জুমবাংলা ডেস্ক: বসনিয়ার যুদ্ধ ছিল নব্বইয়ের দশকে সংঘটিত একটি বড় ট্র্যাজেডি। এ যুদ্ধে নিহতদের বেশিরভাগই ছিলেন মুসলমান। মুসলমানদের নির্মূল করার উদ্দেশ্যে জাতিগত শুদ্ধি অভিযান চালিয়েছিল সার্বরা। এ যুদ্ধে গণহত্যা ও ধর্ষণ; এমনকি শিশুকন্যাদের ধর্ষণ ও শিশুদের হত্যা করাকে যুদ্ধ জয়ের কৌশল হিসেবে ব্যবহার করেছিল বর্বর সার্বরা। কথিত সভ্য ইউরোপে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আর কখনও এত বড় গণহত্যা ও জাতিগত শুদ্ধি অভিযান ঘটেনি। বসনিয়া যুদ্ধ নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদনের আজ আপনাদের জন্য রয়েছে পর্ব ০৩।
বসনিয়ার যুদ্ধ চলাকালে সার্ব সেনা ও আধাসামরিক বাহিনীর সদস্যরা কখনও কখনও কোনো একটি অঞ্চলে হামলা চালানোর পর সেখানকার সব পুরুষকে হত্যা করত অথবা অপহরণ করত এবং সেখানকার নারীদের ধর্ষণের পর তাদের হত্যা করত। তারা বহুবার গর্ভবতী নারীর পেট ছুরি দিয়ে কেটে শিশুসন্তান বের করে ওই শিশুকে গলা কেটে হত্যা করেছে মায়ের চোখের সামনে এবং কখনোবা আরো অনেকের চোখের সামনেই।
আরো মর্মান্তিক ব্যাপার হলো, এ ধরনের হত্যাকাণ্ড ও নৃশংস পাশবিকতার বহু ঘটনা ঘটানো হয়েছে নেদারল্যান্ডসের শান্তিরক্ষীদের চোখের সামনেই। এমনকি মাত্র ৫-৬ মিটার দূরে যখন সার্ব সেনারা এইসব পাশবিকতা চালাতো, তখনও নেদারল্যান্ডসের শান্তিরক্ষীরা কেবল বোবা দর্শকের মতোই নীরব থাকত ও হেঁটে বেড়াতো। জার্মানির একজন সাংবাদিক এ বিষয়ে যে প্রতিবেদন তৈরি করেছেন, তাকে সত্য বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন একজন মার্কিন কমান্ডার।
বেক মার্কিন সেনা কমান্ডার জন শিইহান মার্কিন সিনেটে জানান, নেদারল্যান্ডসের শান্তিরক্ষীরা নৈতিক অধঃপতনের কারণেই নিষ্ক্রিয় ভূমিকা রেখেছিল। ফলে ১৯৯৫ সালে সেব্রেনিৎসায় হামলা চালাতে সাহসী হয় সার্বরা। ন্যাটোর সাবেক এই সেনা কমান্ডার আরো বলেন, নেদারল্যান্ডসের সেনারা পিছু হটার কারণেই সার্বরা সেব্রেনিৎসায় প্রায় ৮ হাজার মুসলমানকে হত্যা করতে সক্ষম হয়।
মানবতার বিরুদ্ধে এইসব ভয়াবহ অপরাধের দায় কেবল মিলোশেভিচ ও কারাদিচের মতো সার্ব নেতার ঘাড়ে চাপানো হলেও প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্যসহ নানা সাক্ষ্য-প্রমাণে দেখা যায়, জাতিসংঘের দায়িত্বহীন ভূমিকা ও ন্যাটো জোটের আওতায় পশ্চিমা সরকারগুলোর অন্যায্য ভূমিকার কারণেই এই মানবীয় বিপর্যয় ঘটেছিল পশ্চিমা সরকারগুলোর জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনের আওতায় বসনিয়ার মজলুম মুসলমানদের সহায়তার নামে সেখানে সেনা পাঠানো সত্ত্বেও বাস্তবে তারা কোনো কার্যকর পদক্ষেপই নেয়নি।
বরং তাদের জন্যই নিহত হয়েছে হাজার হাজার নিরপরাধ মানুষ। মার্কিন সরকারসহ পাশ্চাত্য বিশ্বের অন্য অনেক অঞ্চলে এখনও একই ধরনের প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছে। আফগানিস্তান, পাকিস্তান, লিবিয়া, মিসর, সিরিয়া, ইরাক ও ফিলিস্তিনের ঘটনাপ্রবাহই এর জ্বলন্ত সাক্ষ্য। আসলে এইসব মুসলিম দেশকে টুকরো টুকরো বা আরো ছোট রাষ্ট্রে পরিণত করার ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের লক্ষ্যেই পাশ্চাত্য এ ধরনের প্রতারণা চালাচ্ছে। মুসলিম জাতিগুলোর ওপর গণহত্যা বা জাতিগত শুদ্ধি অভিযানও পশ্চিমা শক্তিগুলোর এ জাতীয় পদক্ষেপের অন্যতম লক্ষ্য।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।