বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা খাতে চলমান দুর্নীতি, অপ্রয়োজনীয় ওষুধ প্রেসক্রিপশন এবং চিকিৎসকদের উপর ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির প্রভাব নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনা চলছিল। অবশেষে স্বাস্থ্যবিষয়ক সংস্কার কমিশন একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দিয়েছে, যার মধ্যে ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি নিয়ে কড়া কিছু সুপারিশ রয়েছে। এই সুপারিশ বাস্তবায়িত হলে দেশের স্বাস্থ্যখাতে মৌলিক পরিবর্তন আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি: নতুন বিধিনিষেধ ও সম্ভাব্য প্রভাব
স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবিত নিয়মাবলী অনুযায়ী, ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি আর ডাক্তারদের প্রভাবিত করতে উপহার, বিনামূল্যে ওষুধ বা আর্থিক সুবিধা দিতে পারবে না। এই বিধিনিষেধের অন্তর্ভুক্ত:
Table of Contents
- চিকিৎসকদের কোনো খাবার, ব্যাগ, উপহার বা বিনোদনমূলক আয়োজনের জন্য অর্থ প্রদান নিষিদ্ধ।
- মেডিকেল কনফারেন্সে শুধু মাত্র শারীরিকভাবে উপস্থিত থেকে পণ্য উপস্থাপন করা যাবে।
- সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, খেলাধুলা বা র্যাফেল ড্রয়ের জন্য ফান্ডিং করা যাবে না।
এই বিধিনিষেধগুলো কার্যকর হলে চিকিৎসকদের সিদ্ধান্ত গ্রহণে স্বচ্ছতা আসবে এবং রোগীদের প্রাপ্য সেবা মানসম্মত হবে। Healthline এর মত আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্যবিষয়ক উৎসগুলোর মতে, এই ধরণের পদক্ষেপ স্বাস্থ্যব্যবস্থার জন্য ইতিবাচক।
ডাক্তারদের সঙ্গে যোগাযোগে কঠোর সীমাবদ্ধতা
কমিশনের সুপারিশে বলা হয়েছে, ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির প্রতিনিধি বা রিপ্রেজেন্টেটিভরা আর সরাসরি চিকিৎসকদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারবেন না। পরিবর্তে:
- ই-মেইল বা ডাকযোগে পণ্যের তথ্য পাঠাতে হবে।
- চিকিৎসকদের চেম্বার বা হাসপাতাল প্রাঙ্গণে কোন ধরণের প্রচার নিষিদ্ধ।
- চিকিৎসকদের পেশাগত সংগঠনে কোম্পানির প্রতিনিধি সদস্য হিসেবে থাকতে পারবেন না।
এছাড়া, নতুন ওষুধ বা বৈজ্ঞানিক তথ্য শুধুমাত্র কেন্দ্রীয়ভাবে নিরপেক্ষ বৈজ্ঞানিক সভার মাধ্যমে উপস্থাপন করা যাবে। এর ফলে চিকিৎসা বিজ্ঞানে স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত হবে।
জেনেরিক নাম বাধ্যতামূলক: একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ
প্রেসক্রিপশনে ওষুধের জেনেরিক নাম বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব সবচেয়ে আলোচিত। এতে রোগীরা নিম্নমূল্যের ওষুধ কিনতে পারবেন, একইসাথে চিকিৎসকদের নিরপেক্ষতা বাড়বে। এই সুপারিশ বাস্তবায়ন হলে নিম্নবিত্ত শ্রেণির মানুষের চিকিৎসার ব্যয় হ্রাস পাবে।
এই পরিবর্তনগুলি বাস্তবায়ন করা হলে ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলোর প্রচলিত মার্কেটিং কৌশল সম্পূর্ণরূপে পরিবর্তিত হবে। অনেক কোম্পানির ব্যবসায়িক মডেলকে পুনঃসংগঠিত করতে হবে। তবে এটি একটি স্বচ্ছ এবং জনকল্যাণমুখী স্বাস্থ্য ব্যবস্থা গঠনে সহায়ক হবে।
বিভিন্ন মহল এই সুপারিশগুলোকে সাধুবাদ জানিয়েছে। স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়নে এটি একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ভবিষ্যৎ
কমিশনের এই সুপারিশ বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থায় এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। চিকিৎসকদের পেশাদারিত্ব বৃদ্ধি পাবে এবং জনগণের মধ্যে আস্থা ফিরে আসবে।
ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি বিষয়ক এই সুপারিশগুলো স্বাস্থ্যখাতের ভবিষ্যৎ রূপান্তরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এবং দেশের চিকিৎসা সেবাকে আরো মানবিক ও কার্যকর করে তুলবে।
ভিসা নিয়ে সুখবর দিলো ইতালি: বাংলাদেশ থেকে আরও জনশক্তি নেবে ইউরোপের দেশটি
FAQs
- ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি এখন কি ডাক্তারদের উপহার দিতে পারবে?
না, কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী কোনো উপহার, খাবার বা বিনোদনমূলক সহযোগিতা প্রদান নিষিদ্ধ। - ওষুধের জেনেরিক নাম কেন বাধ্যতামূলক?
জেনেরিক নাম ব্যবহারে রোগীরা সাশ্রয়ী মূল্যে ওষুধ কিনতে পারেন, যা স্বাস্থ্যসেবার ব্যয় হ্রাস করে। - রিপ্রেজেন্টেটিভরা কীভাবে ডাক্তারদের সঙ্গে যোগাযোগ করবে?
শুধুমাত্র ই-মেইল বা ডাকযোগে পণ্যের তথ্য পাঠানো যাবে। - এই সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের সম্ভাবনা কতটা?
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় ইতিমধ্যে সুপারিশগুলো বিবেচনা করছে, বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। - স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতি কমবে কি?
প্রত্যক্ষ যোগাযোগ নিষিদ্ধ হওয়ায় দুর্নীতির সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্যভাবে কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।