গাজীপুর প্রতিনিধি: গাজীপুরের জয়দেবপুর রেলওয়ে জংশন, যেখান দিয়ে প্রতিদিন ৩৪ জোড়া ট্রেন যাতায়াত করে থাকে। চাকরি বা অন্যান্য প্রয়োজনের তাগিদে গাজীপুর নগরী থেকে প্রতিদিন কমপক্ষে ৮-১০ হাজার লোক শুধু রাজধানীর ঢাকায় যাতায়াত করে ব্যস্ততম এ স্টেশন দিয়ে। এছাড়া আরও কয়েক হাজার যাত্রী প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন জায়গায় যাতায়াত করেন এখান দিয়ে।
জয়দেবপুর জংশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত রেল কর্মকর্তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, একযুগ আগে এ স্টেশনটি তৃতীয় থেকে প্রথম শ্রেণির স্টেশনের অন্তর্ভুক্ত হয়। রাজস্ব আয়ের দিক থেকে সারা দেশের প্রথম শ্রেণির রেলস্টেশনগুলোর মধ্যে এটির অবস্থান পঞ্চম। বিভাগীয় শহর স্টেশন সিলেট ও খুলনার চেয়ে আয় বেশি এখানে। কিন্তু জনবল সংকটের কারণে যাত্রী সুযোগ-সুবিধায় তৃতীয় শ্রেণিরই রয়ে গেছে স্টেশনটি। স্বল্প জনবল দিয়ে হাজার হাজার যাত্রীর পরিবহন ও বাণিজ্যিক সুযোগ-সুবিধা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে স্টেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত রেল কর্মকর্তাদের।
সরেজমিন স্টেশন এলাকায় দেখা গেছে, সড়ক পথে যানজটের কারণে রেলপথে যাত্রীর চাপ বেড়েছে এখানে। কিন্তু সে তুলনায় পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা বা সেবার মান বাড়েনি। অপ্রতুল সুযোগ-সুবিধার কারণে যাত্রীদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। প্রয়োজনীয় ওয়েটিং রুম না থাকায় যাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। নেই পর্যাপ্ত শৌচাগার। জংশনের বাইরে ব্যক্তিগত ব্যবস্থাপনায় রয়েছে একটি মাত্র শৌচাগার। অনেক সময় যাত্রীদের শৌচাগার ব্যবহারের জন্য লাইনে দাঁড়াতে হয়। পরিছন্নকর্মী না থাকায় প্ল্যাটফরমসহ পুরো স্টেশন এলাকা ধুলাবালি ও আবর্জনায় নোংরা হয়ে থাকে। এছাড়া এখানে যাত্রী সমাগম বেশি হলেও তাদের ট্রেনে ওঠানামার জন্য নেই প্ল্যাটফরমসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সুবিধা। স্টেশনটিতে ডিজিটাল ইনফরমেশন সিস্টেম ব্যবস্থাও চালু হয়নি। সব মিলিয়ে এখানে সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হয় যাত্রীদের।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্টেশনের ভেতরে প্রথম শ্রেণির একটি বিশ্রামাগার থাকলেও তা ব্যবহার হয় না। এটি তালাবদ্ধ অবস্থায়ই থাকছে বছরের পর বছর। এর কারণ জানতে চাইলে জ্যেষ্ঠ স্টেশন মাস্টার মো. শাহজাহান বলেন, ‘বিশ্রামাগারটিতে বসার জন্য সোফা, চেয়ার ও শীতাতপ যন্ত্রসহ কোনো আসবাবপত্র নেই। এছাড়া এটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কোনো লোকবলও নেই। যে কারণে ভিআইপি বিশ্রামাগার থাকার পরও এটি ব্যবহার করা যাচ্ছে না।’ স্টেশনের জনবল বৃদ্ধির আবেদন জানিয়ে দফায় দফায় সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্র্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়া হলেও কোনো সুরাহা মেলেনি বলেও জানান তিনি।
জয়দেবপুর রেলওয়ে জংশন থেকে ঢাকার কমলাপুরের দূরত্ব প্রায় ৩৬ কিলোমিটার। ট্রেনে কমলাপুর যেতে সময় লাগে এক থেকে দেড় ঘণ্টা। কিন্তু সড়কপথে গাজীপুর শহর থেকে কমলাপুর যেতে সময় লাগে প্রায় চার ঘণ্টা। ডেমু ট্রেনে ঢাকার ভাড়া মাত্র ৪৫ টাকা। অন্যদিকে বাসের ভাড়া ৮০ টাকা। তাই সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা, চাকরিজীবী ও শিক্ষার্থীসহ হাজার হাজার যাত্রী সড়কপথের দুঃসহ যানজট এড়াতে ট্রেনে যাতায়াত করছে। আর দিন দিন ট্রেনের যাত্রী সংখ্যাও বাড়ছে।
রেল কর্র্তৃপক্ষ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, জয়দেবপুর স্টেশন হয়ে প্রতিদিন ৩৪ জোড়া অর্থাৎ ৬৮টি ট্রেন দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে আসা-যাওয়া করে। এর মধ্যে ২২ জোড়া অর্থাৎ তুরাগ, আন্তঃনগর, কমিউটার ও চারটি ডেমুসহ মোট ৩০টি ট্রেন জয়দেবপুর জংশনে থেমে বিভিন্ন গন্তব্যে চলাচল করে। দেশের অন্যতম ব্যস্ততম এ স্টেশন প্রথম শ্রেণির হলেও চলছে তৃতীয় শ্রেণির জনবল কাঠামো দিয়ে। এখানে একজন স্টেশনমাস্টার ও তিনজন সহকারী স্টেশনমাস্টার দায়িত্ব পালন করছেন। ট্রেন অপারেশন স্টাফ রয়েছেন মাত্র ১৬ জন আর বাণিজ্যিক কাজে যুক্ত ১৪ জন স্টাফ। নেই কোনো ক্লার্ক, এমএলএসএস ও সুইপার।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জ্যেষ্ঠ স্টেশন মাস্টার মো. শাহজাহান বলেন, ‘এ জংশনে ১৮ জোড়া ট্রেনের কোনো যাত্রাবিরতি নেই। গাজীপুর মহানগরীর লোকজন বারবার চিঠি দিচ্ছে এসব ট্রেনের যাত্রা বিরতির জন্য।
আমরা বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্র্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ আকারে পাঠিয়েছি। তবে এ জংশন নিয়ে রেলওয়ে কর্র্তৃপক্ষের ব্যাপক পরিকল্পনা রয়েছে। এখানে আধুনিক রিমডেলিং স্টেশন নির্মাণ, টঙ্গী-গাজীপুর ডাবল রেললাইন চালু ও ডেমু ট্রেনের সংখ্যাও বাড়ানো হবে। এগুলো পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হবে। সব মিলিয়ে শিগগিরই এ স্টেশনটিতে প্রথম শ্রেণির সুযোগ-সুবিধা ও যাত্রীসেবা দেওয়া সম্ভব হবে।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।