জুমবাংলা ডেস্ক: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) নানা আয়োজনে বিশ্ব ফুসফুস দিবস-২০২২ পালিত হয়েছে।
শনিবার সকাল সাড়ে ৯টায় (১৫ অক্টোবর) দিবসটি উপলক্ষে বার্ণঢ্য শোভাযাত্রা, বৃক্ষরোপণ ও গোল টেবিল বৈঠক আয়োজন করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগ। সকাল সাড়ে ৯টায় ডি ব্লক থেকে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা শুরু হয়ে সি-ব্লক প্রদক্ষিণ করে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে গিয়ে শেষ হয়। সি-ব্লকের সামনে পরিবেশ রক্ষাকারী বৃক্ষরোপণ করা হয় এবং শহীদ ডা. মিল্টন হলে একটি গোল টেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
এসব কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি হিসিবে বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ধূমপানের কারণে ফুসফুসের ক্যান্সারসহ নানা ধরণের রোগের সৃষ্টি হয়। ধূমপান বন্ধে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে হবে। আমাদের সব সময় মনে রাখতে হবে যে, ‘ধূমপান করব না, নিয়মিত শরীর চর্চা করব।’
তিনি বলেন, সুস্থ ফুসফুসের জন্য বিশুদ্ধ অক্সিজেনের প্রয়োজন। পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ অক্সিজেন নিশ্চিত করতে বেশি করে গাছ লাগাতে হবে। এজন্য বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে আরো বেশী তৎপর হতে হবে। ফুসফুসের রোগ বিষয়ে গবেষণা কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। এজন্য এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে। বিশেষত জনগণের স্বাস্থ্যসেবায় কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের স্বার্থে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। ভবিষ্যতে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাডাভেরিক লাং ট্রান্সপ্ল্যান্টের উদ্যোগে নেয়া হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বক্ষব্যাধি বিভাগে স্লিপ এ্যাপনিয়া রোগের পরীক্ষা করা হয়, যা সচেতনতার জন্য মানুষকে জানাতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, বর্তমানে দেশের স্বাস্থ্যখাত মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে উল্লেখযোগ্য সফলতা লাভ করেছে। তবে বঙ্গবন্ধুই স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার উন্নয়নের ভিত্তি গড়ে গেছেন। তিনি বলেন, জীবনের জন্য সুস্থ ফুসফুস কতটা জরুরি তা করোনা মহামারী বিশ্ববাসীকে বুঝিয়ে দিয়েছে। তিনি আরো বলেন, ধূমপান শুধু ফুসফুসের ক্যান্সার সৃষ্টি করে না, শরীরের সর্বাংশেই রোগের সৃষ্টি করে। তাই অবশ্যই ধূমপান পরিহার করতে হবে।
গোলটেবিল আলোচনায় সভাপতির বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ ও রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান বলেন, ফুসফুসের রোগ প্রতিরোধে ধূমপান পরিহার, বায়ুদূষণ প্রতিরোধ এবং সুস্থ, সুন্দর, নির্মল পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। ফুসফুসের রোগ নির্মূলে বা নিয়ন্ত্রণে রাখতে চিকিৎসক নির্দেশিত ওষুধের কোর্স সম্পন্ন করতে হবে। তিনি বলেন, ধূমপান বন্ধে ও ফুসফুসের রোগ প্রতিরোধে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে ‘তামাকমুক্ত দেশ’ গড়ার যে ঘোষণা দিয়েছেন তা বাস্তবায়ন করতে হবে। তিনি তাঁর বক্তব্যে আসন্ন বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সফলভাবে মোকাবিলা করতে সক্ষম হবে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান আরো বলেন, ফুসফুসের যত্নের শুরু মাতৃজঠরে থাকায় সময় হতেই। গর্ভাবস্থায় মায়ের অপুষ্টি, বিভিন্ন সংক্রামক রোগের সংক্রমণ, সময়ের পূর্বে অপরিণত অবস্থায় স্বল্প ওজনের শিশুর জন্মগ্রহণ শিশুর ফুসফুসের বিভিন্ন রোগের কারণ হতে পারে। আবার জন্মের পর মাতৃদুগ্ধ পান নিউমোনিয়া, অ্যাজমাসহ বিভিন্ন রোগের প্রকোপ কমায়। তাই হবু মা এবং নতুন মায়ের যত্ন শিশুর সুস্থ ফুসফুসের পূর্বশর্ত। অন্যদিকে ধূমপায়ী বাবা শুধুমাত্র তার পরিবারের সদস্যদের জন্যই নয় এমনকি যে শিশুটি এখনও ভূমিষ্ট হয়নি তার জন্যও হুমকি। ধূমপায়ী মায়েদের জন্য এ কথাটি আরও বেশী সত্য। প্রকৃতপক্ষে, ধূমপান এমন একটি সামাজিক ব্যাধি যা শুধু ফুসফুসের মারাত্মক রোগ যেমন সিওপিডি, ক্যান্সার ইত্যাদিরই প্রধান কারণ নয় বরং ধূমপানের জন্য হৃদরোগ, মস্তিষ্কে স্ট্রোক, উচ্চরক্তচাপসহ আরও বহুরোগের সৃষ্টি হয়। তাই সামাজিকভাবে ধূমপান বিরোধী আন্দোলনকে আরও বেগবান করা এবং ধূমপান বিরোধী আইনের কার্যকরী প্রয়োগ এখন অপরিহার্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তিনি আরো বলেন, জীবিকার প্রয়োজনে বিভিন্ন ধরণের পেশা আমরা বেছে নেই। তার মধ্যে এমন কিছু পেশা আছে যা ফুসফুসের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। যেমন- পাথর ভাঙা, জাহাজ ভাঙা, ওয়েলডিং, আঁশ ও তুষ জাতীয় উপাদানের সংস্পর্শে থাকা ইত্যাদি। এই পেশার কারণে তৈরি ছোট ছোট ধূলিকণা বা সূক্ষ তন্তু আমাদের ফুসফুসে আটকে বিভিন্ন ধরণের রোগ সৃষ্টি করতে পারে। দুঃখের বিষয় হচ্ছে কাজের সময় ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী ব্যবহার করলে এই বিপর্যয় হতে রক্ষা পাওয়া সম্ভব-যে ব্যাপারে আমরা মোটেও সচেতন নই। তাই “অকুপেশানাল হেলথ্” বা জীবিকা সংক্রান্ত স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আমাদের আরও মনোযোগী হতে হবে।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শামীম আহমেদ। গোলটেবিল বৈঠকে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন ) অধ্যাপক ডা. মোঃ জাহিদ হোসেন, উপ-উপাচার্য (একাডেমিক ) অধ্যাপক ডা. একেএম মোশাররফ হোসেন। আলোচক হিসেবে অংশগ্রহণ করেন ডেন্টাল অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আলী আসগর মোড়ল, মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মাসুদা বেগম, বেসিক সাইন্স ও প্যারা ক্লিনিকের ডিন অধ্যাপক ডা. শিরিন তরপদার, প্রক্টর অধ্যাপক ডা. মোঃ হাবিবুর রহমান দুলাল, হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারিক ডা. মোঃ হারিসুল হক, রেজিস্ট্রার ডা. স্বপন কুমার তপাদার, পরিচালক (হাসপাতাল) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মোঃ নজরুল ইসলাম খান, ফিজিক্যাল মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এ কে এম সালেক, বক্ষব্যধি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সম্প্রীতি ইসলাম, বিশিষ্ট গবেষক সাংবাদিক সুভাষ সিংহ রায়, প্রথম আলোর বিশেষ প্রতিনিধি শিশির মোড়ল, বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি দৈনিক আমাদের সময়ের সিনিয়র রিপোর্টার রাশেদ রাব্বী প্রমুখ।
Own the headlines. Follow now- Zoom Bangla Google News, Twitter(X), Facebook, Telegram and Subscribe to Our Youtube Channel