২০১৯ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় বরগুনা সরকারি কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী তাহিরা খানম বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের অধীনে পরীক্ষায় অংশ নেন। বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের এইচএসসি’র ফল গত ১৭ জুলাই প্রকাশ হয়।
ওইদিন দুপুরে সরকারি মুঠোফোন অপারেটর কোম্পানি টেলিটকে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়ে তাহিরা জানতে পারেন তিনি জীববিজ্ঞান, রসায়ন ও উচ্চতর গণিতসহ ৩টি বিষয়ে ফেল করেছেন। প্রায় ৪ মাস পর এইচএসসি’র মার্কশিট উত্তোলন করে তাহিরা দেখতে পান তিনি কোনো বিষয়েই ফেল করেননি। তিনি জিপিএ-৩.৮৩ (এ-) পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন।
পরবর্তী শিক্ষাবর্ষ ২০২০ বছরের জন্য ফরম পূরণের পর তাহিরা জানতে পারেন তিনি কোন বিষয়েই অকৃতকার্য হননি! এমনকি মোট ফলাফলেও ফেল করেননি। তিনি পেয়েছেন জিপিএ-৩.৮৩ (এ-)। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার পর বরিশাল বোর্ডের নম্বরফর্দে (একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট) ৩.৮৩ (এ-) পেলেও তাতে সন্মান রক্ষা হয়নি সদ্য বিবাহিতা তাহিরা খানমের। বোর্ডের ফলে ফেল দেখানোয় শ্বশুড় বাড়িসহ নিজের পাড়া-মহল্লা এবং বন্ধু মহলে নানা তিরস্কারের শিকার হয়েছেন তিনি। যদিও কারিগরি ত্রুটির কারণে এমনটা হতে পারে বলে জানিয়েছেন বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর মো. আনোয়ারুল আজিম।
তাহিরার ভাই ইমন ফলাফলের বিষয়টি নিশ্চিত হতে গত ২২ ডিসেম্বর বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে গিয়ে বোনের ফল ফের পর্যালোচনা বা খতিয়ে দেখার জন্য অনুরোধ করেন।
চেয়ারম্যান তার রোল নম্বর নিয়ে তার নিজের মুঠোফোনে সার্চ দিয়ে তাহিরা ফেল করেছেন বলে জানান। এ সময় তাহিরার ভাই ইমন বোর্ডের মার্কশিটে উত্তীর্ণ হওয়ার প্রমাণ দেখালে চেয়ারম্যান বোর্ডের সিস্টেম এ্যানালিস্টকে ডেকে পাঠান। তিনি নিজেদের কিছু ভুলত্রুটির কথা জানান চেয়ারম্যানকে। এ সময় চেয়ারম্যান পরবর্তী ১৫ দিনের মধ্যে ভুল সংশোধন করে দেয়া হয়েছে বলে ইমনকে জানান। ওই সময়েও টেলিটকের ক্ষুদে বার্তায় তাহিরাকে ফেল দেখানোয় এ ভুলের দায় টেলিটকের ওপর চাপানোর চেষ্টা করেন বোর্ড চেয়ারম্যান। শেষ পর্যন্ত বোর্ড কর্তৃপক্ষের কোনো সদুত্তর না পেয়ে অফিস ত্যাগ করেন ইমন।
ভুক্তভোগী তাহিরা খানম পাথরঘাটা পৌর শহরের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের জাকির হোসেন খান ও সেলিনা খানম দম্পতির কন্যা সন্তান ও বরগুনা সরকারি কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী।
তাহিরার বড় ভাই ফেরদৌস খান ইমন জানান, আগামী এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে গত ১৭ ডিসেম্বর প্রায় ৩ হাজার টাকা খরচ করে আবারও বরগুনা সরকারি কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে ফরম পূরণ করে তাহিরা। ওই দিনই কলেজ থেকে ২০১৯ সালের এইচএসসির মার্কশিট (ট্রান্সক্রিপ্ট) উত্তোলন করে তাহিরা দেখতে পায় কোনো বিষয়েই সে ফেল করেনি।
বরগুনা সরকারী কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রফেসর আবদুস সালাম বলেন, ফল প্রকাশের সময় তাহিরাকে ফেল দেখেছি। এখন দেখছি পাশ। এটা বোর্ডের বিষয়। তবে বোর্ডের বিরুদ্ধে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।
বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর মো. আনোয়ারুল আজিম বলেন, টেকনিক্যাল মিসটেক হতেই পারে। ফল ঘোষণার ১৫ দিন পর ফের ফল সংশোধন করে দেওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ শিক্ষার্থী আবেদন করলে যাচাই-বাছাই করে সংশোধনী অনলাইনে দেয়া হবে বলে তিনি জানান। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নিজেও নবম বিসিএস পরীক্ষায় মিসটেকের শিকার হয়েছিলেন বলে জানান।
বরিশাল বোর্ড চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. ইউনুস বলেন, এই শিক্ষার্থী অন্য জায়গা থেকে ট্রান্সফার হয়ে এসেছে। এ জন্য কিছু তথ্য বিভ্রাট হয়েছে। টেলিটকের প্রকাশিত ফলে ভুল ছিলো। পরে সংশোধন করে রেজাল্ট দেয়া হয়। কিন্তু ওই শিক্ষার্থী কিংবা তার পরিবার কোনদিন কলেজে গিয়ে খোঁজ নেয়নি। এমনকি কলেজ কর্তৃপক্ষও ওই ছাত্রীর পরিবারকে বিষয়টি অবহিত করেনি। এখন সে যদি আগের ফলে (এ-) সন্তুষ্ট থাকে ভালো। না হলে সে মানোন্নয়ন পরীক্ষা দিতে পারে। ভুল হবে না এই গ্যারান্টি দেয়ার কোন সুযোগ নেই বলে জানান বরিশাল বোর্ড চেয়ারম্যান।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।