বিনোদন ডেস্ক : বছর বারো আগেই প্রথম ছবি ‘ধোবি ঘাট’-এই কিরণ রাও বুঝিয়ে দিয়েছিলেন প্রাক্তন স্বামী আমির খানের চাইতে সমাজ সচেতন ভাবনায় তিনিও কম দর নন। সেই বার্তা এতদিন পরও কিরণের দ্বিতীয় ছবি ‘লাপাতা লেডিজ’-এ (Laapataa Ladies) স্পষ্ট। জোরদার ভঙ্গিতে পরিচালক প্রমাণ করলেন, হাসি ও মজার মোড়কে তিনিও ছবি বানাতে আমিরের চাইতে এতটুকু পিছিয়ে নেই।
‘লাপাতা লেডিজ’। ছবিতে চেনা মুখ বলতে রবি কিষেণ। তাছাড়া সব্বাই নতুন মুখ। আর এঁদের নিয়েই কিরণ (Kiran Rao) জোরদার হাততালি পাওয়ার মতো ছবি বানিয়েছেন। চ্যাপলিনের মতো স্ল্যাপস্টিক নয়, এই ছবি বেশ নরম শ্লেষের সঙ্গেই চিত্রনাট্যে অনুপ্রবেশ ঘটিয়েছে আজকের সমাজে, নিম্নবিত্ত সংসারে নারীর স্থান কেমন ও তাঁদের নীরব যন্ত্রণা, মেনে নেওয়ার পুরুষতান্ত্রিক সবরকম রীতিনীতির বিরুদ্ধে এক বিনম্র প্রতিবাদ। বিপ্লব গোস্বামীর গল্প থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে কিরণ ও তাঁর দুই সহযোগী স্নেহা ও দিব্যানিধি সিনেমার সরল ভাষাতেই সাজিয়েছেন চিত্রনাট্য। যার পরতে পরতে রয়েছে সামাজিক সংসারের ছোট্ট পরিধিতে বিভিন্ন বয়সের নারীর সম্মান-অসম্মান, বিনা বাক্যে পুরুষের একাধিপত্য মেনে নেওয়ার জন্য নিজের বিরুদ্ধেও সমঝোতা।
আবার এই ছবিতেই কিরণ স্বামী পরিত্যক্তা মঞ্জু মাইয়ের (ছায়া কদম) চরিত্রে নারীর প্রতিবাদ ও মাতৃস্নেহের এক সুন্দর সহাবস্থানের দৃশ্যও তৈরি করেছেন। ছবির শুরুতেই সবে কৈশোর পেরোনো নববধূ ফুলের পতিগৃহে যাত্রার মুখে ভুল পদক্ষেপের জন্য বয়স্কার কাছ থেকে শুনতে হয়, “আগে নাহি, নিচে দেখকে চলনা শিখো!” সেই শিক্ষার পাঠ চলে পুরো ছবি জুড়ে। কিন্তু চিত্রনাট্যে কোথাও জবরদস্তি নেই, রয়েছে কমেডির সুরে ও স্বরে মজার মজার ঘটনার মাধ্যমে কিছু ডবল মিনিং সংলাপের ব্যবহার। ভিড়ে ঠাসা ট্রেনে দু-তিন জোড়া বর-বউ ওঠাতেই যত গন্ডগোল। কারণ ‘নির্মল প্রদেশ’ নামের একটি প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে আসা নতুন বউরা একহাত ঘোমটা টেনে চলতে অভ্যস্ত। বাইরের পুরুষের সামনে মুখ দেখানো তাঁদের নিয়মবিরুদ্ধ। আর সেই নিয়ম মানতে গিয়েই দীপক তার বউয়ের পরিবর্তে গাড়ি থেকে নেমে পড়ে জয়া নামের অন্য এক মহিলাকে নিয়ে।
বাড়ি ঢুকে বধূবরণের সময় ঘোমটা সরালে আবিষ্কার হয় এই বউ বদলের গপ্পো। হ্যাঁ, রবীন্দ্রনাথের ‘নৌকাডুবি’ গল্পের সঙ্গে কিঞ্চিৎ মিল লক্ষনীয় বটে, কিন্তু ওখানেই শেষ। বাকি গল্প ও ঘটনা এগোয় স্থানীয় থানার বড়বাবুর চমকদার উপস্থিতি ও তার বুদ্ধির খেলা নিয়ে। ছবির শাখা-প্রশাখা এবং নাটক তৈরি ও ভাঙার কাজ মসৃণভাবেই করেছেন কিরণ। সংলাপের ফাঁক ফোঁকর দিয়ে গুঁজে দিয়েছেন এই মুহূর্তে ভারতের প্রত্যন্ত গ্রামে নারীদের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির বাঁকা ও তীক্ষ্ণ ব্যঙ্গ-বিদ্রুপের কিছু কথা। সবচেয়ে ভালো লাগে যখন দীপক বাজারের একটি দোকানে গিয়ে নিজের বউ ফুলের ঘোমটায় ঢাকা একটি ছবি দেখালে দোকানি বলে ওঠে, “মানুষের পরিচয় তো তার মুখে, সেটাই ঢেকে রাখলে চিনব কী করে? সেই মুহূর্তেই দোকানির ঘরের ভিতর থেকে পর্দানশীন এক মহিলা তাকে খাবার দিয়ে যায়।
এরকম আরও কিছু দৃশ্যের উপস্থিতি পরিচালক কিরণ রাওয়ের মুনশিয়ানা বুঝিয়ে দেয়। প্রধান তিন মুখ স্পর্শ শ্রীবাস্তব(দীপক), নীতাংশি গোয়েল(ফুল) ও প্রতিভা রান্টা নিজেদের অভিনয়ের মাধ্যমে পরিচালককে দারুণ সহযোগিতা করেছেন। আর রবি কিষেণ তাঁর নিজস্ব কমিক স্টাইল দিয়েই থানার ঘুষখোর বড়বাবু হয়ে নজর কেড়েছেন। রাম সম্পতের আবহ ছবির মজারু মেজাজ ধরেই এগিয়েছে। “মোর সজনি রে, তুম বিন রাত কাটাইব ক্যায়সে” গানটি শুনতে ভালোই লাগে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।