বাসর রাতে নব দম্পতিকে দুধ খাওয়ানো সামাজিক প্রথা নাকি বৈজ্ঞানিক কারণ?
লাইফস্টাইল ডেস্ক : বাসর রাত বা ফুলশয্যার রাত যে কোনো দম্পতির কাছেই সবচেয়ে স্মরণীয় মুহূর্তগুলোর একটি। এই ফুলশয্যার রাতকে কেন্দ্র করে পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে প্রচলিত রয়েছে বিভিন্ন ধরনের রীতি। ভারতীয় উপমহাদেশসহ বাংলাদেশের নানা জায়গায় ফুলশয্যার রাতে বরের গরম দুধ খাওয়ার রীতি রয়েছে। ফুলশ্যার জন্য নির্দিষ্ট ঘরে রাখা থাকে কেশর ও পেস্তা কিংবা হলুদ মেশানো দুধের গ্লাস। সাধারণত নববধূ নিজের হাতেই স্বামীকে পান করান সেই দুধ এবং তিনি নিজেও খান। কিন্তু এই রীতির ব্যাখ্যা কী? কেন সদ্য বিয়ে করা নব দম্পতিকে গরম দুধ পান করানো হয় ফুলশয্যার রাতে। এটা কি নিছকই কুসংস্কার নাকি এর পিছনে কোনও কারণও রয়েছে৷
বিশেষজ্ঞরা বলেন, ফুলশয্যায় দুধ পানের রীতি অতি প্রাচীন। আসলে প্রাচীন যুগ থেকেই ভারতীয় কৃষি ও অর্থব্যবস্থায় এবং দৈনন্দিন জীবনে গোদুগ্ধের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে।
সেই কারণে গরুর দুধকে অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়। অনেক সামাজিক অনুষ্ঠানেই তাই গরুর দুধের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা লক্ষ্য করা যায়। কোনো রকমের অভিষেক অনুষ্ঠানে (যেমন শ্বশুরবাড়িতে নববধূর প্রথম পদার্পণ) ব্রাহ্ম মুহূর্তে উনুনে বসানো দুধ উথলে উঠলে তা শুভ লক্ষণ বলে মনে করা হয়। আলতা মেশানো দুধের থালায় পা রেখেই শ্বশুরবাড়িতে নিজের যাত্রা শুরু করেন নতুন বউ।
আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের মতে, ফুলশয্যার রাত হলো স্বামী-স্ত্রীর প্রথম মিলনের রাত। সেই মিলনকে আরো আনন্দময় ও স্মরণীয় করে রাখতেই দুধ পান করেন বর। প্রাচীন আয়ুর্বেদ গ্রন্থ ‘অষ্টাঙ্গ সংগ্রহে’র ‘ক্ষীর বর্গ’ নামক অধ্যায়ে বলা হচ্ছে, দুধ হলো ‘বৃশ্য’ বা কামোদ্দীপক, অর্থাত্ কামেচ্ছা ও কামশক্তি বৃ্দ্ধি করতে সহায়ক। এবং এই বৃশ্য কেবল পুরুষ শরীরেই কার্যকর হয়। কারণ দুধ পুরুষ শরীরের শুক্র ধাতুকে উজ্জীবিত করে। কিন্তু সাধারণভাবে শরীর শীতল হয় দুধের প্রভাবে। ফলে মিলনের মুহূর্তগুলো দীর্ঘস্থায়ী ও আনন্দময় হয়ে ওঠে। এই আয়ুর্বেদিক পরামর্শ মেনেই প্রাচীনকাল থেকে ফুলশয্যায় বরের দুধ খাওয়ার রীতি চলে আসছে।
এই রীতির পিছনে রয়েছে সঙ্গত বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা। বিবাহের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হওয়ার পর ক্লান্তি আসা স্বাভাবিক। কেশর, হলুদ, পেস্তা বাদাম মেশানো দুধ দম্পতির দেহে এনার্জি জোগাড়। বাদাম ও দুধ উভয়েই প্রোটিন সমৃদ্ধ হওয়ায় মানবদেহে শক্তি প্রদান করে। তাছাড়া দুধে কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট, খনিজ উপাদান, ভিটামিন, অ্যামাইনো এসিড ও স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে। দুধের ৩.৪ শতাংশ থাকে প্রোটিন এবং দুধের প্রোটিনের ৭০-৮০ শতাংশই হলো ক্যাসেইন। এছাড়াও আছে হোয়ে প্রোটিন, অ্যালবুমিন, গ্লোবিউলিন, ল্যাকটোফেরিন।
জাফরান মেশানো এই দুধে থাকে উচ্চ মাত্রায় প্রোটিন যা দেহের সেক্স হরমোনগুলোকে উদ্দীপিত করে। টেস্টস্টেরন, ইস্ট্রোজেনের ক্ষরণ বৃদ্ধি পায়। প্রথম রাতে স্বামী- স্ত্রীর মধ্যে মিলনের ইচ্ছা বাড়াতেই এমন রীতি চলে আসছে৷
মানুষের টেস্টোস্টেরন ও ইস্ট্রোজেন নামক হরমোনের ক্রিয়ায় প্রভাব ফেলে দুধের প্রোটিন, পাশাপাশি দুধে মেশানো কেশর। তাছাড়া বাদামে আছে ওমেগা-৩ ও জিংক যা সেক্সুয়াল ফাংশন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। দুধে থাকে ট্রিপ্টোফ্যান নামক অ্যামাইনো এসিড যা সেরেটোনিন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। সেরেটোনিন হরমোন নব-দম্পত্তির মেজাজ, অনুভূতি, আনন্দ ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করে। সেরেটোনিনকে হ্যাপি হরমোনও বলা হয়। তাছাড়া বাদাম ও হলুদ মেশানো দুধ মানবদেহের তাপমাত্রা কমিয়ে সতেজ থাকতে সাহায্য করে। ফুলসজ্জায় বহু প্রচলিত দুধ খাওয়ার রীতির পিছনেও আছে বিজ্ঞান। সূত্র: আনন্দবাজার
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।