বন্যায় নিরাপদ পানের পানিই প্রধান সমস্যা। অথচ বন্যার পানিকেই আমরা পানের উপযোগী করে নিতে পারি, যদি তার মধ্যে থাকা ডায়রিয়া, টাইফয়েড, কলেরা ইত্যাদি রোগের জীবাণুকে মেরে ফেলতে পারি। আর কাজটি কিন্তু কঠিন নয়। কয়েকটি পদ্ধতি এখানে তুলে ধরা হলো
চুলায় ফুটিয়ে নেওয়া
পানি ফোটানো একটি প্রাচীন পদ্ধতি। তবে আগেকার দিনে পানিকে ২০ মিনিট ফোটানোর কথা বলা হতো। আধুনিক গবেষণায় দেখা গেছে, তার কোনো প্রয়োজন নেই। পানি ফোটে ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায়। সে তাপমাত্রায় পেটের অসুখের জীবাণু মেরে ফেলতে সময় লাগবে না। তাহলে পানি ফুটতে শুরু করলেই তাপ দেওয়া বন্ধ করে দিতে পারি। তাই বন্যার পানিকেই এভাবে চুলায় ফুটিয়ে নিয়ে পান করতে পারবেন, পানের পানির জন্য দূরদূরান্তে যেতে হবে না।
SODIS বা সোলার ডিজইনফেকশন পদ্ধতি
গত শতকের আশির দশকে আমেরিকান ইউনিভার্সিটি অব বৈরুতে উদ্ভাবিত হওয়া এ পদ্ধতি সুইজারল্যান্ডের EAWAG কেন্দ্র প্রচার করে আসছে। একটি স্বচ্ছ ও পরিষ্কার পেট বোতলে (বাজারে সুপেয় পানি যে বোতলে সরবরাহ করা হয়) পানি ভরে সেটিকে পরিষ্কার রোদে ৬ ঘণ্টা রাখুন। এতে পানি তেমন গরম হয় না, কিন্তু রোদের আলট্রাভায়োলেট কিরণ পানির ক্ষতিকর জীবাণু মেরে ফেলে।
সোলার পাস্তুরাইজেশন পদ্ধতি
পানিকে মাত্র ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় গরম করে সে তাপমাত্রায় আধা ঘণ্টা ধরে রাখতে পারলেই ক্ষতিকর জীবাণু মরে যায়। আর এর থেকে বেশি তাপমাত্রায় আরও কম সময়েই কাজ হয়। যেমন ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় লাগে মাত্র ১৫ সেকেন্ড। বিজ্ঞানী লুই পাস্তুরের নাম অনুসারে এ পদ্ধতিকে বলা হয় ‘পাস্তুরাইজেশন’ বা পাস্তুরিতকরণ।
বৃষ্টির পানি সংগ্রহ
বৃষ্টির পানি মূলত ডিস্টিলড ওয়াটার, যা বিশুদ্ধ। এতে রোগজীবাণু নেই। কেবল প্রথম দিকের কয়েক মিনিটে পড়া বৃষ্টিতে বাতাসের ভাসমান ধূলিকণা ইত্যাদি থাকতে পারে। তাই প্রায় ৫ মিনিট পর থেকে সংগ্রহ করা উচিত। তবে টিনের ছাদের থেকে সংগ্রহ করা পানি সরাসরি পান করা যায় না, কারণ তাতে পাখির মল, পচা পাতা ইত্যাদি থাকতে পারে। আমাদের উদ্ভাবনে একটি পলিথিন শিট ব্যবহার করেছি, যেটি শুকিয়ে ঘরে পরিষ্কারভাবে রেখে দেবেন।
বন্যা ছাড়া সাধারণ সময়েও প্রয়োগ
বন্যা ছাড়া সাধারণ সময়েও ওপরের প্রযুক্তিগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে। বিশেষ করে যেসব জায়গায় আর্সেনিকের সমস্যা প্রবল, সেখানে এ প্রযুক্তিগুলো সহজ সমাধান দিতে পারে। ব্রিটিশ জিওলজিক্যাল সার্ভের রিপোর্ট জানায় যে বাংলাদেশে ৭০ থেকে ৩০০ ফুট গভীরের পানিতে আর্সেনিক আছে। নদী, হাওর, খালবিল, পুকুরের পানি আসে বৃষ্টির পানি, বরফগলা পানি ইত্যাদি থেকে। তাই এসব পানিতে আর্সেনিক নেই। এ পানি যখন মাটি চুইয়ে নিচের অ্যাকুইফায়ারে জমা হয়, সে পথে ভূগর্ভস্থ শিলায় আর্সেনিক থাকলে তা থেকে দূষিত হয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।