প্লাস্টিক আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। দৈনন্দিন ব্যবহারের নানা পণ্য, যেমন: বোতল, ব্যাগ, বাসনপত্র, খাবারের পাত্র, এবং অন্যান্য অনেক কিছু প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি। তবে, প্লাস্টিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য এবং পরিবেশের জন্য কিছু উদ্বেগ রয়েছে। বিশেষ করে যখন কথা আসে খাবার ও পানীয় সংরক্ষণের জন্য প্লাস্টিকের ব্যবহার সম্পর্কে। আসুন দেখে নিই প্লাস্টিকের জিনিস ব্যবহারের ক্ষেত্রে কতটা নিরাপদ এবং এর সাথে জড়িত ঝুঁকিগুলো কী কী।
প্লাস্টিকের প্রকারভেদ
প্লাস্টিক বিভিন্ন প্রকারের হতে পারে এবং তাদের মধ্যে কিছু তুলনামূলক নিরাপদ, আবার কিছু খুবই ক্ষতিকর হতে পারে। প্লাস্টিকের বোতল, পাত্র, খেলনা ইত্যাদি মূলত ভিন্ন ভিন্ন ধরনের প্লাস্টিক থেকে তৈরি হয়। প্লাস্টিকের প্রধান প্রকারগুলো হলো:
পলিথিন টেরেফথ্যালেট : সাধারণত বোতল এবং খাবারের পাত্র তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
হাই-ডেনসিটি পলিথিন: দুধের পাত্র, খেলনা এবং কিছু মুদি সামগ্রীর ব্যাগে ব্যবহৃত হয়।
পলিভিনাইল ক্লোরাইড: পানির পাইপ এবং উইন্ডো ফ্রেমের মতো নির্মাণ সামগ্রীতে ব্যবহৃত হয়।
লো-ডেনসিটি পলিথিন: সাধারণত প্লাস্টিকের ব্যাগ এবং খাবার মোড়ানোর ফিল্মে ব্যবহৃত হয়।
পলিপ্রোপাইলিন: খাবার রাখার পাত্র, প্লাস্টিকের ক্যাপ, এবং স্ট্র তৈরি করা হয়।
পলিস্টাইরিন: ফোমের প্লেট, কাপ, এবং প্যাকেজিং সামগ্রীতে ব্যবহৃত হয়।
প্লাস্টিকের স্বাস্থ্যঝুঁকি
কিছু ধরনের প্লাস্টিক থেকে রাসায়নিক পদার্থ নির্গত হতে পারে, যা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। বিশেষ করে খাবার এবং পানীয় সংরক্ষণে ব্যবহৃত প্লাস্টিকের ঝুঁকি বেশি। নিম্নে উল্লেখযোগ্য কিছু ঝুঁকি তুলে ধরা হলো:
বিসফেনল এ (বিপিএ): পিএ হল একটি রাসায়নিক যা সাধারণত প্লাস্টিক বোতল এবং খাদ্য পাত্রের মধ্যে ব্যবহৃত হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, বিপিএ হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে এবং ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, এবং এমনকি ক্যান্সারের মতো রোগের কারণ হতে পারে। এজন্য বেশিরভাগ দেশ বিপিএ-মুক্ত প্লাস্টিক ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছে।
ফথালেটস: ফথালেটস হলো প্লাস্টিককে নমনীয় ও মসৃণ করার জন্য ব্যবহৃত রাসায়নিক। এই রাসায়নিকগুলো হরমোনের ওপর প্রভাব ফেলে এবং শারীরিক বিকাশে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। বিশেষ করে গর্ভবতী নারী এবং শিশুদের ক্ষেত্রে এটি খুবই ক্ষতিকর হতে পারে।
মাইক্রোপ্লাস্টিক: প্লাস্টিকের ছোট ছোট কণা, যেগুলোকে মাইক্রোপ্লাস্টিক বলা হয়, আমাদের খাবার, পানীয় এবং এমনকি বাতাসে পাওয়া যায়। এসব মাইক্রোপ্লাস্টিক দীর্ঘমেয়াদে স্বাস্থ্যের ওপর কী প্রভাব ফেলে, তা নিয়ে গবেষণা চলছে। তবে ইতিমধ্যে এটি মানুষের শ্বাসযন্ত্র এবং পরিপাকতন্ত্রের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
উচ্চ তাপমাত্রায় প্লাস্টিকের ব্যবহার
গরম খাবার বা পানীয় প্লাস্টিকের পাত্রে রাখা হলে তাপের কারণে প্লাস্টিক থেকে ক্ষতিকর রাসায়নিক নির্গত হতে পারে। এতে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ে। তাই প্লাস্টিকের পাত্রে গরম খাবার রাখা বা মাইক্রোওয়েভে গরম করা উচিত নয়।
পরিবেশের ওপর প্রভাব
প্লাস্টিকের স্বাস্থ্যঝুঁকির পাশাপাশি, এটি পরিবেশের জন্যও মারাত্মক ক্ষতিকর। প্লাস্টিক শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে পচে না, ফলে এটি পরিবেশ দূষণের একটি প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে, প্লাস্টিক সমুদ্রে মাইক্রোপ্লাস্টিক হিসেবে জমা হয়, যা সামুদ্রিক প্রাণীদের জন্য বিপদজনক।
প্লাস্টিকের পরিবর্তে বিকল্প উপায়
যেহেতু প্লাস্টিকের ব্যবহার পুরোপুরি এড়ানো সম্ভব নয়, তবে কিছু বিকল্প পদ্ধতি গ্রহণ করে এর ক্ষতি কমানো যেতে পারে:
গ্লাস বা স্টিলের পাত্র ব্যবহার করুন: খাবার বা পানীয় সংরক্ষণে কাচ বা স্টিলের পাত্র ব্যবহার করলে তা স্বাস্থ্যসম্মত হয়।
বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিক: এই ধরনের প্লাস্টিক পরিবেশে দ্রুত পচে যায়, ফলে পরিবেশদূষণ কম হয়।
পুনর্ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক: একবার ব্যবহার করে ফেলে না দিয়ে পুনরায় ব্যবহার করা যায় এমন প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার করুন।
প্লাস্টিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা মেনে চলা উচিত। খাদ্য এবং পানীয় সংরক্ষণে নিরাপদ প্লাস্টিকের ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া, প্লাস্টিকের বিকল্প ব্যবহার করে পরিবেশের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব কমানো সম্ভব। দৈনন্দিন জীবনে সচেতনতার সাথে প্লাস্টিকের ব্যবহার কমিয়ে আমরা স্বাস্থ্যকর এবং পরিবেশবান্ধব জীবনযাত্রা নিশ্চিত করতে পারি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।