মলয় কুমার দত্ত, বাসস: মীনা’র বাবা অসুস্থ। ডায়াবেটিসের কারণে শারীরিক অন্যান্য সমস্যাও দেখা দিয়েছিল। ডায়াবেটিস এতো বেশী ছিল যে, তাকে প্রতিনিয়তই ইনসুলিন নিতে হতো। কিন্তু মহামারি করোনাভাইরাস রোধকল্পে সরকার ঘোষিত কঠোর বিধি নিষেধের কারণে তারা নিজ এলাকা কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার রতœাপালংয়ে আটকা পড়েন। এসময় মীনা তার বাবার ইনসুলিনও যোগাড় করতে পারছিলেন না।
বাবার শারীরিক অবস্থা তাকে দুঃশ্চিন্তায় ফেলে দেয়। এসময় হঠাৎ করেই তার মাথায় আসে বর্তমান সরকারের ডিজিটাল সেবা ই-কমার্স সার্ভিস- ‘ফোনে নিত্যপণ্য’র কথা। সাথে সাথে মীনা নিজে বাইরে না গিয়ে তার বাবার ইনসুলিন সরবরাহের জন্য অনুরোধ পাঠান।অনুরোধ পাওয়ার পরদিনই এক স্বেচ্ছাসেবী ওই সার্ভিস হতে রতœাপালংয়ের কোর্ট বাজার বড় ব্রিজের কাছে মীনা’র বাড়িতে ইনসুলিন নিয়ে হাজির হয়।
মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের বাস্তবায়নাধীন ও ইউএনডিপি এর সহায়তায় পরিচালিত এ্যাসপায়ার টু ইনোভেট (এটুআই)-এর একটি অনন্য উদ্যোগ ‘ফোনে নিত্যপণ্য’। আর এ উদ্যোগটিই মীনা’র কাছে প্রয়োজনের সময় হয়ে উঠেছে ঐশ্বরিক দান।
এটুআই’র ই-কমার্স প্লাটফর্মের প্রোগ্রাম অ্যাসিসটেন্ট শায়েলা কাদের বাসস’কে বলেন, দেশে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর ২০২০ সালের জুলাই মাসে একশপ এই ই-কমার্স প্লাটফর্মটি চালু করে। আর এই প্লাটফর্মের মাধ্যমে যেসব এলাকার জনগণ লকডাউনের আওতাভুক্ত সেসব এলাকার লোকরা শুধুমাত্র ৩৩৩ এবং ৩৩৩-৫ এক্্রটেনশনসহ তাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের জন্য ফোনের মাধ্যমে অর্ডার করতে পারেন।
এটুআই প্রকল্পের উদ্যোগ একশপ একটি ওয়ান স্টপ মার্কেট সার্ভিস যেখানে অধিকাংশই হচ্ছে স্থানীয় ই-কমার্স সাইট। এখানে সরবরাহকারী এবং ডিজিটাল লেনদানকারী সংস্থাগুলো সংযুক্ত আছে।
তিনি বলেন, এই লকডাউনের সময় জাতীয় হেল্পলাইন নেটওয়ার্কটি সাধারণ মানুষের সেবা করছে এবং ‘ফোনে নিত্যপণ্য’ পরিষেবা প্রদানের জন্য ফ্রন্ট-লাইন সরবরাহকারী এজেন্টদের সুবিধার্থেও দেশব্যাপী কাজ করছে।
শায়েলা বলেন, এই পরিষেবার মাধ্যমে তারা দিনের পর দিন হাজার হাজার সাধারণ মানুষকে সেবা প্রদান করছেন এবং সেবা প্রদানের মানও ধরে রেখেছেন। করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে অনেকেই ঘরের বাইরে যেতে পারছেন না। তাই তাদের নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের জন্য বেছে নিচ্ছেন ‘ফোনে নিত্যপণ্য’ সার্ভিসটি। ৩৩৩-৫ নাম্বারে ফোন করেই তারা পাচ্ছেন সেবা। বর্তমানে ঢাকার পাশাপাশি অন্যান্য জেলায়ও এই নাম্বারে ফোন করে সেবা নিতে পারছেন গ্রাহকরা।
কর্মজীবি মা আতিয়া লকডাউনের কারণে ঘরে বসেই অফিসের কাজ করছেন গত কয়েক মাস ধরে। তার মেয়ে আয়েশার জন্য যেসব খাবার দরকার তা কেনার জন্য বাইরেও যেতে পারছেন না। সেজন্য তিনিও বেছে নিয়েছেন ‘ফোনে নিত্যপণ্য’ সেবাটি। এই পরিষেবার মাধ্যমে আতিয়া তার সন্তানের জন্য যা কিছু দরকার তার সব কিছুই পেয়ে যাচ্ছেন দোরগোড়ায়।
আতিয়া বলেন, অর্ডার দেয়ার দিনই স্বেচ্ছাসেবী হাজ্জাজ মাহমুদ হাসান ধ্রুব গাজীপুরে তার বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছেন।
মাহমুদ হাসান ধ্রুব বাসসকে বলেন, দেশের মানুষকে এভাবে সেবা দিতে পেরে আমি নিজেকে ধন্য মনে করছি। আর এই সেবা প্রদানের মধ্যে রয়েছে অন্য রকমের এক আনন্দ। গাজীপুরের এক সরকারী কলেজে সম্মান তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ধ্রুব কোভিড-১৯ আক্রান্ত এমন অনেক পরিবারের কাছেও নিত্যপণ্য পৌঁছে দিয়েছেন। তিনি বলেন, আমরা সর্বোচ্চ সতর্কতা এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনেই এই সেবা দিয়ে থাকি।
এটুআই-এর হেড অব ই-কমার্স রেজোয়াউনুল হক জামী বলেন, বিভিন্ন ধরনের উৎসাহমূলক প্রচার-প্রচারণার কারণে সাধারণ মানুষ এই ই-কমার্স প্লাটফর্মের প্রতি ক্রমেই আগ্রহী উঠছে। আমরা সেবা গ্রহীতাদের কাছ থেকেও তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া পাচ্ছি। প্রতিদিন আমরা প্রায় ২৮০০ থেকে ৪০০০ ফোন কল পেয়ে থাকি। আর এর মধ্যে প্রায় ১৫০০ থেকে ২৫০০ মানুষ আমাদের সেবা গ্রহণ করছে।
তিনি বলেন, এসব সেবা গ্রহীতাদের মধ্যে বেশীরভাগ শহরের অথবা শহরের আশপাশে যেমন উপজেলা, সদর থানা এবং জেলা শহরের লোকজন। সেবাগ্রহীতাদের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রচার-প্রচারণার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান জামী।
এছাড়াও তারা ‘বাজার বন্ধু’ নামের একটি নেটওয়ার্ক উন্নয়নে কাজ করছেন, যার মাধ্যমে বেসরকারীভাবে পরিচালিত ই-কমার্স প্লাটফর্মগুলো স্থানীয় দোকান এবং উদ্যোক্তাদের সাথে যুক্ত হবে। এর ফলে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারাও উপকৃত হবেন এবং সেবাগ্রহীতারাও তাদের নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য পেয়ে যাবেন তাদের দোড়গোড়ায়।
তিনি বলেন, মূলত ¯œাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরাই এখানে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করছেন। তারা তাদের নিজস্ব এলাকায় বাইসাইকেলে অথবা পায়ে হেঁটে অথবা অন্য কোন যানবাহন ব্যবহার করে পণ্য পৌঁছে দিচ্ছেন মানুষের বাড়িতে। আর এই ডেলিভারী বাবদ তাদের নামমাত্র মূল্যে সার্ভিস চার্জ হচ্ছে ৫০ টাকা। কেউ কেউ এই চার্জ নিয়ে থাকেন। আবার কেউ কেউ বিনামূল্যেই সেবা প্রদান করছেন।
শায়েলা বলেন, প্লাটফর্মটি কাজ শুরুর পর থেকে গত এপ্রিল পর্যন্ত সর্বমোট ১,৯১,৯৬৯ টি ফোন কল রিসিভ করেছে। যার মধ্যে ১,২২,৯৭১ জন ফোন দাতাকে সেবা প্রদান করা হয়েছে।
তিনি বলেন, এ বছর ১,৩৮,৬৮২ টি ফোন কল রিসিভ করা হয়েছে, যার মধ্যে ৮৭৩৬৯ জনকে সেবা প্রদান করা হয়েছে। গ্রাহকরা ফেসবুক পেইজে ‘ফোনে নিত্যপণ্য’ এর মাধ্যমেও সেবা নিতে পারেন বলে জানান তিনি।
এই প্লাটফর্মে এ পর্যন্ত ৫ হাজারেরও বেশী স্বেচ্ছাসেবী কাজ করছেন এবং তাদেরকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে বলে জানান শায়েলা।
![](https://inews.zoombangla.com/wp-content/uploads/2024/03/34-5.jpg)
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।