জুমবাংলা ডেস্ক : অমর একুশে বইমেলায় নারীস্বাস্থ্য সুরক্ষার স্যানিটারি ন্যাপকিন বিক্রির কারণে দুটি স্টল বন্ধ করে দিয়েছে বাংলা একাডেমি। রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে স্টল দুটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। মেলা কর্তৃপক্ষ বলছে, বইমেলায় অনুমোদনহীন পণ্য বিক্রির জন্য স্টল দুটি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নারী ও শিশুস্বাস্থ্য সুরক্ষা পণ্যের ব্র্যান্ড ‘স্টে সেইফ’ বইমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে দুটি স্টল পরিচালনা করে আসছিল। মেলার শুরু থেকেই তারা স্টল চালিয়ে আসছে। রোববার স্টল দুটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
জানা যায়, বইমেলায় কেন ‘গোপন পণ্য’ বিক্রি করা হচ্ছে, সে নিয়ে আপত্তির ভিত্তিতে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠান প্রদর্শনী ও বিক্রি বন্ধ করে অন্য কোনও পণ্য সেখানে উপস্থিত করতে প্রাণ-আরএফএলকে চিঠি দেয়। এর ভিত্তিতে রোববার প্রতিষ্ঠানটি মেলা থেকে তাদের পণ্যটি তুলে নেয়।
বাংলা একাডেমি বলছে, ‘বই ছাড়া অন্যকিছু বিক্রির সুযোগ বইমেলায় নেই বিধায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে’, তবে চিঠির বিষয়ে তারা কিছু জানে না। আর ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে- বাংলা একাডেমির সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই তারা চিঠি দিয়েছে। আর ‘স্টে-সেফ’ নামে পণ্যের বিষয়ে এর উৎপাদক প্রতিষ্ঠান থেকে জানানো হয়- ‘মেলায় এটি কেবল বিক্রি করা হচ্ছিল, এমন নয়। ফ্রিও দেওয়া হচ্ছিল।’
রোববার ফেসবুকে চিঠিটি ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনার ঝড় ওঠে। চিঠিতে লেখা আছে, ‘প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের নারী ও শিশু স্বাস্থ্য সুরক্ষা পণ্য ব্র্যান্ড ‘স্টে-সেইফ’ বইমেলা প্রাঙ্গণে দুটি স্টল পরিচালনা করছে। ১১ ফেব্রুয়ারির পর কয়েক দফায় ন্যাপকিনকে গোপন পণ্য বলে আখ্যা দিয়ে এর প্রকাশ্য প্রদর্শনী বা বিক্রি বন্ধে দাবি ওঠে। পরপর কয়েকদিন অনেক মানুষ দলগতভাবে এসে এই দাবি জানিয়ে যায়। বাংলা একাডেমি, পুলিশ, আনসারসহ ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের ভলান্টিয়ারদের সহযোগিতায় পরিস্থিতি ঠান্ডা করা হয়। ১৩ ফেব্রুয়ারি স্টল দুটি খুলে দিলে কিছু গ্রুপ সরাসরি বাংলা একাডেমিতে অভিযোগ করে।’ এসব কারণে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে চিঠিটি দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করা হয়। এবং প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের ব্যবসায়িক স্বার্থকে বিবেচনায় রেখে ‘স্টল দুটি অন্য পণ্য (যেমন শিশু শিক্ষা সরঞ্জাম) দিয়ে প্রতিস্থাপনের অনুমতি দেওয়া যেতে পারে’ বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।
প্রাণ-আরএফএল প্রতিষ্ঠানটির অ্যাসিসট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার তৌহিদুজ্জমান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা চিঠিটি পেয়েছি। এটাকে কেন্দ্র করে কোনও ইস্যু হোক, তা আমরা চাই না। যেহেতু আপত্তি উঠেছে, সেহেতু আজকের মধ্যে আমরা ‘স্টে সেফ’ কর্নার সরিয়ে ফেলছি। তবে এই পণ্য আমরা সেখানে বিক্রির পাশাপাশি ফ্রি স্যাম্পলিং করতাম। অনেক নারী মেলায় আসে, তাদের প্রয়োজনীয়তার কথা ভেবে এটা করা হয়েছিল, এখন আমরা কুইট করছি।’
কিছু মানুষের দাবির ভিত্তিতে ন্যাপকিনের স্টল বন্ধের বিষয়ে বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ও বাংলা একাডেমির পরিচালক সরকার আমিনকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘বইমেলায় ডায়পার বা অন্যান্য পণ্য বিক্রি করা যাবে না। এটাতো আর বাণিজ্য মেলা না। এটা নিয়ে আমরা স্পন্সরকে বলেছি, আপনারা স্পন্সর করেছেন, ভালো। কিন্তু এসব পণ্য বিক্রি করা যাবে না। বই ছাড়া অন্যান্য পণ্য বিক্রির নীতিমালা নেই। চিঠির ব্যাপারে কিছু জানি না।’
এদিকে ভাইরাল হওয়া চিঠির কপিতে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম এর সই দেখা গেছে। সেখানে মহাপরিচালক লিখেছেন, ‘এই পরিস্থিতি সম্পর্কে আপনি ওয়াকিবহাল। অতিদ্রুত এ ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।’
গণমাধ্যমকে ওই চিঠির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন ডংকি ড্রিম’র পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী রাকিব হাসান।
তিনি বলেন, ‘বইমেলায় যেহেতু অনেক নারী আসেন। তাই নারীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়ে সচেতনতার কথায় মাথায় রেখে স্টলে স্যানিটারি ন্যাপকিন রাখতে আমরা আপত্তি জানাইনি। কিন্তু পরে কিছু মানুষ এটিকে ‘গোপন পণ্য’ উল্লেখ করে প্রতিবাদ জানায়। তাই অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে বাধ্য হয়ে আমরা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে ন্যাপকিন সরিয়ে নিতে অনুরোধ জানাই। পরে তারা তাদের পণ্য সরিয়ে নিয়েছে।’
বইমেলায় রোববার বিকেলে সরেজমিনে স্টল দুটি বন্ধ দেখা যায়। কালো কাপড় দিয়ে স্টল ঢেকে রাখা হয়েছে।
জানতে চাইলে বাংলা একাডেমির সচিব ও বইমেলা টাস্কফোর্স কমিটির প্রধান সেলিম রেজা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মেলায় অনুমোদন ছাড়া পণ্য বিক্রির জন্য স্টল দুটি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলা একাডেমি।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।