গত বছরের ১৪ এপ্রিল ফিফা বাফুফের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগকে নিষিদ্ধ করেছিল। উদ্ভূত ঘটনার প্রেক্ষিতে বাফুফে ১৭ এপ্রিল জরুরি নির্বাহী সভা করে একটি তদন্ত কমিটি করে। সেই তদন্ত কমিটি এবার ফিফার কাছে চরম প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার ফিফার এথিকস কমিটি বাফুফের সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদীকে জরিমানা ও সাবেক কয়েকজন স্টাফকে বিভিন্ন মেয়াদে নিষেধাজ্ঞা দেয়। ফিফা প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য আলাদা আলাদা ফাইল প্রকাশ করে। প্রায় প্রত্যেকের ফাইলেই বাফুফের তদন্ত কমিটির বিষয়টি দুয়েক প্যারা আসলেও, সালাম মুর্শেদীর ফাইলে বাফুফের তদন্ত কমিটি নিয়ে ফিফা বিশদ বিশ্লেষণ দিয়েছে।
সিনিয়র সহ-সভাপতি ও ফিন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম মুর্শেদীর ওপর ফিফা ৫২ পাতার রিপোর্ট প্রকাশ করে। সেই রিপোর্টে ৩১ ও ৩২তম পাতায় বাফুফে তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে নিজেদের পর্যবেক্ষণ ব্যক্ত করে বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। প্রথম পর্যবেক্ষণেই ফিফার ইনভেস্টগরি চেম্বার বাফুফের তদন্ত কমিটিকে মূল্যহীন আখ্যা দিয়েছে। কারণ এই তদন্ত কমিটি নিরপেক্ষ ও স্বাধীনভাবে গঠিত হয়নি।
১৭ এপ্রিল বাফুফের জরুরি নির্বাহী সভায় ১০ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। ১০ জনের মধ্যে নয়জনই ছিলেন বাফুফের নির্বাহী কমিটির সদস্য। আব্দুর রহিম ছিলেন নির্বাহী কমিটির বাইরে এবং তিনি আবার তৎকালীন প্রকিউরমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যনও। বাফুফে নির্বাহী কমিটি দিয়েই তদন্ত কমিটি গঠন করায় ফিফা চরম প্রশ্ন তুলেছে।
তদন্ত কমিটি গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে নাখোশ ছিলেন বাফুফের দুই সহ-সভাপতি আতাউর রহমান ভূঁইয়া মানিক ও মহিউদ্দিন আহমেদ মহী। তাই তারা দু’জন কমিটি থেকে পদত্যাগ করেন। আরেক সহ-সভাপতি ইমরুল হাসান কমিটির কোনো সভায় আসেননি এবং তদন্ত রিপোর্টে স্বাক্ষরও করেননি। আরেক সহ-সভাপতি কাজী নাবিল আহমেদ আহবায়ক হয়ে তদন্ত কার্যক্রম সম্পাদন করেছেন।
তদন্ত কমিটির মতো প্রতিবেদন নিয়েও ফিফা রিপোর্টে প্রশ্ন উঠেছে। সালাম মুর্শেদী ফিফাকে অভিযোগ খণ্ডাতে বাফুফের তদন্ত কমিটির রিপোর্ট ইংরেজী অনুবাদ করে পাঠিয়েছিলেন। তদন্ত প্রতিবেদনে সালাম মুর্শেদীর স্বাক্ষর জালিয়াতির বিষয়টিও উল্লেখ রয়েছে। বাফুফের তদন্ত কমিটি সালাম মুর্শেদীর এই বয়ানে আশ্বস্ত হলেও ফিফা গঠিত কমিটি বাফুফে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে আশ্বস্ত হতে পারেনি। তাদের পর্যবেক্ষণে বলেছে, ‘বিশ্ব জুড়েই ডিজিটাল স্বাক্ষরের বৈধতা রয়েছে এবং বাফুফের তথাকথিত তদন্ত কমিটি স্বাক্ষর জালিয়াতির স্বপক্ষে তেমন প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেনি।’
বাফুফের নির্বাহী কমিটির কর্মকর্তাদের দিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন নিয়ে মিডিয়া এবং সাবেক ফুটবলাররা চরম সমালোচনা করেছিল। বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন অবশ্য সেই সমালোচনা অগ্রাহ্য করেছেন। সেই সময় অগ্রাহ্য করলেও এক বছর পর বাফুফের অভিভাবক সংস্থা ফিফাই তদন্ত কমিটির কোনো গ্রহণযোগ্যতা পায়নি।
ফিফা তদন্ত করে সালাম মুর্শেদীর ব্যর্থতা খুঁজে পেয়ে শাস্তি দিয়েছে, আর বাফুফের তদন্ত কমিটি ফিন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যানকে ন্যূনতম সতর্কও করেনি। ফলে তদন্ত কমিটির কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন ওঠা খুবই স্বাভাবিক। তদন্ত কমিটির আহবায়ক কাজী নাবিল আহমেদ নিজেও ফিন্যান্স কমিটির অন্যতম সদস্য ও বাফুফের চেকের অধিকাংশ স্বাক্ষরও তার।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।