প্লাস্টিক আবিষ্কারের একক কৃতিত্ব কাউকে সেভাবে দেওয়া যায় না। ১৮ শতকের মাঝামাঝি সময় থেকেই বিজ্ঞানীরা শিল্প বিপ্লবের ফলে উৎপাদিত নানা পণ্য মোড়কজাত করার উপযোগী উপদান আবিষ্কারের চেষ্টা করেছেন। প্রাকৃতিকভাবে অনেকে প্লাস্টিকের মতো উপাদান তৈরিও করেছিলেন। যুক্তরাজ্যের সায়েন্স মিউজিয়াম বলছে, প্রথম সিন্থেটিক বা কৃত্রিম প্লাস্টিক উদ্ভাবন করেন বেলজিয়ামের রসায়নবিদ ও মার্কেটিয়ার লিও বেকল্যান্ড। ১৯০৭ সালের ঘটনা সেটি।
এরপরই মূলত প্লাস্টিকের জয়জয়কার ছড়িয়ে পড়ে পৃথিবীজুড়ে। কাচের মতো স্বচ্ছ, কিন্তু ভাঙে না। কাগজের মতো পাতলা হতে পারে, কিন্তু সহজে ছিঁড়ে যায় না। কাপড়ের মতো নমনীয়, কিন্তু পানিতে ভেজে না। এমন এক পণ্যের প্রতি মানুষের প্রবল আগ্রহ কাজ করবে, সেটাই স্বাভাবিক।
প্লাস্টিকের ব্যবহার মোটেও কমেনি। বরং বেড়ে চলেছে বলা যায়। এখন আমাদের দৈনন্দিন জীবনে শুধু পণ্যের মোড়কে প্লাস্টিক সীমাবদ্ধ নেই। তৈজসপত্র থেকে শুরু করে, ঘরের আসবাব, বিভিন্ন যন্ত্রের কাঠামো, এমনকি যানবাহন তৈরি করা হয় প্লাস্টিক দিয়ে। এই বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র যে তৈরি হচ্ছে, তার সব কি একই প্লাস্টিকের তৈরি? একদম না। ব্যবহারের ধরনের ওপর ভিত্তি করে ৭টি ভাগে ভাগ করা হয় প্লাস্টিক। প্রথম থেকে শুরু করা যাক।
রিসাইকেলিং কোড ১: পলিইথিলিন টেরেফথালেট
সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত প্লাস্টিকের মধ্যে এটি একটি। স্বচ্ছ, শক্তিশালী ও হালকা ধরনের এই প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয় মূলত খাবারের প্যাকেট, খাদ্য রাখার বক্স, কোমল পানীয়ের বোতল, পলিয়েস্টার পোশাক বা দড়ি তৈরির কাজে।
রিসাইকেলিং কোড ২: উচ্চ ঘনত্বের পলিইথিলিন
সব ধরনের প্লাস্টিকের মধ্যে পৃথিবীজুড়ে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় উচ্চ ঘনত্বের পলিইথিলিন বা পলিথিন। এর আবার তিনটি ধরন আছে। উচ্চ, মধ্য ও নিম্ন ঘনত্বের পলিইথিলিন। উচ্চ ঘনত্বের পলিইথিলিন শক্তিশালী, আর্দ্রতারোধী, রাসায়নিকভাবে প্রায় নিষ্ক্রিয়। বিভিন্ন রাসায়নিক, যেমন ডিটারজেন্টের বোতল, খেলনা, বেঞ্চ এবং শক্ত পাইপ তৈরিতে কাজে লাগানো হয়।
রিসাইকেলিং কোড ৩: পলিভিনাইল ক্লোরাইড
পিভিসি প্লাস্টিকের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি দেখা যায় পাইপসহ ভবন নির্মানের বিভিন্ন উপাদান তৈরিতে। শক্ত ধরনের এ প্লাস্টিক রাসায়নিকভাবে আরও বেশি নিষ্ক্রিয়। আবহাওয়াগত কারণে এদের তেমন ক্ষতি হয় না। নমনীয় না হওয়ায় এগুলো ভাঙা সম্ভব। একই সঙ্গে এগুলো মানবস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। সীসা, ডাই-অক্সিন, ভিনাইল ক্লোরাইডের মতো বিষাক্ত পদার্থ ছড়িয়ে পড়ে এগুলো থেকে।
রিসাইকেলিং কোড ৪: কম ঘনত্বের পলিইথিলিন
উচ্চ ঘনত্বের পলিইথিলিনের তুলনায় এটি বেশ হালকা, নরম ও নমনীয় হয়। খাদ্য ও পানীয়ের মোড়কের ভেতরে সাধারণত এ ধরনের প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া বাবল র্যাপ, বাজার করার পলিথিন ইত্যাদি তৈরি করা হয় এ পলিইথিলিন দিয়ে।
রিসাইকেলিং কোড ৫: পলিপ্রোপিলিন
সবচেয়ে টেকসই ধরনের প্লাস্টিকের মধ্যে এটি একটি। অন্য যেকোনো ধরনের প্লাস্টিকের চেয়ে এটি বেশি তাপ সহ্য করতে পারে। ফলে, গরম বা ঠান্ডা রাখতে হয়, এমন ধরনের মোড়ক তৈরির জন্য এ পলিপ্রোপিলিন ব্যবহার করা হয়। ফলে তৈরি করা যায় স্ট্র, বোতলের ক্যাপ বা মুখ, গরম খাবার রাখার পাত্র, প্যাকেজিং-এর টেপ ইত্যাদি।
রিসাইকেলিং কোড ৬: পলিস্টাইরিন
ওয়ান টাইম বা একবার ব্যবহারের উপযোগী খাবারের পাত্র তৈরি করা হয় পলিস্টাইরিন দিয়ে। এর আরেক নাম স্টাইরোফোম। সাদা রঙের ভঙ্গুর এ প্লাস্টিক পিভিসির মতোই বিপদজনক। স্ট্রাইরিন নামের ক্ষতিকর বিষাক্ত উপাদান নিঃসরণ করে। এ রাসায়নিক খাবারে মিশে গেলে তা সহজেই মানুষের পেটে চলে যায়। তবে খাবারের প্যাকেট ছাড়াও পণ্য প্যাকেজিংয়ের সময় ঝাঁকুনি থেকে সুরক্ষা দিতে এটি ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া শীতপ্রধান দেশে ঘরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে অনেক সময় এটি ভবন তৈরিতে কাজে লাগানো হয়।
রিসাইকেলিং কোড ৭
ওপরের ছয়টি ভাগের কোনোটাতেই ফেলা যায় না, এমন সব প্লাস্টিককে রিসাইকেলিং কোড ৭ বা আদার (Other) হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এটি একাধিক ধরনের প্লাস্টিকের সমন্বয়ে তৈরি। এ ধরনের প্লাস্টিক সাধারণত রিসাইকেল বা পুন ব্যবহারযোগ্য করে তোলা যায় না। চোখের চশমা, ইলেকট্রনিকস, সিডি বা ডিভিডি ইত্যাদি তৈরিতে এসব প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয়।
আচ্ছা, প্লাস্টিকের রকমফের ও ব্যবহার তো জানা গেল। কিন্তু কীভাবে বুঝবেন, আপনার হাতে থাকা প্লাস্টিক কী ধরনের? একদম সহজ। প্লাস্টিকের পণ্যের নিচের অংশে তিনকোনা ক্ষেত্রের মধ্যে সংখ্যা লেখা থাকে। এই সংখ্যাই আসলে আমাদের রিসাইকেলিং কোড। এটা দেখে আপনি বুঝতে পারবেন, প্লাস্টিকটি কী ধরনের। যেমন ১ লেখা থাকার অর্থ, বস্তুটি পলিইথিলিন টেরেফথালেট (পিইটি) ধরনের প্লাস্টিক।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।