জুমবাংলা ডেস্ক : গাজীপুরে ইকবাল সরকার নামে একজন সাংবাদিক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। গতকাল শুক্রবার তার শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতির বিষয়টি জানতে পারেন তিনি। এর পর থেকেই তিনি আইসোলেশনে আছেন।
সাংবাদিক ইকবাল আজ ফেসবুকে অ্যাকাউন্টে তার চিকিৎসা, পরিবারের সদস্যদের নমুনা সংগ্রহ ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে অভিজ্ঞতার বিবরণ দিয়েছেন। সমাজের চিত্র তুলে ধরা এই মানুষটির অভিজ্ঞতা অনেকের বিবেককে নাড়া নিয়েছে।
আজ শনিবার বেলা ১১টায় তিনি ফেসবুক ওয়ালে তার অভিজ্ঞতার বিবরণ দেন। ফেসবুকে দেওয়া তার স্ট্যাটাসটি জুমবাংলাডটকমের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-
‘শরীরের পরিস্থিতি ভালো না হলেও আল্লাহর রহমত আর আপনাদের দোয়ায় অবনতির দিকে নয়, এটাই ভালো মনে করছি এখন। দয়া করে আপনারা আরও অনেক বেশি সতর্ক থেকে, সুস্থ থেকে, বেঁচে থাকার চেষ্টা করুন। সঙ্গে সঙ্গে করোনা মোকাবিলায় সরকারি ব্যবস্থাপনা আরও জোরদার করতে সবাই দাবি জানান।
আমার এই কদিন যা অভিজ্ঞতা হয়েছে- সরকারি ব্যবস্থাপনার ঘুম ভাঙে অনেক দেরিতে। অথচ আমার বাসার লোকজনের চোখে ঘুম নেই। আমি আক্রান্ত হয়ে যাওয়ার পর আমার বাসায় থাকা বৃদ্ধা শাশুড়ি, ক্যানসারের পেশেন্ট আমার স্ত্রী, একমাত্র ছেলে ও বাসায় থাকা এক ভাতিজির নমুনা সংগ্রহ করে নেওয়া হয়েছে ১৬ এপ্রিল। অথচ আমার ১৪ তারিখ রাতে পজিটিভ আসার পরপরই তাদের নমুনা পরীক্ষার কথা। এখানে তো কোনো প্রাইভেট হাসপাতাল নেই, যেখানে পরীক্ষা করা যাবে। তাই সরকারি ব্যবস্থাপনার ওপর নির্ভর করতে হয়।
যেহেতু সেদিন রাতে আমার রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে তাই সেদিন তো সম্ভব না পরের দিন ১৫ এপ্রিল নিলে ভালো হতো। ১৪ তারিখ রাতে যিনি সদরের দায়িত্বে আছেন তিনি জানিয়েছেন পরদিন ১৫ তারিখ তাদের নমুনা নেবেন। পরদিন আমি ওই ভদ্রলোককে সকাল থেকে কয়েকবার ফোন দিয়েছি, তাদের অনেক ব্যস্ততা, দুপুর পর্যন্ত কেউ স্যাম্পল নিতে আসার সময় পাননি, আগের রাত ১টা পর্যন্ত তারা কাজ করেছেন।
দুপুরের পর অফিসের লোকজন আমার বাসায় আসবেন পরিবারের লোকজনের নমুনা নিতে যখন উনি এটা জানিয়েছেন, তখন আমি উনাকে বলেছি, তাহলে আর আজকে দরকার নাই, কারণ আজ দুপুরের পর তো আর পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠাবেন না। তিনিও জানালেন হ্যাঁ, আজ আর ঢাকায় পাঠানো সম্ভব হবে না। তাহলে আর আজ স্যাম্পল নিয়ে লাভ কি, কাল ফার্স্ট টাইমে এসে নিয়ে যেতে বলেন তাদের। ১৬ তারিখ ফার্স্ট টাইমে এসে স্যাম্পল নিয়ে গেছেন। এর মাঝে কিন্তু কেটে গেল একটা দিন। ১৬ তারিখের পর ১৭ তারিখ রিপোর্ট আসার অপেক্ষায়। রাত, অনেক রাত পর্যন্ত আত্মীয়-স্বজনরা ফোন দিয়েছেন রিপোর্ট কী? বন্ধুবান্ধব জানতে চেয়েছেন। আমিও বিকেলের পর থেকে সদরের ওই কর্মকর্তাকে ফোন দিয়ে জানতে চেয়েছি, রাত পর্যন্ত।
দিনভর কয়েকবার ফোন দেওয়ার পর বন্ধু প্রকৌশলী ইব্রাহিম খলিল রাত ১১টার পরও তাদের ফোন দিয়ে জানতে চেয়েছেন রিপোর্ট কী? উত্তর দিতে পারেনি। রিপোর্ট আসেনি। আজ ১৮ এপ্রিল সকালে ৯টার পরপরই কর্মকর্তাকে ফোন দিলাম রিসিভ করতে পারেননি। ১০টার দিকে আবারও ফোন দিলাম রিসিভ করে জানান এখনো তিনি রিপোর্ট পাননি। হয়তো সিভিল সার্জন অফিসে এসেছে, পেলে জানাবেন। তাহলে এখন আমার জানার উপায় কী? সিভিল সার্জন সাহেবের কি ফোন ধরার তেমন সুযোগ আছে? আর থাকলেই কি, উনিতো হোম কোয়ারেন্টিনে।
এবার আমার রিপোর্ট পাওয়ার একটু অভিজ্ঞতা জানাই। সিভিল সার্জন অফিসের আমজাদ ভাইয়ের সহায়তায় ১৩ তারিখ সকাল ৯টার দিকে নমুনা দিতে এসেছি সদরে। ওনারা জানিয়েছেন সাধারণত রিপোর্টের পরদিন। পরদিন দুপুর গড়িয়ে বিকেল, বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা। সিভিল সার্জন, ওনার অফিসের স্টাফ, সদর কর্মকর্তা কতজনকে যে ফোন দিতে দিতে অস্থির হয়ে গেলাম। উত্তর পাই না।
সিভিল সার্জন বললেন, দেখছি, জেনে আপনাকে জানাবো। মাগরিবের নামাজে দাঁড়াতে গেলাম এমন সময় আমাদের কাপাসিয়ার সহকর্মী সাংবাদিক মজিবুর রহমান জানালেন, কাপাসিয়ায় ইকবাল আর ছায়াবিথির ঠিকানা দিয়ে একজনের পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে।
স্যাম্পল দিলাম গাজীপুরে, আসল কাপাসিয়ায় বুঝলাম না। গাজীপুর থেকে না জানতে পারলে কি, মনে জানান দিয়েছে ওটাই আমি। এর প্রায় ঘণ্টা খানেক পর সদরের ওই কর্মকর্তা আমাকে নিশ্চিত করেছেন, যে আমি করোনা পজিটিভ।
এই ব্যবস্থাপনার চিত্র জানলে আপনারা আরও বেশি সতর্ক হবেন উপকৃত হবেন বলে জানালাম। কারও মনে দুঃখ দেওয়ার জন্য নয়, আঘাত করার জন্য নয়, কোনোভাবে হেয় করার জন্য নয়। আপনারা সবাই ভালো থাকুন, আমার পরিবারের লোকগুলোর জন্যও দোয়া করুন।’
ইকবাল সরকার গাজীপুরের ৭১ টেলিভিশন ও মানবজমিনের সাংবাদিক। করোনা শনাক্তের পর থেকেই তিনি নিজ বাসায় আইসোলেশনের আছেন। তার স্ত্রী ক্যানসারে আক্রান্ত। তার একটি মাত্র ছেলে। সর্বশেষ পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ছেলের শরীরেও আজ কোভিড-১৯ উপস্থিত নিশ্চিত হওয়া গেছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।