সকালের কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে বাবা হয়তো আবারও ভুলে গেলেন ওষুধ খেতে। মা বসে আছেন বারান্দায়, চোখে এক অদ্ভুত বিষণ্ণতা, যেন বহুদিন কারো সঙ্গে মন খুলে কথা বলেননি। বাড়ির সেই সদা হাস্যোজ্জ্বল, কর্মব্যস্ত মানুষগুলো এখন সময়ের করাল গ্রাসে ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে থাকেন। বাংলাদেশে আজ প্রায় ১.৩ কোটি প্রবীণ নাগরিক (বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো, ২০২৩ প্রাক্কলন), যাদের একটি বিশাল অংশই নিভৃতে ভোগেন শারীরিক যন্ত্রণা, একাকিত্ব, কিংবা আর্থিক অনিশ্চয়তা। কিন্তু এই বার্ধক্যই কি জীবনাবসানের প্রাক্কাল? মোটেও না! বয়স্ক প্যারেন্টস কেয়ার – এই দুই শব্দেই লুকিয়ে আছে আপনার প্রিয় বাবা-মায়ের জীবনে সোনালি সন্ধ্যা বয়ে আনার চাবিকাঠি। এটি শুধু দায়িত্ব নয়; এটি ভালোবাসা, কৃতজ্ঞতা ও আমাদের সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের সুদৃঢ় অঙ্গীকার।
বয়স্ক প্যারেন্টস কেয়ার: শুধু প্রয়োজন নয়, ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ
বয়স্ক প্যারেন্টস কেয়ার বলতে আমরা বুঝি আমাদের বয়স্ক পিতামাতার সামগ্রিক কল্যাণ নিশ্চিত করার সেই প্রয়াস, যেখানে শারীরিক সুস্থতা, মানসিক প্রশান্তি, সামাজিক সংযোগ এবং আর্থিক সুরক্ষা – সবকিছুরই সমন্বয় ঘটে। এটি একক কোনো কাজ নয়, বরং একটি চলমান প্রক্রিয়া, যার কেন্দ্রে আছে সম্মান, মর্যাদা এবং স্বাধীনতার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট: এক চ্যালেঞ্জিং বাস্তবতা: আমাদের দেশে যৌথ পরিবারের ঐতিহ্য দ্রুত ভাঙছে। নগরায়ন, কর্মব্যস্ততা, বিদেশ গমন – সব মিলিয়ে অনেক বয়স্ক পিতামাতাই আজ নিঃসঙ্গ, বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায়। জাতীয় প্রবীণ নীতিমালা (২০১৩) এবং প্রবীণ হিতৈষী সংঘের মতো সংস্থাগুলো কাজ করলেও, প্রকৃত পরিবর্তন শুরু হয় পরিবার থেকেই। ডা. সৈয়দা আফসানা আলম (গেরিয়াট্রিক বিশেষজ্ঞ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) বলছেন, “বাংলাদেশে বয়স্কদের সঠিক যত্নের সবচেয়ে বড় বাধা হল সচেতনতার অভাব ও গেরিয়াট্রিক স্বাস্থ্যসেবার সুযোগের সীমাবদ্ধতা। অনেক সময় সাধারণ শারীরিক পরিবর্তনকেও ‘বুড়ো বয়সের স্বাভাবিক ব্যাপার’ ভেবে গুরুত্ব দেওয়া হয় না, যা পরে বড় ধরনের জটিলতার জন্ম দেয়।”
শারীরিক সুস্থতা: প্রথম ও প্রধান স্তম্ভ
- নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা: ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, আর্থ্রাইটিস, হৃদরোগ, দৃষ্টিশক্তি ও শ্রবণশক্তি হ্রাস, অস্টিওপোরোসিস – এসব বয়সজনিত সাধারণ সমস্যা শনাক্তকরণ ও ব্যবস্থাপনার জন্য অন্তত বছরে দু’বার পূর্ণাঙ্গ স্বাস্থ্য পরীক্ষা অপরিহার্য। শুধু অসুস্থ হলে ডাক্তারের কাছে যাওয়া নয়, প্রতিরোধই সর্বোত্তম পন্থা। ঢাকার একজন সন্তান, রিয়াজুল ইসলাম (৪৫), প্রতিমাসে তার বাবাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গেরিয়াট্রিক ক্লিনিকে নিয়ে যান: “আব্বার সুগার আর প্রেশার নিয়ন্ত্রণে আছে কিনা, হাড়ের ক্ষয় হচ্ছে কিনা – এগুলো আগে থেকে জানতে পারলে চিকিৎসা সহজ হয়।
- ওষুধ ব্যবস্থাপনা: ভুলে যাওয়া, ওভারডোজ, আন্ডারডোজ – বয়স্কদের জন্য ওষুধ সেবনে ভুল খুবই সাধারণ। সমাধান? ওষুধ বক্স (Pill Organizer): সপ্তাহের প্রতিদিনের জন্য আলাদা কম্পার্টমেন্ট। স্মার্টফোন রিমাইন্ডার: খাওয়ার সময় হলে অ্যালার্ম বাজবে। ডাক্তারের সাথে পরামর্শ: প্রেসক্রিপশন সহজীকরণের জন্য বলুন (যদি সম্ভব হয়)।
- পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাস: হজমশক্তি কমে যায় বয়সের সাথে। গুরুত্ব দিন:
- আঁশযুক্ত খাবার (শাকসবজি, ফলমূল, লাল চাল/আটা)।
- প্রোটিন (মাছ, ডাল, ডিম, দুধ) হাড় ও পেশীর জন্য জরুরি।
- ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার (দুধ, দই, ছোট মাছ)।
- লবণ ও চিনি গ্রহণ সীমিত করুন।
- পর্যাপ্ত পানি: ডিহাইড্রেশন বয়স্কদের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ, প্রায়ই তৃষ্ণার অনুভূতিও কমে যায়।
- নিরাপদ ও সুগম্য বাসস্থান: বাড়ির ভেতরে পড়ে গিয়ে হাড় ভাঙার ঘটনা অহরহ। প্রতিরোধ করুন:
- ঝুঁকি দূরীকরণ: মেঝে শুকনো রাখুন, অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র (বিশেষ করে বাথরুমে) সরান, কার্পেটের কোণা আটকে রাখুন।
- সহায়ক উপকরণ: বাথরুমে গ্রাব বার (Grab Bar), শাওয়ারের চেয়ার, নন-স্লিপ ম্যাট লাগান। সিঁড়িতে শক্ত হ্যান্ডরেল থাকা আবশ্যক।
- পর্যাপ্ত আলো: রাতে শোবার ঘর থেকে বাথরুম পর্যন্ত আলোর ব্যবস্থা করুন (নাইট লাইট সাহায্যকারী)।
- হালকা ব্যায়াম: প্রতিদিন ৩০ মিনিট হাঁটা, স্ট্রেচিং, টাই চি বা ইয়োগার মতো হালকা ব্যায়াম জয়েন্টের নমনীয়তা, পেশীর শক্তি এবং ভারসাম্য রক্ষায় সাহায্য করে, পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি কমায়। স্থানীয় কমিউনিটি সেন্টার বা পার্কে অনেকে একসাথে ব্যায়াম করেন – এটি সামাজিক মেলামেশারও সুযোগ।
মানসিক ও আবেগিক সুস্থতা: হৃদয়ের যত্ন নিন
- একাকিত্ব দূরীকরণ – সবচেয়ে বড় চিকিৎসা: মানসিক অবসাদ, উদ্বেগ এমনকি ডিমেনশিয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হল একাকিত্ব। সমাধান?
- গুণগত সময়: শুধু পাশে বসে থাকা নয়, সক্রিয় শ্রোতা হোন। তাদের অতীতের গল্প শুনুন, স্মৃতি রোমন্থন করতে উৎসাহিত করুন। সপ্তাহে নির্দিষ্ট সময় রাখুন ‘কথাবার্তার সময়’ হিসেবে।
- সামাজিক সংযোগ: আত্মীয়-স্বজন, পুরনো বন্ধুবান্ধবের সাথে যোগাযোগ রাখতে সাহায্য করুন। স্থানীয় মসজিদ/মন্দির/কমিউনিটি সেন্টারে প্রবীণদের সমাবেশে অংশ নিতে উৎসাহিত করুন। বাংলাদেশে অনেক জায়গায় এখন সিনিয়র সিটিজেন ক্লাব গড়ে উঠছে।
- আগ্রহ ও শখ: বাগান করা, গান শোনা, ধর্মীয় গ্রন্থ পাঠ, হালকা হস্তশিল্প, ছবি আঁকা – যা কিছু আনন্দ দেয়, তাতে উৎসাহ দিন। চট্টগ্রামের ফাতেমা বেগম (৭০) বলেন, “মেয়ে আমাকে ক্রাফট শেখানোর ক্লাসে ভর্তি করে দিয়েছে। এখন প্রতিদিন কিছু না কিছু তৈরি করি, মনে শান্তি পাই।”
- সম্মান ও স্বাধীনতা: বার্ধক্য মানে অসামর্থ্য নয়। তাদের মতামতকে গুরুত্ব দিন, সিদ্ধান্ত গ্রহণে অন্তর্ভুক্ত করুন (যতদূর সম্ভব)। নিজের ব্যক্তিগত কাজ নিজে করতে উৎসাহিত করুন, সাহায্য প্রয়োজন হলে তবে এগিয়ে আসুন। ভরসা দিন, দয়া নয়।
- মানসিক স্বাস্থ্যের লক্ষণ চিনুন: অবিরাম দুঃখ, উদ্বেগ, ঘুমের সমস্যা, খাওয়ায় অনীহা, সামাজিক কর্মকাণ্ডে আগ্রহ হারানো, স্মৃতিভ্রম – এগুলো গুরুত্ব সহকারে নিন। মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বা কাউন্সেলরের পরামর্শ নিতে দ্বিধা করবেন না। মানসিক স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কিত তথ্যের জন্য জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের ওয়েবসাইট দেখুন।
- একাকিত্ব দূরীকরণ – সবচেয়ে বড় চিকিৎসা: মানসিক অবসাদ, উদ্বেগ এমনকি ডিমেনশিয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হল একাকিত্ব। সমাধান?
আর্থিক সুরক্ষা: নিশ্চিন্ত ভবিষ্যতের ভিত্তি
- আর্থিক পরিকল্পনা (আগে থেকেই): পেনশন, সঞ্চয়, সন্তানদের সহায়তা – আয়ের উৎস পরিষ্কার করুন। মাসিক বাজেট তৈরি করতে সাহায্য করুন। বাংলাদেশে সরকারি চাকুরিজীবীদের পেনশন ব্যবস্থা আছে, বেসরকারি ক্ষেত্রে প্রভিডেন্ট ফান্ড বা ব্যক্তিগত সঞ্চয় মুখ্য।
- চিকিৎসা খরচ: বয়সের সাথে সাথে চিকিৎসা ব্যয় বাড়বেই। স্বাস্থ্য বীমা একটি কার্যকর সমাধান হতে পারে (যদি বয়সসীমা ও শর্তাবলী অনুমোদন করে)। সরকারি হাসপাতালের সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে জানুন।
- জমি-সম্পত্তি ও আইনি সুরক্ষা: উইল (ইচ্ছাপত্র) সঠিকভাবে তৈরি আছে কিনা নিশ্চিত করুন। সম্পত্তি নিয়ে পারিবারিক বিরোধ যাতে না হয়, তার ব্যবস্থা আগে থেকেই করুন। আইনি পরামর্শ নিন। তাদের নামে থাকা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, সঞ্চয়পত্রের বিষয়ে জ্ঞান রাখুন।
- অবসর ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা: বাংলাদেশ সরকার প্রবীণ নাগরিকদের জন্য কিছু ভাতা ও সুবিধা (যেমন, বিনামূল্যে/স্বল্পমূল্যে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা) প্রদান করে। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ বা সিটি কর্পোরেশন অফিসে যোগাযোগ করে জেনে নিন তারা কোন সুবিধাগুলোর জন্য যোগ্য। সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় প্রবীণ ভাতার তথ্য পাওয়া যাবে।
পরিবার ও সম্প্রদায়ের ভূমিকা: সম্মিলিত প্রচেষ্টা
- ভাগ করে নেওয়া দায়িত্ব: যদি একাধিক ভাইবোন থাকেন, বয়স্ক প্যারেন্টস কেয়ার-এর দায়িত্ব ভাগ করে নিন। কে কোন দিক দেখবেন (যেমন, একজনের সাথে ডাক্তারের কাছে যাওয়া, অন্যজনের সাথে সময় কাটানো, তৃতীয়জন আর্থিক দিক দেখভাল করা), তা পরিষ্কারভাবে ঠিক করুন। নিয়মিত আলোচনা করুন। দূরের সন্তানরা আর্থিক সহায়তা বাড়াতে পারেন, আর কাছের সন্তানরা প্রত্যক্ষ যত্ন দিতে পারেন।
- প্রতিবেশী ও বন্ধুদের নেটওয়ার্ক: প্রতিবেশীদের জানান, আপনার বাবা-মা একা থাকলে তারা যেন মাঝে মধ্যে খোঁজখবর নেন। একটি জরুরি যোগাযোগ নম্বর তাদের কাছে রাখতে দিন। সম্প্রদায়ের সক্রিয় অংশগ্রহণ বয়স্কদের একাকিত্ব দূর করে।
- প্রফেশনাল কেয়ারগিভার: শারীরিক অবস্থা খুব খারাপ বা ডিমেনশিয়া থাকলে, পেশাদার সেবার প্রয়োজন হতে পারে। হোম নার্স বা কেয়ারগিভার নিয়োগের কথা ভাবুন। সতর্কতা: ভালোভাবে রেফারেন্স চেক করুন, প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতা যাচাই করুন। জাতীয় প্রবীণ হিতৈষী সংঘের মতো সংস্থাগুলো থেকে তথ্য নিতে পারেন। খুলনার রহিমা আক্তার (৫৫) বললেন, “আম্মার দেখাশোনা করার জন্য একজন কেয়ারগিভার রাখা হয়েছে, যিনি তাকে গোসল করান, খাওয়ান ও হাঁটতে সাহায্য করেন। এতে আম্মা ভালো আছেন, আমরাও নিশ্চিন্ত।”
- সহায়ক প্রযুক্তি: আধুনিক সমাধান
- জরুরী কল সিস্টেম: মেডিকেল অ্যালার্ম পেন্ডেন্ট বা ব্রেসলেট। অসুবিধা হলে একটি বোতাম টিপলেই জরুরি সাহায্য পৌঁছে যাবে।
- মোবাইল ফোন ও অ্যাপস: সহজে ব্যবহারযোগ্য ফোন। ভিডিও কলের মাধ্যমে দূরের সন্তানদের সাথে নিয়মিত দেখা করা। রিমাইন্ডার অ্যাপ (ওষুধ, ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট)।
- স্মার্ট হোম ডিভাইস: ভয়েস কমান্ডে লাইট জ্বালানো/নেভানো, ঘরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ। নিরাপত্তা ক্যামেরা (গোপনীয়তার প্রতি সম্মান রেখে)।
আপনার নিজের যত্ন: কেয়ারগিভারের সুস্থতা
বাবা-মায়ের যত্ন নেওয়া অনেক সময় ক্লান্তিকর, মানসিক চাপ সৃষ্টিকারী হতে পারে। নিজেকে উপেক্ষা করলে আপনি কারোই ভালোভাবে যত্ন নিতে পারবেন না। তাই:
- বিরতি নিন (রেসপাইট কেয়ার): অন্য ভাইবোন, আত্মীয় বা প্রফেশনাল কেয়ারগিভারের সাহায্য নিয়ে নিজের জন্য কিছুটা সময় বের করুন। বিশ্রাম নিন, শখের কাজ করুন, বন্ধুদের সাথে সময় কাটান।
- সাপোর্ট গ্রুপ: অন্যান্য কেয়ারগিভারদের সাথে যোগাযোগ করুন। অভিজ্ঞতা শেয়ার করলে মানসিক চাপ কমবে। অনলাইন বা অফলাইন গ্রুপ খুঁজে নিন।
- সীমানা নির্ধারণ: যা করতে পারবেন, তা বলুন। যা পারবেন না, তা নম্র কিন্তু দৃঢ়ভাবে জানান। ‘না’ বলতে শিখুন।
- নিজের স্বাস্থ্য: নিজের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিন। নিয়মিত চেকআপ করান, পুষ্টিকর খান, পর্যাপ্ত ঘুমান।
বয়স্ক প্যারেন্টস কেয়ার কোনও শেষ হওয়ার যাত্রা নয়; বরং ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতায় সমৃদ্ধ এক নতুন সম্পর্কের শুরু। এটি তাদের জীবনের শেষ অধ্যায়কে সম্মান, মর্যাদা এবং অকৃত্রিম যত্নে ভরিয়ে তোলার সুযোগ। তাদের চোখে ফিরে পাওয়া সেই আত্মতৃপ্তির হাসি, নিরাপত্তার অনুভূতি – এর চেয়ে বড় সার্থকতা আর কিছু হতে পারে না? আজই শুরু করুন। একটি কথোপকথন, একটি ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট, বাড়ির নিরাপত্তার একটু খেয়াল – ছোট ছোট পদক্ষেপই গড়ে তুলবে আপনার প্রিয় বাবা-মায়ের জন্য একটি সুখী, সমৃদ্ধ ও সুন্দর বার্ধক্য। মনে রাখবেন, বয়স্ক প্যারেন্টস কেয়ার শুধু আপনার বাবা-মায়ের জন্য নয়; এটি আপনার নিজের মনুষ্যত্বেরও প্রকাশ, এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তাদের দেওয়া অফুরন্ত ভালোবাসা ও ত্যাগের ঋণ শোধ হয় না, কিন্তু মর্যাদাপূর্ণ ও সুখী বার্ধক্য উপহার দেওয়ার মাধ্যমেই আমরা সেই ঋণের কিছু অংশ স্বীকার করতে পারি।
জেনে রাখুন (FAQs)
বয়স্ক পিতামাতার যত্ন নেওয়ার সময় সবচেয়ে সাধারণ ভুলগুলি কী কী?
- উত্তর: বেশ কিছু সাধারণ ভুলের মধ্যে রয়েছে: তাদের মতামত বা পছন্দকে উপেক্ষা করা, অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণ করা (স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া), শারীরিক পরিবর্তন বা মানসিক লক্ষণগুলিকে (যেমন স্মৃতিভ্রম, বিষণ্নতা) “বুড়ো বয়সের স্বাভাবিক ব্যাপার” ভেবে গুরুত্ব না দেওয়া, নিজের যত্ন সম্পূর্ণ অবহেলা করা, ভাইবোনদের মধ্যে দায়িত্ব ভাগাভাগি না করে একজনের উপর সব চাপ চাপানো, এবং আর্থিক পরিকল্পনা আগে থেকে না করা। সচেতনতা ও সম্মানজনক যোগাযোগই এড়াতে সাহায্য করে।
আমার বাবা/মা ডাক্তারের কাছে যেতে চান না। আমি কি করব?
- উত্তর: প্রথমে বুঝতে চেষ্টা করুন কেন যেতে অনিচ্ছুক (ভয়? অস্বস্তি? খরচের ভয়? মনে করেন প্রয়োজন নেই?)। ধৈর্য ধরে ব্যাখ্যা করুন যে নিয়মিত চেকআপ সমস্যা আগে ধরা পড়তে সাহায্য করে, চিকিৎসা সহজ হয়। তাদের প্রিয় কোনো সন্তান বা আত্মীয় যদি সাথে যায়, তারা রাজি হতে পারেন। তাদের ভয় বা আপত্তিগুলোকে গুরুত্ব দিন, উপহাস করবেন না। ছোটখাটো সমস্যা নিয়ে শুরু করুন, ধীরে ধীরে আস্থা গড়ে তুলুন।
বয়স্ক পিতামাতার একাকিত্ব দূর করার কিছু কার্যকর উপায় কি কি?
- উত্তর: প্রতিদিন কিছুটা গুণগত সময় দেওয়া (কথা বলা, গল্প শোনা, একসাথে টিভি দেখা)। আত্মীয়-স্বজন, পুরনো বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ রাখতে সাহায্য করা (ফোন, ভিডিও কল, দর্শন)। স্থানীয় মসজিদ/মন্দির, কমিউনিটি সেন্টার বা সিনিয়র ক্লাবে অংশ নিতে উৎসাহিত করা। তাদের পুরনো শখ (গান শোনা, বই পড়া, বাগান করা) বা নতুন কিছু শেখার সুযোগ দেওয়া। পোষা প্রাণী (যদি তারা পছন্দ করেন এবং দেখাশোনা করতে পারেন) একাকিত্ব কমাতে বিস্ময়কর কাজ করে।
আমি চাকরি করি, দূরে থাকি। দূর থেকে কিভাবে বাবা-মায়ের যত্ন নিতে পারি?
- উত্তর: নিয়মিত যোগাযোগ (ফোন, ভিডিও কল) রাখুন। কাছের আত্মীয়, প্রতিবেশী বা বিশ্বস্ত কেয়ারগিভারের সাহায্য নিন, তাদের সাথে যোগাযোগ রাখুন। অনলাইন সার্ভিস ব্যবহার করুন (ওষুধ, প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ডেলিভারি, বিল পেমেন্ট)। আর্থিক সাহায্য প্রেরণ নিশ্চিত করুন। ছুটিতে গিয়ে তাদের সাথে ভালো সময় কাটান এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা (ডাক্তার দেখা, বাড়ির মেরামত) করে আসুন। জরুরি যোগাযোগ নম্বর স্থানীয় কারো কাছে রেখে দিন।
- বাংলাদেশে বয়স্ক পিতামাতার জন্য সরকারি কোন সাহায্য বা সুবিধা পাওয়া যায় কি?
- উত্তর: হ্যাঁ, কিছু সুবিধা আছে। প্রবীণ ভাতা: নির্দিষ্ট শর্ত (বয়স, আর্থিক অবস্থা) পূরণকারী দরিদ্র প্রবীণরা মাসিক ভাতা পান। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ/সিটি কর্পোরেশন অফিসে যোগাযোগ করতে হবে। স্বাস্থ্যসেবা: সরকারি হাসপাতালে প্রবীণদের জন্য কিছুটা অগ্রাধিকার ও কখনো কখনো ফি-তে ছাড় আছে। আইনি সহায়তা: প্রবীণ নাগরিকদের অধিকার রক্ষায় আইনি সহায়তা দেওয়া হতে পারে। সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির ওয়েবসাইট (http://www.sse.gov.bd/) এবং জাতীয় প্রবীণ হিতৈষী সংঘ (https://www.eshok.org/) থেকে বিস্তারিত জানা যাবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।