হাত থেকে কাচের পাত্র ফেলে দিলে সেটা ভেঙে যায়। একই পুরুত্বের প্লাস্টিকের বোতল কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে ফাটে না। কারণ, প্লাস্টিকের চাপ সহ্য করার দারুণ এক ক্ষমতা আছে। ফলে, কাচের মতো স্বচ্ছ দেখালেও সহজে ভাঙতে চায় না প্লাস্টিক। তাপমাত্রার ওঠানামার কারণে কাচ অনেক সময় ফেটে গেলেও প্লাস্টিক বহাল তবিয়তে থাকে।
বেশির ভাগ প্লাস্টিকের চাপ প্রতিরোধের বিশেষ সক্ষমতা রয়েছে, যাকে বলা হয় ডাক্টিলিটি। এটা হলো প্লাস্টিকের লম্বা শেকলের মতো অণুর প্রসারিত হওয়ার সক্ষমতা। চাপ পড়লে প্লাস্টিকের অণু তার স্বাভাবিক দৈর্ঘ্যের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি হতে পারে। প্রতিটি প্রসারিত অণু শক্তি শোষণ করে। চাপের স্থান থেকে অণুগুলো প্রসারিত হয়ে শক্তিটা গ্রহণ করে নিয়ে নিজেরা প্রসারিত হয়। ফলে, কাচের মতো ভেঙে যায় না।
যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি বা এমআইটির কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক গ্রেগ রাটলেজ। তাঁর মতে, প্লাস্টিকের অণুগুলো অনেকটা তেলে মাখানো নুডুলসের সুতোর মতো। চাপ পড়তে এরা একে অপরের ওপর দিয়ে সহজে পিছলে যেতে পারে। এই প্রসারণশীলতা চাপের শক্তি শোষণ করে এবং ছড়িয়ে পড়ে বড় স্থান জুড়ে। ফলে প্লাস্টিক সহজে ফাটে না বা ভাঙে না।
তবে এ প্রক্রিয়াটি তখনই কাজ করে, যখন অণুগুলো ‘সহজে’ পিছলে যেতে পারে। কোনো কারণে এ গতি বাধাপ্রাপ্ত হলে সব চাপ একটি ছোট এলাকায় কেন্দ্রীভূত হয়। অতিরিক্ত চাপের কারণে তখন প্লাস্টিকে ফাটল তৈরি হয়। একটা পর্যায়ে প্লাস্টিক ভেঙে যায়।
প্লাস্টিকের অণুর গতিশীলতা কমে যাওয়ার পেছনে তাপমাত্রার একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নির্দিষ্ট তাপমাত্রার পর প্লাস্টিকের নমনীয়তা হারিয়ে যায়। একে বলা হয় গ্লাস ট্রানজিশন টেম্পারেচার বা টিজি। বিভিন্ন ধরনের প্লাস্টিকের জন্য টিজির মান কম-বেশি হয়। সাধারণ প্লাস্টিক বা পলিপ্রোপিলিনের ক্ষেত্রে টিজির মান -২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে হয়।
অর্থাৎ, ০ থেকে মাইনাস ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় প্লাস্টিকের ডাক্টিলিটি বৈশিষ্ট্য হারিয়ে যায়। তখন চাপ পড়লে প্লাস্টিকের অণুগুলো প্রসারিত হয়ে আর সরে যেতে পারে না। প্লাস্টিক হয়ে পড়ে ভঙ্গুর। শীতপ্রধান দেশে শীতকালে তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে নেমে যায়, তখন প্লাস্টিকের জিনিসপত্র বেশ ভঙ্গুর হয়ে ওঠে। তখন অল্প চাপে এটি ভেঙে যায়। এর মানে হচ্ছে, হ্যাঁ, ঠান্ডা প্লাস্টিকের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে।
তবে আমাদের দেশের জন্য এটা খুব একটা চিন্তার বিষয় নয়। এখানে এখন পর্যন্ত সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে মাত্র ২.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ তাপমাত্রায় প্লাস্টিকের ডাক্টিবিলিটি অটুট থাকে। এ অবস্থায় প্লাস্টিক সহজে ভাঙে না।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।