রঞ্জু খন্দকার, গাইবান্ধা থেকে : তালেব আলীর পাঁচ সদস্যের পরিবার। পোশাক কারখানার কর্মী একমাত্র ছেলের আয়ে চলে সংসার। ছেলে মাসে সাড়ে ১২ হাজার টাকা পাঠায়। আগে এই টাকায়ই ‘ফুটানি’ করে সংসার চালানো যেত। এখন সেই টাকায় ফুটানি দূরের কথা ‘ফকিরি হালেও’ আর সংসার চলছে না। ফলে সত্তোরোর্ধ তালেবকে এই বয়সে কামলা দিতে হচ্ছে।
গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার ফুটানির বাজারে কথা হয় তালেব আলীর সঙ্গে। তিনি বাজার করতে এসেছিলেন। বাজার বলতে কিনেছেন শুধু মুলা আর পেঁপে।
তালেব বলেন, আগে ছেলের পাঠানো টাকায় কমপক্ষে পাঙাশ মাছ বা ব্রয়লার মুরগি কেনা যেত। গ্রামের লোকে সেটাকেই বলত ‘ফুটানি’। এখন বাজারের সবচেয়ে কম দামি মুলা আর পেঁপে কিনতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে।
পলাশবাড়ীর এই অঞ্চলে লোকজন একটু আয়েশ করে চলাকে ফুটানি বলে। অনেক আগে যখন আমলাগাছি ও ঢোলভাঙা বাজারের মাঝামাঝি এই বাজার হয়, লোকজন এর নাম দেয় ফুটানির বাজার। বোঝা যায়, এখানকার লোকজন একটু আয়েশি ছিল। কিন্তু গতকাল রোববার বাজারটিতে গিয়ে আয়েশের দেখা মেলেনি।
ফুটানির বাজারের দোকানি আব্দুর রহমান বলেন, তাঁর দোকানের সবজি তেমন বিক্রি হচ্ছে না। সব কিছুরই দাম বাড়তি। ফলে লোকজন কিনছে কম। ফুটানির বাজারের লোকজন এখন ফকিরি হালে চলে গেছে।
ফুটানির পাশেই বরিশাল ইউনিয়নের সবচেয়ে বড় বাজার আমলাগাছি। এখানে সোম ও বৃহস্পতিবার হাট বসে। এই হাট ঘুরে দেখা যায়, আলুর কেজি ৫০-৫৫ টাকা, বেগুন ৮০ টাকা। পটলের কেজি এখানে ৬০ টাকা। মুলা ও পেঁপে ছাড়া কোনো সবজির দামই ৫০ টাকার নিচে নেই।
আমলাগাছি বাজারে এসেছিলেন স্থানীয় হাইস্কুলের শিক্ষক দুলাল মিয়া। তিনি বলেন, এখন গরিব মানুষের কেনার জন্য শুধু মুলা আর পেঁপে আছে। আর কিছুই কেনার জো নেই।
মাছ ও মুরগির বাজারে গিয়ে দেখা যায়, সবচেয়ে দাম কম পাঙাশ মাছের। এরও কেজি ১৪০-১৫০ টাকা। ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিপ্রতি ১৮০ টাকা।
আমলাগাছি বিএম উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক দুলাল বলেন, চাকরি করেও এখন পাঙাশ বা ব্রয়লার ছাড়া অন্য আমিষ কেনার উপায় নেই। ডিমের দামও একেকটি ১৫ টাকা।
পলাশবাড়ীর কয়েকটি বাজার ঘুরেও প্রায় একই চিত্র দেখা গেছে। ফকিরহাট, ঘোড়াবান্ধা চৌরাস্তা ও ছাতিয়ানতলায়ও জিনিসপত্রের দাম বাড়তি।
ছাতিতানতলার মাহবুর রহমানের দোকানে দেখা যায়, আলু ছাড়া সবজি নেই। আছে পেঁয়াজ, মরিচ ও রসুন।
মাহবুর বলেন, সবজির দাম এত বেশি যে অনেকেই কিনছেন না। শুধু আলু কিনে ভর্তা করে খাচ্ছেন। কিন্তু মরিচের দামও ৩২০ টাকা কেজি।
কুমারগাড়ী গ্রামের সোফায়েল আহমেদ, আবদুল হকসহ কয়েকজন বলেন, মানুষের গরিবি হালে চলার জন্যও অন্তত আলু, লবণ ও মরিচ দরকার হয়। এর মধ্যে লবণের দাম নিয়ন্ত্রণে থাকলেও আলু, মরিচের দাম বেশি। ফলে ফুটানি দূরের কথা ফকিরি হালেও দিন চলছে না।
মাছ-মাংস কেনা আগেই বাদ দিয়েছি, এখন দেখছি সবজি কেনাও বাদ দিতে হবে
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।