অনিল চন্দ্র রায়, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি: কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী একটি সীমান্ত ঘেষা ও ধরলা নদী বেষ্টিত উপজেলা। এ অঞ্চলের চাষিরা মূলত রবি শস্যের উপর নির্ভরশীল। আর বেগুন চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে এ বছরও। যাদের নিজস্ব জমি নেই তারাও অন্যের জমি লিজ নিয়ে বেগুন চাষ করে সচ্ছলভাবে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছেন।
অধিক লাভের আশায় এ অঞ্চলের কৃষকরা প্রতি বছরেই আগাম বেগুন চাষ করে লাভবান হচ্ছেন। আর চাষিরা লাভবান হওয়ায় বেগুন চাষে আগ্রহ বাড়ছে তাদের মাঝে। তাই গত বছরের চেয়ে এ বছর ব্যাপক হারে বেগুন চাষ করছেন কৃষকরা।
রবিবার (১ সেপ্টেম্বর) উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, চলতি রবি মৌসুমে কোন জমি আর পতিত নেই বিস্তৃর্ণ কৃষকের মাঠে মাঠে দু-চোখ জুড়ানো সবুজের সমারোহ। যেন চারিদিকে বেগুনের সবুজ রঙে ভরে উঠেছে ফসলের মাঠ আর মাঠ। নয়ন জুড়ানো দৃশ্য মেতে উঠেছে ফসলের মাঠে। এখন মাঠ জুড়ে সবুজ রঙে সাজিয়ে তুলিছে প্রকৃতির অপরুপ রুপ। সেই সাথে বেগুনের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। কোনও কৃষক-কৃষাণি ঘরে বসে নেই। প্রতিদিন সকাল হলেই প্রান্তিক কৃষকরা বেগুন ক্ষেতে পরিচর্যার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। অঞ্চলের কৃষকরা বেগুন চাষের পাশপাশি সারা মৌসুমে বিভিন্ন ধরণের সবজির আগাম চাষ করে বদলে দিয়েছে নিজের ভাগ্যের চাকা। এসব চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন এ অঞ্চলের শত শত কৃষক পরিবার। বেগুন রোপন করার সময় একই জমিতেই লাল শাক,মুলা শাক ও পাট শাক রোপন করে চমক সৃষ্টি করেছে। বেগুন ক্ষেতেই এ সব শাক বিঘা প্রতি ৫ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকা করে স্থানীয় পাইকারদের কাছে বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন।
নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের কুরুষাফেরুষা ও চওড়া বাড়ি গ্রামের কৃষক ঈসা মিয়া (৩৫), পুলিন চন্দ্র রায় (৪০), আশিদুল ইসলাম (৩৫) অরুনা কান্ত রায় (২৮), হাসেম আলী (৫৫) অপিয়াল (৩৭) সিদ্দিক মিয়া (৫৫) ধীনেন্দ্র নাথ রায় (৪০) মনছার আলী (৭০) ও মুসা মিয়া (৪২)সহ অনেকেই বেগুন রোপন করে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছেন। তারা প্রত্যেকেই প্রতি বছরেই বেগুনসহ লাল শাক, মুলা শাক ও পাট শাক বিক্রি করে অধিক লাভবান হয়েছেন। এ বছরও অধিক লাভের আশায় কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছেন কৃষকরা।
কৃষকরা আরও জানান, প্রতি বিঘায় বেগুন রোপন করতে খরচ হয় ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। বেগুন ক্ষেতে রোগ মুক্ত ও আবহাওয়া অনুকূলসহ বেগুনের ভাল দাম থাকলে ৮০ হাজার টাকা থেকে ১ লক্ষ টাকা বিক্রি করা যাবে। যাবতীয় খরচ মিটিয়ে বিঘা প্রতি ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা আয় হয়। যে সব চাষির অন্যের জমি ৮ থেকে ১০ হাজার টাকয় কন্টাক নিয়ে বেগুনসহ অন্যন্য সবজি চাষাবাদ করেছেন। তারও যাবতীয় খরচ মিটিয়ে বিঘা প্রতি ৪০-৫০ হাজার টাকা আয় করবে। তারা প্রত্যেকেই আয়ের টাকা দিয়ে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সচ্ছল ভাবে জীবন-যাপন করছেন।
কৃষক সিদ্দিক মিয়া (৫৫) জুমবাংলাকে জানান, তিনি অভাবের তাড়নায় জীবনে পড়ালেখা করতে পারেননি। তিনি কৃষি অফিস থেকে প্রশিক্ষন নিয়ে জীবিকার তাগিদে নিজেকে সম্পৃক্ত করে কৃষি কাজে। প্রতি বছরেই বেগুনসহ বিভিন্ন সবজি চাষ করে বদলে গেছে নিজের ভাগ্য। গত ৮ থেকে ১০ বছর ধরে পরিবারের আর্থিক অনটন চিরদিনের জন্য বিদায় নিয়েছেন। গত শীত মৌসুমে ২ একর জমিতে প্রায় দুই লাখ টাকা বেগুনসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি বিক্রি করে আয় করেছেন। আশা করছেন এ বছরও বেগুনসহ বিভিন্ন সবজি বিক্রি করে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা আয় করবেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহাবুবুর রশিদ জুমবাংলাকে জানান, চাষিদের বেগুন চাষে উদ্বুদ্ধ করা ও বিভিন্ন সহযোগিতা দেওয়ায় এ অঞ্চলের কৃষকরা আগাম শীতকালীন সবজি বেগুন চাষে ঝুঁকে পড়েছেন। এ অঞ্চলের মাটি বেগুন চাষের উপযোগী হওয়ায় চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় ৮০ হেক্টর জমিতে কৃষকরা আগাম বেগুনের চারা রোপন করেছেন। এ উপজেলায় কৃষকরা বেগুন চাষ ও বিভিন্ন বিভিন্ন সবজি চাষ করে অনেকেই স্বাবলম্বী হয়েছেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।