জুমবাংলা ডেস্ক : গত কয়েক দিন ধরে একটু কমতির দিকে থাকলেও গতকাল সকাল থেকে দশটি নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। পদ্মা এবং ঢাকার চারপাশের নদীসহ উত্তরাঞ্চলের বড় নদীগুলোর পানি আরও বাড়তে থাকবে। এর মধ্যে ভারী বৃষ্টিপাত হলে দেশে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। সেক্ষেত্রে উত্তরের ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর ও সিলেট অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া উজানের ঢল অব্যাহত থাকায় হাওরাঞ্চলের সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উত্তরাংশেও বানের জল বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এদিকে দেশে বন্যার কারণে গত ১২ দিনে ৮৭ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
বুধবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের পর্যবেক্ষণে থাকা দশ নদীর পানি বেড়েছে বলে বলা হয়েছে। সংস্থাটির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আজকে পর্যন্ত পদ্মা এবং ঢাকার চারপাশের নদীসহ উত্তরাঞ্চলের বড় নদীগুলোর পানি বাড়তে থাকবে।
এদিকে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে সুনামগঞ্জের সুরমা, শেরপুর-সিলেট জেলার সীমান্তে কুশিয়ারা, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তিতাস, চাঁদপুরের মেঘনা, কুড়িগ্রামের ধরলা, গাইবান্ধার ঘাঘট, চকরহিমপুরে করতোয়া, চিলমারী ও নুনখাওয়ায় ব্রহ্মপুত্র, ফুলছড়ি, বাহাদুরাবাদ, সারিয়াকান্দি, কাজিপুর, সিরাজগঞ্জ ও আরিচায় যমুনা, বাঘাবাড়িতে আত্রাই, এলাশিনে ধলেশ্বরী, জামালপুরে পুরোনো ব্রহ্মপুত্র, গোয়ালন্দে, ভাগ্যকূলে ও সুরেশ্বরে পদ্মা নদীর পানি। এসব নদীতে পানি সর্বোচ্চ ১ থেকে ১৩০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
দেশে বন্যার কারণে গত ১২ দিনে ৮৭ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমারজেন্সি অপারেশন সেন্টার। জামালপুরের ২৯ জন বাদে গাইবান্ধা জেলায় ১৫ জন, নেত্রকোনায় ১৩ জন এবং টাঙ্গাইল ও সুনামগঞ্জ জেলায় পাঁচ জন করে মারা গেছে। লালমনিরহাট, নীলফামারী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, কুড়িগ্রাম, শেরপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া এবং ফরিদপুর জেলা থেকেও মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
এসব জেলায় সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে পানিতে ডুবে। এ ছাড়া সাপের কামড়, বজ্রপাতসহ কলেরায় ভুগেও বন্যাকবলিত এলাকায় মানুষ মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া বন্যাকবলিত জেলাগুলোতে পানিবাহিত বিভিন্ন রোগের ঝুঁকিও দেখা দিয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান বলেন, ‘গত কয়েক দিনে দেশের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও গতকাল থেকে মধ্যাঞ্চলের কিছু এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। ঢাকার আশপাশের কয়েকটি এলাকায় বানের জল বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও ঢাকায় বন্যা পরিস্থিতি কোনো প্রভাব ফেলবে না বলেই ধারণা করছি।’
তিনি বলেন, গত সোমবার থেকে ভারতের আসাম এবং পশ্চিম বাংলার উত্তরাংশে ভারী বৃষ্টি হওয়ায় তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র নদীর অববাহিকায় বন্যার পানি বাড়তে পারে। সেক্ষেত্রে ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর ও সিলেট অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উত্তরাংশের হাওর অঞ্চলেও বানের জল বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে দিন দুয়েক আগে উত্তরাঞ্চলের সবকটি নদীর পানি ঢাকার দিকে আসবে বলে আগাম সতর্কতা জারি করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। প্রতিষ্ঠানটি তার বলছে, বানের জল মধ্যাঞ্চল হয়ে সাগরের দিকে চলে যেতো, তবে গতকালের আসামের বৃষ্টির কারণে বন্যা পরিস্থিতি ক্রমশ অবনতির দিকে যাবে। এর মধ্যে যদি বাংলাদেশেও বৃষ্টি হয় তাহলে দেশের দুই-তৃতীয়াংশ এলাকা বানের জলে তলিয়ে যেতে পারে।
এদিকে বন্যা পরিস্থিতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলির মধ্যে জামালপুরের অবস্থা বেশ শোচনীয় বলে জানা গেছে। এখন পর্যন্ত এই জেলার ৭০টির মতো ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ২৬ হাজার হেক্টর ফসলী জমি এবং ৪ লাখ ৫০ হাজার গবাদি পশু। ১১২০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বন্যায় এ জেলার ১৩ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত ও পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। ফলে খাবারের অভাব, বিশুদ্ধ পানি এবং গো-খাদ্যের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। এ ছাড়াও এই জেলায় বন্যাকবলিত হয়ে এখন পর্যন্ত ২৯ জন মানুষ মারা গেছে। সূত্র- ঢাকা টাইমস
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।