চোখ বুজে ভাবুন। প্রেক্ষাগৃহের আলো নিভে গেছে। বিশাল স্ক্রিনে জ্বলজ্বল করছে ট্রেলারের প্রথম ফ্রেম। থ্রিলিং ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর… হৃদয়ে দোলা দিয়ে ওঠে। বলিউডের বড় পর্দার এই জাদু, এই রোমাঞ্চের অপেক্ষায় কে না থাকে? ২০২৪ ও ২০২৫, বলিউডের জন্য যেন একের পর এক ‘বিগ ব্যাং’ ঘটানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। বলিউডে আসন্ন বিগ বাজেট সিনেমা শুধু বিনোদন নয়, একেকটি সাংস্কৃতিক ঘটনা। কোটি কোটি টাকার বিনিয়োগ, বছরের পর বছরের পরিশ্রম, এবং দর্শকদের হৃদয় জয়ের স্বপ্ন বুনে চলেছেন নির্মাতারা। এই প্রতিবেদনে, আমরা ডুব দেব সেই রোমাঞ্চকর জগতে। জানবো কোন কোন মহামূল্যবান প্রজেক্ট আমাদের অপেক্ষায় আছে, কারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন, আর কেনই বা এই চলচ্চিত্রগুলো শুধু সিনেমা নয়, বলিউডের ভবিষ্যতের দিশা নির্দেশ করছে।
বলিউডে আসন্ন বিগ বাজেট সিনেমা: ২০২৪-২০২৫ সালের সবচেয়ে আলোচিত প্রোজেক্ট
২০২৪-২৫ সাল বলিউডের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। করোনা পরবর্তী সময়ে দর্শকদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে এবং বিশ্ববাজারে ভারতীয় সিনেমার অবস্থান পাকাপোক্ত করতে এই বিগ বাজেট সিনেমাগুলো মূল ভূমিকা পালন করবে। শুধু বিনোদন নয়, এগুলো প্রযুক্তি, ভিজ্যুয়াল ইফেক্টস এবং গল্প বলার নতুন মাপকাঠি তৈরি করছে।
ব্রহ্মাস্ত্র: পার্ট টু – দ্য ডেভিলস ওয়ার্ল্ড (Brahmāstra Part Two: Dev – The Dark World)
- মুক্তির তারিখ: ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ (প্রস্তাবিত)।
- নির্মাতা: ধর্মা প্রোডাকশন্স, প্রিমিয়াম প্রোডাকশন্স (অমিতাভ বচ্চন কর্পোরেশন লিমিটেডের সাথে সহ-প্রযোজনা)।
- পরিচালক: আয়ান মুখার্জী।
- মূল অভিনেতা-অভিনেত্রী: রণবীর কাপুর, আলিয়া ভাট, অমিতাভ বচ্চন, মৌনী রায় (নতুন সংযোজন), নাগার্জুনা আক্কিনেনি।
- বাজেট: আনুমানিক ₹৬৫০ কোটি (প্রথম অংশের সাফল্য ও ভিজ্যুয়াল স্কেল বিবেচনায় এটি আরও বাড়তে পারে)।
- বিশেষ তথ্য:
- প্রথম অংশ ‘ব্রহ্মাস্ত্র: পার্ট ওয়ান – শিব’ বিপুল ব্যবসা ও আলোচনার জন্ম দিয়েছিল। দ্বিতীয় অংশে ‘দ্য ডার্ক ওয়ার্ল্ড’-এ শিবের (রণবীর) মুখোমুখি হতে হবে দেবকে (অমিতাভ বচ্চন? নাকি অন্য কেউ? – গোপনীয়তা রক্ষিত!)।
- ‘আস্ত্র ভার্স’ (অস্ত্রজগৎ) সম্প্রসারিত হবে, নতুন অস্ত্র ও শক্তির প্রকাশ ঘটবে।
- আয়ান মুখার্জি এবং রণবীর কাপুরের কথায়, “এটি শুধু সিক্যুয়েল নয়, পুরো মহাবিশ্বের বিস্তার। দর্শকরা যা কল্পনা করেছেন, তার চেয়েও বড় কিছু দেখতে পাবেন।” (সূত্র: আনুষ্ঠানিক প্রেস রিলিজ, ধর্মা প্রোডাকশন্স)।
- ভিয়েনা, ইজিপ্ট এবং হিমাচলের দূর্গম অঞ্চলে ব্যাপক শ্যুটিং হয়েছে।
- ডিজনি+ হটস্টারে সিরিজ ‘ডার্ক ওয়ার্ল্ড’ নির্মাণের পরিকল্পনা চলছে, যা সিনেমার আগেই গল্পের প্রেক্ষাপট তৈরি করবে। প্রামাণিক উৎস: Deadline Hollywood
ডন ৩ (Don 3)
- মুক্তির তারিখ: আনুমানিক ২০২৫ এর শেষ বা ২০২৬ এর শুরু।
- নির্মাতা: এক্সেল এন্টারটেইনমেন্ট (ফারহান আখতার, রিতেশ সিধ্বানি)।
- পরিচালক: ফারহান আখতার (সম্ভাব্য)।
- মূল অভিনেতা: রণবীর কাপুর (ডন চরিত্রে)।
- বাজেট: আনুমানিক ₹৫০০ কোটি+ (ফ্র্যাঞ্চাইজির খ্যাতি ও প্রযুক্তিগত উচ্চাকাঙ্ক্ষা বিবেচনায়)।
- বিশেষ তথ্য:
- শাহরুখ খানের পর ডনের চরিত্রে রণবীর কাপুরের আগমন একটি সাহসী সিদ্ধান্ত। টিজারে দেখা গেছে, তিনি একদম আলাদা, রাগান্বিত, যুবক ডনের ভূমিকায়।
- ফারহান আখতার টিজার লঞ্চ ইভেন্টে বলেছেন, “এটি শুধু রিমেক বা রিবুট নয়। এটি ডন মিথোলজির নতুন অধ্যায়। রণবীরের ডন সম্পূর্ণ নতুন প্রজন্মের জন্য, নতুন সময়ের জন্য।”
- আন্তর্জাতিক লোকেশনে শ্যুটিং হবে বলে জানা গেছে। গল্পে ইউরোপিয়ান সন্ত্রাসী চক্রের সাথে ডনের দ্বন্দ্ব থাকবে।
- প্রাথমিক টিজারটি ইতিমধ্যেই ইউটিউবে সর্বাধিক দেখা বলিউড টিজারগুলির একটি। প্রামাণিক উৎস: Film Companion Interview
সিংহাম রিটার্নস (Singham Returns… Again)
- মুক্তির তারিখ: ঈদ ২০২৫ (সম্ভাব্য)।
- নির্মাতা: রোহিত শেট্টি পিকচার্জ, রিলায়েন্স এন্টারটেইনমেন্ট।
- পরিচালক: রোহিত শেট্টি।
- মূল অভিনেতা: অজয় দেবগন (বাজীরাও সিংহাম), সম্ভাব্য অভিনেত্রী: রাকুল প্রীত সিং বা কিয়ারা আদভানি।
- বাজেট: আনুমানিক ₹৩০০ কোটি+ (ব্যাপক অ্যাকশন সিকোয়েন্স এবং প্যান-ইন্ডিয়া রিলিজের পরিকাঠামো বিবেচনায়)।
- বিশেষ তথ্য:
- রোহিত শেট্টির ‘কপিশ ভার্স’ (পুলিশ বিশ্ব) ফ্র্যাঞ্চাইজির প্রধান স্তম্ভ সিংহামের প্রত্যাবর্তন।
- গুজব রয়েছে, এই কিস্তিতে সিংহাম ‘সূর্যবংশী’ (রণবীর সিং) বা ‘সিম্বা’ (রণবীর কাপুর) এর সাথে ক্রসওভার ঘটাতে পারেন, যদিও আনুষ্ঠানিক নিশ্চিতকরণ হয়নি।
- অজয় দেবগন বলেছেন, “সিংহাম শুধু একটি চরিত্র নয়, এটি এক অনুভূতি। দর্শকদের প্রত্যাশা পূরণে আমরা আরও বড়, আরও শক্তিশালী অ্যাকশন এবং একটি প্রাসঙ্গিক গল্প নিয়ে আসছি।”
- মহারাষ্ট্র এবং উত্তর ভারতের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক শ্যুটিং হবে।
ওয়ার ২ (War 2)
- মুক্তির তারিখ: ১৪ আগস্ট, ২০২৫ (প্রস্তাবিত স্বাধীনতা দিবস উইকেন্ড)।
- নির্মাতা: যশ রাজ ফিল্মস (YRF)।
- পরিচালক: আর. অরুণ গোপী কুমার (প্রথম ওয়ারের সাফল্যের পর সিদ্ধার্থ আনন্দ ব্যস্ত ‘টাইগার ৩’ নিয়ে)।
- মূল অভিনেতা: এইচআরথিক রোশন (কবির), জুনাইদ খান (ভিলেনের ভূমিকায় – গোপন চরিত্রের নাম!), সম্ভাব্য ক্যামিও: টাইগার (সালমান খান)।
- বাজেট: আনুমানিক ₹৪০০ কোটি+ (আন্তর্জাতিক শ্যুটিং, হাই-টেক অ্যাকশন ও ভিলেনের কাস্টিংয়ে বড় অঙ্কের ব্যয়)।
- বিশেষ তথ্য:
- প্রথম ‘ওয়ার’ (২০১৯) ছিল বলিউডের সর্বোচ্চ আয়কারী চলচ্চিত্রগুলির একটি।
- দ্বিতীয় কিস্তিতে কবির (এইচআরথিক) একজন আরও পরিণত, ক্ষতবিক্ষত এজেন্ট হিসেবে দেখা যাবে, যিনি তার অতীতের এক ভয়ঙ্কর শত্রুর মুখোমুখি হবেন। জুনাইড খানের ভিলেন চরিত্রটি গোপন রাখা হচ্ছে।
- YRF-এর স্পাই ইউনিভার্সের (Spy Universe) একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোগকারী ছবি এটি। ‘টাইগার ৩’ এবং ‘পাঠান’-এর ঘটনার সাথে এর সম্পর্ক থাকতে পারে।
- তুরস্ক, স্পেন এবং আইসল্যান্ডে শ্যুটিং হওয়ার সম্ভাবনা। প্রামাণিক উৎস: YRF Official Announcement
বাঘন ৪ (Baaghi 4)
- মুক্তির তারিখ: ২০২৫ (নির্দিষ্ট তারিখ ঘোষিত হয়নি)।
- নির্মাতা: নাদিয়াদওয়ালা গ্র্যান্ডসন এন্টারটেইনমেন্ট, ফক্স স্টার স্টুডিওজ।
- পরিচালক: আহমেদ খান (সম্ভাব্য)।
- মূল অভিনেতা: টাইগার শ্রফ (রনী/বাঘন)।
- বাজেট: আনুমানিক ₹২৫০ কোটি+ (বড় আকারের স্টান্ট ও অ্যাকশন সিকোয়েন্সের জন্য)।
- বিশেষ তথ্য:
- ‘বাঘন’ ফ্র্যাঞ্চাইজি তার চরম একশন সিকোয়েন্সের জন্য বিখ্যাত। চতুর্থ কিস্তিতে আরও চরম ও উদ্ভট স্টান্টের প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
- গুজব রয়েছে, গল্পটি রনীর অতীতের সাথে জড়িত থাকতে পারে বা তাকে একটি আন্তর্জাতিক অপারেশন বাঁচাতে দেখা যাবে।
- টাইগার শ্রফ, যিনি নিজেই একজন প্রশিক্ষিত মার্শাল আর্টিস্ট, এই ফ্র্যাঞ্চাইজির জন্য নিজেকে শারীরিকভাবে সর্বোচ্চ সীমায় নিয়ে যান।
বিশাল বাজেটের পেছনের অর্থনীতি: কেন এই বিনিয়োগ?
বলিউডে আসন্ন বিগ বাজেট সিনেমা শুধু বিনোদনের জন্য নয়, এর পেছনে রয়েছে গভীর বাণিজ্যিক ও কৌশলগত চিন্তাভাবনা।
- বিশ্ব বাজারে প্রতিযোগিতা: OTT প্ল্যাটফর্মের চাপ এবং হলিউড/কোরিয়ান সিনেমার জনপ্রিয়তার মুখে, বলিউডকে বিশ্বমানের প্রোডাকশন ভ্যালু অফার করতে হবে। ₹৫০০-৬০০+ কোটি বাজেটের ছবিগুলো ভিজ্যুয়াল ইফেক্টস (VFX), সাউন্ড ডিজাইন এবং সিনেমাটোগ্রাফিতে আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখে। যেমন, ‘ব্রহ্মাস্ত্র’-এর জন্য ডিএনইজি (DNEG) এর মতো অস্কারজয়ী VFX স্টুডিও কাজ করছে।
- প্যান-ইন্ডিয়া রিলিজের রাস্তা: তেলেগু, তামিল, মালয়ালম, কন্নড় সিনেমার প্যান-ইন্ডিয়া সাফল্য (বাহুবলী, কেজিএফ, আরআরআর) বলিউডকে অনুপ্রাণিত করেছে। বড় বাজেটে তৈরি ছবি বিভিন্ন ভাষায় ডাবিং ও বিপণনের মাধ্যমে সমগ্র ভারত জুড়ে এবং বিদেশে বাজার ধরার লক্ষ্য রাখে। ‘ওয়ার ২’ বা ‘ব্রহ্মাস্ত্র ২’ এর মতো ছবিগুলো প্রাক-রিলিজেই দক্ষিণ ভারতের বাজারে ব্যাপক চাহিদা তৈরি করে।
- মার্চেন্ডাইজিং ও সিনেমাটিক এক্সপেরিয়েন্স: এই ছবিগুলো শুধু টিকিট বিক্রি করে আয় করে না। খেলনা, পোশাক, কমিক্স, ভিডিও গেম, মিউজিক অ্যালবাম এবং প্রিমিয়াম OTT রাইটস থেকে আসে বিপুল রাজস্ব। বিশাল স্ক্রিন (IMAX, 4DX), ডলবি অ্যাটমস সাউন্ডের মতো উন্নত প্রেক্ষাগৃহে দেখার অভিজ্ঞতাই দর্শকদের প্রেক্ষাগৃহে টানতে প্রধান ভূমিকা রাখে।
- স্টার পাওয়ার বনাম কনটেন্ট: যদিও সালমান, শাহরুখ, রণবীর, এইচআরথিক, অজয়ের মতো সুপারস্টারদের উপস্থিতি বক্স অফিসে নিশ্চয়তা দেয়, নির্মাতারা এখন কনটেন্টকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছেন। বড় বাজেট সেই কনটেন্টকে দৃশ্যত আরও সমৃদ্ধ ও বিশ্বাসযোগ্য করে তোলে।
- জোখিমের খেলা: বিশাল বাজেট মানেই বিশাল ঝুঁকি। একটি ছবি ফ্লপ হলে প্রযোজনা সংস্থার উপর চাপ পড়ে (যেমন ‘আদিপুরুষ’-এর ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছিল)। কিন্তু সফল হলে আয়ও হয় আকাশছোঁয়া (যেমন ‘পাঠান’, ‘জওয়ান’)।
বাংলাদেশী দর্শকদের জন্য বিশেষ আকর্ষণ: বলিউডের বড় পর্দা ও আমাদের সংযোগ
বাংলাদেশে বলিউড সিনেমার জনপ্রিয়তা কোনও নতুন বিষয় নয়। কিন্তু এই বিগ বাজেট সিনেমাগুলো বাংলাদেশী দর্শকদের জন্য বিশেষভাবে আকর্ষণীয় হওয়ার কারণ:
- সর্বজনীন আবেদন: অ্যাকশন, ফ্যান্টাসি, থ্রিলার – এই জঁরগুলো ভাষার বাধা অতিক্রম করে। ‘ওয়ার’ বা ‘সিংহাম’-এর অ্যাকশন সিকোয়েন্স, ‘ব্রহ্মাস্ত্র’-এর দৃশ্যকল্প, ‘ডন’-এর স্টাইল বাংলাদেশী দর্শককেও সমানভাবে মুগ্ধ করে।
- সিনেমা হলের অভিজ্ঞতা: করোনা পরবর্তী সময়ে প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে বড় পর্দায় বড় বাজেটের ছবি দেখার অভিজ্ঞতা ফিরে পেতে বাংলাদেশী দর্শকদেরও আগ্রহ বাড়ছে। ‘পাঠান’ বা ‘টাইগার ৩’-এর সময় ঢাকার প্রেক্ষাগৃহগুলিতে ভিড় তার প্রমাণ।
- সাংস্কৃতিক সাদৃশ্য: ভারতীয় উপমহাদেশের সমাজ, সংস্কৃতি ও আবেগের মিলের কারণে গল্পের প্লট ও চরিত্রগুলোর সাথে বাংলাদেশী দর্শকরাও সহজেই সংযোগ স্থাপন করতে পারেন।
- স্টার ফ্যান কাল্ট: শাহরুখ খান, সালমান খান, রণবীর কাপুর, দীপিকা পাড়ুকোন, আলিয়া ভাট – এই সুপারস্টারদের বাংলাদেশেও রয়েছে বিপুল ফ্যান ফলোয়িং। তাদের নতুন বড় প্রজেক্ট স্বভাবতই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে।
নির্মাতাদের মুখে: বিশাল বাজেটের চ্যালেঞ্জ ও সুযোগ
বড় বাজেটের ছবি নির্মাণ শুধু টাকা ঢালাই নয়, এটি একটি জটিল কৌশলগত ও সৃজনশীল প্রক্রিয়া।
- করণ জোহর (ধর্মা প্রোডাকশন্স): “আজকের দর্শক বিশ্বের সর্বোচ্চ মানের ভিজ্যুয়াল ইফেক্টস দেখছেন। আমাদের ছবিকে বিশ্ব দরবারে প্রতিযোগিতায় টিকতে হলে বিনিয়োগ করতে হবে প্রযুক্তিতে, দক্ষতায়। ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ শুধু ছবি নয়, এটি আমাদের স্বপ্নের ভারতীয় সুপারহিরো ইউনিভার্সের ভিত্তি। বিশাল বাজেট সেই স্বপ্নের জন্য অপরিহার্য। কিন্তু মনে রাখতে হবে, প্রযুক্তি গল্প বলার সহায়ক, গল্পকে ছাপিয়ে যাওয়ার জন্য নয়।”
- আদিত্য চোপড়া (YRF): “স্পাই ইউনিভার্সের প্রতিটি ছবি একটি বড় ক্যানভাস। এখানে আন্তর্জাতিক লোকেশন, কাস্টম-বিল্ট সেট, জটিল অ্যাকশন সিকোয়েন্স এবং সর্বোপরি, দর্শকদের জন্য অনন্য অভিজ্ঞতা তৈরি করতে হয়। বড় বাজেট আমাদের সেই সুযোগ দেয়। চ্যালেঞ্জ হল প্রতিটি টাকা যেন পর্দায় দৃশ্যমান হয় এবং গল্পের আবেগকে শক্তিশালী করে।”
- রোহিত শেট্টি: “আমার ছবিগুলো ‘মাস এন্টারটেইনমেন্ট’। এর জন্য বিশাল কাস্ট, বড় সেট, একাধিক এক্সপ্লোসন এবং স্টান্ট দরকার হয়। বাজেট বড় করার মানে দর্শকদের আরও বেশি ‘পাইসা ভ্যালু’ দেওয়া। লক্ষ্য হল দর্শক প্রেক্ষাগৃহ থেকে বলুক, ‘ওয়াহ, এই দৃশ্য দেখার জন্য টিকিটের দাম সার্থক হয়েছে!'”
বাংলাদেশী চলচ্চিত্র শিল্পের জন্য অনুপ্রেরণা
বলিউডে আসন্ন বিগ বাজেট সিনেমা শুধু দেখার জন্যই নয়, বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পের জন্যও তাৎপর্যপূর্ণ।
- প্রযুক্তিগত শিক্ষা: এই ছবিগুলোর VFX, সাউন্ড ডিজাইন, সিনেমাটোগ্রাফির মান দেখে বাংলাদেশী টেকনিশিয়ান ও নির্মাতারা শিখতে পারেন।
- গল্প বলার সাহস: বড় বাজেটের ফ্যান্টাসি বা সাই-ফাই জঁরে বলিউডের সাফল্য দেখে বাংলাদেশী নির্মাতারাও নিজস্ব সংস্কৃতিনির্ভর বড় ক্যানভাসের গল্প বলতে উৎসাহিত হতে পারেন (যদিও বাজেটের সীমাবদ্ধতা থাকবে)।
- সহ-প্রযোজনার সুযোগ: ভবিষ্যতে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ প্রযোজনায় বড় বাজেটের প্রোজেক্টের সম্ভাবনা উন্মোচিত হতে পারে, যা দুই দেশের সিনেমাকে বিশ্ব দরবারে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে।
জেনে রাখুন (FAQs)
১. বলিউডের সবচেয়ে ব্যয়বহুল আসন্ন ছবি কোনটি?
বর্তমান তথ্য অনুযায়ী, ‘ব্রহ্মাস্ত্র: পার্ট টু – দ্য ডেভিলস ওয়ার্ল্ড’ (আনুমানিক ₹৬৫০ কোটি+) এবং ‘ওয়ার ২’ (আনুমানিক ₹৪০০ কোটি+) সবচেয়ে ব্যয়বহুল প্রোজেক্টের তালিকায় শীর্ষে আছে। তবে নির্মাণ চলাকালীন বাজেট বাড়তে পারে। ‘ডন ৩’-এর বাজেটও খুবই উল্লেখযোগ্য হবে।
২. কোন বিগ বাজেট ছবিটি সবচেয়ে আগে মুক্তি পাচ্ছে?
২০২৪ সালের শেষ বা ২০২৫ সালের শুরুতে ‘ডন ৩’ বা ‘বাঘন ৪’ মুক্তি পেতে পারে বলে গুজব আছে, কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষিত তারিখগুলির মধ্যে ‘সিংহাম রিটার্নস’ ঈদ ২০২৫ (সম্ভাব্য) এবং ‘ওয়ার ২’ ২০২৫ সালের ১৪ আগস্টে মুক্তির প্রস্তাবনা আছে। ‘ব্রহ্মাস্ত্র ২’-এর মুক্তি ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫।
৩. এই ছবিগুলো বাংলাদেশে একই সাথে মুক্তি পাবে?
সাধারণত, বড় বলিউড ছবিগুলো বিশ্বব্যাপী একই দিনে বা খুব কাছাকাছি সময়ে মুক্তি পায়। বাংলাদেশেও প্রায় সব বড় প্রেক্ষাগৃহে (স্টার সিনেপ্লেক্স, ব্লকবাস্টার সিনেমা হল ইত্যাদি) এই ছবিগুলো ভারতের মুক্তির দিনেই বা তার পরের দিন প্রদর্শিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। OTT প্ল্যাটফর্মে আসতে সাধারণত ৪-৮ সপ্তাহ সময় লাগে।
৪. OTT-তে কি এই বড় বাজেটের ছবিগুলোর ম্যাজিক ঠিক থাকে?
প্রেক্ষাগৃহের অভিজ্ঞতা এবং বড় পর্দার প্রভাব OTT-তে পুরোপুরি ধরা পড়ে না, বিশেষ করে ভিজ্যুয়াল ইফেক্টস ও সাউন্ড ডিজাইনের জৌলুস। তবে, হোম থিয়েটার সিস্টেম থাকলে এবং OTT প্ল্যাটফর্ম (Netflix, Amazon Prime Video, JioCinema) যদি 4K HDR ও ডলবি অ্যাটমস সাপোর্ট করে, তবে অভিজ্ঞতা অনেক উন্নত হয়। তবুও, মহা-আড়ম্বরপূর্ণ দৃশ্যাবলির জন্য প্রেক্ষাগৃহই সর্বোত্তম।
৫. কোন ছবিটি বক্স অফিসে সবচেয়ে সফল হবে বলে আশা করা হচ্ছে?
এটি এখনই নিশ্চিত করে বলা কঠিন। তবে, ‘ডন ৩’ রণবীর কাপুরের স্টার পাওয়ার এবং ফ্র্যাঞ্চাইজির জনপ্রিয়তার কারণে, ‘ওয়ার ২’ স্পাই ইউনিভার্সের ধারাবাহিকতা ও এইচআরথিকের জনপ্রিয়তায়, এবং ‘ব্রহ্মাস্ত্র ২’ প্রথম অংশের কৌতূহল ও ভিজ্যুয়াল স্কেলে সেরা পারফর্ম করার সম্ভাবনা রাখে। ‘সিংহাম রিটার্নস’ ম্যাস এন্টারটেইনমেন্ট হিসেবে শক্ত অবস্থান করবে।
৬. বাংলাদেশী কোন তারকা কি এই বিগ বাজেট ছবিগুলোতে কাজ করছেন?
এই মুহূর্তে উল্লিখিত শীর্ষ প্রজেক্টগুলোর কাস্টে বাংলাদেশী কোনও অভিনেতা-অভিনেত্রীর নাম ঘোষিত হয়নি। তবে, বলিউডে কাজ করা বাংলাদেশী মডেল বা পার্শ্ব অভিনেতাদের (যেমন নোরা ফাতেহি, মিমি চাকরাবর্তী – যারা মূলত ভারতেই কাজ করেন) থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
বলিউডে আসন্ন বিগ বাজেট সিনেমার এই ঝলকানিই শুধু নয়, এটি চলচ্চিত্র নির্মাণের সাহস, প্রযুক্তির উৎকর্ষ এবং দর্শকদের হৃদয় জয়ের এক অনবদ্য প্রচেষ্টার স্বাক্ষর। ‘ডন ৩’-এর রহস্যময়তা, ‘ব্রহ্মাস্ত্র ২’-র মহাকাব্যিকতা, ‘ওয়ার ২’-এর হাই-অক্টেন থ্রিল, কিংবা ‘সিংহাম’-এর সরল প্রতিশোধ – প্রতিটি ছবিই নিজস্ব মাত্রায় বিনোদনের রাজ্যে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে চলেছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাগৃহগুলোতে যখন এই ছবিগুলোর ট্রেলার প্রদর্শিত হবে, তখন দর্শকদের উৎকণ্ঠা ও উত্তেজনা অনুভব করাই যাবে। এই বিশাল বাজেটের পর্দার পেছনের গল্প, পরিশ্রম এবং স্বপ্নই তো রুপোলি পর্দাকে জাদুকরি করে তোলে। আপনার প্রিয় সুপারস্টারকে বড় পর্দায় দেখার জন্য, সেই রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার জন্য প্রস্তুত হোন। বলিউডের এই মহামিলন যেন আপনার মন ছুঁয়ে যায়, সেই প্রত্যাশায় রইলাম। শেয়ার করুন আপনার সবচেয়ে অপেক্ষিত বলিউডে আসন্ন বিগ বাজেট সিনেমার নাম কমেন্টে!
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।