জুমবাংলা ডেস্ক : সাধারণত প্রতিবছর শীতকালে সবজির দাম কমলেও এবার দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। পুরো শীতজুড়ে বাজার গরম ছিল শাক-সবজির। তবে মাঘের শেষে ফাল্গুনের শুরুতেই বাজারে বাড়ছে সবজির সরবরাহ। এতে কমতে শুরু করেছে দাম।
সপ্তাহ ব্যবধানে কেজিপ্রতি ১০ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত কমেছে সবজির দাম।
শুক্রবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) কেরানীগঞ্জের আগানগর, জিনজিরা এবং রাজধানীর পলাশী ও হাতিরপুল কাঁচাবাজারসহ বেশ কয়েকটি বাজারঘুরে দেখা যায়, সপ্তাহ ব্যবধানে কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত কমেছে সবজির দাম।
বিক্রেতারা বলেন, তীব্র শীতের কারণে এবার ফসল উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। ফলে বাজারে সরবরাহ কম থাকায় দাম বেড়ে ছিল। তবে শীতের তীব্রতা কমে যাওয়ার পর বসন্তের শুরুতে বাজারে বাড়ছে শাক-সবজির সরবরাহ। এতে কেজিতে ১৫ টাকা পর্যন্ত কমেছে সবজির দাম।
কেরানীগঞ্জের আগানগর বাজারের সবজি বিক্রেতা উজ্জ্বল বলেন, কমতে শুরু করেছে শাক-সবজির দাম। মূলত বাজারে সরবরাহ বাড়ার কারণে দাম কমছে।
বাজারঘুরে দেখা যায়, প্রতিকেজি বেগুন ৬০-৮০ টাকা, শিম ৩০-৪০ টাকা, আলু ৩০ টাকা, বরবটি ৭০ টাকা, মুলা ২০-২৫ টাকা, শালগম ২০-৩০ টাকা করলা ৬০-৮০ টাকা, শসা ৬০ টাকা, লতি ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া প্রতি কেজি ক্ষীরাই ৫০-৬০ টাকা, গাজর ২০-৩০ টাকা, টমেটো ৪০-৫০ টাকা, কহি ৮০ টাকা, কাঁচা টমেটো ৩০-৪০ টাকা ও পেঁয়াজের কলি বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়।
আর প্রতি পিস লাউ ৭০-৮০ টাকা, আকারভেদে প্রতিপিস ফুলকপি ৩০-৩৫ টাকা, বাঁধাকপি ৩০ টাকা ও ব্রকলি ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে পেঁপে। প্রতিকেজির দাম পড়ছে ৩৫-৪০ টাকা।
এদিকে পাইকারিতে কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায় ও খুচরা পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে ৬০-৭০ টাকায়। এ ছাড়া বাজারে লালশাকের আঁটি ১৫ টাকা, পুঁইশাক ২৫ টাকা, পালংশাক ১০ টাকা ও লাউ শাক ৩০-৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ক্রেতারা জানান, সবজির দাম কমায় বাজারে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে। অন্যান্য পণ্যেরও দাম কমলে রোজার আগে বাজার কিছুটা সহনীয় পর্যায়ে আসবে।
আলামিন হোসেন নামে এক ক্রেতা বলেন, পুরো শীতজুড়ে বাজারে দাপট দেখিয়েছে সবজি। তবে শীত কমার সঙ্গে সঙ্গে কমতে শুরু করেছে শীতকালীন সবজির দাম। এতে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে বাজারে।
সবজির বাজারে উত্তাপ কিছুটা কমলেও মাছের বাজার এখনও ঊর্ধ্বমুখী। বাজারে হাতেগোণা কয়েকটি চাষের মাছের দাম কিছুটা কমলেও, চড়া বেশিরভাগ চাষেরও দেশি মাছের দাম। বিক্রেতারা জানান, বাজারে মাছের সরবরাহ কম থাকায় দাম বাড়ছে।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি তেলাপিয়া ২০০-২২০ টাকা, চাষের পাঙাশ ১৮০-২১০ টাকা, চাষের শিং ৫৫০ টাকা, চাষের মাগুর ৫২০ টাকা ও চাষের কৈ বিক্রি হচ্ছে ২৩০-২৫০ টাকায়।
তবে চড়া দেশি মাছের দাম। আকারভেদে প্রতি কেজি রুই ৩৮০ থেকে ৪৫০ টাকা, কাতলা ৪০০ থেকে ৪৮০ টাকা, কোরাল ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা, টেংরা ৫৫০ থেকে ৭০০ টাকা, বোয়াল ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, আইড় ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকা, বাইম ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এ ছাড়া প্রতি কেজি দেশি কৈ ১ হাজার ৩০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকা, শিং ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা, শোল ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি কেজি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার টাকার ওপরে।
কেরানীগঞ্জের কালীগঞ্জ বাজারের মাছ ব্যবসায়ী হরিপদ বলেন, বাজারে দেশি মাছের সরবরাহ কম। তাই দাম কিছুটা বাড়তি।
নতুন করে দাম না বাড়লেও এখনও চড়া মুরগি ও গরুর মাসের বাজার। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ২১০-২২০ টাকা, সোনালি মুরগি ৩২০ টাকা, দেশি মুরগি ৫৮০-৬০০ টাকা, সাদা লেয়ার ২৫০ টাকা ও লাল লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৩২০ টাকায়। আর জাতভেদে প্রতি পিস হাঁস বিক্রি হচ্ছে ৫৫০-৭০০ টাকায়।
বিক্রেতাদের দাবি, পাইকারি বাজারে মুরগির সরবরাহ কমে গেছে। তাই দাম বাড়ায় এর প্রভাব খুচরা বাজারেও পড়েছে। কেরানীগঞ্জের আগানগর বাজারের রিপন বলেন, বাজারে মুরগি কম আসায় দাম বাড়ছে।
আর গত দুই সপ্তাহে কেজিতে ২০-৫০ টাকা বেড়ে প্রতিকেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭২০-৭৫০ টাকায়। তবে বাড়েনি খাসির মাংসের দাম। বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৫০ টাকা থেকে এক হাজার ১০০ টাকায়।
এ ছাড়া প্রতি ডজন লাল ডিম ১৪০ টাকা ও সাদা ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ টাকায়। আর প্রতি ডজন হাঁসের ডিম ২৪০ টাকা ও দেশি মুরগির ডিম ২৪৫-২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে রমজান মাস শুরুর আগেই অস্থির হয়ে ওঠা রোজার পণ্যের বাজার ঘুরে দেখা যায়, নতুন করে দাম না বাড়লেও বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে প্রায় সব পণ্য।
বাজারে প্রতি কেজি ছোলা বিক্রি হচ্ছে ১০০-১০৫ টাকায়। আর প্রতি কেজি ছোলার ডাল ১০০-১১০ টাকা, অ্যাংকর ডাল ৭৫-৮০ টাকা, ডাবলির ডাল ৭৫ টাকা, মোটা দানার মসুর ডাল ১০৫-১১০ টাকা, চিকন মসুর ডাল ১৩৫-১৪০ টাকা, মোটা দানার মুগ ডাল ১৪৫-১৫০ টাকা, চিকন মুগ ডাল ১৭০-১৮০ টাকা ও খেসারি ডাল ১০৫-১১০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
অন্যান্য পণ্যের মধ্যে খোলা আটা ৫০-৫৫ টাকা, প্যাকেট আটা ৬৫-৬৮ টাকা, খোলা ময়দা ৬৫-৭০ টাকা এবং প্যাকেট ময়দা ৭৫-৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৪৫-১৫০ টাকায়। আর প্যাকেটজাত চিনি তো বাজার থেকেই উধাও!
এদিকে নতুন করে দাম নির্ধারণ করে দেয়া ভোজ্যতেলের বাজারে দেখা যায়নি দাম নির্ধারণের প্রভাব। বিক্রি হচ্ছে বাড়তি দামেই। বোতলজাত সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৭০ টাকা ও প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৬৫ টাকায়।
কেরানীগঞ্জের জিনজিরা বাজারের বিক্রেতা নুরুল ইসলাম জানান, নতুন করে খুব একটা দাম বাড়েনি। কোনো কোনো পণ্যে ১-২ টাকা বেড়েছে। আসলে দাম আগেই বেড়ে গেছে। এখন সরবরাহ বাড়লে কিছুটা কমতে পারে।
ভারত থেকে পেঁয়াজ আসতে পারে এমন খবরে পাইকারি পর্যায়ে কেজিতে ২-১ টাকা কমলেও প্রভাব পড়েনি খুচরা বাজারে। খুচরা পর্যায়ে প্রতি মুড়িকাটা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১১৫-১২০ টাকায়। তবে বাজারে দেখা নেই পুরাতন দেশি ও ভারতীয় পেঁয়াজের। দু-একটি দোকানে পাওয়া গেলেও সেটি বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে।
বিক্রেতারা জানান, বাজারে মুড়িকাটা পেঁয়াজের সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম ঊর্ধ্বমুখী। কেরানীগঞ্জের আগানগর বাজারের পেঁয়াজ বিক্রেতা আসলাম বলেন, ফরিদপুরের হালি পেঁয়াজ বাজারে আসা শুরু হলে দাম কমবে।
তবে বাজারে নতুন রসুনের সরবরাহ বাড়ায় কমেছে রসুনের দাম। দেশি নতুন রসুন কেজি ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা। আর আমদানি করা রসুন প্রতি কেজি ২২০-২৪০ টাকা। এ ছাড়া মানভেদে প্রতি কেজি আদা বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকায়।
নিত্যপণ্যের অস্থির বাজার নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়ের দাবি ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েরই। ক্রেতারা বলছেন, নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হয় না। এতে বিক্রেতারা ইচ্ছেমতো দাম বাড়ানোর সুযোগ পায়।
আর বিক্রেতারা বলেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ইচ্ছেমতো দাম বাড়াচ্ছে। বাজারে নিয়মিত অভিযান চালালে অসাধুদের দৌরাত্ম্য কমবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।