জুমবাংলা ডেস্ক : ডলার সংকট নিরসন ও দাম কমাতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কিন্তু তারপরও নিয়ন্ত্রণে আসছে না। বরং কয়েকদিন বিরতি দিয়ে ফের বাড়ছে মার্কিন ডলারের দাম।
রোববার (১১ সেপ্টেম্বর) কার্ব মার্কেট বা খোলা বাজারে নগদ এক ডলার কিনতে গ্রাহকদের গুনতে হচ্ছে ১১৪ টাকা থেকে ১১৪ টাকা ৫০ পয়সা। যেখানে গত সপ্তাহেও এক ডলার ছিল ১০৮ থেকে ১০৯ টাকা। রাজধানীর বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংক এক্সচেঞ্জ হউজ ও ডলার কেনাবেচার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।
মতিঝিল দিলকুশা এলাকায় খুচরা ডলার কেনা-বেচা করেন কবির আহম্মেদ। তার কাছে আজকের কেনাবেচার তথ্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, গত বুধ-বৃহস্পতিবার থেকে বাজার ফের ঊর্ধ্বমুখী। বৃহস্পতিবার ১১৩ টাকা বিক্রি করেছি। আজ বিক্রি করছি ১১৪ টাকায়। আর কেউ আমাদের কাছে ডলার বিক্রি করতে এলে তাকে দিচ্ছি প্রতি ডলার ১১৩ টাকা।
তিনি জানান, গত মাসের শেষ দিকে ডলার ১০৮ টাকায় নেমে আছে। ওই দামেই গত সপ্তাহ পর্যপ্ত বিক্রি হয়েছে। কিন্তু এখন আবার বাজার চড়া।
মতিঝিল পাইওনিয়র এক্সচেঞ্জ হাউজে ডলারের দাম জানতে চাইলে দায়িত্বরত কর্মকর্তা জানান, আজকে ১১৪ টাকা ২০ পয়সায় বিক্রি করছি। আর ১১৩ টাকা ২০ থেকে ৫০ পায়সায় কিনছি। একই রেটে ডলার কেনাবেচা করছে রাজধানীর গুলশান এলাকার মানিচেঞ্জার প্রতিষ্ঠানগুলো।
তবে মানিচেঞ্জার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি এ কে এম ইসমাইল হক বলেন, দাম তেমন বাড়েনি। আমরা আজ ১০৬ টাকায় কিনছি এবং ১০৭ টাকা ৫০ পয়সা বিক্রি করছি।
অনেকে ১১৩ থেকে ১১৪ টাকায় বিক্রি করছে, এটা কেন জানতে চাইলে মানিচেঞ্জারদের এ নেতা বলেন, যারা বৈধ তারা বাজারের চেয়ে বেশি দামে ডলার বিক্রি করে না। আমরা যেটা বলেছি এ রেটেই কেনাবেচা করছি।
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেও ডলার বাজারের সংকট কমেনি। এবার ঠিক হয়েছে ব্যাংকগুলো নিজেই ডলারের দাম নির্ধারণ করবে। গত বৃহস্পতিবার অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) ও বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ অথরাইজড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে এ বিষয়ে একমত পোষণ করেন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ব্যাংকগুলো নিজেই ডলারের দাম নির্ধারণ করবে। রেমিট্যান্স বা প্রবাসী ও রপ্তানি আয়, আমদানি বিল নিষ্পত্তিসহ প্রতিটি লেনদেনে ডলারের দাম হবে পৃথক। তবে ব্যাংকগুলো একই দামে ডলার কেনাবেচা করবে। আর কেনাবেচায় মুনাফা হবে সর্বোচ্চ ১ টাকা।
ডলারের এই দাম নিয়মিত ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানাবে ব্যাংকগুলো। নিয়ন্ত্রণ সংস্থা তা পর্যবেক্ষণ করবে এবং নিয়মিত ব্যাংকগুলোর সঙ্গে তথ্যউপাত্ত বিনিময় করবে। ডলারের সংকট ও বাজারের অস্থিরতা কাটাতে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে সোমবার অথবা মঙ্গলবার।
আমদানি বেড়ে যাওয়া ও আশানুরূপ প্রবাসী আয় না আসায় দেশে মার্কিন ডলারের চরম সংকট সৃষ্টি হয়। ফলে দিন দিন বাড়তে থাকে ডলারের দাম। অপরদিকে ডলারের বিপরীতে পতন হয় টাকার মান। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করেছে ৯৫ টাকা দরে। গত বছরের আগস্টে যা ছিল ৮৫ টাকা।
তবে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ৯৫ থেকে ৯৬ টাকা ডলারের মূল্য ঘোষণা দিলেও আদমানি পর্যায়ে ডলারের দাম নিচ্ছে ১০১ থেকে ১০৬ টাকা। আর নগদ ডলার বিক্রি করছে ১০৬ থেকে ১০৮ টাকা। খোলা বাজারে ডলারের দাম ১১৪ টাকা ৫০ পয়সা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। এর আগে দেশে খোলা বাজারে ডলার চলতি বছরের ১০ ও ১১ আগস্ট নগদ ডলার ১২০ টাকায় উঠেছিল।
এদিকে গত সপ্তাহে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভও ৩৭ বিলিয়নে নেমে এসেছে। এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নে (আকু) ১৭৩ কোটি ডলারের বিল পরিশোধের পর গত বৃহস্পতিবার রিজার্ভ কমে দাঁড়ায় ৩ হাজার ৭০৬ কোটি ডলার (৩৭ দশমিক ০৬ বিলিয়ন ডলার)। গত বছরের শেষের দিকে রিজার্ভ ৪ হাজার ৮০০ কোটি ডলার পর্যন্ত উঠেছিল।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।