কোনো বহির্জাগতিক প্রাণী যদি নিজে থেকে আমাদের বার্তা পাঠায়, তাদের সেই বার্তা কেমন হবে? এটা যে বহির্জাগতিক প্রাণীদের পাঠানো বার্তা, সেটা বোঝার উপায়ই–বা কী?
এ ধরনের কিছু নিশ্চিত করতে মূলত প্রসেস অব এলিমিনেশন ব্যবহার করা হয়। অর্থাৎ যেটা প্রমাণ করা প্রয়োজন, শুরু করতে হবে তার উল্টো দিক থেকে। এ ক্ষেত্রে যেমন প্রথমে ধরে নিতে হবে, এই বার্তা বহির্জাগতিক কোনো প্রাণী পাঠায়নি। তারপর একে একে মহাজাগতিক সব বস্তু থেকে আসা সিগন্যালের সঙ্গে তুলনা করে দেখতে হবে। যদি সিগন্যালটি এর কোনোটির সঙ্গেই না মেলে, তারপর আরও বেশ কিছু পরীক্ষা দেখা লাগবে। যেমন এই সিগন্যাল আসলেই কৃত্রিমভাবে তৈরি করা সম্ভব কি না। সিগন্যালটা একবারই এসেছে, নাকি বারবার আসছে ইত্যাদি।
এ রকম একটা ঘটনা ঘটেছিল ১৯৭৭ সালের আগস্টে। ওয়াও সিগন্যাল নামে পরিচিত এই ঘটনা বিজ্ঞানীদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলে দিয়েছিল। ৭২ সেকেন্ড ধরে বেতার তরঙ্গের প্রচণ্ড শক্তিশালী এক সিগন্যাল রিসিভ করেন বিজ্ঞানীরা। এর কম্পাঙ্ক ছিল সেটি প্রকল্পের বিজ্ঞানীদের অনুমিত তরঙ্গের কাছাকাছি। মানে, তাঁরা ভেবেছিলেন, বহির্জাগতিক প্রাণীরা বার্তা পাঠালে এর কম কম্পাঙ্কের সিগন্যাল-ই পাঠাবে।
ওহাইয়োতে অবস্থিত বিগ ইয়ার বেতার টেলিস্কোপ থেকে পাওয়া এই সিগন্যালের প্রিন্টআউট দেখে জ্যোতির্বিজ্ঞানী জেরি এহম্যান প্রবল উত্তেজনায়, প্রিন্ট আউটের ওপরেই লাল কালি দিয়ে লিখে ফেলেছিলেন, ‘ওয়াও!’ কিন্তু তারপর থেকে আজ পর্যন্ত সেই কম্পাঙ্কে এ ধরনের আর কোনো সিগন্যাল পাওয়া যায়নি। তবে একই কম্পাঙ্কে একই ধরনের সিগন্যাল যদি বারবার পাওয়া যেত, গল্পটা অন্য রকম হতে পারত।
যেকোনো টেলিস্কোপে গৃহীত সিগন্যাল দেখে বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারেন, সেটা কোত্থেকে বা কত দূর থেকে এসেছে। ডপলার ক্রিয়া ব্যবহার করে এটা খুব সহজেই বের করা যায়। সে জন্য গৃহীত সিগন্যালের বর্ণালি পরীক্ষা করে দেখতে হয়। যদি কোনো সিগন্যাল বহির্জাগতিক প্রাণীদের পাঠানো নয় বলে প্রমাণ করা সম্ভব না-ই হয়, তখন একে আন্তর্জাতিক জরুরি অবস্থা বলে গণ্য করা হবে।
‘ইটিআই সিগন্যাল ডিটেকশন’ প্রটোকল অনুযায়ী, জাতিসংঘের মহাসচিব এবং পৃথিবীর সব আন্তর্জাতিক সংগঠনকে দ্রুত এ ব্যাপারে জানিয়ে দেওয়া হবে। বিজ্ঞানীরা সেই কম্পাঙ্কটুকুকে জরুরি বলে ঘোষণা করে দেবেন, যাতে পৃথিবীর কোনো প্রান্তের কেউ এই কম্পাঙ্ক ব্যবহার করে কোনো সিগন্যাল না পাঠায়। সেই সঙ্গে সিগন্যালটির বিস্তারিত তথ্য সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। এতে যে কেউ সিগন্যালটি নিয়ে গবেষণা করে দেখতে পারবে, একে স্বাভাবিক সিগন্যাল বলে কোনোভাবে প্রমাণ করা যায় কিনা।
এবং আন্তর্জাতিকভাবে পুরোপুরি নিশ্চিত সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর আগে এই সিগন্যালের কোনো জবাব পাঠানো হবে না। কারণ, এই প্রাণীরা বন্ধুবৎসল হবে, নাকি নির্মম—সেটা আগে থেকে জানা সম্ভব নয়। আমাদের নিজেদের দিকে তাকালেই এর কারণ বোঝা যাবে। মানুষ কি বন্ধুবৎসল প্রাণী, নাকি নির্মম? প্রিয় পাঠক, এ প্রশ্নের ভার না হয় আপনার কাছেই তোলা থাকুক!
এখানে দুটো বিষয় বলে রাখা দরকার। এক, চলচ্চিত্রে যেমন দেখা যায়, সে রকম কোনো কথোপকথন এ ক্ষেত্রে সম্ভব নয়। কারণ, আমাদের সবচেয়ে কাছের বহির্জাগতিক সভ্যতাও শত-সহস্র আলোকবর্ষ দূরে হতে পারে। সে ক্ষেত্রে একেকটা প্রশ্ন পাঠাতে যেমন শত-সহস্র আলোকবর্ষ লেগে যাবে, তেমনি এর উত্তর ফিরে আসতেও একই সময় লাগবে। দুই, বহির্জাগতিক প্রাণীদের পাঠানো বার্তার অর্থ কী, সেটা আমরা কীভাবে বুঝব? ইংরেজি মুভিতে যেমন দেখায়, সব এলিয়েনের তো আর ইংরেজি জানার কথা না! আসলে, পৃথিবীর কোনো ভাষা-ই তাদের জানার কথা নয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।