জুমবাংলা ডেস্ক : সাভারের বংশী নদীর অবৈধ দখলদারদের তালিকা হাইকোর্টে দাখিল করেছে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন। প্রতিবেদনে কমিশন জানিয়েছে, বংশী (ধলেশ্বরী) নদীর ৩৯ দশমিক ৫৪ একর ভূমিতে কমবেশি ৮৫০টি বিভিন্ন প্রকার অবৈধ স্থাপনা রয়েছে। তবে দাখিল করা প্রতিবেদনটি সত্যায়িত করে (অ্যাফিডেভিট আকারে) দাখিল করার জন্য বলেছেন আদালত।
মঙ্গলবার (১২ জুন) বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে এই প্রতিবেদন উত্থাপন করা হয়। এরপর আদালত প্রতিবেদনটি অ্যাফিডেভিট আকারে দাখিল করার নির্দেশ দেন বলে জানিয়েছেন রিটকারী আইনজীবী বাকির হোসেন মৃধা।
দাখিল করা প্রতিবেদনে দেখা যায়, বংশী (ধলেশ্বরী) নদীর ৩৯ দশমিক ৫৪ একর ভূমিতে কমবেশি ৮৫০টি বিভিন্ন প্রকার স্থাপনা বিদ্যমান। স্থাপনাগুলোর মধ্যে ৫০টির অধিক ভবন দুই থেকে ছয়তলা বিশিষ্ট, প্রায় ১০০টি একতলা ভবন, প্রায় ৫০০টি আধাপাকা এবং কমবেশি ২০০টি টিনসেড স্থাপনা বিদ্যমান।
২০১৯ সালে একটি জাতীয় দৈনিকে ‘দখল-দূষণ শেষ বংশী নদী’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ পায়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ৬৫ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান গিলে খাচ্ছে রাজধানীর উপকণ্ঠের সাভারের বংশী নদী। এ নদীর বিরাট এলাকা প্রভাবশালীদের দখলে থাকলেও উদ্ধারে উদ্যোগ নেই। সরকারিভাবে নদী দখলদারদের ৬৫ জনের তালিকা প্রস্তুত করে নোটিশ দেওয়া হলেও তারা এতে কর্ণপাত করছেন না। বরং নদীর দুই পাড়ে সমান তালে চলছে দখল ও ভরাট। পাশাপাশি বিভিন্ন কল-কারখানার বর্জ্য নদীতে পড়ায় দূষণ বাড়ছে। নির্মাণ করা হচ্ছে অবৈধ স্থাপনা। নদীর মাটি কেটে বিক্রি করা হচ্ছে দেদারসে। এসব কারণে ভালো নেই সাভার উপজেলার ৪০ থেকে ৪২ লাখ বাসিন্দা ওই প্রতিবেদন সংযুক্ত করে হাইকোর্টে রিট করেন ব্যারিস্টার মো. বাকির হোসেন। ওই রিটের শুনানি নিয়ে রুলসহ আদেশ দেয় হাইকোর্ট। আদেশে বংশী নদী দূষণ ও অবৈধ দখলদারদের তালিকা করে একটি প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
এরপর সাভারের নামাবাজার এলাকায় বংশী নদী দূষণ ও অবৈধ দখলদারদের নিয়ে উচ্চ আদালতের দেওয়া আদেশ যথাযথভাবে প্রতিপালন ও অনুসারে প্রতিবেদন দাখিল না করায় গত বছর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) তলব করেন হাইকোর্ট। সিএস রেকর্ড অনুযায়ী সার্ভে করে প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য বলেছিলেন আদালত। এরই ধারাবাহিকতায় জাতীয় নদী কমিশন প্রতিবেদন দাখিল করে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, হাইকোর্ট বিভাগের রিট পিটিশন নং-১৩৩৪০/২০১৯ এর আদেশ মোতাবেক বংশী নদী সিএস রেকর্ড অনুসারে সীমানা চিহ্নিতকরণ প্রতিবেদন দাখিল করা হলো। এতে বলা হয়, হাইকোর্টের আদেশ অনুযায়ী সাভার উপজেলাধীন বংশী নদীর সাভার নামাবাজার এলাকার সিএস রেকর্ড অনুযায়ী সীমানা চিহ্নিতকরণের জন্য সমন্বয়ে জরিপ টিম গঠন করা হয়।জরিপ টিম গত ৫ মার্চ, ৬ মার্চ, ২ ও ৩ জুন সরেজমিনে পরিমাপ ও জরিপ করে। জরিপকাজ পরিচালনার সময় ৫ ও ৬ মার্চ জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের উপপ্রধান প্রমথ রনজন ঘটিক ও সহকারী পরিচালক মো. তৌহিদুর রহমান এবং ২ ও ৩ জুন উপপরিচালক মো. মাশফাকুর রহমান এবং সহকারী প্রধান সাকিব মাহমুদ উপস্থিত ছিলেন।
সাভার উপজেলায় প্রবাহিত বংশী নদীটি সিএস/এসএ রেকর্ডে ধলেশ্বরী নদী হিসেবে উল্লেখ রয়েছে এবং মৌজা নকশায় উহ্য ধলেশ্বরী নদী নামে লেখা আছে। সর্বশেষ আরএস রেকর্ডে ধলেশ্বরী নদীর সাভার অংশটুকু বংশী নদী হিসেবে নামকরণ করা হয় এবং সে অনুযায়ী নকশা ও রেকর্ড প্রস্তুত হয়েছে। সাভার বংশী নদীর পূর্বাংশের নামাবাজার অংশে দক্ষিণে সাভার পুলিশ স্টেশন হতে উত্তরদিকে বক্তারপুর খাল ও ব্রিজ পর্যন্ত তিন হাজার ১৬০ ফুট লম্বা এবং গড়ে ৫৪৫ ফুট প্রস্থ অংশ সাভার নামাবাজার হিসেবে পরিচিত। ওই জায়গায় মোট জমির পরিমাণ ৩৯ দশমিক ৫৪ একর, যা বংশী (সিএস/এসএ রেকর্ড অনুযায়ী ধলেশ্বরী) নদীর ভূমি। বর্তমানে প্রবাহিত নদীর পূর্বপাড়ে সিএস ম্যাপে উল্লিখিত বংশী (ধলেশ্বরী) নদীর ভূমি পরিমাণ করে বক্তারপুর ব্রিজ অংশে ২৭০ ফুট, নামাবাজার মধ্যাংশে ৪৫০ ফুট, ফোর্ট নগর ব্রিজের রাস্তা বরাবর অংশে ৬৬৬ ফুট, এর দক্ষিণে ৭৪০ ফুট এবং সর্ব দক্ষিণে সাভার পুলিশ স্টেশন বরাবর ৬০০ ফুট পাওয়া যায়। সিএস নকশা মোতাবেক সাভার নামাবাজার অংশে নদীর সীমানা চিহ্নিত করে সরেজমিনে লাল রং দিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে। চিহ্নিত অংশের নকশা অঙ্কন করে এবং সিএস রেকর্ড পরবর্তী এসএ এবং আরএস নকশা প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রস্তুতকৃত নকশায় সিএস রেকর্ড মোতাবেক বংশী নদীর পাড় লাল কালি দিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এর আগে সাভার উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আরএস রেকর্ড মোতাবেক ১ নং খাস খতিয়ানভুক্ত চার একর এবং নদী থেকে জেগে ওঠা প্রায় চার একর ভূমিতে অবস্থিত অবৈধ স্থাপনাসমূহ উচ্ছেদ করা হয়েছে। যা সভার উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ের এক স্মারকে গত বছরের ২৭ জুলাই অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে অবগত করা হয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।