নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করা এবং ভবিষ্যতের জন্য শক্ত ভিত গড়ে তোলা।
বিষণ্নতা না শোক? পার্থক্য চিনুন:
- স্বাভাবিক শোক (Grief): ওঠানামা করা আবেগ, কিছুক্ষণের জন্য আনন্দ বা স্বস্তি পাওয়া, ধীরে ধীরে তীব্রতা কমা।
- ক্লিনিক্যাল ডিপ্রেশন: দৈনন্দিন কাজে অনীহা, ঘুম বা খাওয়ায় মারাত্মক ব্যাঘাত, আত্মহত্যার চিন্তা, প্রায় প্রতিদিন সারাদিন ধরে তীব্র দুঃখবোধ – যা দুই সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হয়।
🚨 গুরুত্বপূর্ণ: যদি বিষণ্নতার লক্ষণগুলো তীব্র ও দীর্ঘস্থায়ী হয়, অবশ্যই একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বা কাউন্সেলরের সাহায্য নিন। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ঢাকার হেল্পলাইন নম্বর বা সরাসরি সেবা নেওয়া যেতে পারে। মনে রাখবেন, মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নেওয়া দুর্বলতার লক্ষণ নয়, বরং আত্মসচেতনতার পরিচয়।
আত্ম-আবিষ্কারের যাত্রাপথ:
- “কেন?” এর ফাঁদ এড়িয়ে “কী?” এর দিকে মন দিন:
- সম্পর্ক ভাঙার কারণ নিয়ে অতিরিক্ত ভাবলেই ফিরে আসে আত্মনিন্দা (“আমি যথেষ্ট ভালো ছিলাম না”) বা ক্রোধ (“সে কেন এমন করল?”)। এর বদলে জিজ্ঞাসা করুন:
- এই সম্পর্ক থেকে আমি কী শিখলাম? (সীমানা নির্ধারণ? যোগাযোগের দক্ষতা? নিজের চাহিদা চিনতে পারা?)
- আমার কী কী গুণ এই সম্পর্কে জ্বলে উঠেছিল? (যত্নশীলতা? ধৈর্য? রোমান্টিকতাবোধ?)
- আমার কী কী চাহিদা পূরণ হয়নি? (গুরুত্বপূর্ণ বোধ না হওয়া? মানসিক নিরাপত্তাহীনতা?)
- সুনির্দিষ্ট উত্তর পেতে একটি ‘রিলেশনশিপ অটোপসি’ শীট তৈরি করুন।
- সম্পর্ক ভাঙার কারণ নিয়ে অতিরিক্ত ভাবলেই ফিরে আসে আত্মনিন্দা (“আমি যথেষ্ট ভালো ছিলাম না”) বা ক্রোধ (“সে কেন এমন করল?”)। এর বদলে জিজ্ঞাসা করুন:
- আত্ম-মূল্যায়ন পুনর্নির্ধারণ (Reclaiming Self-Worth):
- প্রাক্তনকে ‘আইডিয়ালাইজ’ করা বন্ধ করুন: সম্পর্কের ভালো দিকগুলোর পাশাপাশি খারাপ বা অস্বস্তিকর মুহূর্তগুলোরও একটি তালিকা করুন। মানুষটি নিখুঁত ছিল না।
- আত্ম-করুণা (Self-Compassion) চর্চা: ড. ক্রিস্টিন নেফের মডেল অনুযায়ী:
- সেলফ-কাইন্ডনেস: নিজের প্রতি বন্ধুর মতো সদয় হোন। “ভুল করেছি, কিন্তু আমি মানুষ” – এই মনোভাব।
- কমন হিউম্যানিটি: বুঝতে চেষ্টা করুন যে ব্যর্থ প্রেম, প্রত্যাখ্যান, ব্যথা – এগুলো সবার জীবনের অংশ। আপনি একা নন।
- মাইন্ডফুলনেস: ব্যথাকে অবলম্বন করে নিজেকে শাস্তি না দিয়ে, তাৎক্ষণিক অনুভূতিকে পর্যবেক্ষণ করুন (“আমি এখন খুব কষ্ট পাচ্ছি”)।
- দৈনিক আত্ম-স্বীকৃতি (Self-Affirmation): প্রতিদিন সকালে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের তিনটি গুণ বা অর্জনের কথা বলুন (“আমি সাহসী”, “আমি সৎ”, “আমি আমার কাজে দক্ষ”)।
- সামাজিক পুনঃসংযোগ ও নতুন অভিজ্ঞতার সন্ধান:
- সাপোর্ট সিস্টেমকে লিভারেজ করুন: শুধু বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা নয়, নির্ভরযোগ্য পরিবারের সদস্য, সিনিয়র কলিগ বা মেন্টরের সঙ্গে গভীর কথোপকথন করুন। ঢাকা বা চট্টগ্রামের বিভিন্ন কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজিত ওয়ার্কশপ বা গ্রুপ থেরাপিতে যোগ দিতে পারেন।
- নতুন দক্ষতা বা শখের অনুসরণ:
- সেই গিটারটা বের করুন, যা বছরের পর বছর পড়ে ছিল।
- বাংলা বা ইংরেজি সাহিত্যের কোর্সে ভর্তি হোন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ (CER) বা ব্রিটিশ কাউন্সিলে ভালো কোর্স আছে।
- স্বেচ্ছাসেবী কাজে যোগ দিন (যেমন: জাগো ফাউন্ডেশন, JAAGO Foundation, Bidyanondo Foundation)। অন্যদের সাহায্য করা নিজের দুঃখের প্রেক্ষাপট বদলে দেয়।
- প্রকৃতির সংস্পর্শ: সুন্দরবন, সাজেক ভ্যালি বা কক্সবাজারের সমুদ্রসৈকতে একা বা বন্ধুদের সঙ্গে সফর মনের জমাট বাঁধা আবেগকে মুক্তি দিতে পারে।
দীর্ঘমেয়াদি নিরাময় ও সুস্থ সম্পর্কের ভিত্তি: ভবিষ্যতের দিকে তাকানো
যখন ব্যথার তীব্রতা কমে, বিষণ্নতার মেঘ কেটে যায়, তখন আসে পুনর্নির্মাণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ: নিজের ও ভবিষ্যত সম্পর্কের জন্য একটি সুস্থ, টেকসই ভিত্তি তৈরি করা।
- ব্যর্থতা নয়, ডেটা: প্যাটার্ন চিনুন:
- একাধিকবার একই ধরনের সম্পর্কে ব্যর্থ হলে (যেমন: সবাইকে প্লিজ করার প্রবণতা, বিষাক্ত মানুষ আকর্ষণ করা), গভীর মনস্তাত্ত্বিক প্যাটার্ন থাকতে পারে।
- শৈশব অভিজ্ঞতা, অ্যাটাচমেন্ট স্টাইল (আনসিকিউর এনক্সিয়াস, এভয়েডেন্ট ইত্যাদি) বিশ্লেষণে মনোবিদের সাহায্য নিন।
- বাংলাদেশি প্রেক্ষাপটে সচেতনতা: পারিবারিক চাপে সম্পর্কে জড়ানো, ‘সময় পার হয়ে যাচ্ছে’ এই ভয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া – এগুলো প্রায়শই ভুল পছন্দের দিকে ঠেলে দেয়।
- সীমানা নির্ধারণের দক্ষতা রপ্ত করুন:
- শারীরিক, মানসিক, সময়গত, যৌন – সব ধরনের সীমানা সম্পর্কে স্পষ্ট থাকুন।
- “না” বলতে শিখুন। এটি স্বার্থপরতা নয়, আত্মসম্মান।
- সম্পর্কের শুরু থেকেই নিজের মূল্যবোধ, লক্ষ্য ও চাহিদা স্পষ্টভাবে প্রকাশ করুন।
- ‘হোলিনেস’ এর দর্শন গ্রহণ:
- পূর্ণতা খোঁজা বন্ধ করুন। আপনি ইতিমধ্যেই সম্পূর্ণ। একটি সম্পর্ক আপনার জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হতে পারে, কিন্তু সমগ্র জীবন নয়।
- নিজের আনন্দ, লক্ষ্য ও বৃদ্ধির দায়িত্ব নিজের হাতে নিন। অন্য কেউ এসে আপনাকে ‘হ্যাপি’ করবে না।
- ভবিষ্যতের সম্পর্কের জন্য প্রস্তুতি:
- প্রাক্তনকে সম্পূর্ণভাবে মুক্তি দিন: মানসিকভাবে প্রস্তুত না হওয়া পর্যন্ত নতুন সম্পর্কে জড়াবেন না।
- ভালোবাসা বনাম নির্ভরতা: সুস্থ সম্পর্ক পারস্পরিক সমর্থন ও বৃদ্ধির জায়গা, একে অপরের ‘অর্ধেক’ খুঁজে বেড়ানোর স্থান নয়।
- যোগাযোগের কৌশল শেখা: সক্রিয় শোনা (Active Listening), ‘আই’ স্টেটমেন্ট (“আমি অনুভব করি… যখন…”) ব্যবহার করে অনুভূতি প্রকাশ করা শিখুন।
প্রেমে ব্যর্থ হওয়া জীবনের পরিসমাপ্তি নয়, বরং নতুনভাবে নিজেকে জানার, শক্ত হওয়ার এবং আগের চেয়ে আরও গভীর, আরও সচেতনভাবে ভালোবাসার সূচনা। এই যাত্রাপথে প্রতিটি কষ্ট, প্রতিটি আবেগগত উত্থান-পতনই আপনাকে আপনার নিজের শক্তির উৎসের কাছাকাছি নিয়ে যায়। মনে রাখবেন, প্রেমে ব্যর্থ হলে করণীয় এর সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র হল সময়, আত্ম-করুণা এবং নিজের ভেতরের সেই অবিচল আস্থা যে এই ব্যথাও একদিন শুধু স্মৃতিতে পরিণত হবে, একটি অধ্যায় যা আপনাকে ভাঙেনি, বরং গড়ে তুলেছে। আজই নিজেকে একটি গভীর শ্বাস নিতে বলুন। এই মুহূর্ত থেকে, এই শ্বাস থেকেই শুরু হোক আপনার পুনরুত্থান। নিজের যত্ন নিন, সাহস রাখুন, এবং বিশ্বাস করুন – আপনার হৃদয়ের সক্ষমতা এই ক্ষত শুকিয়ে আবারও প্রাণবন্ত হয়ে ওঠার।
জেনে রাখুন
প্রশ্ন: প্রেমে ব্যর্থ হওয়ার পর কতদিন কষ্ট স্বাভাবিক?
উত্তর: কষ্টের মেয়াদ ব্যক্তি, সম্পর্কের গভীরতা ও ট্রমার মাত্রা অনুসারে ভিন্ন হয়। সাধারণত তীব্র ব্যথা কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাস স্থায়ী হতে পারে। তবে বিষণ্নতা বা দৈনন্দিন কাজে স্থায়ী ব্যাঘাত ঘটলে ২-৩ সপ্তাহের মধ্যে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। নিরাময়ে ধৈর্য ধরুন, নিজের উপর চাপ দেবেন না।
প্রশ্ন: প্রাক্তন প্রেমিক/প্রেমিকার সঙ্গে বন্ধুত্ব করা কি সম্ভব?
উত্তর: ব্রেকআপের অব্যবহিত পরেই বন্ধুত্বে যাওয়া বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ক্ষতিকর। আবেগ পুরোপুরি প্রক্রিয়া করা, নিজের জীবন স্থিতিশীল হওয়া এবং দুজনেই নতুন সম্পর্কে এগোনোর আগে বন্ধুত্বে যাওয়া উচিত নয়। অনেক সময় ‘ফ্রেন্ডজোন’ আসলে মেনে নিতে না পারা বা আশা রাখার লক্ষণ হয়।
প্রশ্ন: হৃদয় ভাঙার ব্যথা কমানোর দ্রুত উপায় আছে কি?
উত্তর: জাদুকরি দ্রুত সমাধান নেই। তবে কিছু কৌশল তীব্রতা কমাতে সাহায্য করে: স্ট্রিক্ট নো-কন্ট্যাক্ট মেনে চলা, শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকা (হাঁটা, যোগব্যায়াম), প্রিয়জনের সঙ্গে সময় কাটানো, নতুন শখে মন দেওয়া এবং নিজের প্রতি দয়ালু আচরণ করা (সেলফ-কম্পাশন)। পেশাদার সাহায্য নেওয়াও গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশ্ন: প্রেমে ব্যর্থ হওয়ার পর আত্মবিশ্বাস ফিরে পাব কীভাবে?
উত্তর: আত্মবিশ্বাস ফিরে পেতে ছোট ছোট লক্ষ্য ঠিক করুন এবং সেগুলো অর্জন করুন। নিজের সাফল্য, গুণাবলীর তালিকা করুন। আত্ম-যত্নের রুটিন মেনে চলুন। নতুন কিছু শিখুন বা দক্ষতা বাড়ান। নিজের সাথে ইতিবাচক কথোপকথন চালু করুন (“আমি সক্ষম”, “আমি শক্তিশালী”)। সময় নিয়ে নিজেকে পুনরাবিষ্কার করুন।
প্রশ্ন: কখন বুঝব আমি নতুন সম্পর্কের জন্য প্রস্তুত?
উত্তর: যখন আপনি প্রাক্তন সম্পর্কে কথা বললে বা ভাবলে তীব্র ব্যথা বা রাগ অনুভব করবেন না। যখন আপনি একা থাকতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন এবং আপনার সুখ অন্য কারও উপস্থিতির উপর নির্ভরশীল নয়। যখন আপনি নিজের শর্তে, নিজের সীমানা মেনে ভবিষ্যতের সম্পর্কের কথা ভাবতে পারবেন, অতীতের ভুল থেকে শেখা পাঠগুলো কাজে লাগাতে পারবেন।
প্রশ্ন: সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রাক্তনকে দেখলে খুব কষ্ট পাই, কী করব?
উত্তর: প্রথম ও প্রধান পদক্ষেপ: আনফলো, আনফ্রেন্ড বা ব্লক করা। সাইবার স্পেসে তাদের উপস্থিতি থেকে নিজেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করুন। প্রাক্তনের প্রোফাইল ‘স্টক’ করা বন্ধ করুন – এটি একটি আসক্তি যা নিরাময়ে বাধা দেয়। আপনার নিজের ফিডকে ইতিবাচক ও অনুপ্রেরণাদায়ক কন্টেন্টে ভরাট করুন।
Disclaimer: এই আর্টিকেলটি সাধারণ তথ্য ও পরামর্শের জন্য তৈরি। এটি কোনও চিকিৎসা বা মানসিক স্বাস্থ্য পেশাদারের পরামর্শের বিকল্প নয়। যদি আপনি তীব্র ও দীর্ঘস্থায়ী বিষণ্নতা, উদ্বেগ, আত্মহত্যার চিন্তা বা অন্য কোনও মানসিক সংকটে ভুগছেন, অনুগ্রহ করে অবিলম্বে একজন যোগ্য মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট বা লাইসেন্সপ্রাপ্ত কাউন্সেলরের সাহায্য নিন। বাংলাদেশে জরুরি মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তার জন্য জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ঢাকা (NIMH) বা কেয়ার মাইন্ডস ফাউন্ডেশন এর হেল্পলাইনে যোগাযোগ করতে পারেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।