গোপাল হালদার, পটুয়াখালী : পটুয়াখালী শহরের প্রাণকেন্দ্র ঝাউতলায় প্রতিদিন আসরের নামাজের পরপরই জড়ো হন একদল স্বেচ্ছাসেবক। ফোর লেনের প্রশস্ত ওয়াকওয়েতে ত্রিপল বিছিয়ে দুই সারিতে রাখা হয় প্লেট, গ্নাস এবং পানির বোতল। ইফতারির জন্য এসব প্লেটে রাখা হয় বাহারি পদ। এগুলো প্রস্তুত করা হয় পথচারী ও অসহায় মানুষের ইফতারের জন্য। প্রতিদিন এভাবে কয়েকশ মানুষের জন্য বিনামূল্যে ইফতারের আয়োজন করা হচ্ছে সেখানে।
প্রথম রমজান থেকেই শুরু হওয়া এ ইফতারি কার্যক্রমের নাম দেওয়া হয়েছে ‘ইফতার খানা’। পটুয়াখালীর স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘পটুয়াখালী বাসী’ এ আয়োজন করছে। জেলার বিত্তবানদের সহযোগিতায় চলছে এ কার্যক্রম, যা চলবে শেষ রমজান পর্যন্ত। ইফতার করার পাশাপাশি এখানেই ওজু এবং জামাতে নামাজ পড়ারও ব্যবস্থা করেছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি। জামাতে নামাজ আদায় করার জন্য রয়েছেন একজন ইমাম।
ছোলা, মুড়ি, পিয়াজু, আলুর চপ, জুস, পানি, কলা, খেজুর ও জিলাপি দিয়ে রোজাদারকে ইফতার করানো হচ্ছে।
রিকশাচালক নজরুল ইসলাম বলেন, এখান দিয়ে যাচ্ছিলাম, হঠাৎ দেখি রাস্তার পাশে ইফতার সাজিয়ে রাখা হয়েছে। আমাদেরকে ডাকা হচ্ছে ইফতার করার জন্য। আমি রিকশা পাশে রেখে ইফতার করতে বসলাম। খুব ভালো লেগেছে এই আয়োজন দেখে।
দিনমজুর ইব্রাহিম বলেন, হোটেল থেকে কিনে ইফতার খেতে হলে আমাকে কমপক্ষে হলেও ৫০ থেকে ৬০ টাকা খরচ হতো। কিন্তু এখানে ইফতার করতে আমার টাকা খরচ হয়নি। আলহামদুলিল্লাহ যাদের সহযোগিতায় ইফতার করতে পেরেছি আল্লাহ তাদের কবুল করুক। পুরো রমজান মাস জুড়ে এই ইফতার কার্যক্রম চলমান থাকলে আমাদের মত মানুষদের অনেক উপকার হবে।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘পটুয়াখালী বাসী’র সভাপতি মাহমুদ হাসান রায়হান বলেন, গত বছরেও আমরা এই ইফতার কার্যক্রম পরিচালনা করেছি। গত বছর আমাদের কিছু টাকা বেচে গিয়েছিল সেই টাকা দিয়ে এ বছর প্রথম রোজায় ইফকতার কার্যক্রম শুরু করি। আমাদের এখানে মোট ১০ আইটেম এর খাবার দিয়ে থাকি এর মদ্যে আছে বুট, মুড়ি, পিয়াজু, জিলাপি, আলুর চপ, পেয়ারা, খেজুর, কলা, সরবত এবং মিনারেল ওয়াটার এর পানি।
তিনি আরও বলেন, ‘একজন মানুষকে ইফতার করাতে ৯০ টাকা করে খরচ হচ্ছে। প্রথম দিনে ৫০ জন দিয়ে ইফতার খানা শুরু করলেও বর্তমানে ১০০ জনকে ইফতার করানো হচ্ছে। সহযোগীতা এবং চাহিদা বৃদ্ধি পেলে সংখ্যা বড়ানো হবে। এছাড়া আগামী ৬ রমজান পর্যন্ত আমাদের অর্থের সংস্থান হয়েছে। বিত্তবানরা সহযোগীতার আশ্বাস দিয়েছেন, আশা করছি শেষ রমজান পর্যন্ত আমাদের এই নইফতার খানার কার্যক্রম চালাতে পারবো। ইতোমধ্যে আগামী ৬ রোজা পর্যন্ত ইফতারের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান হয়েছে,পাশপাশি অনেকেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সহযোগীতা করার।’
এদিকে বিগত বছরগুলোর মত এ বছর ও পটুয়াখালী পৌরসভার পক্ষ থেকে এই ইফতার কার্যক্রমে সার্বিক সহযোগিতা করছে পটুয়াখালী পৌরসভা। পৌরসভার পক্ষ থেকে মুসুল্লিদের ওজু করার জন্য বেশ কিছু পানির ট্যাপ স্থাপন করে দেয়া হয়েছে। পাশপাশি বসানো হয়েছে অস্থায়ী ডাস্টবিন।
পটুয়াখালী পৌরসভার মেয়র মহিউদ্দিন আহম্মেদ বলেন, ‘আমিসহ আমার যত শুভাকাঙ্খি আছে সকলকেই বলেছি এখানে নিয়মিত ইফতার কার্যক্রমে সার্বিক সহযোগীতা প্রদানের জন্য। গত বছরও আমি বেশ কয়েকদিন ইফতারের ব্যবস্থা করেছি, এ বছরও সার্বিক সহযোগীতা করবো। যেদিন কোন ডোনার থাকবে না সেদিন আমার পক্ষ থেকে ইফতারের অয়োজন করা হবে। আমার বন্ধু জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, তিনিও এই কার্যক্রমে সহযোগীতা করছেন। পাশপাশি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেহেতু ইফতার পার্টি আয়োজন না করার বিষয়ে অনুৎসাহিত করেছেন সে কারনে অসহায় মানুষদের নিয়েই এবার ইফতার কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।’
পটুয়াখালীবাসী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গতবছর রমজানের আগে থেকেই রমজানের বাজার নামে নিম্ন আয়ের মানুষদের মাঝে ভর্তুকি দিয়ে পণ্য বিক্রয় করেছে। এছাড়াও দেশের যে কোন ক্লান্তিলগ্নে এই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি মানবতার সেবক হিসেবে কাজ করে থাকে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।