জুমবাংলা ডেস্ক : আলোচিত নুসরাত হ’ত্যা মামলার রায় ঘোষণার পর ফেনীতে আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করেছে তার স্বজন-সহপাঠি ও শুভাকাঙ্খিরা।
বৃহস্পতিবার দুপুরে শহরের ট্রাংক রোড় চত্বরে মিষ্টি বিতরণ শেষে একটি আনন্দ মিছিল বের হয়। মিছিলটি শহরের কয়েকটি সড়ক প্রদক্ষিণ করেন।
এ সময় মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা অল্প সময়ের মধ্যে নুসরাত হ’ত্যা মামলার রায় ঘোষণায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। রায়ের মতো তা কার্যকরেরও দাবী জানান তারা।
এর আগে বৃহস্পতিবার বেলা পৌনে ১১টায় বহুল আলোচিত মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হ’ত্যা মামালায় অভিযুক্ত ১৬ আসামির মৃ’তুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মামুনুর রশিদ একই সঙ্গে তাদের প্রত্যেককে ১ লাখ টাকা করে জরিমানা করেন।
রায় ঘোষণার সময় কাঠগড়ায় থাকা আসামিরা নিস্তব্ধ হয়ে রায় শোনেন। পরে তারা অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলাসহ আসামি হাউমাউ করে কেঁদে নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন।
মিছিলে অংশ নেয়া ফেনী শহরের ব্যবসায়ী আবুল কামাল আজাদ বলেন, এমন রায় আমি আমার বয়সে কখনো শুনিনি। রায়ের আদেশ শুনতে আদালত চত্বরে সকাল থেকে অবস্থান করছি। রায় শুনে বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে আমিও আনন্দ মিছিলে অংশ নিয়েছি।
হোটেল কর্মচারী নিজাম উদ্দিন বলেন, আজ কাজে না গিয়ে ছুটি নিয়ে সোনাগাজী থেকে ফেনীতে আসলাম। ঘটনার দিনও আমি সোনাগাজীতে ছিলাম। নুসরাতের ক্ষতবিক্ষত দেহ আমি নিজ চোখে দেখেছিলাম। আমি এমন একটা রায় হবে আশা করেছিলাম। আল্লাহ আমার আশা পুরণ করেছে।
ফেনী সরকারি জিয়া মহিলা কলেজের ছাত্রী আকলিমা আক্তার ও ফেনী সরকারি কলেজের অনার্স বর্ষের ছাত্রী তহুখান বলেন, কলেজ না থাকলেও নুসরাত হ’ত্যা মামলার রায় হওয়ার সংবাদ শুনে আমরা সোনাগাজী থেকে কলেজে আসছি। রায় শুনে অনেক খুশি হলাম। আমরা নারী সমাজ এ রায় দ্রুত সময়ের মধ্যে কার্যকরের দাবি করছি।
একই সঙ্গে ফেনীর সর্বস্তরের শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে তারা বলেন, প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে বলেছিলেন অতি অল্প সময়ের মধ্যে আলোচিত নুসরাত হ’ত্যা মামলার রায় হবে। তিনি কথা রেখেছেন। তাই নারী সমাজ তার কাছে কৃতজ্ঞ।
সোনাগাজী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ বলেন, এ রায়ের মধ্যে দিয়ে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হয়েছে বলে মনে হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আন্তরিকভাবে বিষয়টি তদারকি করেছেন। তাই ৬১ কার্য্য দিবসের মধ্যে মামলার বিচার কাজ শেষ হয়েছে।
তিনি জানান, আজ কলেজে শিক্ষার্থীরা হাজির নেই। অনেক শিক্ষার্থী আলোচিত মামলার রায় শুনতে ফেনীর আদালত ক্যাম্পাসে গিয়েছেন। কলেজের ক্লাস বন্ধ ছিল।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা অন্যরা হলেন- নূর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, সোনাগাজী পৌরসভার কাউন্সিলর মাকসুদ আলম, সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের, জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন জাবেদ, হাফেজ আবদুল কাদের, আবছার উদ্দিন, কামরুন নাহার মনি, উম্মে সুলতানা ওরফে পপি ওরফে তুহিন ওরফে শম্পা ওরফে চম্পা, আবদুর রহিম শরীফ, ইফতেখার উদ্দিন রানা, ইমরান হোসেন ওরফে মামুন, মোহাম্মদ শামীম, মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সহসভাপতি রুহুল আমীন ও মহিউদ্দিন শাকিল।
প্রসঙ্গত, সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী ছিলেন নুসরাত জাহান রাফি। মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলা নিজ কক্ষে ডেকে নিয়ে তাকে যৌন হয়রানি করেন।
এ ঘটনায় রাফির মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে ২৭ মার্চ সোনাগাজী থানায় মামলা দায়ের করেন। এরপর অধ্যক্ষকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে মামলা তুলে নিতে বিভিন্নভাবে রাফির পরিবারকে হুমকি দেয়া হয়।
৬ এপ্রিল সকাল ৯টার দিকে আলিম পর্যায়ের আরবি প্রথম পত্রের পরীক্ষা দিতে ওই মাদ্রাসার কেন্দ্রে যায় রাফি। এ সময় বোরকা পরিহিত কয়েকজন তাকে পাশের বহুতল ভবনের ছাদে ডেকে নিয়ে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মামলা তুলে নিতে চাপ দেয়। রাজি না হলে রাফির গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেয় তারা।
এতে রাফির পুরো শরীর দগ্ধ হয়। ১০ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে মারা যায়। এ ঘটনায় নুসরাতের বড় ভাই বাদী হয়ে ৮ এপ্রিল সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন।
রাফি হ’ত্যা মামলায় পুলিশ ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলাসহ ২১ জনকে বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেফতার করে। পরে ২৯ মে ১৬ জনকে আসামি করে ৮০৮ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র দাখিল করে পিবিআই।
চার্জশিটভুক্ত ১৬ আসামির মধ্যে ১২ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
৩০ মে মামলাটি ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়। ১০ জুন আদালত মামলাটি আমলে নিলে শুনানি শুরু হয়। ২০ জুন অভিযুক্ত ১৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন বিচারিক আদালত।
২৭ ও ৩০ জুন মামলার বাদী মাহমুদুল হাসান নোমানকে জেরার মধ্য দিয়ে বিচারকাজ শুরু হয়। এরপর ৯২ সাক্ষীর মধ্যে ৮৭ জন সাক্ষ্য দেন আদালতে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।