সালেহ নোমান, চট্টগ্রাম ব্যুরো: উপকূলের দিকে ধেয়ে আসা ঘুর্ণিঝড় ‘ফণী’র ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন, চট্টগ্রাম বন্দর ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রস্তুতি চলছে পুরোদমে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘ফণী’র ক্ষয়ক্ষতি কেমন হতে পারে তা ধারণা করার জন্য আরও কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্র বিজ্ঞান ইনিষ্টিটিউটের প্রফেসর সাইদুর রহমান চৌধুরী বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় ঘুর্ণিঝড়ের যে অবস্থান এবং গতি পরিলক্ষিত হয়েছে তাতে এটা উপকূলে আঘাত হানতে আরও কমপক্ষে ৩০ ঘণ্টা সময় লাগবে। সেই ক্ষেত্রে শুক্রবার বিকাল ৫টা থেকে ৬টার মধ্যে এটা উপকূল অতিক্রম করা শুরু করবে।
‘ওই সময় যদি জোয়ার থাকে তাহলে ঘুর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি বেশি হওয়ার আশংকা থাকবে,’ উল্লেখ করেন তিনি।
সাইদুর রহমান চৌধুরী আরও বলেন, এই সময়রে মধ্যে ঘুর্ণিঝড়ের গতিপথ পরিবর্তন হওয়ার বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। এমনও হতে পারে এটি উপকূলের কাছাকাছি এসে থামকে যেতে পারে, পরবর্তীতে গতিপথ পরিবর্তন হয়ে পূর্ব দিকে আসতে পারে। আঘাত হানার ১২ ঘণ্টা আগে এটার গতিপথ এবং আঘাতের কেন্দ্র সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে না।
তিনি বলেন, এমতাবস্থায় ‘ফণী’র আঘাতের কেন্দ্র ও ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে ধারণা পাওয়ার জন্য শুক্রবার সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
চট্টগ্রাম অঞ্চলে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত জারির প্রেক্ষিতে এই ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলায় এলার্ট-৩ জারি করা হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দরে। ইতোমধ্যে বন্দরের জাহাজগুলো থেকে পণ্য উঠানামা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। জেটি থেকে জাহাজগুলোকে সমুদ্রে ঘুর্ণিঝড়ের আওতার বাইরে সরে যাওয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইতোমধ্যে জেটি থেকে জাহাজগুলো সরে গেছে।
বন্দরের ইয়ার্ড ও শেডের পণ্যগুলো যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেই জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বন্দরের ইয়ার্ডে এখন পণ্য ভর্তি ও খালি ৪০ হাজার টিইউএস কন্টেইনার আছে। বৃহস্পতিবারও অনেক আমদানিকারক বন্দর থেকে তাদের পণ্য নিয়ে যাচ্ছেন। বন্দরের দশটি কি গ্যান্ট্রি ক্রেন, স্ট্যাডেল ক্যারিয়ার ও রাবার টায়ার গ্যান্ট্রি ক্রেনসহ অনান্য যন্ত্রপাতিকে রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় কার্যক্রম চলছে।
এদিকে চট্টগ্রামের উপকূল থেকে ঝূঁকিপূর্ণ মানুষদের সরিয়ে নেয়ার যাবতীয় প্রস্তুতি চলছে প্রশাসনের। জেলার ২ হাজার ২ শত সাইক্লোন সেল্টার ও সাড়ে চার’শ সাইক্লোন শেল্টার কাম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। মানুষ যাতে যথাসময়ে নিরাপদে এ্সব সাইক্লোন সেল্টারে সরে আসে সেই জন্য মাইকিং চলছে।
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ইলিয়াস হোসেন জানিয়েছেন, উপকূলের মানুষ চাইলে এখনই সাইক্লোন সেল্টারে চলে আসতে পারে। প্রয়োজনীয় খাদ্য ও পানীয় সাইক্লোন সেল্টারগুলোতে রাখা হয়েছে।
এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামের উপকূলীয় এলাকায় বাঁধের যেসব স্থানে দূর্বলতা আছে, সেসব স্থানে জিও ব্যাগ ও বোল্ডার দিয়ে মেরামতের চেষ্টা চলছে। বিদ্যমান বাঁধ দিয়ে কমপক্ষে ২০ থেকে ২৫ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছাস ঠেকানো যাবে। তবে বাঁধের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা দিয়ে জোয়ারের পানি প্রবেশ করার আশংকা করছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা।
এদিকে সীতাকূণ্ড উপকূলে জাহাজভাঙা শিল্প এলাকার জাহাজগুলো যাতে ঝড় ও জোয়ারের তাণ্ডবে এদিক সেদিক ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেই জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছে নৌবাণিজ্য অধিদপ্তর। বুধবার বিকাল থেকে চট্টগ্রাম ও অন্যান্য উপকূলীয় এলাকায় নৌ যোগাযোগ কাযত বন্ধ হয়ে গেছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।