ফণীর ছোবলে লণ্ডভণ্ড উপকূল

‘অতি প্রবল’ ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ শুক্রবার শেষ রাতে পৌঁছেছে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে। এর আগে শুক্রবার স্থানীয় সময় দুপুর ১২টার দিকে ভারতের ওড়িশা উপকূলে আছড়ে পড়ে এ ঘূর্ণিঝড়ের মূল কেন্দ্রস্থল। এ সময় বাতাসের গতিবেগ ছিল প্রায় ২০০ কিলোমিটার। ওড়িশা উপকূল লণ্ডভণ্ড করে তটরেখা ধরে এটি পশ্চিমবঙ্গে আঘাত হানে। স্থলভাগে পুরোপুরি উঠতে ঘূর্ণিঝড়টির মূল অগ্রভাগ বিস্তৃত হয় বাংলাদেশের খুলনাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল পর্যন্ত। প্রায় সাড়ে ৪শ’ কিলোমিটার পথ অতিক্রমকালে ফণী ধীরে ধীরে দুর্বল হতে থাকে। ফলে খুলনা অঞ্চল অতিক্রমকালে এর বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৯০ থেকে ১১০ কিলোমিটার। খুলনার পর দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম এবং উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার উপর দিয়ে রাতভর বয়ে যায় ঝড়টি।

দুপুরে ফণীর মূল কেন্দ্র আঘাত হানলেও ৩ ঘণ্টা আগে সকাল ৯টার দিকেই এর অগ্রভাগ পৌঁছে যায় ওড়িশা উপকূলে। একই সময়ে এর প্রভাব পড়ে ওড়িশার পার্শ্ববর্তী রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশেও। ১০ মিনিটের মধ্যে প্রায় ৭০০ কিলোমিটার দূরের ঢাকায়ও একপশলা বৃষ্টি বর্ষিত হয়। এরপরই আকাশ ঢেকে যায় ধূসর মেঘে। ফণীর প্রভাব শুধু ঢাকায়ই নয়, দেশের দক্ষিণ, দক্ষিণ-পশ্চিম, উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চলসহ গোটা দেশে বিস্তৃত হয়। এর প্রভাবে বয়ে যায় ঝড়ো হাওয়া ও বজ বৃষ্টি। ফলে সকাল থেকেই বিভিন্ন স্থানে নানা ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হতে শুরু করে। সন্ধ্যার আগেই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ৯ জনের মৃত্যুর হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে দুপুরের দিকে বজ পাতে কিশোরগঞ্জের তিন উপজেলায় ৬ জন, নেত্রকোনা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একজন করে এবং বাগেরহাটে গাছের ভাঙা ডালের আঘাতে একজন নিহত হয়েছেন। বিভিন্ন স্থান থেকে গাছপালা ও বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে পড়া এবং ঘরের চাল উড়িয়ে নেয়ার খবর পাওয়া গেছে। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সাগর এবং উপকূলের নদ-নদীতে জোয়ারের পানি বেড়েছে। সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে খুলনা, বাগেরহাট, বরগুনা, সাতক্ষীরা, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী, কক্সবাজারসহ উপকূলীয় বিভিন্ন জেলায় গ্রাম ও চর প্লাবিত হয়েছে। স্রোতের তোড়ে অনেক স্থানে ভেঙে গেছে বেড়িবাঁধ। সেই ভাঙা দিয়ে ঢুকে পড়ছে লবণাক্ত পানি। কোথাও ভেসে গেছে মাছের ঘের। ২০০৯ সালের ঘূর্ণিঝড় আইলার পর এভাবে উপকূলে লবণাক্ত পানিতে ফসলের মাঠ আর মিঠাপানির পুকুর ডুবে যাওয়ার ঘটনা ঘটেনি। গভীর সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া বেশকিছু ট্রলার শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ফিরতে পারেনি বলে কক্সবাজার এবং বরগুনাসহ উপকূলীয় বিভিন্ন জেলা থেকে জানা গেছে। ঝড়ের কারণে সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ অবস্থায় আছে। বৈরী আবহাওয়ায় নদীপথে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ আছে। এমনকি বৈরী আবহাওয়ার কারণে বাংলাদেশ বিমানের দুটি অভ্যন্তরীণ ও একটি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বাতিল করতে হয়েছে। পাশাপাশি চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরে গত দু’দিন ধরে জাহাজে পণ্য উঠানামা বন্ধ রয়েছে। উপকূলীয় এলাকা থেকে আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে নেয়া হয়েছে বেশির ভাগ মানুষ। এমন পরিস্থিতিতে মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত জারি করা হয়েছিল। চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত এবং কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরে ৪ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত জারি করা হয়েছিল। সরকারের নির্দেশে দুর্যোগ মোকাবেলায় উপকূলজুড়ে সতর্কতা জারি করা হয়েছিল। ব্যাপক প্রস্তুতি ছিল প্রশাসনের। সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত ছিল, যেখানে শুক্রবার সকাল থেকেই লোকজন আনা শুরু হয়। যদিও অনেকে ঘরবাড়ি ও গবাদিপশু রেখে আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে চাননি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং বিএমএ যৌথভাবে বিপুলসংখ্যক মেডিকেল টিম গঠন করে।

ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় সমন্বিতভাবে কাজ করতে শুক্রবার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। লন্ডনে সফররত প্রধানমন্ত্রী বৃহস্পতিবার থেকে এ ঝড়ের ব্যাপারে সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখছেন। ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাব থেকে যেন আল্লাহ জনগণকে রক্ষা করেন সেজন্য শুক্রবার জুমার নামাজের পর মসজিদে মসজিদে দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজনের জন্য ইমামদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সে অনুযায়ী শুক্রবার দেশের সব মসজিদে বিশেষ মোনাজাত ও দোয়া হয়েছে।

বুয়েটের পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক ড. একেএম সাইফুল ইসলাম শুক্রবার বলেন, মূল ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশে আঘাত করেনি। এর ডান দিকের অগ্রভাগের অংশবিশেষ শুক্রবার মধ্যরাতের পর বাংলাদেশ অতিক্রম করা শুরু করে। তবে অতিক্রম করা শেষ হবে সকাল নাগাদ। মূল কেন্দ্র থেকে অনেক দূরে অগ্রভাগ থাকায় আমরা আল্লাহর রহমতে বেঁচে গেছি। ওড়িশায় আঘাতকালে ঘূর্ণিঝড়টি ক্যাটাগরি-৪ পর্যায়ে ছিল। বাংলাদেশে যখন পৌঁছায় তখন তা ক্যাটাগরি-১ পর্যায়ে নেমে আসে। তবে এজন্য সরকারকে ধন্যবাদ দিতে হয়। জনগণের জানমাল রক্ষার্থে সরকার আগেভাগে ব্যাপকভাবে সতর্ক ও প্রস্তুত ছিল।

আবহাওয়াবিদ আবদুর রহমান খান জানান, সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়টি ভারতের ওড়িশা উপকূল ও তৎসংলগ্ন উপকূলীয় উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তর-উত্তরপূর্ব (পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ) দিকে অগ্রসর হচ্ছে। তখন (৬টায়) এটি মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪১০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৫০ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থান করছিল।

এই আবহাওয়াবিদ বলেন, শুক্রবার সকাল থেকেই ঘূর্ণিঝড় ফণীর অগ্রভাগের প্রভাব বাংলাদেশে পড়েছে, যা সারা দিন অব্যাহত ছিল। বর্তমান অবস্থান (সন্ধ্যা ৬টা) থেকে ঘূর্ণিঝড়টি আরও উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে শুক্রবার মধ্যরাত থেকে শনিবার সকালের মধ্যে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে পৌঁছাতে পারে।

তবে ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগ বলছে, পশ্চিমবঙ্গেই মধ্যরাতের পর ভোরের দিকে ফণী আঘাত হানবে। ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকা আইএমডির আবহাওয়াবিদ সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, শনিবার সন্ধ্যা বা রাতের দিকে বাংলাদেশে প্রবেশ করবে ঘূর্ণিঝড়। পশ্চিমবঙ্গে ‘অতি প্রবল’র পরিবর্তে কেবল ‘শক্তিশালী’ ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানবে। আর বাংলাদেশে প্রবেশ করবে শুধু ‘ঘূর্ণিঝড়’ আকারে। আবহাওয়া পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে ঝড়ের পর দু’দিন সময় লাগবে।

ঘূর্ণিঝড়সংক্রান্ত বিএমডি ৩৯ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার। যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া আকারে ১৪০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার কাছে সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ আছে। মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর বিপদসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৭ নম্বর বিপদসংকেতের আওতায় থাকবে। ওই বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৬ নম্বর বিপদসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৬ নম্বর বিপদসংকেতের আওতায় থাকবে।

কক্সবাজার উপকূলে ৪ নম্বর স্থানীয় হুশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ও অমাবস্যার প্রভাবে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪ থেকে ৫ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।

উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে অতিসত্বর নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ২৫ এপ্রিল দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে এই ঝড়ের উদ্ভব হয়। উৎপত্তিকালে এটি চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ২১৭০ কিলোমিটার দূরে ছিল। এক সপ্তাহ ধরে এটি আসে উপকূলে। চলার পথে কখনও এর গতিবেগ সমান ছিল না। কখনও সামনে আগানোর গতিবেগ ৪-৫ কিলোমিটার ছিল। আবার ২০ কিলোমিটারও ছিল। এমন পরিস্থিতিতে বিএমডির আবহাওয়াবিদরা ৫-৬ মে বাংলাদেশে এবং এর আগে ভারতে আঘাত হানার পূর্বাভাস দিয়েছিল। কিন্তু গত তিন দিনে এটি অতিদ্রুত উপকূলের দিকে আগায়। পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে, আগের দিন বাংলাদেশ ও ভারতের আবহাওয়া বিভাগ পূর্বাভাস করেছিল যে, শুক্রবার বিকাল ৩টা নাগাদ ওড়িশায় আঘাত হানবে। কিন্তু এর ৩ ঘণ্টা আগেই দুপুরে ওড়িশায় ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্র আছড়ে পড়ে। আর এর ৩ ঘণ্টা আগে ঝড়টির অগ্রভাগ পৌঁছায় ওই উপকূলে।

আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক জানান, ঘূর্ণিঝড়কে চার ভাগে ভাগ করা হলে এর ডান পাশে বাতাসের গতিবেগ বেশি থাকে। সে দিকটিই ছিল বাংলাদেশমুখী। যে কারণে ওড়িশায় ঘূর্ণিঝড় স্থলভাগে উঠলেও এর অগ্রভাগের ঝাপটা বিস্তৃত হয় বাংলাদেশের খুলনা অঞ্চল পর্যন্ত। এ ধরনের ঘূর্ণিঝড়ের সঙ্গে বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাস থাকে। সবচেয়ে আতঙ্কের হয় যদি আঘাত হানার সময় সাগরে জোয়ার থাকে। তখন জলোচ্ছ্বাস বেড়ে যায়।

সাড়ে ১২ লাখ মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে : ঘূর্ণিঝড় ফণী সামনে রেখে শুক্রবার সন্ধ্যায় সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়। এতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব শাহ কামাল জানান, এখন পর্যন্ত দেশের উপকূলীয় জেলাগুলোর ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলের ১২ লাখ ৪০ হাজার ৭৯৫ জন মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে নেয়া হয়েছে।

তিনি আরও জানান, ১৯ জেলার ১৪৭টি উপজেলার ১৩ হাজার ৫০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা উপকূল। এতে প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ মানুষ বসবাস করে। এসব জেলায় ৪ হাজার ৭১টি আশ্রয় কেন্দ্র আছে। এসবের বেশিরভাগই প্রস্তুত বলে জানান সচিব। তিনি বলেন, নেভি, কোস্টগার্ড, পুলিশ, আনসার-ভিডিপি, স্বেচ্ছাসেবকসহ রাজনৈতিক কর্মীরা উপকূলের মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে নেয়াসহ বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবি তাজুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

নিহত ৯ : কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া, মিঠামইন ও ইটনা উপজেলায় বজ পাতে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার দুপুরে প্রবল ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে সৃষ্ট বৃষ্টির সময় বজ পাতে তাদের মৃত্যু হয়। নিহতরা হলেন- পাকুন্দিয়া উপজেলার সুখিয়া ইউনিয়নের কুর্শাকান্দা গ্রামের আয়াজ আলীর ছেলে আসাদ মিয়া (৫৫), একই উপজেলার চরফরাদি ইউনিয়নের আলগীরচর গ্রামের আবদুল হালিমের মেয়ে নুরুন্নাহার (৩০), একই এলাকার এন্তাজ আলীর ছেলে মুজিবুর (১৭), মিঠামইন উপজেলার বৈরাটি ইউনিয়নের বিরামচর গ্রামের গোলাপ মিয়ার ছেলে মহিউদ্দিন (২৩), একই উপজেলার কেওয়াজোড় ইউনিয়নের অলিপুর গ্রামের এবাদ মিয়ার ছেলে সুমন মিয়া (৭) ও ইটনা উপজেলার ধনপুর ইউনিয়নের কাটুইর গ্রামের রাখেশ দাসের ছেলে রুবেল দাস (২৬)। এ ছাড়া নেত্রকোনার মদনে হাওরে ধান কাটতে গিয়ে বজ পাতের মুখে বিকালে নিহত হন কৃষক আবদুল বারেক। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে বজ পাতে নিহত হন আপেল মিয়া।

জলোচ্ছ্বাস ও জোয়ারের পানি : খুলনা ব্যুরো জানায়, সুন্দরবন ঘেঁষা নদ-নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে। বাগেরহাটের শরণখোলার বলেশ্বর নদীপারের ভাঙ্গা বেড়িবাঁধ দিয়ে হুহু করে লোকালয়ে ঢুকছে পানি। বঙ্গোপসাগর থেকে ধেয়ে আসা প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ বাংলাদেশ উপকূল ভাগে আঘাত আনলে ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সাইড সুন্দরবনের অসংখ্য বন্যপ্রাণীর ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ইতিমধ্যে সুন্দরবনের দুর্গম শ্যালা ও কোকিল মনি ফরেস্ট ক্যাম্পের সবাইকে নিরাপদে সরিয়ে আনা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টগুলো যে কোনো মুহূর্তে ধসে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কয়েক স্থানে বেড়িবাঁধ উপচে পানি উঠতে শুরু করেছে। শ্যামনগরের গাবুরা ও পদ্মপুকুর এবং আশাশুনির প্রতাপনগর ও আনুলিয়া ইউনিয়নে বেড়িবাঁধগুলো ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। সেখানে মাঝে মাঝে বৃষ্টি হচ্ছে। বাতাসের গতিবেগও বেড়ে যাচ্ছে।

পটুয়াখালী প্রতিনিধি জানান, বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি প্রবেশ করে সদর উপজেলার মাটিভাঙ্গা, ভাজনা ফুলতলা এবং মির্জাগঞ্জ উপজেলার মেহেন্দিয়াবাদ, চরখালী এবং গোলখালী গ্রামসহ অন্তত ১০টি গ্রাম প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। রাঙ্গাবালি উপজেলা চালিতাবুনিয়ার বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধ দিয়ে জোয়ারে পানি প্রবেশ করে তিন শতাধিক ঘরবাড়ি প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

কাঁঠালিয়া (ঝালকাঠি) প্রতিনিধি জানান, স্থানীয় বিষখালী নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে দু-তিন ফুট বেড়েছে। দুপুরের জোয়ারের পানির তোড়ে কাঁঠালিয়া উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন লঞ্চঘাট এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে উপজেলা পরিষদ ও সিকদার পাড়া অনেকটা প্লাবিত হয়।

শরণখোলা (বাগেরহাট) প্রতিনিধি জানান, বাগেরহাটের শরণখোলায় ভয়ংকর ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে পাউবোর ৩৫/১ পোল্ডারের বেড়িবাঁধে সম্প্রতি নির্মিত রিং বাঁধ উপচে পড়ে ফসলি জমিতে জোয়ারের পানি প্রবেশ করেছে। এ ছাড়া রিং বাঁধের কিছু অংশ ধসে পড়েছে। এলাকাবাসী, উপজেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ফণীর প্রভাবে শুক্রবার সকালে শরণখোলার বলেশ্বর নদীতে জোয়ারে পানি বৃদ্ধি পায়। সম্প্রতি শরণখোলার সাউথখালী ইউনিয়নের বগী ও গাবতলা এলাকার কয়েকটি পয়েন্টে বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়। পরে ওই স্থানগুলোতে রিং বাঁধ দিয়ে সামাল দেয়া হয়। বগী এলাকার সফিকুল ইসলাম, সফেজ খান, দেলোয়ার বয়াতী, মিজানুর রহমান, রুস্তুম হাওলাদার ও সাইয়েদুর রহমান জানান, বগী এলাকায় সকালে রিং বাঁধ উপচে জোয়ারের পানি প্রবেশ করায় তারা রাতের জোয়ার নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। এলাকার ইউপি সদস্য রিয়াদুল পঞ্চায়েত ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, নদীশাসন ব্যবস্থা না রেখে সরকার আধুনিক, উঁচু ও টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করছে। এত অর্থ দিয়ে নির্মাণাধীন এ বেড়িবাঁধের স্থায়িত্ব নিয়ে সবার মনে শঙ্কা রয়েছে। শুক্রবার বিকালে সাউথাখালী ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন খলিল জানান, রিং বাঁধ একটু নিচু হওয়ায় সেখান থেকে পানি উপচে পড়ে ফসলের মাঠে নদীর পানি প্রবেশ করে তা আবার নেমে গেছে। মাঠে কোনো ফসল না থাকায় কৃষির কোনো ক্ষতি সাধিত হয়নি। তবে, ওই এলাকার কিছু পরিবার বিড়ম্বনার মধ্যে পড়েছেন। তবে, রাতের জোয়ার নিয়ে গ্রামবাসী টেনশনে রয়েছেন। তিনি নদীশাসন ব্যবস্থা করে বাঁধ নির্মাণের দাবি করেন।

মির্জাগঞ্জ (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি জানান, ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার পায়রা নদীতে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেয়ে বেড়িবাঁধ উপচে পানি প্রবেশ করে চার গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। শুক্রবার দুপুরে উপজেলার দেউলী সুবিদখালী ইউনয়নের মেহেন্দিয়াবাদ গ্রামের প্রায় দেড়শ’ ফুট ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি প্রবেশ করে মেহেন্দিয়াবাদ, গোলখালী, চরখালী ও রানীপুর গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

রাঙ্গাবালী (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি জানান, ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে শুক্রবার বিধ্বস্ত বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি প্রবেশ করায় পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার চারটি গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তবে ভাটায় আবার পানি নেমে যাওয়ায় তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। কিন্তু রাতে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কায় এলাকার লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। প্রশাসনের দাবি, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাসহ সব জায়গার লোকজনকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে আসা হচ্ছে।

জানা গেছে, বিধ্বস্ত বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ দিয়ে ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে ৩ ঘণ্টা ধরে পানি প্রবেশ করায় উপজেলার চালিতাবুনিয়া ইউনিয়নের গরুভাঙা, মধ্য চালিতাবুনিয়া, বিবির হাওলা ও চরমোন্তাজ ইউনিয়নের চরআণ্ডা এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তবে ৩ ঘণ্টা পর পানির স্রোত কমে ভাটা লাগায় তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। স্থানীয়রা জানান, শুক্রবার সকালের চাইতে রাতে জোয়ারের পানি বেশি বৃদ্ধি পেলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।

চালিতাবুনিয়া ইউপি চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান বলেন, ‘প্রাকৃতিক বিভিন্ন ঘূর্ণিঝড় ও অব্যাহত নদীভাঙনের কারণে চালিতাবুনিয়া ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি পয়েন্টের প্রায় ৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ দীর্ঘদিন ধরে বিধ্বস্ত হয়ে আছে। কিন্তু এ বেড়িবাঁধ মেরামত না করায় এ এলাকার মানুষের মধ্যে দুর্যোগের ঝুঁকি অনেক বেশি। সর্বশেষ এ ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে জেয়ারের পানি বেড়ে ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে পানি ঢুকেছে। তাই আমরা লোকজনদের নিরাপদে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে গিয়েছি। এছাড়া অনেকে আবার পার্শ্ববর্তী গলাচিপা উপজেলায় গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন।’

বাগেরহাট প্রতিনিধি জানান, সিডর বিধ্বস্ত শরণখোলার বলেশ্বর নদী পাড়ের ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে হুহু করে লোকালয়ে ঢুকছে পানি। শুক্রবার সকাল থেকে বাগেরহাট উপকূলজুড়ে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। দুপুরের পর বইতে শুরু করে ঝড়ো হাওয়া।

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টগুলো যে কোনো মুহূর্তে ধসে যেতে পারে বলে খবর পাওয়া গেছে। কয়েক স্থানে বেড়িবাঁধ উপচে পানি উঠতে শুরু করেছে। শ্যামনগরের গাবুরা ও পদ্মপুকুর এবং আশাশুনির প্রতাপনগর ও আনুলিয়া ইউনিয়নে বেড়িবাঁধগুলো ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। সেখানে মাঝে মাঝে বৃষ্টি হচ্ছে। বাতাসের গতিবেগও বেড়ে যাচ্ছে।

চকরিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি জানান, কুতুবদিয়ায় ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে সামুদ্রিক জোয়ারে বেড়িবাঁধের ভাঙন দিয়ে লোকালয়ে পানি ঢুকে অন্তত ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে এ গ্রামগুলো প্লাবিত হয়। কুতুবদিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপক কুমার রায় জানান- মুরালিয়া পাড়া, তাবলের চর ও কাইছার পাড়া বেড়িবাঁধের ভাঙন দিয়ে লোকালয়ে সামুদ্রিক জোয়ারের পানি ঢুকে প্লাবিত হয়েছে। এলাকাবাসী জানান, উপজেলার আলী আকবর ডেইল ইউনিয়নের পশ্চিম তাবলরচর, আনিচের ডেইল, জেলেপাড়া, কাহারপাড়া, বড়ঘোপের দক্ষিণ মুরালিয়া, অমজাখালী, আজম কলোনী, কৈয়ারবিলের মলমচর, উত্তর কৈয়ারবিল, মহাজনপাড়া, মফজল ডিলার পাড়া, ধুরুং কাইছারপাড়া, বাতিঘরপাড়া এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

ঝালকাঠি প্রতিনিধি জানান, ঝালকাঠিতে ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’র প্রভাবে পানির চাপে বিষখালী নদী তীরের বেড়িবাঁধের ফাটল দিয়ে শুক্রবার দুপুরের পর কাঁঠালিয়া সদর ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে পানি ঢুকে পড়েছে। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন নদী তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দারা। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এসব এলাকার লোকজনকে আশ্রয় কেন্দ্রে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়াও জেলার নদ-নদীগুলোর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে দুই-তিন ফুট বেড়েছে।

কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি জানান, ঝূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে পায়রাবন্দর ঘেঁষা জনপদ কলাপাড়ার লালুয়ার চারিপাড়া গ্রামে অস্বাভাবিক জোয়ারের পানি হানা দিয়েছে। গ্রামের শতাধিক মানুষ একমাত্র আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান করছে। বাকিরাও আসছেন আশ্রয় কেন্দ্রে। সিডর বিধ্বস্ত এ জনপদের প্রায় তিন হাজার পরিবারে এখন ভয়াল আতঙ্ক বিরাজ করছে। মহিপুর ইউনিয়নের নিজামপুর গ্রামে পাউবোর নির্মিত বিকল্প বেড়িবাঁধেও ভাঙন দেখা দিয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ চরম অনিয়মের মধ্য দিয়ে নামকাওয়াস্তে বিকল্প বাঁধ করায় এ দশা হয়েছে। কুয়াকাটায় সাগর উত্তাল রয়েছে। ঝুঁকিপুর্ণ কুয়াকাটার মিরাবাড়ি বেড়িবাঁধের স্লোপে বালু ভর্তি বস্তা দিয়ে জলোচ্ছ্বাস ঠেকানো বাঁধ করা হয়েছে। শুক্রবার সকাল ১০টার পর থেকে পুবের বাতাসের চাপ ক্রমশ বাড়ছে।

চরফ্যাসন (ভোলা) প্রতিনিধি জানান, ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে আশ্রয় কেন্দ্র যাওয়া শুরু করেছেন দ্বীপ চরের কয়েক হাজার পানিবন্দি মানুষ। শুক্রবার সন্ধ্যার আগে ঢালচর ও চরপাতিলা, মুজিবনগর ইউনিয়নের সিকদার চরের বিস্তীর্ণ নিচু এলাকার মানুষ ঘূর্ণিঝড়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। দুপুর থেকে বাতাসের তোড়ে জোয়ারে এসব এলাকা প্লাবিত হয়েছে বলে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে এসব চরের পানিবন্দি আতঙ্কিত প্রায় ২০ হাজার মানুষ প্রাণের ভয়ে আশ্রয় কেন্দ্র ছুটে যাচ্ছেন। দিনভর ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি সিপিপির স্বেচ্ছাসেবী কর্মীরা ব্যস্ত ছিলেন। অপরদিকে মানুষজন নিরাপদ আশ্রয়ে গেলেও বিপাকে পড়েছেন গৃহপালিত গবাদিপশু নিয়ে। গবাদিপশু রক্ষায় স্থান সংকুলান এবং মাটির কিল্লা না থাকায় গবাদিপশুর আশ্রয় নিয়ে চিন্তিত রয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

সারা দেশে সুরক্ষা তৎপরতা : যুগান্তর প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, সরকারি নির্দেশে গোটা উপকূলসহ প্রায় সারা দেশের প্রশাসন ছিল সতর্ক ও তৎপর। ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় প্রস্তুত রাখা হয় ৫৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবক। ফণীর ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় বৃহস্পতিবার থেকেই উপকূলীয় এলাকায় ব্যাপক মাইকিং করা হচ্ছিল। বিশেষ করে শুক্রবার সকাল থেকেই মাইকে বারবার মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়। যদিও মেঘমুক্ত আবহাওয়া থাকায় অনেকেই তা গুরুত্ব দেয়নি। এরপর বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কালো মেঘের আনাগোনা বেড়ে যাওয়ায় মানুষের মধ্যে কিছুটা আতঙ্ক তৈরি হয়। বিশেষ করে দুপুরের দিকে ঝড়ো বাতাস ও বৃষ্টি হওয়ার পর মানুষ বেশি আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। এরপর আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে। তবে মঠবাড়িয়া, যশোরসহ কিছু এলাকায় বারবার বলার পরও নিরাপদ আশ্রয়ে মানুষের না যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

ঝড়ে গাছ উপড়ে পড়ে বিভিন্ন স্থান থেকে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে বরিশালে সন্ধ্যা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে ও গাছ পড়ে প্রায় দু’ঘণ্টা সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল। ঢাকা-মানিকগঞ্জ সড়কে গাছ ভেঙে পড়ে গাড়ি চাপা পড়ে। আমতলীতে দুই লাখ মানুষ সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় নিয়েছে। এছাড়া পিরোজপুরে ২৫ হাজার মানুষকে সরানো হয়। মীরসরাইয়ের অর্থনৈতিক অঞ্চল থেকে ৫২ জনকে সরিয়ে নেয়া হয়। এভাবে বিভিন্ন স্থানে মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হয়। চট্টগ্রামে পতেঙ্গা উপকূলে মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন পরিদর্শনে নেমে জনগণকে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান। বরিশালের মেয়র স্পিডবোড নিয়ে নেমে নিজেই মাইকিং করেন। পদ্মা নদীর দুই ফেরি ঘাট মাওয়া এবং পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া রুটে নৌযান চলাচল বন্ধ ছিল।

বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড়ের মূল ছোবলটি হানে খুলনা অঞ্চলে। এর প্রভাবে কয়রা, পাইকগাছা ও দাকোপ এই তিন উপজেলার নদীগুলোতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে পানির উচ্চতা কয়েক ফুট বেড়ে গেছে। অনেক এলাকায় নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে কয়েকটি উপজেলা থেকে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধে সিমেন্টের বস্তা ফেলে ভাঙন রোধ ও পানি প্রবেশ বন্ধের চেষ্টার খবর পাওয়া গেছে।

ভোলা প্রতিনিধি জানান, প্রশাসনের মাইকিং ও সতর্কতা আমলে না নেয়ায় বিভিন্ন চরে আটকরা পড়েছেন অনেক মানুষ। জেলার চরফ্যাশন উপজেলার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ঢালচর ইউনিয়নের প্রায় ১৭ হাজার বাসিন্দা সেখানে আটকা পড়েছে। এ ইউনিয়নে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র না থাকায় ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের সময় অনেকেই বনে আশ্রয় নেয় বলে জানা গেছে। সূত্রঃ যুগান্তর
;ঃ