জুমবাংলা ডেস্ক : প্রতিমা বিসর্জন উপলক্ষে শুক্রবার ধুনট পৌর এলাকার সরকারপাড়া গ্রামের ইছামতি নদীর তীরে এবারো বসেছিল ঐতিহ্যবাহী বউ মেলা। ৬৯তম এই বউ মেলায় প্রতি বছরের মতো এবারো ছিল ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড়। ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা আর নানা আনন্দ আয়োজনে দেবীদুর্গা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে এক দিনের এই বউ মেলার অনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়।
যুগ যুগ ধরে ধুনট সদরপাড়া, দাসপাড়া, কলেজপাড়া ও সরকারপাড়াসহ আশপাশের পূজামণ্ডপের প্রতিমা সরকারপাড়া ইছামতি নদীতে বিসর্জন দেওয়া হতো। প্রতিমা বিসর্জন ঘিরে দূরদূরান্ত থেকে হরেক রকমের দোকানিরা এসে ইছামতি নদীর তীরে পণ্যের পসরা সাজান। এসব দোকানগুলোকে ঘিরে মেলা বসতে শুরু করে।
তবে এ মেলায় শুধুমাত্র নারীরাই প্রবেশ করতে পারেন। মেলাটিতে পুরুষদের প্রবেশ ঠেকাতে প্রধান ফটকে নারী স্বেচ্ছাসেবীরা নিয়োজিত থাকেন। এ কারণে নারীরা স্বাচ্ছন্দ্যে কেনা-কাটা করতে পারেন। তাই যুগ যুগ ধরে এ মেলাটির নামকরণ হয়ে আসছে ‘বউ মেলা’ নামে। এ মেলাকে ঘিরে প্রতি বছর হিন্দু-মুসলিমসহ বিভিন্ন ধর্মের হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘটে।
তবে যুগ যুগ ধরে ইছামতি নদীতে ৫-৭টি মন্দিরের প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হলেও কেন্দ্রীয় নির্দেশনায় এ বছরই প্রথম শুধুমাত্র সরকারপাড়া মন্দিরের প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়েছে। প্রতিমা বিসর্জন ঘিরে শুক্রবার দুপুর ২টা থেকে দোকানিরা পসরা সাজিয়ে বসেন মেলায়। দুপুর গড়াতেই মেলায় সমাগম হতে থাকে হিন্দু-মুসলিমসহ বিভিন্ন ধর্মের হাজার হাজার মানুষের।
তবে মেলায় হিন্দু ধর্মাবলম্বী লোকজন আসেন ভক্তি আর মানত নিয়ে। কিন্তু অন্য ধর্মের লোকজন আসেন আনন্দ আর উৎসব করতে। দেবীদুর্গা ইহলোক ছেড়ে চলে যাওয়ার দৃশ্য দেখাই এ মেলার প্রধান আকর্ষণ। শুক্রবার বিজয়া দশমীতে সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে ঐতিহ্যবাহী ৬৯তম এই ‘বউ মেলার’ সমাপ্তি ঘটে।
মেলায় আগত ক্রেতা পপি রানী জানান, পার্শ্ববর্তী কাজিপুর উপজেলার সোনামুখী গ্রাম থেকে এসেছেন এই বউ মেলায়। মেলার ভিতরে কোনো পুরুষ লোক না থাকায় অনেক স্বাচ্ছন্দ্যে কেনাকাটা করেছেন এবং দামও কিছুটা কম ছিল।
মেলার দোকানি চাঁন মিয়া বলেন, রংপুর থেকে প্রতি বছরের মতো এবারো ধুনটের এই বউ মেলায় এসেছি। গত বছরের তুলনায় এ বছর বউ মেলায় ক্রেতাদের অনেক ভিড় ছিল। তাই বেচা-বিক্রিও ভালো হয়েছে।
ধুনট সরকারপাড়া পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি বাবু পার্থ কুমার সেন জানান, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিমা বিসর্জন উপলক্ষে প্রতি বছরের মতো এবারো ঐতিহ্যবাহী বউ মেলায় ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড় ছিল লক্ষ্যণীয়। তাই এই মেলা ও পূজা উদযাপনের জন্য ৩৫ সদস্যের স্বেচ্ছাসেবী কর্মী, পুলিশ ও আনসার ভিডিপির সদস্যরা নিয়েজিত ছিলেন।
ধুনট পৌরসভার মেয়র এজিএম বাদশা জানান, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে এই বউ মেলা। অনেক দূর-দূরান্ত থেকে আগত হিন্দু-মুসলিমসহ বিভিন্ন ধর্মের হাজার হাজার মানুষের সমাগমে মুখরিত হয় মেলা প্রাঙ্গণ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।