জুমবাংলা ডেস্ক : ফেনীর পরশুরামে প্রায় ২০০ কোটি টাকা খরচ করে আলিশান বাড়ি বানিয়েছিলেন ফেনী-১ আসনের সাবেক এমপি আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা সেই বাড়ির জড়ো হতে থাকে। পরে রাতে সেখানে মানুষের ঢল নামে। একপর্যায়ে সেখানে গেট ভেঙে বাড়িতে ঢুকে পড়ে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। তাদের অনেককে দরজা-জানালা খুলে ফেলতে দেখা যায়। এসময় জানালার কাচ ভেঙে ফেলা হয়। অনেককে ভবনের ইট খুলে নিতেও দেখা যায়। পরে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা সেখানে আগুন দেয়।
নাসিমের বাড়ি সীমান্তবর্তী উপজেলা পরশুরাম পৌরসভার গুথুমা গ্রামে, যার তিন পাশে সীমান্ত। তার নেতৃত্বে এই সীমান্ত দিয়ে ভারতের ত্রিপুরা থেকে অবৈধভাবে মাদক, ফেন্সিডিল, গরু, শাড়িসহ বিভিন্ন ধরনের পোশাক আসে বাংলাদেশে। আর বাংলাদেশ থেকে পাচার হয় স্বর্ণ। ২০০৯ সাল থেকে শেখ হাসিনার প্রটোকল অফিসার পদবি ব্যবহার করে প্রশাসনে বদলি, পদায়ন থেকে শুরু করে বিনা টেন্ডারে কাজ পাইয়ে দেওয়া, বিদ্যুৎ কোম্পানির লাইসেন্স করে দেওয়ার কাজ শুরু করে আলাউদ্দিন নাসিম। বালুমহাল, টেন্ডার বাণিজ্য, সালিশ বাণিজ্য, নিয়োগ বাণিজ্য ও সীমান্ত থেকে চোরাকারবার চলত তার নির্দেশে। তিনি মিস্টার টোয়েন্টি পার্সেন্ট হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন দেশব্যাপী। তাকে ২০ পার্সেন্ট কমিশন না দিলে কোনো টেন্ডারই পেত না ব্যবসায়ীরা। প্রকল্পের কাজ শুরুর আগেই তিনি বুঝে নিতেন তার কমিশনের টাকা। বিভিন্ন সময় দুর্নীতির কারণে অনেকেই ধরা পড়লেও সব সময় অন্তরালে থেকে গেছেন দুর্নীতির বরপুত্র খ্যাত আলাউদ্দিন নাসিম।
আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম এক সময় ছিলেন ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার প্রটোকল অফিসার। এই পরিচয়ে তিনি সারাদেশে গড়ে তোলেন অপরাধের নেটওয়ার্ক। এমন কোনো অপরাধ নেই যার সাথে জড়াননি নারী লিপ্সু ও চরিত্রহীন নাসিম। বিগত হাসিনা সরকারের আমলে আঙ্গুল ফুলে বনে গেছেন কলা গাছ। করেছেন অঢেল সম্পদের পাহাড়। আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম একজন চরিত্রহীন লম্পট। অনেক নারীকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে নিয়ে যেতেন দেশের বাইরে। এক নাসিমেরর লালসার শিকার শতাধিক নারী। তার খপ্পরে পড়ে ও প্রতারণার শিকার হয়ে অনেক নারী সর্বশান্ত হয়ে পথে বসেছেন। লোক লজ্জায় নারীরা তাদের এই বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে জানাতে পারেননি। কারণ, স্বামী-সন্তান’সহ সামাজিক মর্যাদার কথা বিবেচনা করে। আর এই সুযোগেই লম্পট আলাউদ্দিন নাসিম নিজের যৌন স্বার্থ চরিতার্থ করেন। ১৭ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার পুলিশ মহাপরিদর্শক ও ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারের কাছে পৃথক লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন জিনাত রিজওয়ানা নামে এক যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী নারী।
এদিকে, জ্ঞাত আয়বহির্ভূত হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ অর্জন ও বিদেশে পাচারের অভিযোগে ফেনী-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিমের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ করা হয়েছে। ২০১৪ সালের ২০ মে ফেনী শহরের একাডেমি এলাকায় গাড়িতে ফুলগাজী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি একরামুল হককে প্রকাশ্যে হত্যা করা হয়। হত্যাকাণ্ডটি আলাউদ্দিন নাসিমের পরিকল্পনা অনুযায়ী হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয় অভিযোগে। বিদ্যুৎ খাতে মাফিয়া সিন্ডিকেটের গডফাদার আলাউদ্দিন নাসিমের হাত ধরে দেশে গত সাড়ে ১৫ বছরে বেসরকারি বিদ্যুৎ খাতে মহালুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। পতিত শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠজন হওয়ায় বিনা পুঁজিতে ব্যবসায়িক পার্টনার হয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের প্রকল্প থেকে বিদেশে পাচার করেছেন হাজার হাজার কোটি টাকা।
৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আলাউদ্দিন নাসিম আত্মগোপনে চলে যান। বর্তমানে তারা ভারতে আছেন বলেন জানা গেছে। ফেনীর পরশুরামে ৩০ একর জায়গায় ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত করা হয় আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম কলেজ। জোরপূর্বক ও ভয় দেখিয়ে নামমাত্র মূল্য পরিশোধ করে কলেজের জন্য কৃষিজমির জায়গা দখল করে নেওয়া হয়। ফিল্মিস্টাইলে লাল কাপড় লাগিয়ে এস্কেভেটর দিয়ে শুরু করেন মাটি কাটা। লাল পতাকা টাঙানোর পর বলা হতো, এই জমিগুলো অধিগ্রহণ করা হচ্ছে। পরে দেখা যায়, অধিগ্রহণ নয়, মানুষ জানতে পারেন দখল করা হয়েছে। নাসিম কলেজের নামে কয়েক বিঘা জমি জোর করে দখল করে নেন। আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিমের জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অনুসন্ধান করে তাকে আইনের আওতায় আনতে দুদক চেয়ারম্যানের হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।