কূটনৈতিক প্রতিবেদক: জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের অংশ হিসেবে সিউলস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ প্রকাশনাটির কোরিয়ান ভাষায় অনুবাদের উদ্যোগ গ্রহণ করে।
তারই ধারাবাহিকতায় সিউলের লোটে হোটেলে বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) কোরিয়ান ভাষায় অনুবাদকৃত প্রকাশনাটির মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠিত হয়।
কোরিয়ান নাগরিক Lee Dong-heon এই প্রকাশনাটি কোরিয়ান ভাষায় অনুবাদ করেন যা কোরিয়ার প্রকাশনী সংস্থা Moraeal LLC-এর ব্যবস্থাপনায় অনলাইন প্ল্যাটফর্মে পাওয়া যাবে এবং দক্ষিণ কোরিয়ার স্থানীয় বইয়ের দোকান হতেও ক্রয় করা যাবে।
মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জনাব ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন, এম. পি. এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘরের কিউরেটর জনাব মোঃ নজরুল ইসলাম খান দুইটি পৃথক ভিডিও বার্তা প্রেরণ করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাঁর অভিনন্দন বার্তায় বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর এই আত্মজীবনীতে রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির পাশাপাশি মানবতাবাদ ও বিশ্ব শান্তির প্রতি তাঁর নিরবচ্ছিন্ন সমর্থন প্রতিফলিত হয়েছে।’
তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’-এর কোরিয়ান সংস্করণ দক্ষিণ কোরিয়ার বন্ধুভাবাপন্ন জনগণকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালির জীবন, তাঁর সার্বজনীন দৃষ্টিভঙ্গি ও দর্শন এবং বাংলাদেশের সৃষ্টিতে তাঁর অসামান্য অবদান সম্পর্কে জানবার এক অনন্য সুযোগ সৃষ্টি করবে।
কিউরেটর মোঃ নজরুল ইসলাম খান বলেন যে, ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ কেবল মাত্র একটি আত্মজীবনী নয়, এটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাসের এক অনবদ্য দলিল।
তিনিও আশা প্রকাশ করে বলেন, বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’-এর কোরিয়ান সংস্করণ কোরিয়ার জনগণকে দু’দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের অভিন্ন ইতিহাস সম্পর্কে ধারনা লাভ করতে সহায়তা করবে।
‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’-এর কোরিয়ান সংস্করণের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে দক্ষিণ কোরিয়ার জাতীয় সংসদের সদস্য Sul Hoon এবং দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এশিয়া ও প্রশান্ত ব্যুরোর মহাপরিচালক জনাব Lee Sangryol সম্মানিত অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন।
সংসদ সদস্য Sul Hoon তাঁর অভিনন্দনমূলক বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও নেতা হিসাবে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশী জনগণকে তাদের ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষা করতে এবং তাদের পূর্বপুরুষের ভূমিতে শান্তিতে বসবাসের সুযোগ করে দিয়েছিলেন। তাছাড়া, জাতির পিতা হিসাবে তিনি দেশকে পুনর্গঠন এবং গণতন্ত্র ও শান্তির উন্নয়নে অতুলনীয় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের এখনও একটি অসম্পূর্ণ ইতিহাস রয়েছে তা হলো- দুই কোরিয়ার শান্তিপূর্ণ পুনর্মিলন। একটি জাতির ঐক্য অর্জনে কি ধরণের আত্মত্যাগ, প্রতিশ্রুতি এবং নেতৃত্বের প্রয়োজন হয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন এবং বাংলাদেশের ইতিহাস থেকে আমাদের রাজনীতিবিদেরা তা জানতে পারবেন – যা তাদের অনুপ্রাণিত করবে’।
মহাপরিচালক Lee Sangryol তাঁর বক্তব্যে বঙ্গবন্ধুর বলিষ্ঠ, কূটনৈতিক ও ঐন্দ্রজালিক ব্যক্তিত্বের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর অহিংস দৃষ্টিভঙ্গির বার্তা বিশ্বব্যাপী শান্তিকামী মানুষের বিশেষতঃ কোরিয়ান জনগণের হৃদয়ে অনুরণিত হবে যারা ইতিহাসে এ ধরণের বিভিন্ন ঘটনার সম্মুখীন হয়েছেন।
তিনি দু’দেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার কথা উল্লেখ করে বলেন, ২০১৯ সালে কোরিয়ার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী লি-নাক-ইউন-এর বাংলাদেশ সফরের মধ্য দিয়ে এই সম্পর্ক আরো গতিশীলতা পেয়েছে, যেই সফরে তিনি একজন প্রতিনিধি হিসেবে অংশ নেন।
রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম তাঁর স্বাগত বক্তব্যে গভীর শ্রদ্ধার সাথে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-কে স্মরণ করেন। সেইসাথে, তিনি ত্রিশ লক্ষ শহীদ এবং সকল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান।
বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’-এর আলোকে, তিনি তাঁর বক্তব্যে বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত জীবন, তাঁর বর্ণাঢ্য ও ঘটনাবহুল রাজনৈতিক জীবন সম্পর্কে আলোকপাত করেন এবং এই প্রকাশনাটির কোরিয়ান সংস্করণ প্রকাশের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সকল ব্যক্তিবর্গ ও কর্তৃপক্ষকে তাদের ঐকান্তিক সহযোগিতা ও দিক নির্দেশনার জন্য গভীর কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, কোরিয়ান পাঠকরা এই বইটি হতে জাতির পিতার জীবনী এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারবে এবং দুই দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের অনুরূপ ইতিহাস ও অভিজ্ঞতা, বন্ধুপ্রতীম দুই দেশকে, আগামী দিনগুলিতে বন্ধুত্ব ও ভ্রাতৃত্বের একক সূত্রে আবদ্ধ করে রাখবে। তার মতে পৃথিবী এখনো যেহেতু নিপীড়িতদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য, একটি শান্তি ও ন্যায়পূর্ণ এবং সমৃদ্ধ বিশ্ব গড়ার জন্য লড়াই করছে, সুতরাং বঙ্গবন্ধুর দর্শন আজকের বিশ্বের জন্য এখনও প্রাসঙ্গিক ।
আবিদা ইসলাম আরো বলেন, কোরিয়ার মুক্তি সংগ্রামের সাথে বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামের সাদৃশ্য রয়েছে, তাই স্থানীয় পাঠকেরাও এই প্রকাশনার সাথে নিজেদের একাত্ম করতে পারবেন।
অনুষ্ঠানে বইটির প্রকাশকদের উপস্থিতিতে অনুবাদক Lee Dong-heon কে তার অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ একটি ক্রেস্ট উপহার প্রদান করা হয়।
এ সময় অনুবাদ কাজে সহায়তার জন্য ঢাকাস্থ আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটে কর্মরত প্রভাষক মিজ শিউলী ফাতেহার অবদানের কথাও স্মরণ করা হয়।
সম্মানিত অতিথিবৃন্দকে ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ এর কোরিয়ান সংস্করণ উপহার হিসেবে প্রদান করা হয়।
মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, কূটনীতিক, কোরিয়ান সরকার্রী ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিগণ, নাগরিক সমাজের সদস্যগণ, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রতিনিধিগণ এবং সিউলে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশীগণ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, সিউলস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস এর পূর্বে কোরিয়ান পাঠকদের জন্য বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ এবং -‘BANGABANDHU- THE PEOPLE’S HERO’ বইটিও কোরিয়ান ভাষায় অনুবাদ করে।
অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের গৌরবময় জীবন ও কর্মের উপর একটি সংক্ষিপ্ত চিত্র প্রদর্শনীরও আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে মুজিব বর্ষের উপর নির্মিত থিম সং সহ বাংলাদেশী শিল্পীদের এবং ক্ষুদ্র নৃ-ত্বাত্তিক গোষ্ঠীর সদস্যদের অংশগ্রহণে পূর্বে-ধারণকৃত সাংস্কৃতিক পরিবেশনা প্রদর্শণ করা হয়।
এছাড়া, অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের হস্তশিল্প এবং রফতানিযোগ্য পণ্যও প্রদর্শন করা হয় এবং আগত অতিথিদের ঐতিহ্যবাহী বাংলাদেশের খাবারে আপ্যায়ন করা হয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।