রঞ্জু খন্দকার, গাইবান্ধা থেকে : রিকশায় একাকী তরুণী যাচ্ছিলেন নতমুখে। হাতে একগুচ্ছ কদমফুল। ঘটনাস্থল স্টেডিয়াম সড়ক, গাইবান্ধা।
তরুণীর হাতে কদমগুচ্ছ দেখার পর তাকালাম রাস্তার দুপাশে। জেলা শহর থেকে আধা কিলোমিটার দক্ষিণ বরাবর শাহ আব্দুল হামিদ স্টেডিয়াম পার হলে এ সড়কের পূর্ব দিক ঘেঁষে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে দুটি কদমগাছ। এ দুটি পাশ কাটিয়ে সামান্য সামনে এগোলেই আরও একটি গাছ। তিনটি গাছেই বালকের সদ্য মোড়ানো মাথায় ওঠা চুলের মতো পাপড়ি মেলে আছে থোকা থোকা কদমফুল।
তার মানে, আষাঢ় আসার আগেই কৃষ্ণের পছন্দের বৃক্ষ ছেঁয়েছে বর্ষার আগমনী দূত কদমফুলে।
পঞ্জিকার হিসাবমতে, বর্ষা আসতে আরও সপ্তাহখানেক বাকি। কিন্তু এবার বৃষ্টির যেন বিরাম নেই। এই বৃষ্টিতেই যেন নাইতে এসেছে রাঁধার ভালোবাসার সেই কদম্বফুল।
গাইবান্ধার তরুণ সাহিত্যিক মোজাহিদুল ইসলাম মণ্ডল বলেন, বর্ষার সঙ্গে কদমের একটা দারুণ যোগসাজস রয়েছে। মূলত কদম বর্ষারই ফুল। ঝিরিঝিরি বৃষ্টি যখন কদমের ওপর পড়ে, মনে হয় ফুলটি যেন স্নান করতে নেমেছে। এর প্রভাব পড়ে সাহিত্যিক মনেও।
এই গল্পকার জুমবাংলাকে জানান, তিনি আসছে বর্ষায়ই বিয়ে করছেন। এর জন্য এরই মধ্যে নিমন্ত্রণপত্রও ছাপতে দিয়েছেন। সেখানেও নিমন্ত্রিত ব্যক্তিদের কদমের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। বর্ষা বলেই এই মৌসুমি শুভেচ্ছা।
শুধু গাইবান্ধার স্টেডিয়াম সড়ক নয়, এ জেলার সাতটি উপজেলাসহ রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে এখন শোভা ছড়াচ্ছে কদমের মায়া।
বেসরকারি চাকরিজীবী শামীম হাসান থাকেন রাজধানীর দক্ষিণ বনশ্রীর মেরাদিয়া এলাকায়। সেখানেও ফুটেছে কদম। তিনি বলেন, তাঁর বাসা থেকে অফিসে আসা-যাওয়ার পথে কদমের দেখা মেলে। বর্ষার আসল রূপ যেন ধরা পড়ে এ ফুলের পাপড়িতে।
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার ডুমুরগাছা গ্রামের শামসুল আলমের পুকুরপাড়ে পরপর দুটি কদমগাছ। সেগুলোও ফুটে আছে পাপড়ি মেলে।
শামসুল বলেন, গ্রামে কদমের দিকে তাকানোর মানুষ অত নেই। এই গাছগুলো মূলত অযত্নে বেড়ে ওঠে। অনেকে কেটে ফেলেন। কদম ভালোবাসেন বলে তিনি রেখেছেন।
কদমের পাপড়ি ছাড়িয়ে সদ্য মোড়ানো মাথার মতো করে খেলছিল কয়েক শিশু। এদের বাড়ি পলাশবাড়ী উপজেলার কুমারগাড়ী গ্রামে। তাদের মধ্যে দুই শিশু বলে, এদের একজন পাপড়ি পছন্দ করে। আরেকজন ভেতরের ফলটা। তাই দুজনে ভাগ করে নিয়ে তাই দিয়ে খেলছে।
উইকিপিডিয়া জানাচ্ছে, কদমগাছ দীর্ঘাকৃতি, বহু শাখাবিশিষ্ট বিশাল বৃক্ষ। রূপসী তরুর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে এই কদম। এ গাছের কাণ্ড সরল, উন্নত, ধূসর থেকে প্রায় কালো এবং বহু ফাটলে রুক্ষ, কর্কশ। এর শাখা অজস্র এবং ভূমির সমান্তরালে প্রসারিত। পাতা বড় বড়, ডিম্বাকৃতি, উজ্জ্বল-সবুজ, তেল-চকচকে এবং বিন্যাসে বিপ্রতীপ।
এই সূত্র থেকে আরও জানা যায়, কদমের বোঁটা খুবই ছোট। নিবিড় পত্রবিন্যাসের জন্য কদম ছায়াঘন। শীতে কদমের পাতা ঝরে। বসন্তে কচি পাতা গজায়।
ফিরি গাইবান্ধা জেলা শহরের স্টেডিয়াম সড়কে। রিকশায় কদমফুলের গুচ্ছ হাতে নেওয়া সেই তরুণী বলছিলেন, বর্ষার এই ফুলটি তাঁর ভীষণ পছন্দের। কেউ তা দিক না দিক, নিজেই নিজেকে উপহার দিয়েছেন প্রিয় এই ফুল।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।