জুমবাংলা ডেস্ক : তিতাস অধিভুক্ত মেট্রো ঢাকা বিপণন (দক্ষিণ) ও আঞ্চলিক বিপণন (নারায়ণগঞ্জ) এলাকায় আরও সাড়ে ছয় লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার দেবে সরকার। গৃহস্থালি পর্যায়ে গ্যাসের অপচয় রোধে বসানো এসব মিটারপ্রতি মাসে ভাড়া গুনতে হবে দুইশ টাকা। প্রকল্পের প্রস্তাবিত ব্যয় দুই হাজার ২৮৩ কোটি টাকা। জানুয়ারি ২০২৪ থেকে ডিসেম্বর ২০২৮ মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে চায় তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (টিজিটিডিছিএল)।
নতুন প্রস্তাবিত ‘স্মার্ট মিটারিং এনার্জি ইফিসিয়েন্সি ইম্প্রুভমেন্ট প্রজেক্ট ইন্সটলেশন অব প্রিপেইড গ্যাস মিটার’ প্রকল্পের আওতায় এ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। প্রকল্পে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এক হাজার ৯৪৫ কোটি টাকা ঋণ দেবে। তিতাস অধিভুক্ত মেট্রো ঢাকা বিপণন (দক্ষিণ) ও আঞ্চলিক বিপণন (নারায়ণগঞ্জ) এলাকার গৃহস্থালি পর্যায়ে ব্যবহৃত গ্যাসের অপচয় রোধের মাধ্যমে কোম্পানির সিস্টেম লস কমানো এবং আবাসিক গ্রাহকদের মধ্যে গ্যাস ব্যবহারে সচেতনতা বাড়ানো হবে। পাশাপাশি পরিবেশের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ও কোম্পানির ব্যবস্থাপনা দক্ষতা বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
টিজিটিডিসিএল জানায়, প্রস্তাবিত প্রকল্পে মিটারের লাইফ টাইম ১০ বছর নির্ধারণ করা হয়েছে। গ্রাহকের কাছ থেকে মিটারপ্রতি মাসিক ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে দুইশ টাকা। এক্ষেত্রে মিটারপ্রতি এই মাসিক ভাড়া নির্ধারণের ভিত্তি এবং পেট্রোবাংলার আওতাধীন সব সংস্থার ক্ষেত্রে মিটার রেন্ট নির্ধারণের বিষয়ে আরও আলোচনা করতে বলেছে পরিকল্পনা কমিশন। বর্তমানে চালু থাকা গ্যাসের প্রি-পেইড মিটারের জন্য গ্রাহকের ভাড়া গুনতে হয় একশ টাকা।
প্রস্তাবিত প্রকল্পের বিষয়ে এরই মধ্যে পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগ প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির সভার জন্য কার্যপত্র তৈরি করেছে। প্রকল্পের নানা খাতের ব্যয় যৌক্তিকভাবে কমানোসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করবে কমিশন।
পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগের প্রধান (অতিরিক্ত সচিব) ড. মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, প্রকল্পটি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে পিইসি সভায়। সেখানে সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত থাকবেন।
মিটারপ্রতি মাসে দুইশ টাকা ভাড়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা একক কোনো সিদ্ধান্তের বিষয় নয়। পিইসি সভায় আলাপ-আলোচনা করেই ঠিক করা হবে।
প্রকল্পের বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে টিজিটিডিসিএল-এর মহাব্যবস্থাপক (মেট্রো ঢাকা বিপণন ডিভিশন-দক্ষিণ) প্রকৌশলী মো. সামছুদ্দিন আল আজাদ বলেন, বিষয়টি আমার নজরে নেই। এটা দেখভাল করার জন্য আলাদা ডিপার্টমেন্ট আছে।
তবে সংশ্লিষ্ট ওই কর্মকর্তার সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করা হলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি। পরিকল্পনা কমিশন জানায়, প্রস্তাবিত প্রকল্পে মোট তিন হাজার বর্গফুট অফিস স্পেস ভাড়ার বিষয়ে প্রতি বর্গফুট একশ টাকা এবং প্রতি বছর ১০ শতাংশ বৃদ্ধি হিসেবে দুই কোটি ১৯ লাখ ৭৮ হাজার টাকা প্রাক্কলন করা হয়েছে। এ বিষয়ে আলোচনা করে মোট অফিস স্পেস এবং ভাড়া যৌক্তিকভাবে নির্ধারণ করা যেতে পারে।
প্রস্তাবিত ডিপিপিতে একটি জিপ (২৭০০ সিসি), চারটি ডাবল কেবিন পিক-আপ (২৫০০ সিসি) এবং ২৫টি মোটরসাইকেল (১২৫ সিসি) কেনা বাবদ তিন কোটি ৩৫ লাখ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় প্রস্তাবিত যানবাহনের ধরন ও সংখ্যা যৌক্তিকভাবে নির্ধারণের বিষয়ে সভায় আলোচনার জন্য বলা হয়েছে। এছাড়া প্রস্তাবিত প্রকল্পে যানবাহন ভাড়া খাতে দুই কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে, যার যৌক্তিকতা সভায় আলোচনা করা যেতে পারে। ফিজিক্যাল কন্টিনজেন্সি খাতে ১৯ কোটি টাকা এবং প্রাইজ কন্টিনজেন্সি খাতে ৪৪ কোটি ৩৯ লাখ টাকা ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে।
প্রকল্পের আওতায় নির্মাণধর্মী কাজ কম বিধায় ফিজিক্যাল কন্টিনজেন্সি এবং প্রাইস কন্টিনজেন্সি খাতে প্রাক্কলিত ব্যয় যৌক্তিক পর্যায়ে কমানোর কথা বলা হয়েছে। প্রকল্প সমাপ্তির পর প্রকল্পের আওতায় স্থাপিত প্রি-পেইড গ্যাস মিটারের রক্ষণাবেক্ষণ কীভাবে হবে সে বিষয়টি ডিপিপিতে নেই। এছাড়া গ্রাহকদের স্বার্থ সুরক্ষায় প্রকল্প অনুমোদনের পরে ক্রয় প্রক্রিয়াকরণের সময় মিটারের গ্যারান্টি ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনার জন্য হয়েছে।
প্রকল্পের সামগ্রিক লক্ষ্যমাত্রা
তিতাস অধিভুক্ত এলাকার আবাসিক পর্যায়ে ব্যবহৃত গ্যাসের অপচয় রোধ এবং গ্যাসের দক্ষ ব্যবহার নিশ্চিত করে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাংলাদেশকে সহায়তা করা। প্রি-পেইড গ্যাস মিটার স্থাপনের ফলে গ্যাসের অপচয় রোধের মাধ্যমে গ্যাস সাশ্রয় হবে, সিস্টেম লস কমবে এবং গ্রাহকসেবার মান বাড়বে।
‘শতভাগ প্রি-পেইড মিটার স্থাপন আগামী তিন বছরের মধ্যে নিশ্চিত করার যাবতীয় পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে’ মর্মে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ গত ৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ তারিখে সিদ্ধান্ত নেয়। সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে এরই মধ্যে এডিবি ও জাইকার অর্থায়নে তিতাস অধিভুক্ত এলাকায় স্থাপিত প্রি-পেইড মিটারের সংখ্যা তিন লাখ ২৮ হাজার ৬শটি। কোম্পানির আইসিটি ডিভিশনের আওতাধীন নন-মিটার আবাসিক বিলিং সফটওয়্যারের তথ্যানুযায়ী চালু নন-মিটার আবাসিক সংযোগ সংখ্যা (বিচ্ছিন্নকৃত/ প্রি-পেইড রূপান্তরিত/মুক্তিযোদ্ধা ইত্যাদি ব্যতীত) ২৩ লাখ ৩৪ হাজার ৩৭৭টি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।