২০০৬ সালে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিয়ন নতুন যে নিয়ম তৈরি করে, তাতে বলা হয়, কোনো মহাজাগতিক বস্তুকে গ্রহ বলতে হলে তাকে অবশ্যই তিনটি শর্ত পূরণ করতে হবে। এক, পর্যাপ্ত ভর থাকতে হবে, যাতে মহাজাগতিক বস্তুটি নিজের ভরের কারণে প্রায় গোলকের মতো আকার ধারণ করতে পারে। দুই, সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরতে হবে। তিন, এর আশপাশের অঞ্চল বস্তুটির কারিকুরিতে পরিচ্ছন্ন হতে হবে। শেষের শর্তটি বোঝা একটু কঠিন। অথচ এই মহাজাগতিক ঝাঁট দেওয়ার অক্ষমতার কারণেই বাদ পড়ে প্লুটো।
আসলে, চারপাশের অঞ্চল পরিচ্ছন্ন করার অর্থ হলো, গ্রহের মহাকর্ষ ক্ষেত্র যথেষ্ট শক্তিশালী হওয়া। যাতে চারপাশের অঞ্চলে গ্রহটির মহাকর্ষীয় রাজত্ব থাকে। বিষয়টা আরেকটু খোলাসা করা যাক। মহাকাশে গ্রহের চারপাশ সব সময় পরিষ্কার থাকে না। নানারকম পাথুরে কণা, গ্রহাণু বা উপগ্রহ হওয়ার মতো উপাদান থাকতে পারে। গ্রহের জন্মের সময়েই এসব উপাদান চারপাশে জড়ো হয়।
এ ছাড়া গ্রহাণু আছড়ে পড়া ও উল্কাপাতের মতো ঘটনার কারণে বালি-পাথরের আবর্জনা সৃষ্টি হয় চারপাশে। এসব উপাদানের ওপর গ্রহটি মহাকর্ষীয় কর্তৃত্ব কায়েম করলে উপাদানগুলো হয় গ্রহের সঙ্গে মিশে যায়, নয়তো নির্দিষ্ট কক্ষপথ ধরে গ্রহটিকে প্রদক্ষিণ করে। কখনো-বা উপগ্রহে পরিণত হয়। মহাজাগতিক বস্তুর মহাকর্ষ ক্ষেত্র পর্যাপ্ত শক্তিশালী না হলে এগুলো ঘটে না। সে ক্ষেত্রে চারপাশের অঞ্চল অপরিষ্কার থেকে যায়।
আগেই বলেছি, প্রথম দুটো শর্তে প্লুটো বেশ ভালোভাবেই উৎরে যায়। মহাকর্ষ কাজে লাগিয়ে নিজেকে গোলাকার করার মতো যথেষ্ট ভর আছে প্লুটোতে। ঘোরেও সূর্যকে কেন্দ্র করে। কিন্তু তৃতীয় শর্তটি প্লুটো পূরণ করতে পারেনি শত-কোটি বছরেও। পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, প্লুটো তার চারপাশের অঞ্চল পরিষ্কার করার মতো যথেষ্ট শক্তিশালী মহাকর্ষ ক্ষেত্র তৈরি করতে পারেনি।
পাশাপাশি একই রকম আরও বেশ কিছু মহাজাগতিক বস্তুর দেখা মেলে প্লুটোর আশপাশে। এই দুইয়ে মিলে গ্রহের তালিকা থেকে প্লুটোকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন বিজ্ঞানীরা। তবে প্রথম দুটি শর্ত যেহেতু পূরণ করেছে, তাই প্লুটোকে ডোয়ার্ফ প্ল্যানেট বা বামন গ্রহের তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়।
অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিয়নের সংজ্ঞা অনুযায়ী, সূর্যের চারদিকে ঘোরে এবং নিজের আকার গোলকের মতো করার মতো যথেষ্ট ভর আছে, এমন বস্তুকে বামন গ্রহ বলা হবে। সে ক্ষেত্রে নিজের চারপাশের অঞ্চল পরিছন্ন রাখার শর্তটি আর ওই বস্তুকে পূরণ করতে হয় না। শুধু ঝাঁট দিতে না পারায় রাজত্ব হারানোর এরকম ঘটনা আর কখনো ঘটেছে বলে কেউ শোনেনি।
তবে গ্রহের তালিকা থেকে বাদ পড়লেও একা হয়ে পড়েনি প্লুটো। শুধু সৌরজগতেই প্লুটোর মতো আরও ৫টি বামন গ্রহ আছে। এর মধ্যে প্লুটোসহ মাকিমাকি, হাউমেয়া, এরিস—এই চারটির অবস্থান নেপচুনের কক্ষপথের বাইরে। মঙ্গল ও বৃহস্পতির মাঝখানে অ্যাস্টেরয়েড বেল্ট বা গ্রহাণু বেষ্টনীর মধ্যে রয়েছে আরেকটি বামন গ্রহ—সেরেস।
তবে গ্রহত্ব হারালেও প্লুটোর বাড়তি খাতির রয়েছে এখনো। সৌরজগতের আর দশটি বামন গ্রহ নিয়ে আলাপ না হলেও প্লুটোকে নিয়ে হচ্ছে বিস্তর আলাপ। রাজ্য হারালেই যে রাজা নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ে না, তার ভালো উদাহরণ হতে পারে প্লুটো।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।